অন্যরকম প্রেমানূভুতি গল্পের লিংক || অস্মিতা রোদৌসি

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১
অস্মিতা রোদৌসি

বান্ধবীর ভাইকে নিজের হবু স্বামী ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠলো সাথে সাথে চরম পরিমাণে অবাকও হলাম।এই মহূর্তে আমার সামনের সোফাতে বসে আছে আমার বান্ধবী ও তার বাবা সাথে ঔ বজ্জাত লোকটা মানে নীলার ভাই।মিস্টার আফরান অভ্র…লোকটা কেমন যেন ভাব নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে ফোন গুটাচ্ছে।

দেখে মনে হয় কোনো এক দেশের রাজপুত্র হুহ!!!কি ভাব দেখো।
নীলা আমাকে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। যা আমার কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো মনে হচ্ছে।রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে আমার।মেয়েটার পেটে পেটে এসব চলছিলো তা আমি জানতামই না।ওকে শুধু একবার হাতের কাছে পাই তারপর ওর ব্যবস্থা করছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এসব ভাবতে ভাবতেই নীলার আব্বু আমাকে প্রশ্ন করলেন___ মেঘ আম্মু কেমন আছো??
__জ্বী আলহামদুলিল্লাহ। আঙ্কেল আপনি কেমন আছেন??মলিন হেঁসে বললাম আমি!
___আমি অনেক ভালো আছি আম্মু। আজ অনেক খুশিও।তোমাকে আমার ঘরের লক্ষি করে নিয়ে যাচ্ছি।এটার মতো খুশি আর কিছুতেই নেই।তিনি হেঁসে বললেন।

আঙ্কেলের কথায় আমি ভিষন লজ্জা পেলাম।আঙ্কেলের এমন কথায় নীলা বলে উঠলো___শুধু তুমি খুশি নাকি?? আমি তো ভিষননন খুশি।আমার বান্ধবী আমার ভাবী। কি মজাআআআ।
নীলার এমন কথায় উপস্থিত সবাই হেঁসে উঠলো।আর
অভ্র ভাইয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার তার কাজে মন দিলেন।

তাহলে এবার অনুষ্টান শুরু করা হোক।বললো আমার ছোট বোন মিঠি।আমার পাশে আমার ছোট বোন মিঠি বসে আছে।তার পাশে টিয়া আর মিনু আপু।আর অভ্র ভাইয়ের পাশে আমার বড় ভাই মুহিত বসে আছে।তার পাশে আমার বাবা, ,ফুফা, বড় আব্বু, ছোট চাচ্চু, সবাই।

আরো কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শুরু হলো।এবার আমাকে অভ্র ভাইয়ার সাথে বসানো হলো।আমার তো লজ্জা + কান্না দুটোই পাচ্ছে।তবে এটা ভেবেই আমি অবাক হচ্ছি__ অভ্র ভাইয়া আমাকে বিয়ে কেন করছেন!!!ওনি তো আমাকে দু চোখে সয্যই করতে পারেনা।কারণ আমি একটু বেশি চঞ্চল বলে।আর ওনি খুব গম্ভীর মানুষ।খুব কম কথা বলেন যা আমার খুব অপছন্দ ।

ওনি পেশায় একজন ইন্জিনিয়ার। দেখতে মাশাআল্লাহ হিরোর মতোন।হাইট ৬ ফুট, জিম করা বডি,গায়ের রং উজ্জল ফর্সা, আর মুখের ফেস তো সেই মায়াবি।চোখ দুটো করেন্জা যা যেকোনো মেয়েকে ঘায়েল করবে নিমিষেই।হাসলে গালে টোল পড়ে।অবশ্য এটা আমি তার একটা ছবিতে দেখেছি।আর নীলার মুখে শুনেছি।কিন্তু নিজ চোখে কখনো দেখেনি।কারণ বজ্জাতটাকে কখনো হাসতে দেখেনি আমি।দেখি শুধু মুখটা হুতুম পেঁচার মতো করে রাখতে সর্বদাই।

_______রাত ১২ টা ২০ বাজে আমি ওয়াশরুম থেকে একেবারে শাওয়ার নিয়ে বেড়োলাম।খুবই ক্লান্ত লাগছিলো।এত গুলো মানুষের মধ্যে খুব আনইজি ফিল
হচ্ছিলো।এখন খুব ভালো লাগছে।

বিছানায় গিয়ে আধ শোয়া হয়ে বসলাম । তারপর বেড সাইডের পাশের টেবিল থেকে হুমায়ুন আহমেদের রুপা গল্পের বইটা হাতে নিলাম পড়ার জন্য। তখনি ফোনটা টুং করে বেঁজে উঠলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।মেসেজটার ওপেন করতেই চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো অটমেটেকলি। তার কারণ মেসেজ টা হলো ____ এত রাতে শাওয়ার নেয়াটা ঠিক হয়নি।ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।সো নেক্সট টাইম যেন এমন ভুল না হয়।মাইন্ড ইট।

কোন উগান্ডা এটা রে। আমি শাওয়ার নিয়েছি এটা জানলো কি করে”!মস্তিষ্ক তো কাজ করাই বন্ধ করে দিয়েছে। এনমিতেই একটা হুতুম পেঁচার কবলে পরছি।
আর এই বেডা_____
এই তুই কেরে???আমি শাওয়ার নিয়েছি তুই জানলি কিভাবে?বজ্জাত?লিখেই সেই নাম্বারে সেন্ড করে দিলাম।

কিন্তু এবার আর কোনো রিপ্লে এলো না।তা দেখে আমি হতাশ হলাম।তাই ফোনটা পাশে রেখে বই পড়তে শুরু করলাম।
হঠাৎ মনে পড়ে গেলো সেই ঠক, পাশন্ড লোকটার কথা।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো।মুখে ফুটে উঠলো তাচ্ছিলের হাসি।
যাকে জিবন সাথী হিসেবে চেয়েছিলাম সে জিবন সাথী হিসেবে চেয়েছে অন্য কাউকে।আর যাকে চাইনি সে চেয়েছে আমাকে। হিসাবটা বড্ড বেমানান!!
এক মাস আগের কথা_________

দুই বছর রিসেশনের পর সে আমায় বলতেছে___ মেঘু আমি তোকে বিয়ে করতে পারবোনা রে!!সরি
আমি তার এহেন কথায় সুক্ষ ভাবে তার দু চোখে আমার দু চোখ রাখলাম।ইতিমধ্যেই তার কথাটা আমার
কানে ঝুমঝুম করে বাজছে।হৃদয়টা কাঁচের মতো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
হ্যাঁ মেঘু আমি সত্যিই বলছি।মা বাবা কেউ তোর আমার সম্পর্ক মেনে নিবে না।এমনি তো তোর বাবা মা ও না।
ওরা জানে তুই আমি শুধু দুজনে চাচাতো ভাই বোন।

কিন্তু আমাদের এই সম্পর্কের ব্যাপারে তো কিছুই জানে না।আর আমার বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে।সেটা তো তুই জানিস ওই। আর বাবার মুখের উপরে তো আমি কোনো কথাই বলতে পারিনা তুই জানিসই। এটুকু বলেই থামলো রিদ ভাইয়া।
আমি এতক্ষণ শুধু তার কথা গুলোই শুনে গেলাম কোনো প্রতিবাদ করলাম না।
____মেঘু কিছু বল??
___তুমি কি আমায় ভালোবাসো রিদ ভাইয়া???
___হ্যাঁ বাসি!!!
___শুধু বাসি???
___প্লিজ আমায় ভুল বুঝিস না আমায় মেঘু।
___না কেন ভুল বুঝবো তোমায়?? এখন ঠিকই বুঝছি।আগে ভুল বুঝতাম।তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম আমি।

___মেঘু???
___প্লিজ রিদ ভাইয়া আমায় মেঘু বলে ডাকবেন না।আমার নাম মেঘা।আর মেঘু বলে ডাকার অধিকারটা শুধু আমার প্রিয় মানুষটার।আপনার না।
___ তুই এটা বলতে পারলি মেঘু???
___প্লিজ মেঘু বলে ডাকবেন না।মেঘা

আমার নাম। আর এখন থেকে আপনি আমার চাচাতো ভাই আর আমি আপনার চাচাতো ছোট বোন।আশা করি কি বলেছি বুঝতে পেরেছেন।বলেই ছাদ থেকে নেমে গেলাম আমি।
রুমে গিয়ে দরজার লাগিয়ে দরজার পাশেই বসে পড়লাম।ডুকরে কেঁদে উঠলাম। কি বললো রিদ ভাইয়া।
সে আমাকে বিয়ে করতে পারবেনা।তাহলে কেন আমাকে ভালোবাসা শিখালো।তার মায়ায় কেন জড়ালো এই আমাকে।

দুই বছরের সব সৃতি কি এত সহজে ভোলা যায়??না যায় না তবে আমি ভোলার চেষ্টা করবো।আর যাই নিজেকে কখনো কষ্ট দিবোনা।যে আমাকে কষ্ট দিয়েছে আমি তাকে কষ্ট দিবো।হ্যাঁ রিদ ভাইয়াকে তার অপরাধের শাস্তি দিবো।এসব মনে মনে বলেই চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালাম।
এরপর থেকে রিদ ভাইয়ার সামনা সামনি হলে কথা বলতাম না। তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম।কিছুদিন হয় তিনি কিছু কাজের জন্য দেশের বাহিরে গেছেন।

এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে আরমোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠলাম।ফোনটা হাতে নিতেই দেখলাম সেই আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে যা মেজাজ টাকে বিগড়ে দিলো।

“”কাল থেকে তারাতারি ঘুম থেকে উঠবা।আর নামাজ পড়বা।মাইন্ড ইট”””
মেসেজ টা দেখেই মাথা ঘুরে গেলো।এই লোকটা জানলো কি করে আমি দেরিতে ঘুম থেকে উঠি??এ আবার কোনো প্রেতআত্মা নয়তো।না হলো এত কিছু জানে কিভাবে।!!বিষয়টা ভাবার মতো।
এখন নিজের চুল নিজেইর ছিড়তে ইচ্ছে করছে।

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ২