ফেরারি প্রেম পর্ব ৫৬

ফেরারি প্রেম পর্ব ৫৬
নিশাত জাহান নিশি

নীহারিকাকে ছেড়ে রূপল ঘুমন্ত হৃদিকে কোলে তুলে নিলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী নিহাল আজ পিয়াসার সাথে তার শ্বশুড় বাড়ি যাবে। রূপল খায়নি ভেবে রূপলের খাবারটা মারজিনা বেগম প্যাক করে দিলেন! বিদায় নিয়ে সবাই গাড়িতে ওঠে বসল। গাড়ি ছেড়ে দিলো রূপলদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সরাদিনের ধকল ও ক্লান্তিতে সবার দেহ প্রায় অসাড় হয়ে এলো। রূপলরা তাদের বাড়িতে ফিরে যে যার মত ঘুমিয়ে পরল। তদ্রুপ নীহারিকারাও তাদের মেহমান ও আত্মীয়স্বজনদের বিদায় দিয়ে অগোছালো বাড়িটার টুকটাক কাজ গুছিয়ে শীঘ্রই ঘুমিয়ে পরল। সবারই এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। কাজের জন্য রাত জেগে থাকলেই শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তবে সেই রাতে ঘুমালোনা নিহাল ও পিয়াসা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তারা তাদের পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত! নিহাল চাইছে শীঘ্রই তার ঘর আলো করে সন্তান আসুক। বাবা ডাক শোনার জন্য তার ভেতরটা যেন খাঁ খাঁ করছে। তবে পিয়াসা চাইছে আরও কয়েকটা মাস সময় নিতে। সবে তো মাস খানিক হলো তাদের বিয়ের। এরমধ্যেই এত তাড়াহুড়ো কীসের? নিহালকে বেশ বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখছে পিয়াসা! বেশ সাবধানতা অবলম্বন করছে। পিয়াসার জেদের সাথে পেরে উঠছেনা নিহাল! যদিও এই ক্ষেত্রে দুজনেরই সম্মতির প্রয়োজন। তাই এই মুহূর্তে কেউ কাউকে জোর করাটা অনুচিত।

পরের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই রূপল লাগাতার নীহারিকার নাম্বারে ট্রাই করতে লাগল। নীহারিকা যদিও রূপলের ব্লক খুলে দিয়েছে তবে সকাল থেকেই নীহারিকা কাজে কাজে ভীষণ ব্যস্ত থাকায় রূপলের কলটি তুলতে পারছিলনা। যদিও রূপল বুঝতে পেরেছিল নীহারিকা কাজে ব্যস্ত। তাই সেও নীহারিকাকে তেমন জ্বালাতে চায়নি। নিজের মত করে ছেড়ে দিয়েছে।

সকালের নাশতা সেরেই রূপল এই প্রথম বারের মত নিহালের সাথে বাজারে গেল! শালা দুলাভাই মিলে অনেক অনেক বাজার করে আনল। দুপুর ঘনিয়ে সন্ধ্যাও হয়ে এলো। এরপরেও নীহারিকাকে কলে পাচ্ছিলনা রূপল। মাথা যেন গরম হয়ে গেল তার। শত ব্যস্ত থাকলেও নীহারিকার তো একবার উচিৎ ছিল ফোনটি চেক করার। সে তো জানে রূপল তাকে কল করবে। কল করে তাকে না পেলে পাগল হয়ে যাবে! জেনেও কেন এমন হেয়ালি করছে?

নীহারিকার উপর প্রচণ্ড রাগ নিয়ে রূপল এলাকার ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে বের হয়ে গেল। ঘণ্টা খানিক এভাবে পাড় হয়ে গেল। তার মনে কিছুতেই যেন শান্তি লাগছিলনা। মনে হচ্ছিল কিছু না কিছু তো একটা খারাপ ঘটছে নীহারিকার সাথে! যা সে আন্দাজ করতে পারছে। মনে অশান্তি নিয়েই শীঘ্রই রূপল এলাকা থেকে বের হয়ে গেল। বাইকে চেপে সোজা নীহারিকাদের বাড়িতে গিয়ে উঠল।

ড্রইং রুমে প্রবেশ করেই তাজ্জব বনে গেল রূপল! উজ্জ্বল তার পরিবারকে নিয়ে নীহারিকাদের বাড়িতে হাজির। শুধু তাই নয় সাথে একজন কাজী সাহেবও রয়েছেন! সবথেকে বেশী অবাক হলো রূপল তাদের সাথে নিহাল এবং পিয়াসাকে দেখে! তারা আবার কখন এই বাড়িতে এলো? তার অগোচরে কী হচ্ছে কী এখানে?
রূপলের হঠাৎ আগমনে পিয়াসা থতমতিয়ে গেল! হকচকানো দৃষ্টি ফেলল সে রূপলের দিকে। শুকনো গলায় বিড়বিড় করে বলল,

“হায় আল্লাহ্! ভাইয়া তো এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ এখানে টপকালো কীভাবে? তাহলে কী আমার সব প্ল্যানিং ভেস্তে গেল?”
তবে নিহাল মনে মনে বেশ খুশি হলো! রূপলের আসাটাই যেন তার একান্ত কাম্য ছিল! উত্তেজিত হয়ে উজ্জ্বল বসা থেকে ওঠে গেল! রূপলের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নিহালকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ভাইয়া আমি কিন্তু আপনাকে বলেছিলাম বাইরের কেউ এখানে এলাউড নয়। এই ছেলেটা এখানে কী করছে?”
বিব্রতকর গলায় নিহাল প্রত্যত্তুরে বলল,

“কী আশ্চর্য উজ্জ্বল। রূপল বাইরের কেউ হতে যাবে কেন? দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র আপন শালা আমার! তাছাড়া তুমি এত হাইপার হচ্ছ কেন? বিয়ে তো কেউ এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে করতে আসেনা!”
তাৎক্ষণিক পিয়াসা ঝট করে বসা থেকে ওঠে গেল! তড়তড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা আমি ভেতরে মায়ের কাছে যাচ্ছি। দেখি নীহারিকাকে মা কতটুকু কী রেডি করালো!”

প্রস্থান নিলো পিয়াসা। রূপল আপাতত শান্ত রইল। উজ্জ্বলের মনে কাজ করছে অস্থিরতা! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। বিয়েটা যে তার এখনি ভেঙে যাবে সেই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত সে! এরচেয়ে ভালো ছিল নীহারিকাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করাটা। পিয়াসা তো তাকে কথা দিয়েছিল রূপল এই বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানবেনা! এমনকি নীহারিকার ফোনটাও পিয়াসা ছলাকলা করে লুকিয়ে রেখেছিল! তাহলে কোনো নিউজ ছাড়া রূপল এখানে উপস্থিত হলো কীভাবে? এ যেন গভীর চিন্তায় ডুবে গেল উজ্জ্বল।

উজ্জ্বলের অস্থিরতা বুঝতে পেরে রূপল ক্রুর হাসল! শার্টের কলারটা ঠিক করে সে বেশ ভাবসাব নিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসল। উজ্জ্বলের ঠিক মুখোমুখিটায় বসল সে। ভাবশূণ্য গলায় উপস্থিত সবার সামনে উজ্জ্বলকে লক্ষ্য করে বলল,
“মনের টান থাকারও তো একটা বিষয় থাকে তাইনা? আমরা যাকে ভালোবাসি যাকে ছেড়ে আমরা থাকতে পারবনা ভাবী, তার কোনো অসুবিধা বা বিপদ হলে যে সবক্ষেত্রেই আমাদের ইনফরম করে জানাতে হবে বিষয়টা যদি এমন হত তাহলে হয়ত জগৎ জোড়া প্রেম ভালোবাসা হতো না! আই গেইস আপনি বুঝতে পেরেছেন আমি কী বুঝাতে চাইছি?”

রূপলের কথায় উজ্জ্বল ও উজ্জ্বলের পরিবার হুমকির মুখে পরে গেল! মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল তাদের। গলা ঝাকিয়ে উজ্জ্বল সভ্য গলায় রূপলকে বলল,
“আমি তোমার সাথে একটু পার্সোনালি কথা বলতে চাই রূপল!”
“ইয়াহ্ ইয়াহ্। হোয়াই নট? প্লিজ কাম।”

উজ্জ্বলকে নিয়ে রূপল বাড়ির ছাদে চলে গেল! দুজনই পাশাপাশি দাড়িয়ে রইল। অপ্রত্যাশিতভাবে উজ্জ্বল হুট করেই রূপলের হাত দুটো চেপে ধরল! রূপলকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে সে অনুনয়ভরা গলায় বলল,
“দেখো রূপল। নীহারিকাকে বিয়ে করাটা আমার অনেক বেশি প্রয়োজন! বিলিভ মি? আমার পরিবারের সবাই নীহারিকাকে খু্বই পছন্দ করেছে। এই প্রথমবারের মত তারা কোনো মেয়েকে এতটা পছন্দ করল! তাই তাদের পছন্দকে আমি অসম্মান করতে পারছিনা। তারা চাইছে আমি নীহারিকাকেই বিয়ে করি। তাছাড়া নীহারিকার পরিবারও আমার সাথেই নীহারিকার বিয়েটা দিতে প্রস্তুত। মাঝখানে তুমি বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে কেন বলো? প্লিজ আমাদের বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হতে দাও। তুমি আমাদের মাঝখান থেকে সরে যাও।”

উজ্জ্বলের হাতটা ঝট করে ছেড়ে দিলো রূপল! উজ্জ্বলের আবদার তার কাছে অনৈতিক মনে হলো। অস্থির হয়ে উঠল সে। চোখ দুটিতে অসম্ভব ক্ষোভ ফুটিয়ে তুলল। তীব্র গলায় বলল,
“আমি কারো মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি ওকে? উল্টো আপনি আমাদের মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন! আমার ভালোবাসাটা যে একতরফা তাও নয় বরং নীহারিকাও আমাকে ইকুয়েলি ভালোবাসে। তাহলে এখানে কে কার জীবনে বাঁধা হয়ে দাড়ালো? আমি না আপনি? যদি আপনি নীহারিকাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইতেন তাহলে ব্যাপারটা ভিন্ন ছিল! কিন্তু আপনি তো নীহারিকাকে বিয়ে করতে চাইছেন নিজের স্বার্থের জন্যে!

যে কী-না নিজের স্বার্থের জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য ওঠে পড়ে লাগতে পারে সেই মানুষের থেকে এরচেয়ে বেশী কিছু কী আর এক্সপেক্ট করা যায়? মূলত আপনি কানো মেয়েরই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নন! যে তার ভালোবাসার মানুষকে সম্মান করতে পারেনা সে আবার অন্যের ভালোবাসাকে কীভাবে সম্মান করবে বলুন? সত্যি কথা বলতে গেলে আপনার ভাগ্য ভালো যে, এতকিছুর পরেও সুইটি আপু আপনাকে বিয়ে করতে চাইছে! তার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে অবশ্য আপনার মেইন পয়েন্টে কিক মেরে কবেই চলে যেতো!”

নিমিষেই ক্ষেপে গেল উজ্জ্বল! ভেবেছিল রূপলকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে সে। তবে কথায় যেহেতু চিড়ে ভিজেনি তাই সে রূপলের চোখকে আড়াল করে প্যান্টের পকেট থেকে খুঁড় বের করল! সুযোগ বুঝে যেইনা সে রূপলের পেট বরাবর ঘাই মারতে গেল অমনি নিহাল পেছন থেকে ছুটে এসে উজ্জ্বলের হাত থেকে খুঁড়টি ফেলে দিলো! এতক্ষণ যাবত নিহাল ছাদের দরজায় দাড়িয়ে সব শুনছিল! তাই উজ্জ্বলের অসৎ উদ্দেশ্য ধরতেও তার সময় লাগলনা। হতভম্ব হয়ে রূপল নিহালের দিকে তাকিয়ে রইল। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে উজ্জ্বলের গালে সপাটে এক চড় বসিয়ে দিলো নিহাল! রুক্ষ মেজাজ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তুই এক্ষণি তোর পরিবার নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। বিয়ে টিয়ে ক্যান্সেল। তোর কাছে আমার বোনকে বিয়ে দেওয়ার চেয়ে ভালো বরং গলা টিপে আমার বোনকে মে’রে ফেলা! গেট লস্ট ফ্রম মাই হোম ইউ ব্লা*ডি, বি*চ! পুলিশ ডাকার আগে ভাগ তুই আমার বাড়ি থেকে!”

এই ঘোর অপমান সহ্য করতে পারলনা উজ্জ্বল! গালে হাত রেখে সে নিহালের দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকালো। চোখের ইশারায় বুঝালো নিহালকে সে দেখে নিবে! হনহনিয়ে হেঁটে উজ্জ্বল ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রূপল। স্বস্তির শ্বাস ফেলে নিহালের দিকে তাকালো। তবে কিছু বিষয় সে এক্ষণি ক্লিয়ার করতে চাইল। তাড়াহুড়ো করে সে তার প্যান্টের পকেট থেকে সেল ফোনটি বের করতে করতে দ্রুত গলায় নিহালকে বলল,
“উজ্জ্বল ছেলেটা মোটেও ভালো নয় জিজু। তার এগেইনস্টে অনেক প্রুভ আছে আমার কাছে। ওয়েট অ্যা সেকেন্ড জিজু। আমি আপনাকে ভিডিওটা দেখাচ্ছি।”

মুহূর্তেই রূপলের হাত ধরে রূপলকে থামিয়ে দিলো নিহাল। নিশ্চল দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকালো। গুরুতর গলায় বলল,
“আমাকে কোনো প্রুভ দেখাতে হবেনা রূপল। উজ্জ্বলের বিস্তারিত আমার জানা আছে! আমি শুধু এতটুকুই বুঝতে চেয়েছিলাম আমি এবং আমার পরিবারের পর আমার বোনকে তুমি কতটুকু ভালোবাসো! তাকে কতটুকু ভালো রাখতে পারবে তুমি! আদো তোমার ভালোবাসাটা কতটুকু স্বার্থহীন। সমীকরণ মিলে গেল আমার।

একমাত্র তুমিই পারবে আমার বোনকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবেসে তাকে জনম ভর আগলে রাখতে! সেই প্রথম থেকেই আমি তোমার চোখে আমার বোনের জন্য এক অন্যরকম ভালোবাসা দেখেছি! কাজে ক্ষেত্রে বহুবার তার প্রমাণও পেয়েছি। উজ্জ্বলের সাথে বিয়ে ঠিক করার মূল কারণই ছিল তোমার ফিলিংসটা এক্সপোজ করা! কী পাগলামিটাই না করলে তুমি উজ্জ্বল যখন তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে তোমাদের মাঝ এলো।

তার সব গোপন তথ্য কত স্মুথলি তুমি খুঁজে বের করলে। তাকে এক্সপোজ করার কত চেষ্টা করলে। আমি তোমার সব ছোটো বড়ো পদক্ষেপগুলো আড়াল থেকে যতদূর সম্ভব পরিমাপ করেছি রূপল। সব একত্র করে শেষ পর্যায়ে এসে বুঝতে পেরেছি আমার বোনের জন্য তোমার চেয়ে যোগ্য কেউ হতে পারেনা! তোমার কাছেই আমার বোন নিরাপদ! তবে এই চিরন্তন সত্যিটির মাঝেও একটি নেতিবাচক সত্যি লুকিয়ে আছে! আর তা হলো তোমার পরিবার! আমার পরিবারকে আমি বুঝাতে পারলেও তুমি তোমার পরিবারকে সঠিক বুঝাতে পারবে কী-না আমি এই বিষয়ে সন্দিহান! একটা ছোটো ডাউট তো রয়েই গেল তাইনা?”

এতক্ষণ যাবত রূপল বেশ মনোযোগ দিয়ে নিহালের শ্রুতিমধুর কথাগুলো শ্রবণ করছিল। খুশিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল সে! তড়াক করে নিহালের হাত দুটো চেপে ধরল! উৎফুল্লিত গলায় বলল,
“বাদ দিন তো আপনার অসব ডাউট ফাউট! আপাতত এই অপ্রত্যাশিত সময়টা আমাকে এঞ্জয় করতে দিন। অন্তত একজনকে তো মানাতে পেরেছি আমি? বাকিদের ও আস্তেধীরে মানিয়ে নিব। তবে একটা হাম্বেল রিকুয়েস্ট আপনার কাছে জিজু! আপনি আপনার পরিবারকে বুঝাবেন প্লিজ। আমাকে অন্তত একটা বছর সময় দিবেন। মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে আমি নীহুকে আমার ঘরে তুলব! আই হোপ সো আপনি এই বিষয়ে আমাকে কো-অপারেট করবেন।”

মৃদু হেসে নিহালও রূপলের হাত দুটো চেপে ধরল। ভরসার সুরে রূপলকে বলল,
“এই বিষয়ে তুমি শতভাগ নিশ্চিন্ত থাকো রূপল। বললাম তো তোমার চেয়ে যোগ্য কেউ আমাদের নীহারিকার জন্য হতেই পারেনা।”
ইতোমধ্যেই পিয়াসা হম্বিতম্বি হয়ে ছুটে এলো ছাদে। অমনি নিহাল ঝট করে রূপলের হাতটি ছেড়ে দিলো। দুজনই অপ্রস্তুত হয়ে পরল। জায়গা থেকে খানিক নড়েচড়ে দাড়ালো। অস্থির গলায় পিয়াসা নিহালকে বলল,

“এই? আপনি এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কী করছেন হ্যাঁ? ঐদিকে আপনার বোনের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে! উজ্জ্বল তার পরিবার নিয়ে চলে যাচ্ছে। বিয়ে নাকী ক্যান্সেল?”
গাঁ ছাড়া ভাব নিলো নিহাল। ভাবশূণ্য গলায় বলল,
“হ্যাঁ তো? পাত্রপক্ষ যদি বিয়ে ক্যান্সেল করে চলে যেতে চায় সেখানে আমি কী করতে পারি?”
“কিন্তু বিয়ে ক্যান্সেল করার কারণ কী? মা ঐদিকে বার বার বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। নিচু চলুন। বাড়ির একটা খারাপ অবস্থা আর আপনি এদিকে দাড়িয়ে রঙ তামাশা করছেন?”

“কী আশ্চর্য। মা কেন বার বার বেহুশ হয়ে যাচ্ছে? বিয়ে ভেঙে গেছে এতে এত হাইপার হওয়ার কী আছে?”
এই বলে নিহাল হম্বিতম্বি হয়ে ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। মাথা চুলকে রূপলও যেইনা নিহালের পিছু নিলো অমনি পিয়াসা পেছন থেকে রূপলকে ডাকল। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“এই ভাইয়া শোনো? বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পেছনে তোমার কোনো হাত নেই তো?”

“কী আশ্চর্য! নতুন করে তোকে এসব বুঝাতে হবে কেন? তুই এবং তোরা যতবারই আমার থেকে নীহুকে আলাদা করতে চাইবি ঠিা ততবারই এভাবে তোদের প্ল্যান ভেস্তে দিব আমি! সো পরের বার একটু কেয়ারফুললি ওকে?”
গটগটিয়ে হেঁটে রূপল ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। রাগে দুঃখে হাত পা ঝারল পিয়াসা! খিটখিটে গলায় বলল,
“না এইভাবে আর হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে লামিয়াকেই এবার ভাইয়ার পেছনে লাগাতে হবে! সুন্দরী মেয়েরা চাইলেই সব পারে! একটা পসেসিভ ছেলেকেও ক্যারেক্টারলেস বানাতে পারে!”

পার্কের এক কোণায় বসে রূপল গুরুগম্ভীর ভাবে তার ফোন ঘাটছে। নীহারিকা যে তার পাশে বসে রয়েছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। রূপলের পাশে থেকেও বেচারি নীহারিকা নিজেকে এতিম মনে করছে! হৃদি তার কোলে বসে হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে। আর এদিক ওদিক তাকিয়ে মানুষদের হাঁটা চলা দেখছে। রূপলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নীহারিকা বাধ্য হলো এবার রূপলের গাঁ ঘেঁষে বসতে! নীহারিকার গাঁয়ের স্পর্শ পেতেই রূপল তেতে উঠল! চোখ থেকে সানগ্লাসটি সরিয়ে সে নীহারিকার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। ঝাঁজালো গলায় বলল,

“কী হইছে? গাঁয়ের সাথে এমন ঘঁষাঘঁষি করছ কেন? দেখছ না পার্কে অনেক মেয়েরা আছে? তোমার সাথে তারা আমাকে দেখলে আমাকে লাইন মারা বন্ধ করে দিবে! সো কিপ ডিস্টেন্স ওকে?”
“ওকে! তাহলে তো আমি এবার আপনার কোলে ওঠে বসব! দেখব কোন মেয়েরা আপনার দিকে তাকায়। কে আপনার সাথে লাইন মারতে আসে।”

“না। একদম না! আমার থেকে ডিস্টেন্স মেন্টেইন করে বসো! তুমি যেমন উজ্জ্বলকে পেয়ে নাচতে নাচতে তাকে বিয়ে করার জন্য বৌ সেজে রেডি হয়ে বসেছিলে? তেমনি আমিও এখন তোমার চোখের সামনে দিয়ে হট হট মেয়েদেরকে আমার কোলে বসাব! ইকুয়েশন সেইম সেইম!”
অমনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল নীহারিকা। হৃদিকে কোল থেকে নামিয়ে সে তার পাশে বসালো। ইচ্ছে করেই রূপলের গাঁয়ের সাথে যতখানি সম্ভব ঘেঁষে বসল! পারছিলনা শুধু রূপলের কোলে ওঠে বসতে! রূপলের মুখের কাছে মুখ এনে নীহারিকা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

ফেরারি প্রেম পর্ব ৫৫

“একদম হিসেব বরাবর করতে আসবিনা আমার সাথে! এটা পার্ক না হলে এখন তোর গাল কামড়ে দিতাম আমি! বৌ সেজে বসেছিলাম কারণ আমি জানতাম তুই আসবি! ভাইয়া আমাকে শান্তনা দিয়েছিল যেভাবেই হোক তুই আসবি। তাই আমি টেনশন ফ্রি ছিলাম। একদম ভাব দেখাবিনা আমার সাথে। মনে নেই কাল রাতে যে কামড়টা দিলাম? এখনও তো কালসিটে দাগ পড়ে আছে নাকে! সো বি কেয়ারফুল ওকে?”

ফেরারি প্রেম পর্ব ৫৭