অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ৩

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ৩
অস্মিতা রোদৌসি

যাকে ভালোবাসিনা… যাকে আমি দু চখোক্ষেই সয্য পর্যন্ত করতে পারিনা। তাকে স্বামী হিসেবে কিভাবে মানবো?!!! কিভাবে?? উওরটা দিতে পারিস মিঠি?
____ আপু তুই এসব কি বলছিস বলতো???অভ্র ভাইয়া কোনদিক দিয়ে খারাপ বলতো?? যে তাকে তুই দুই চোখে সয্য করতে পারিনা??

____জানিনারে।বাট ওনার চালচলন মুড এসব আমার একদমি পছন্দ না।
___তুমি সবসময় পারফেক্ট মানুষকেই পছন্দ করো।নিজের যাকে ভালো লাগে তাকেই প্রাধান্য দাও কেনো বলোতো???রিদ ভাইয়া তো তোমার পছন্দের মানুষ ছিলো।এখনও কি সে তোমার পছন্দের মানুষ আছে??বা ভালোবাসার??? তোমার যাকে ভালো লাগেনা।তাকে অন্যকারো ভালো লাগতে পারে।হয়তোবা ভিষন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তোমার অপছন্দের মানুষটাকে যদি অন্যকারো ভালো লাগে তাহলে তোমাকে সেই মানুষটার ভালো দিক ভালো গুণ সব প্রতক্ষ ভাবে পর্যবেক্ষন করতে হবে।তারও কিছু স্বাভাব কিছু ভালোলাগা তার মনের কথা গুলো তোমায় বুঝতে হবে।তবেই তুমি সেই মানুষটার প্রতি বিরক্ত হবেনা।তার প্রতি তোমার একটা মুগ্ধতা তৈরি হবে।সবসময় একটা মানুষ তোমার সামনে যা দেখায় ভিতরে তো সে তেমন নাও হতে পারে।একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে কথা গুলো বললো মিঠি।আমি অবাক হয়ে মিঠির কথা শুনে যাচ্ছি।এটুকু একটা মেয়ে অথচ তার কথাগুলোর অর্থ বিশাল। আসলেই কথা গুলো একদম ঠিক।মেয়েটা অনেক বুঝদার।এতোটা বুঝদার হয়তো আমিও না।

____হুম ঠিক বলেছিস। হয়তো আমিই একটু বেশি নেগেটিভ ভাবি অভ্র ভাইয়ার ব্যাপারে।মিহি কন্ঠে বললাম আমি।
___ আপু আমার এসাইনমেন্ট লেখা বাকি আছে আমি গেলাম।বলেই চলে গেলো মিঠি।
মিঠি মেয়েটা ছোট থেকে বড্ড শান্তশিষ্ট, বুদ্ধিমতি, আর
সহনশীল।
এবার মিঠি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠবে।আমি এবার অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে উঠবো।২ বছরের ছোট বড়ো আমারা।অথচ দুজনেই বন্ধু।কেউ বলবেনা আমরা দুজন বোন।সবাই বলবে আমরা বন্ধু।না চেহারায় মিল না ব্যাবহারে আচরণে।

আপুরে প্রিয় মানুষটাকে হারানোর যন্ত্রনা যেমন তুই ভোগ করছিস তেমন আমিও।ভালোবাসার মানুষটাকে
নিজের চোখের সামনে অন্যকারো হতে দেখা বড্ড কষ্টকর।বলতে গেলে ভয়ঙ্কর এক গুমরানো যন্ত্রনা।যদি সেটা হয় ওয়ান সাইড লাভ।এই যন্ত্রনা নিজের মনের মধ্যে থেকেই ধীরে ধীরে নিজের সর্বস্ব গ্রাস করে ফেলে।
না যায় কাউকে বলা না যায় সয্য করা।
কথাগুলো মনে মনে বলেই চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রু সযত্নে মুছে ফেললো মিঠি।তারপর নিজের রুমে চলে গেলো।

ছাদের এককোণে হাঁটু মুড়ে বসে চোখ বুঝে গিটার টুং টাং আওয়াজ তুলছে অভ্র।আর তার পাশেই বসে আছে নীলা।
ভাইয়া একটা গান গা না প্লিজজজ আমার কিউট ভাবিকে ডেডিকেট করে প্লিজজজজজ….মিনতি কন্ঠে বলে উঠলো নিলা।
অভ্র চোখ বন্ধ রাত অবস্থায় নীলার কথা শুনে মুচকি হাসলো।আর গলায় সুর তুললো ______

ওহে কি করিলে বলো পাবো তোমারে??
রাখিবো আঁখিতে আঁখিতে। (২)
ওহে এত প্রেম কোথা পাবোনা। (২)
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।
আমার সার্থ কিবা তোমায়??
দয়া না করিলে কে পারে!!
তুমি আপনি না এলে কে পারে
হৃদয়ে রাখিতে।
মাঝে মাঝে কেন তব দেখা পাই।
চিরদিন কেন পাইনা। (২)
ওহে কি করিলে পাইবো তোমারে
রাখবো আঁখিতে আঁখিতে. (২)

গানটা শেষ করেই চোখ খুললো অভ্র।ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি।সেই হাসির কারণে গালের মধ্যভাগে টোলটা লুকোচুরি খেলছে।
নিলা একদৃষ্টিতে চেয়ে দেখছে তার ভাইকে আর ভাবছে____ আগের অভ্র আর এখন কার অভ্রের আকাশ পাতাল তফাত।
তার বদমেজাজী,রাগী,গম্ভীর ভাইটা এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে।সেটা একমাত্র তার চঞ্চল, দুষ্টু বান্ধবী মেঘনার জন্য।ওফফফ এখন তো বান্ধবী নয় ভাবিইইই।

হঠাৎ দমকা হাওয়ার মতো আমার হৃদয়েকে প্রেমো স্পর্শে ছুঁয়ে গেলো সে।তার কাজল রাঙা চোখে ভয়ঙ্কর ভাবে নেশাক্ত হয়ে পড়লাম।তার খোলা চুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আমায় বরংবার মাতাল করেছে।তার চোখের অতল স্পর্শ করতে পারলেও সে তা পারেনি।কেন পারেনি বলতে পারিস নীলা???অভ্র আকাশের দিকে তাকিয়েই
প্রশ্ন করলো নীলাকে।

ভাইয়া মেঘার হৃদয়ের সবটাজুড়ে বসত করছে রিদ ভাইয়া।দীর্ঘ ২টা বছর ধরে।খুব ভালোবাসে মেয়েটা রিদ ভাইয়া।আর সেই জন্যই সে তোমার চোখের ভাষা বুঝতে পারছেনা বা চাইছেনা।নীলা ধীরে ধীরে বললো কথা গুলো।
নীলার কথা শুনে অভ্রর বুক চিরে বেড়িয়ে এলো একটি
দীর্ঘশ্বাস।হৃদয়টা ভারি হয়ে এলো।ধীর ধীর করে কাঁপতে থাকে তার হালকা গোলাপি ঠোঁটগুলো।হার্ডবিড দ্রুত চলছে।

হয়তো আমিই একটু বেশিই করে ফেলছি।অযাচিত ভাবে এসেছে সে আমার জিবনে।এই অন্ধকারছন্ন জিবনে এক টুকরো আলো হয়ে।
ভাইয়া আল্লাহর উপরে বিশ্বাস রাখো।তোমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই মেঘলা তোমারি হবে।খুব করে ভালেবাসবে তোমাকে।মলিন হেসে অভ্রকে আশ্বাস দিলো নীলা।

সকাল সাকাল ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চোখে গাড়ো করে কাজল দিচ্ছি।তখনি বিছানার উপরে থাকা ফোনটা টুং করে বেজে উঠলো।সময়কাল মাএ ৩ সেকেন্ড। মানে মেসেজ এসেছে।কল নয়…
দুপা এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম লাটসাহেব মেসেজ করেছে।

___নীচে তোমার জন্য ওয়েট করছি।তারাতারি এসো।
২ মিনিট সময় দিচ্ছি।মাইন্ড ইট।
মেসেজটা দেখে মেজাজটা বিগড়ে গেলো।এই হুতুম পেঁচাটা আমার পেছনে আঠার মতো চিপকে আছে।যতই নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে চাই ততই আরো চিপে যায়।বিয়ে না হতেই এত অধিকার ফলায় না জানি বিয়ের পর কি করবে।হুহ।
কাল রাতে এই লাটসাহেবর জন্যই বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনি।

সোজাসুজি মেসেজে লিখেছে_____ খবরদার বৃষ্টিতে ভেজার কথা মনেও আনবে না। আর যদি বৃষ্টিতে ভিজো তাহলে কালকের কথাতো মনেই আছে তোমার।
“অভ্র”
মেসেজটা পরার পর কিছুক্ষণ থমকে ছিলাম।মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছিলো এটা সেই হুতুমপেঁচা অভ্র।আর এই দুদিন করে উনিই আমাকে থ্রেড দিচ্ছিলেন….!!!!
এটুকু ভাবতেই মনে হলো লেট হয়ে যাছে।তাই বিছানার উপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে দ্রুত নিচে গেলাম।
নিচে নামার সময় চোখ পড়লো সোফায় বসে থাকা রিদ ভাইয়ার উপর।তিনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন।

বুকটা ধক করে উঠলো। কেমন এক অদ্ভুত যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে হৃদয়ে।অথচ মস্তিষ্ক লাল সিগন্যাল দিচ্ছে। সেটা হলো রাগের।রাগ হচ্ছে কিছুটা বেঈমান টাকে দেখে।
তুবুও নিজেকে সামলে স্বাভাবিক ভাবে নিচে নামলাম।
নীচে বড়আম্মু টেবিলে খাবার পরিবেশেন করছে।আম্মু হয়তো উপরে।তাই বড়আম্মুকে বললাম…বড়আম্মু আমি ভার্সিটি যাচ্ছি।ক্যান্টিনে খেয়ে নিবো।
___আরে এত তারাহুরা কেনো।খেয়ে যা??
___না গো। তোমাদের জামাই ওয়েট করছে।ওর সাথে আজ ব্রেকফাস্ট টা সেরে নিবো কেমন??মিষ্টি হেঁসে বললাম আমি।

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ২

আমার কথায় মিষ্টি হাসলো বড়আম্মু।আর অপরদিকে রিদ ভাইয়া আমার কথা শুনে ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেলেন।শূন্য চেখে চেয়ে আছে আমার দিকে।আমি মিটি মিটি হাসতে হাসতে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম।
রিদঃ মা কি বলছে মেঘা?
____কেনো রে তুই জানিস না? মেঘার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আকদ ও সম্পন্ন হয়েছে কিছুদিন হলো।উওর দিলো রিদের মা।

___ নাহ তো??অবিশ্বাস্য কন্ঠে জবাব দিলো রিদ।
___মেঘা বলেনি তোকে??আমার জানি মেঘলা হয়তো তোকে সব বলেছে তাই আমরা নতুন করে আর কিছু বলতে যাইনি।
___ রিদের বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো।কিন্তু কেন তা সে নিজেও জানে না।সে তো মেধাকে ভালোবাসে না।তাহলে এমন কষ্ট হচ্ছে কেন মেঘার বিয়ের কথা শুনে!!

এইযে মিস্টার ভাইয়া আমি আইসক্রিম খাবো।আজ আপনার তরফ থেকে আমার পার্টি।প্লিজজজজজ উত্তেজনা অভ্র ভাইয়াকে বললাম আমি।অথচ কথা বলেই নিজে নিজে অবাক হলাম।খুবববব অবাক!!

অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ৪