প্রেয়সী শেষ পর্ব

প্রেয়সী শেষ পর্ব
তানিশা সুলতানা

বহুবছর পরে মাহমুদার ফোনের স্কিনে শরীফ নামটা জ্বল জ্বল করে ওঠে। ব্যস্ত ভঙিতে খাতা দেখতে থাকা মাহমুদা থমকে যায়। বুকের ভেতরটা কাঁপতে থাকে তার।
মিথিকে ফোন কিনের দেওয়ার পর থেকে মাহমুদার নাম্বারে কখনোই শরীফ কল করে নি।
আগে মাঝেমধ্যে করতো। ছেলে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করে কল কেটে দিতো।
মাহমুদার চোখ দুটো টলমল করে ওঠে। কাঁপা-কাঁপি হাতে কলটা রিসিভ করে।
ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে একটা গম্ভীর কন্ঠ।

“কেমন আছো মাহমুদা?
দুগাল বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।হাতের উল্টো পিঠে মুছে নেয়। ধরে আসা গলাটা স্বাভাবিক করে জবাব দিতে চায় পারে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই ” কেমন আছো “কথাটা মাহমুদার বুকটাকে অশান্ত করে দিয়েছে। এই বছর পরে জিজ্ঞেস করলো লোকটা। মাহমুদা কতো অপেক্ষা করেছে। ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে থেকেছে। শরীফের নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়েও ফিরে এসেছে।
চলে আসার কিছু বছর পরেই মাহমুদা বুঝতে পেরেছিলো সে ভুল করেছে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার উপায় খুঁজে পায় নি।
” কথা বলবে না?

মাহমুদা এবার জোরে জোরে দুটো শ্বাস টেনে বলে
“ভালো আছি।।
” ছেলে বিয়ে করে নিয়েছে জানো?
“হুমম
” মেনে নিবে না?
“উপায় নেই।
” সব অভিমান ভুলে ফিরে আসা যায় না?

মাহমুদা জবাব দেয় না। শরীফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সবটা জানে তিনি। চাপা স্বভাবের মাহমুদার মনের খবর বুঝতে পেরেছিলেন৷ তাই সে মাহমুদাকে ফিরিয়ে নেয় নি।
শরীফ আবার বলে ওঠে
“এই বাড়িতে থাকতে হবে না। আমি নাহয় মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখে আসবো তোমাদের? আমি তো তোমার স্বামী। অতীত নিয়ে আর কতো দিন?
মাহমুদা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে

“আপনি আমায় সুযোগ দেন নি৷ আমায় আগলে রাখেন নি। আমাকে বোঝেন নি। বোঝান নি।
শরীফ হাসে। অভিযোগ মিথ্যে না। বোঝাতে পারতেন তিনি।
” ছেলে বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার আগে বাড়িতে ফিরে এসো। আমি আসছি তোমায় নিতে।
মাহমুদা জবাব দেয় না। শরীফ কল কেটে দেয়।

মুহিত মুচকি হাসে। সে মাকে বুঝিয়েছে। যেটা হয়েছে সেটা নিছক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা মনে রাখতে হয় তবে মনে পুষতে হয় না।
তাদের পরিবারটা সুন্দর হওয়া দরকার। শান্তি দরকার। এভাবে আর কতো দিন? একদিন তো পৃথিবী ছাড়তেই হবে৷ তবে ভালোবেসে সবাই এক সাথে থাকলে ক্ষতি কি?
মাহমুদা ছেলের কথা বুঝেছে। তাছাড়া তিনি নিজেও ক্লান্ত হয়ে গেছে। সেও শান্তির অভাবে ভুগছে। তারও একটু শান্তি দরকার।

শিউলির বিয়ের পরপরই আজাদের সাথে সম্পর্ক হয়। ভাবি ভাবি করে আজাদ মুখে ফেনা তুলে ফেলতো। আরিফের ভালো বন্ধু ছিলো আজাদ। দুজন এক সাথে পড়ালেখা করতো। এসএসসি পরিক্ষায় আজাদ ফেল করার পরে আর পড়ালেখা করে নি।

অধরা পৃথিবীতে আসার পরে শিউলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় আজাদের। আরিফ যেহেতু ঢাকায় চাকরি করতো তাই এসবের কিছুই সে ধরতে পারে নি শিউলিও বোধ বুদ্ধি হারিয়ে মজেছিলো আজাদে।

তাই সে একটা সময় স্বামী সংসার সন্তান ফেলে গহনা টাকা পয়সা নিয়ে আজাদের সাথে ভেজে যায়। আজাদ নেশা করে। কোনো কাজ করে না। তার নিয়ে যাওয়া টাকা পয়সায় বেশ কিছুদিন সুখে কেটেছে তাদের। তারপর থেকেই দুঃখ নেমেছে।
যে দুঃখ এই জীবনে শেষ হবে না।
চৌধুরী বাড়ির দিকে তাকিয়ে এসব ভাবে শিউলি। দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে নিজের কুড়ো ঘরের দিকে চলে যায়।

চৌধুরী বাড়ি আজকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সেখানে পা রাখবে চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে এবং তার বউ। মাহমুদাকে আব্দুল্লাহ গিয়ে নিয়ে এসেছে। শশুড়ের হাত ধরে অনেক কেঁদেছে মাহমুদা। তার সাথে খারাপ ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছে।
মুহিত ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনে ফিরছিলো তখনই দেখতে পায় জ্যোতি এবং মিথি তার পিছু নিয়েছে
মুহিত কড়া গলায় ডাকে মিথিকে।

মিথি চমকে ওঠে। জ্যোতি এক গাল হেসে এগিয়ে আসে
“ভালো আছেন? ননদের সাথে একটু ঘুরতে যাচ্ছিলাম
মিথি মাথা নিচু করে আছে।
মুহিত বলে

” তুই একে আমার ইনফরমেশন দিস?
“হ্যাঁ দেয় তো। আমি জোর করি বলে। একচুয়েলি ওর আমাকে ভাবি হিসেবে খুবই ভালো লেগেছে
মুহিত বাঁকা হাসে।
” শশুড় বাড়িতে চলো

বলেই মুহিত হাঁটতে থাকে। জ্যোতি লাফিয়ে ওঠে। মুহিত তাকে পছন্দ করেছে?
জ্যোতি দৌড়ে মুহিতের পাশাপাশি যায়। মুহিতের হাতটা ধরে। মুহিত কিছু বলে না। তাকায়ও না।
মিথি পেছন থেকে ছবি তুলে।
মিথিও আজকে ভীষণ খুশি৷ সে তার পরিবার পেয়েছে।

এতোটাও আশা করে নি অধরা। তাকে সবাই ভালোবেসে বরণ করে নিয়েছে। মাহিম এবং তার সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে। আরিফ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে আদর করেছে। মাহিম মাহমুদাকে অনেক বার সরি বলেছে। মাহমুদা মুচকি হেসে মাহিমের কপালে চুমু খেয়েছে।
মুহিতের সাথে জ্যোতিকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। মুহিত জ্যোতিকে মাহমুদার সামনে দাঁড় করিয়ে বলে

“মাম্মা চলবে?
মাহমুদা মুচকি হেসে জ্যোতির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। জ্যোতি জড়িয়ে ধরে মাহমুদাকে।
অবশেষে তাদের পরিবারটা পরিপূর্ণ হয়। সবাই এক সাথে মেতে ওঠে। অপূর্ণ জীবন পূর্ণতা পায়। শুধু একজনের দীর্ঘ শ্বাস দূর হয় সে।
আরিফ নিজের রুমে চলে যায়। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শিউলির বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। মুখ ফুটে বলে ওঠে

প্রেয়সী পর্ব ১৭

” কোথায় গেলে পাবো তারে
বুকের ভেতর যায় বাস
নিঃসঙ্গতা দগ্ধ হৃদয়
শুধুই চাপা দীর্ঘ শ্বাস ”
মোশাররফ হোসেন নীলয় ভাইয়ের লেখা

সমাপ্ত