অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১১

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১১
অস্মিতা রোদৌসি

নীলা তুমি তো আমাকে ভালোবাসো।তাহলে তুমি কিভাবে রিহান কে বিয়ে করতে পারো???তাহলে কি এসব তোমার অভিনয় ছিলো?? বলো??
নীলার হাত চেপে কথা গুলো বললো মুহিত।

____ হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর বাসিনা।আপনাকে কতশত বার বলেছি আপনাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি।কিন্তু আপনার একটাই উওর ছিলো যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।তো যে আমাকে ভালোবাসে না তাকে ভালোবেসে আমার লাভ কি?বরং যে আমাকে ভালোবাসে আমি তাকেও ভালোবাসি।বা বাসবো।রিহান আমাকে ভালোবাসে এবং বিয়ের প্রোপজাল দিয়েছে সেটা আমি কিভাবে ফিরিয়ে দি বলেন?আর রিহান দেখতে শুনতে বেশ তাহলে তাকে রিজেক্ট করার কোনো প্রশ্নই আসেনা আমার।বলেই মুহিতের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো নীলা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

___নীলপরি তুমি এখনে?? আর আমি তোমাকে পুরো ক্যামপাস খুঁজলাম। বলেই নীলার সামনে এসে দাঁড়ালো
রিহান।
___একটু মুহিত ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম আর।আর জানেন ওনি আমাদের শুভেচ্ছা জানালেন।বলেই মলিন হাসলো নীলা।
___ ধন্যবাদ মুহিত।তুই কখন এলি এখানে??ভাবি এই ভার্সিটি পড়ে নাকি হুমমম???এক চোখ টিপে দুষ্ট হেঁসে মুহিত কে উদ্দেশ্য করে বললো রিহান।

____হুম আমিও তো তাই জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়াকে।তো ভাইয়া বলতেই চাইছেনা।বললো নীলা।
____ আচ্ছা তুই ভাবির সাথে দেখা কর।আমি আর নীলপরী সঙ্গে একটু বের হবো।বলেই নীলার হাত ধরলো রিহান।
এতক্ষণ সব চুপ করে সব শুনলেও রিহানের নীলার হাত ধরাটা একটুও পছন্দ হলো না মুহিতের।বরং ভিষন রেগে গেলো মুহিত।ইচ্ছে করছে রিহানের মাথা ফাটিয়ে দিতে।
নীলা হেসে রিহানের হাত চেপে ধরে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে গেলো।আর এদিকে মুহিতের রাগে চোখ দুটো লালে লাল হয়ে গেছে।

রুমে শুয়ে আছি।জ্বর এসেছে।শরীর খুব দূর্বল।মাথাটা ভার ভার লাগছে। জ্বর এলেই আমার এমন অবস্থা।
___জান নাও খাবারটা খেয়ে নাও।খাবার এনে বেড সাইডের টেবিলে রেখে বললো অভ্র।
___ না খাবো না।চোখ মুখ কুঁচকে কথাটা বললাম আমি কারণ এখন খেতে একদমই ইচ্ছে করছেনা আমার।
___, আরে জান তোমার প্রিয় চিকেন ফ্রাই বানিয়েছি।তাও কি খাবেনা নাকি হুম???
___চিকেন ফ্রাইয়ের কথা শুনে মনটা ভালে হয়ে গেলো।সাথে অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেলাম। কারণ চিকেন ফ্রাই আমার খুব পছন্দ। একেবারে জানে জিগার।

শোয়া থেকে উঠে বসে টেবিল থেকে চিকেন ফ্রাইয়ের বাটিটা হাতে নিলাম।হঠাৎ অভ্রর হাসার শব্দে চমকে উঠলাম।
____ এই তো বললে তুমি যাবেনা।কিন্তু চিকেন ফ্রাইয়ের নাম শুনে___এটুকু বলতেই আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম___ হয়েছে হয়েছে এভাবে আমাকে লজ্জা না দিলেও পারেন।নিশ্চয়ই আপনি জানেন আমার চিকেন ফ্রাই পছন্দ তাই আমাকে লোভ দেখাতে চিকেন ফ্রাই নিয়ে এসেছেন তাই।খাটাশ লোক একটা!!!
___তোমাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য নয়।তোমাকে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে এসেছি।আর তুমি প্রথম তোমার হাজবেন্ডের নিজের হাতের তৈরি করা চিকেন ফ্রাই খাবে।বুঝেছো??

___হু বলেই খাওয়া শুরু করলাম।চিকেনের একটা রানে কামর দিতেই আমার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গেলো।এত সুস্বাদু আর টেস্টি যা বলে বুঝুনো যাবে নাহ।মনটা ভরে গেলে সাথে গর্বেরও যে আমার হাজবেন্ড রান্না করতে জানে।সাথে এত সুস্বাদু চিকেন ফ্রাই।
কোনো কথা না বলে খাওয়ায় মন দিলাম।আর এদিকে অভ্র আমার দিকে এক ধান্দায় চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচালাম।
খাওয়া শেষে হঠাৎ কাশি উঠে গেলো।

____ আরে জান আস্তে খাও।তোমার ভাগের গুলা তো আর আমি খেয়ে নিচ্ছি না।বলেই আমার সামনে পানির গ্লাস ধরলো অভ্র।আমি ঢকঢকে পুরো একগ্লাস পানি খেয়ে ফেললাম।লজ্জা লাগছে খুব এখন নিজেরই।চিকেন ফ্রাই পেয়ে রাক্ষসী হয়ে গেছিলাম মনে হয়।
মেডিসিনটা খেয়ে নাও।বলেই আমার মুখের সামনে পানির গ্লাস আর ট্যাবলেট ধরলো অভ্র।মানুষটার কান্ড গুলো আমার প্রচুর পরিমাণে অবাক করছে।এই খাটাশ মানুষটার এত রুপ!!!!

বাধ্য মেয়ের মতো তার সব কথা শুনলাম।আমি শুয়ে আছি আর তিনি আমার মাথায় কাছে শুয়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।
অভ্র তার শুভ্রপরির মাথায় ডিপ কিস করে।আলমারি হতে একটা ডায়েরি বের করে নিয়ে ব্যালকানিতে গেলো।

ডায়েরিটায় তার মনের সব কথা লেখা আছে।
ডায়েরিটা অভ্রের খুব পছন্দের।স্বরণীয় কষ্ট দুঃখ
বা তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা এখানে লিখে রাখে অভ্র।তেমনি মেঘাকে প্রথম দেখে প্রমে পড়া,মেঘার প্রতি ফিলিংস সব ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে অভ্র।হ্যাঁ আজও সে কিছু লিখবে তাও তার শুভ্র পরিকে নিয়ে।

কড়া রোদে ছাদে দাড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে রিদ।অশান্ত হৃদয়কে বোঝাবার জন্য কতশত বাহানা কত সিগারেটের ধোয়া উড়িয়েছে। কিন্তু নাহ তার অশান্ত হৃদয় কিছুতেই শান্ত হচ্ছেনা।মেঘাকে না পাওয়ার যন্ত্রনা আরো তিব্রো হচ্ছে।কলিজায় যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছি।দাও দাও করে জ্বলছে তার কলিজা।
____মেঘু ফিরে আয়না প্লিজ আমার কাছে।আর একটা সুযোগ দে আমায়।আর একটা!!!বিরবির করে কথাটা বলছে রিদ।
___ রিদ ভাইয়া????

কারো ডাকে পিছন ফিরলো রিদ।সামনে চিন্তিত মুখ নিয়ে দ্বারিয়ে আছে মিঠি।একবার মিঠিকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে আগের মতো সিগারেট টানতে লাগলো রিদ।মিঠির ডাকে সাড়া না দিয়ে।
___ভাইয়া এই কড়া রোদে ছাদে দাড়িয়ে কি করছো তুমি??হ্যাঁ
___এমনি
___তুমি তো আগে সিগারেট খেতে না। বলতে সিগারেট খেলে তোমার বুক জ্বলে।এখন কেন সিগারেট খাচ্ছে হুম।বড়আম্মুকে কিন্তু বলে দিবো তোমার কথা।

____বুকটা যে পরিমাণে জ্বলছে তার কাছে সিগারেটের জ্বালা কিছুই না।তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো রিদ।
___মেঘলা আপুকে মিস করছো খুব তাইনা??
__মিঠির কথায় শূন্য দৃষ্টিতে মিহির দিকে তাকালো রিদ।
____জানো রিদ ভাইয়া অভ্র জিজু না মেঘা আপুকে খুব ভালোবাসে খুব।আর মেঘা আপু অভ্র ভাইয়ার সাথে খুব সুখে থাকবে।একদিন না একদিন মেঘা আপুও অভ্র ভাইয়াকে পাগলের মতো ভালোবাসবে।একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠবে।

___মিহির কথায় কলিজাটা ধক করে উঠলো রিদের।হৃদয়টা ভারি হয়ে এলো।চোখদুটো ছলছল হয়ে উঠলো।সত্যিই কি মেঘা তাকে ভুলে যাবে?ভালোবাসবে
অন্যকাউকে।তার প্রেয়সি হয়ে উঠবে অন্যকারে প্রেয়সি!!
____তুমি প্লিজ আপুকে ভেবে আর কষ্ট পেওনা।যখন ছিলো তখন কেন তার মর্ম বুঝো নি।যখন সে নেই তখন তার মর্ম বুঝে লাভ কি??? বলো??
____হুম ঠিক বলেছিস তুই মিঠি।সময় থাকতে সময়ের মূল্য বুঝিনি।কাউকে ঠকানোর শাস্তি এখন আমি তিলেতিলে ভোগ করছি।হয়তো সে আমার ভাগ্যেই
ছিলো নাহ।

___হয়তো তাই।বাট তাই বলে কি তুমি তোমার ক্যারিয়ার আর নিজেকে এমন ধ্বংসের পথে ঠেলে দিবে??প্রাণ খুলে বাঁচার ইচ্ছে হয়না তোমার???ইচ্ছে হয়না আগের মতো হাসি খুশি নিশচিন্ত ক-তে বাঁচতে।
,___আগের মতো করে বাঁচতে চাইলে যে আমার মেঘুকে চাই।তাকে ছাড়া কিভাবে আগের মতে হাসি খুশি থাকবো আমি।কে আমাকে ভালোবাসবে,
পাগলামি করবে,খাওয়াই দিবে,ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়না করবে??রাস্তায় কে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে চলবে।বলতে পারিস???

___কেনো ভাইয়া মেঘা আপুর জায়গাটা কি আমাকে দেয়া যায়না।জানি মেঘলা আপুর জায়গা আমি নিতে পারবোনা।তবুও যদি তুমি আমাকে তার মতো করে ভালোবাসতে??আমি যে তোমায় বড্ড ভালোবাসি!!
মিহির কথায় খুব বড়সড় ঝটকা খেলো রিদ।বড়বড় চেখ করে মিহির দিকে ঘুরে তাকালো সে।
___ কি সব আজে বাজে কথা বলছিস তুই মিঠি??দেখ আমি কিন্তু মজা করার মুডে নেই।সেটা তুই খুব ভালো করেই জানিস??

___আমি মজা করছিনা রিদ ভাইয়া।আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি।সেই ক্লাস নাইন থেকে তোমায় ভালোবাসি।কিন্তু বলতে পারিনি। দুপাশে এগিয়ে রিদের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো মিঠি।
___ঠাসসসসসস করে মিঠির বাম গালে একটা চর বসিয়ে দিলো রিদ।রাগে তার চোখ দুটো লাল আভায় ছেয়ে গেছে।দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
এদিকে গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে মিঠি।
___তোর লজ্জা করেনা এসব বলতে??তুই জানিস আমি মেঘাকে ভালোবাসি শুধু মেঘাকে।আর তোকে নিজের বোনের চোখে দেখি আমি।আর তুই কিনা??ছিহহহহ!!!!বলেই হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেলো রিদ।

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ৯+১০

ধুপ করে বসে পড়লো মিঠি।গলা ফাঠিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে সে।আজও তার প্রিয় মানুষটা তাকে ফিরিয়ে দিলো।এক বুক কষ্টের জোয়ারে তাকে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলো রিদ।কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে তার।একতরফা ভালোবাসায় এত কষ্ট তা হয়তো এখন বুঝতে পারছে সে।

কিরে পেত্নী রিহান ভাইয়ার সাথে কোথায় কেথায় ঘুড়লি রে???বললাম আমি।
____হু অনেক জায়গায় ঘরেছি।
____ কেমন লাগলো রিহান ভাইয়াকে???
___বেশ ভালোই।
___কিরে এমন মন মরা হয়ে আছিস কেন হ্যাঁ???
___নাহ না তো।

____সবসময় তো বকবক করতেই থাকিস।অলওয়েজ তোর মুখে খই ফুটতেই থাকে আর আজ???নাকি রিহান ভাইয়ার কথা ভাবছিস???হুমম…!চোখ মেরে নীলাকে কথাটা বললাম আমি।
____আরে গাধী আমি রিহান নয় তোর শয়তান,খাটাশ ভাইটার কথা ভাবছি।এমন একটা খচ্চর লোককে ভালোবেসেছি যে কিনা কখনোই আমার ভালোবাসা বুঝলোনা।মনে মনে বললো নীলা।

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১২