অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ২

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ২
অস্মিতা রোদৌসি

হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।লাগছে খুব!হাতটা এবার ভেঙেই দিবেন নাকি হ্যাঁ???? সামান্য একটা কথার জন্য আপনি এমন কেন করছেন?? পাগল নাকি আপনি??
____you know who i am…. দাঁতে দাঁত চেপে বললেন
অভ্র ভাইয়া।

____হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি কে আপনি!!আপনাকে
চিনবোনা তো কে চিনবে…মুখ বেঁকিয়ে বললাম আমি।
এবার তিনি আগের চেয়ে দ্বিগুণ জোড়ে আমার হাতটা চেপে ধরলেন।আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।
___প্লিজ হাতটা ছেরে দিন না।আর জিবনেও এমন কথা বলবো না।প্লিজজজজজ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এবার তিনি আমার দিকে শীতল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন। আমি হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে ভার্সিটিতে ধুকে পড়লাম।ক্যামপাসের বকুল গাছের তলায় বসে আছে নিলাম সহ আমাদের ফ্রেন্ডগ্রুপ।
ওদের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে জোরে জোরে কয়েকটা বড় নিশ্বাস নিলাম। হাতটা চোখের সামনে ধরতেই বুকটা ছেৎ করে উঠলো।হাতটায় ওই মিস্টার অভ্রর পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে।সেই দাগটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।জ্বলছেও খুব।ইচ্ছে করে ওই রাক্ষসটার নাকটা কেটে টিকটিকির লেজে ঝুলিয়ে দি হুহ।
সবাই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

___কিরে তোরা এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন???মনে হয় আমাকে এই প্রথম দেখলি??
হাতে ফু দিতে দিতে বললাম আমি।
___মেঘা তোর নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?? তাও আবার আমাদের ক্রাশের সাথে।না মানে অভ্র ভাইয়ের সাথে???বললো জেরিন। তার সাথে তাল মেলালো রিনি,বিভা,অর্পাও

____ তো আজই তো বলতে এলাম।কাল বিয়ে ঠিক হয়েছে।
____ এই এই তোরা আমার ভাবিকে এত হয়রান করিসনা তো।এনমিতেই ওনি হয়রান হয়ে এলেন।দুষ্ট হেঁসে বললো নীলা।
আমি কঠোর দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকালাম। ও আমারয় দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললো। এই নীলা পেত্নির জন্যই এতকিছু।

____আহারে ননদী এতই যখন ভাবির দরদ তো ওখান থেকে আমাকে একা ফেলে কেটে পরলি কেন??ওর পাশে বসে ওর কান চেপে ধরে বললাম আমি।
___আহহহ লাগছে মেঘা। সরিইইই
___ওমা এখন ভাবী থেকে মেঘলা হয়ে গেলাম???
___তুই আমার বান্ধবী। প্লিজ কান টা ছাড় ব্যাথা পাচ্ছি তো।
___ এই তোরা জানিস এই পেত্নি কি করেছে???ওর মুখ বোঝা বাঁদর ভাইটার গলার আমার মতো মুক্তোর মালা ঝুলিয়ে দিয়েছে!!! নীলার কান ছেরে দিয়ে বললাম আমি।

____ হুম হুম জানি আমরা।নীলা আমাদের সব বলেছে।
বললো রিনি।
___কিহ তাহলে তোরা আগে থেকেই এসব জানতি??
___হুমমম ম-ম। রিনি,বিভা,জেরিন, অর্পা সবাই একসাথেই বলে উঠলো।
___ কিহ তোরা এত বড় বেঈমানি করলি আমার সাথে??
____ হুমমম রে। আর আমরা তো তোর ভালোর জন্যই এই বেঈমানিটা করলাম।বলে উঠলো অর্পা।
____তোরা জানিস আমার বিষয়ে সব। তাও তোরা?কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম আমি।
____ হ্যাঁ। কিন্তু আমরা যা করেছি সেটা ভালোই করেছি।বললো নীলা।
___তোর ভালোর গুষ্টি কিলাই।পাই পাই করে হিসাব রাখবো তোরা আমার কি ভালো করলি।হুহ বলেই বড় বড় পা ফেলে ক্লাসে গেলাম।

____নীলা তোর ভাবিজি মনে হয় রাগ করেছে।তুই গিয়ে রাগটা ভাঙ্গিয়ে দিস।কেমন!!!বললো জেরিন।
___হুম চল তোরা।বলেই সবাই ক্লাসের দিকে গেলো।
____তোরা আমার ভালো করতে গিয়ে যে খারাপ টাই করেছিস তা আমি পইপই করে বুঝতে পারছি। ওই রাক্ষসটা এবার আমার গোস্ত কেটে তেলে ভেজে ফ্রাই করে খাবে।হুহ। মনে মনে বলতে বলতে ক্লাসে ঢুকলাম।

১ ঘন্টা আগের কথা…..
ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেড়িয়ে নীচে নামতেই দেখলাম নীলা সোফায় বসে আছে।
কিরে তুই এখন এই সময়ে??
___কেন আসতে পারিনা বুঝি??মুখটা ভার করে বললো নীলা।
___আমি সেটা বলিনি মিস নীলা পেত্নী।

___মেঘাআআআআ তুই আবার আমাকে পেত্নী বললি??কোমরে দুহাত রেখে কিছুটা রেগে বললো নীলা।
____এই মেঘা তুই নীলা মামনি রাগাচ্ছিস কেন???
____তো কি করবো মা তুমিই বলো???
___ও তোর হবু ননদী তাই ওকে আদর যত্ন খাতির কর!
___ আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো আর যে ওকে খাতির করতে যাবো হুহ।বলে নীলার দিকে তাকিয়ে ভেঙচি দিয়ে বললাম আমি।
____আন্টিইইই দেখো মেঘলা কি বলছে….

____হয়েছে হয়ছে তোরা ঝগরা বন্ধ কর।এখন খেতে আয়।বলেই মা চলে গেলো।সাথে আমরাও তার পিছে পিছে গেলাম।
এরপর দুজনে খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। রাস্তার মোড়ে আসতেই আমাদের সামনে একটা গাড়ি দাঁড়ালা।
গাড়িটা দেখেই বুঝতে পেরেছি এটা অভ্র বান্দরের গাড়ি।
___গাড়ি উঠো এটুকু বলেই চুপ করে গেলো অভ্র ভাইয়া।

____ নীলা গিয়ে পেছনের সিটে আসলো।সাথে আমিও পিছনের সিটে বসতে যাবো অমনি অভ্র ভাইয়া বলে উঠলো___ মিস মেঘা আপনার কি আমাকে ড্রাইভার মনে হয়??
___হ্যাঁ তো আপনি যেহেতু ড্রাইভ করছেন সেহেতু আপনি ড্রাইভার ওই।বলেই জ্বিভ কাটলাম।এ কি বলে ফেললাম আমি।

___অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো অভ্র ভাইয়া।
____ আমি কোনো কথা না বাড়িয়ে তার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম।নয়তো এই ওনি আমাকে মাথায় তুলে আচার মাড়বে। আর নাহয় মাঝরাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিবে।
কিছুক্ষণ পর ভার্সিটি পৌঁছাতেই নীলা চট করে নেমে ভার্সিটিতে ঢুকে পড়লো।আমি ওর এমন ব্যাবহারে থ হয়ে গেলাম।তারপর নিজে গাড়ি থেকে নামতে নিলেই হাতে টান পড়লো।মাথা ঘুরিয়ে পিছন ফিরে দেখলাম অভ্র ভাইয়া আমার হাত চেপে ধরে আছে।আমি ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম।

___ ক–ক– কি–কি করেছেন???
___একটু আগে আমায় যেন তুমি কি বলেছিলে??
চোখে সানগ্লাসটা চোখ থেকে নামিয়ে বললেন তিনি।
____ড্রাইভার বলেছি।এটুকু বলেই তিনি আমার হাতটা খুব জোরে চেপে ধরলেন।
( তার পরের টুকু তো আপনারা জানেন ওই…..)
ভার্সিটিতে ক্লাস করা কালিন কারো সাথে একটুও কথা বলিনি।ক্লাস শেষে একাই ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে
বাড়ি চলে এসেছি।

এখন ব্যালকানিতে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছি। বিকেল ৪:৩০
বাজে।
আকাশটা আজ ভিষন মেঘ করেছে। বড় বড় সাদা তুলোর ন্যায় মেঘ গুলো কালো কয়লার ন্যায় ধারণ করেছে।মনে হয় এক্ষনি ভয়ঙ্কর ঝড়োহাওয়া শুরু হবে।শো শো করে ঠান্ডা বালু মিশ্রিত বাতাস গুলো গিরিল ভেদ করে আমার সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে যাচ্ছে। গায়ের লোমকূপ গুলো জেগে উঠছে ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে।কেঁপে কেঁপে উঠছি মাঝে মাঝে।

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১

মনটা কেমন যেন আনচান করছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে! তার কারণ আমি খুজে পাচ্ছিনা। হঠাৎ হঠাৎ আমার এমন হয়।বিশেষ করে সেদিনের পর যেদিন রিদ ভাইয়া আমাকে রিজেক্ট করেছিলো।
রিদ ভাইয়াকে আমি অনেক ভালোবাসতাম।সেদিন ওনার কথাগুলো শোনার পর আমার পুরো দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে গিয়ে ছিলো।মানষিক ভাবে অনেকটা বিধস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু তার মধ্যেও নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে সবার সাথেই মিশে হেঁসে খেলে বেড়িয়ে ছিলাম।কিন্তু মনের ভিতরটায় তখন রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিলো। হৃদয়টা কাঁচের ন্যায় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিলো।

এখন আমার একটাই প্রশ্ন আমার এই ভাঙা হৃদয় কি জোরা লাগবে কখনো???
শুনেছি ভাঙা হৃদয় জোড়া লাগেনা।তাহলে???
এসব ভাবছি তখনি চেয়ারে রাখা ফোনটা টুং করে বেঁজে উঠলো।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম সেই আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ।
মেসেজটা পরেই আমার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ো গেলো।

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ৩