অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১৩

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১৩
অস্মিতা রোদৌসি

বাবা, মা, বড়আম্মু, বড়আব্বু আমি তোমাদের কিছু বলতে চাই।জানিনা তোমরা আমার কথাগুলো কিভাবে নিবে বাট এটাই সত্যি। কোনো সংকোচ ছারাই কথা গুলো বললো মিঠি।
____হুম বলো কি বলতে চাও।বললো মিহির বাবা।
____হুম মিঠি মা কি বলতে চাও তা র্নিরভয়ে বলতে পারো।বড়আব্বু বললেন।
___আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি।এবং তাকে আমি বিয়ে করতে চাই।
___কে সে???বললো মিঠির মা।
____রিদ ভাইয়া!”!

____কিহহহহহ।ফাজলামো করছিস তুই মিঠি আমাদের সাথে???বললেন রিদের মা।
___না আমি কোনো প্রকার ফাজলামো করছি না।আমি রিদ ভাইয়ে ভালোবাসি।এবং তাকেই বিয়ে করতে চাই।ব্যাস।
____মিঠি কি বলছো কার সামনে দাড়িয়ে কথাগুলো বলছো তা কি তোমার খেয়াল আছে???কিছুটা রেগে মেগে কথাগুলো বললো মিহির বাবা।
____আমি কিছু জানিনা বুঝিনা।আমি রিদ ভাইয়াকে ভালোবাসি এবং আমার তাকেই চাই।
____রিদ ও কি তোমায় পছন্দ করে??রশিদের আব্বু
____না।আমাদের মধ্য তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।কিন্তু আমি রিদ ভাইয়াকে ভালোবাসি।কাঠ কাঠ কন্ঠে জবাব দিলো মিঠি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

____মিঠি খুব বেয়াদব হয়ে গেছো??রিদ তোমার ভাই
___না মা।আমি রিদ ভাইয়াকে কখনো ভাইয়ের চোখে দেখিনি।
____আচ্ছা তুমি ঘরে যাও।শান্ত কন্ঠে বললো রশিদের বাবা মানে মিহির বড়আব্বু।
____জি। বলেই সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো মিঠি।

রুমে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে একটা বড় নিশ্বাস ছাড়লো। আজ কথা গুলো বলতে কেনো জানিনা মিহির একটুও ভয় করেনি।সাধারণত সে তার বাবা মাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়।কারণ তারা খুব শাসন করেছে ছোট থেকেই মিঠি ও মেঘাকে।আদর পেয়েছে বেশি তার বড়আম্মু ও বড়আব্বুর থেকে।

কথাগুলো কোন সেন্সরে বলেছে মিঠি তাই বুঝতে পারছে না।নিজেকে কেমন যেন মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে। মাতালের মতো সব সত্য গড়গড় করে বলে দিয়েছে মিঠি।এখন এসব ভাবতেই হাত পা কাঁপছে মিঠির।কি হবে না হবে এসব নিয়ে তো চিন্তা পড়েই আছে।আরেক দিকে তার রিদ তাকে ভালোবাসে না।এটাই তাকে সর্বক্ষন কয়লার ন্যায় হৃদয়টা জ্বালাচ্ছে।

সবকিছুই এখন তার বিষাদ সময় লাগে।রিদ বর্তমান অবস্থা দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে মিঠির।
এসব ভাবতেই মিঠির চোখে জলে ভরে গেলো।হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো মিঠি।

২ দিন হয়ে গেলো অভ্র আমার সাথে কথা বলছেনা প্রয়োজন ছাড়া।আমি আর সয্য করতে পারছিনা তার ইগনোর।কষ্ট হচ্ছে খুব।তার দুষ্টমি গুলো খুব মিস করছি।ইদানিং তাকে ছাড়া একটা মহূর্তো আমি থাকতে পারিনা।কেমন যেন সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তার বুকে মাথা না রাখলে ঠিকমতো ঘুম হয়না।
___তবে কি আমি???

হুম আমি আমার উওর পেয়ে গেছি।হ্যাঁ আমি ভালোবেসে ফেলেছি।অভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছি।খুব ভালোবেসে ফেলেছি।
নিজেই নিজের প্রশ্নের উওর পেয়ে গেছি।হ্যাঁ মিস্টার অভ্র আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।আপনার স্বাভাবগুলো,রাগ,জিদ,কেয়ারিং, দুষ্টমি এসবের আমি প্রেমে পড়ে গেছি।নিজের অজান্তেই কখন যে আপনাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেই জানিনা আমি।
কানে হেডফোন লাগিয়ে স্যাড গান শুনছি রুমে শুয়ে আর এসব ভাবছি।
তখনি পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেলাম।নীলা আমার পাশে বসে আছে।কান থেকে হেডফোন খুলে উঠে বসলাম।

____কিরে নীলা কি হয়েছে এমন হুতুম পেঁচার মতো মুক করে রেখেছিস কেনো???
____মেঘা তোকে একটা কথা বলা হয়নি!!!
____কি?খানিকটা অবাক হয়ে বললাম আমি।
____আমি তোর ভাইকে ভালোবাসি।
____হুম তা তো আমি জানি।রিহান ভাইয়াও তোকে ভালোবাসে।
____রিহানের কথা বলিনি। বলেছি মুহিতের কথা।
___হোয়াট??

কথাটা শোনা মাএই আমি সপ্তম আকাশ থেকে পরার মতো অবস্থায় চলে গেলাম বলে মনে হলো আমার।কি বলছে এসব নীলা।মুহিত ভাইয়াকে নীলা ভালোবাসে??
____তোকে আমি লজ্জায় কথাটা বলতে পারিনি এতোদিন তার জন্য সরি রে।কিন্তু তোর ঔ খাটাশ ভাইটাকে কত বার প্রপোজ করেছি বাট সে একসেপ্ট করেনি।তাই আমি রাগের মাথায় রিহানকে বিয়ে করার সিন্ধান্ত নিয়েছি।কিন্তু এখন আবার তোর ভাই এই বিয়েতে বাধ সাধতেছে।
____কি!!এতকিছু হয়ে গেছে আর আমি কিছুই জানিনা!!!তুই আমাকে এর কানাকড়িও জানাস নি।
____ বললাম তো লজ্জায় বলতে পারিনি।
____তো ভাইয়া কি তোকে ভালোবাসে??

____হুম বাট সেটা সোজাসুজি মুখে প্রকাশ করবেনা খাটাশটা।মুখ বাঁকিয়ে বললো নীলা।
____এই এই মুখ সামলে কথা বল।তুই আমার ভাইকে লেন খাটাশ বলিস হ্যাঁ??
____এহ নিজে মনে হয় সাধু।তুই যে আমার ভাইকে খাটাশ,রাক্ষস,শয়তান আরো কত কি বলিস তাতে কিছু যায় আসেনা হ্যাঁ????
____তোর ভাই যেটার যোগ্য সেটাই বলেছি।
____তোর ভাই বুঝি খুব যোগ্যবান!!!হুহ।

____হুম আমার সব দিক দিয়েই পারফেক্ট বুঝছিস।কত মেয়ে চমার ভাইয়ের পিছনে লাইন দিয়ে আছে।
____আর আমার ভাই কেমন পারফেক্ট কতটা হ্যান্ডসাম কত মেয়ে তার পিছনে ঘোরে সেটা তুই ভালো করেই জানিস।এখনো কিন্তু অনেক মেয়ে ভাইয়ার পিছনে ঘোরে।কাল আসছে রিয়া আপু।তখন দেখবি কি কি হয়।তখনি আসবে আব আয়েগা মাজা।
____এই রিয়াটা আবার কে??

____আমার মামাতো একমাত্র আদরের মেয়ে রিয়া।মালোশিয়ায় থাকে।অভ্র ভাইয়া বলতে পাগল।যদি এসে শুনে অভ্র ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে!!তখন তো বাড়িতে টর্নেডো শুরু হয়ে যাবে।
____হুহ আমার জামাইয়ের দিকে যে কু নজরে তাকাবে আল্লাহ তার চোখ দুইটা কানা করে দিবে হুহ।
___ওমা তাই নাকি।এত ভালোবাসিস আমার ভাইকে??কবে থেকে ভালোবাসতে শুরু করলি রে হুম???চোখ টিপ দুষ্ট হেসে বললো নীলা।
____আচ্ছা চল ছাদে যাই।তুই ছাদে যা আমি কফি নিয়ে আসছি।বললাম আমি।
____ওকে চল।

রাত ১১ টা বাজে এখনো বাড়ি ফেরেনি অভ্র। খাবার টেবিলে সব খাবার ঢেকে রেখে ব্যালকানিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছি।
আজ অভ্রের রাগ ভাঙানোর জন্য তার পছন্দের খাবার
রান্না করেছি। মোরগ পোলাও,গরুর মাংসের কালা ভুনা,ছোলাবুটের ডাল,সবজি,ইলিশ মাছ ভাজা,ফিরনি,
আর চালতার আচার।সবগুলোই অভ্রের ফেবারিট।

আজ মোটা গোল্ড পাড়ের ব্লাক সিল্ক শাড়ি পড়েছি।মেকআপ করিনি শুধু_ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক, চোখে মোটা করে কাজল,নাকে একটা ডায়মন্ডের নোজপিন,একজোড়া স্টোনের ঝুমকো,গলায় শুধু অভ্রের দেয়া স্বণের চেন।আর অভ্রের দেয়া পায়েল ব্যাস একটুই।
কতক্ষণ ধরে অভ্রের অপেক্ষা করছি বাট তার আসার নাম নেই।ফোন দিয়েছি কয়েকবার।বাট সে রিসিভ করেনি।তাই রাগ করে আর ফোন দেই নি।
আজ আকাশে অজশ্র তারার মেলা বসেছে চাঁদকে উদ্দেশ্য করে।সেই চাঁদের আলো পুরো চারপাশটা আলোকিত করেছে।রাতের আকাশ আমার খুব পছন্দের।তারা গুনতে বেশ লাগে।যদিও তারা গুনে শেষ করতে পারিনা।

মনটাকে ভালো করার জন্য গলায় সুর তুললাম____
আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই,তুমি তাই গোওও
আমারো পরানো যাহা চায়
এটুকু বলতে অভ্রের আসার ইঙ্গিত পেলাম কারণ।গাড়ির হরং বাজছে।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো আমার।আমার এই তৃষ্ণাত্ব চোখ এখন অভ্রকে দেখার জন্য ছটছট করছে।তাকে সম্মুখে দেখে হয়তো আমার এই বেহায়া চোখের তৃষ্ণা মিটবে।হয়তো মিটবেনা আজীবন।
ব্যালকানিতে থেকে রুমে এসে কিছুক্ষণ কলিং বেলের জন্য অপেক্ষা করে নিচে নামলাম।অভ্র কলিং বেল বাজাচ্ছে বারবার।

দরজার কাছে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে বড় একটা শ্বাস নিলাম।কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে।কোনোদিন তো এত লজ্জা লাগেনি আমার অভ্রকে দেখে।তবে আজ এত লজ্জা কেন লাগছে!?হয়তো অভ্রকে ভালোবাসি বলে!!!
কাঁপা কাঁপা হাতে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।অভ্রের চোখের দিকে তাকালাম।অভ্র আমাকে দেখে হয়তো থমকে গেছে।কোনো প্রকার নড়াচড়া করছেনা।চোখের পলক ও ফেলছে না।তাতে আরো লজ্জা পেলাম আমি।

____এইযে মিস্টার??
কোনো সাড়া ছিলোনা অভ্র তা দেখে আবার বললাম
___অভ্র শুনছেন??নাহ এবারো কোনো সাড়া পেলাম না।
____অভ্রওওওও তার কানের কাছে চিৎকার করে বললাম আমি।
____ছিটকে পড়লো অভ্র।হয়তো আমার চিৎকারে ভয় পেয়েছে।
____দাড়িয়ে না থেকে ভেতরে আসুন।
____অভ্র কিছু না বলে ঢুকলো ভিতরে।
সোজা রুমে চলে গেলো।
____আর আমি ডাইয়িং টেবিলে চেয়ারে বসে আছি।
তার অপেক্ষায় আছি।ফ্রেশ হয়ে কখন নিচে আসবে মহারাজ।

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১২

রিদ আমারা সবাই মিলে সিন্ধান্ত নিয়েছি যে মিঠির সাথে তোমার বিয়েটা এই পরের মাসে সেরে ফেলবো।
রিদ চমকে উঠলো। ডয়িংরুমে বাড়ির সবাই বসে আছে।চিন্তিত মুখ নিয়ে।এমন সময় কথাটা বলে উঠলো রিদের বাবা।
____আব্বু কি বলছো এসব??মিঠির সাথে আমার বিয়ে??
____হ্যাঁ।মিঠির সাথে তোমার বিয়ে।
____অসম্ভব।আমি মিঠিকে বিয়ে করতে পারবোনা আব্বু।
____কেন?

____কারণ আমি মিঠিকে কখনো বোনের চোখে ছারা অন্যচোখে দেখিনি।
____এটা কোনো ম্যাটার না রিদ।আর মিঠি তোমাকে পছন্দ করে।আর মিঠি পরিবারের ছোট মেয়ে।ও যদি সারাজীবন এ বাড়িতে থাকে তাহলে তো ভালোই।বললো রিদের মা।
_____নাহ আমি পারবোনা মিয়িকে বিয়ে করতে
পারবোনা।

____রিদ?আমি যা বলেছি তাই হবে।বুঝেছো??
____কিন্তু বাবা???।
____কোনো কিন্তু শুনতে চাইছিনা আমি।বুঝেছো।
রেগে বললেন রিদের বাবা।
রিদ তার বাবার কথায় মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে গেলো।

অন্যরকম প্রেমানূভুতি শেষ পর্ব