বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৪

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৪
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

অনিমা এখনও বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। নতুন ভার্সিটিতে এসে এরকম চমক পাবে ভাবতেও পারেনি। এতটাই অবাক হয়েছে যে মুখ দিয়ে কোন কথা বেড় হচ্ছে না। সামনের ব্যাক্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চোখ ছলছল করে উঠল। মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এল,
” তীব্র।”

তীব্রও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা তীব্রকে সাথেসাথে চিনে ফেললেও তীব্রর অনিমাকে চিনতে কয়েক সেকেন্ড লাগল। কারণ ও যেই অনিমাকে চিনতো সেই অনিমা আর এই অনিমার মধ্যে পার্থক্য আছে। আগের মত গুলুমুলু টাইপ নেই, অনেকটা শুকিয়ে গেছে। চুল লম্বা হয়েছে। আগের চেয়ে বড় বড় লাগছে। দীর্ঘ চারবছর পর দেখছে একে ওপরকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তীব্রর মধ্যে একটু স্বাস্থ্য ভালো হওয়া ছাড়া বিশেষ কোন পরিবর্তন না আসলেও অনিমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসছে। তীব্র চোখ মুখও খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা। শুধু তাকিয়ে আছে অনিমার মুখের দিকে। এরমধ্যেই পেছন থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ একজন বলতে বলতে এল,

” তীব্র, আজ এত লেট করে এলি কেন? স্নেহা কখন থেকে কল..”
এটুকু বলে অনিমাকে দেখতে পেয়েই থমকে গেল মেয়েটা। গলা দিয়ে আওয়াজ বেড়ে হচ্ছে না। ওরও চিনতে পাঁচ-ছয় সেকেন্ড লেগেছে। মেয়েটাকে দেখে অনিমা আরেকদফা ঝটকা খেলো। আবারও একইভাবে মুখ দিয়ে ‘অরু’ শব্দটা বেড়িয়ে এলো। অরুমিতা এক মুহূর্ত দেরী না করে একপ্রকার দৌড়ে এসে অনিমাকে জড়িয়ে ধরল। অনিমাও দুহাতে জড়িয়ে নিল অরুমিতাকে। তীব্রও ধীরপায়ে এগিয়ে এলো। অরুমিতা অনিমাকে ছেড়ে বলল,

” কেমন আছিস তুই? এভাবে গুম হয়ে যায় কেউ? এতোটা স্বার্থপর কীকরে হলি?”
তীব্র অনিমার কাধে হাত রেখে বলল,
” তুই ঠিক আছিস তো?”
অনিমা কী বলবে ও তো নিজের শক থেকেই বেড়োতেই পারছেনা। তীব্র আরেকবার ডাকতেই অনিমার হুস এল। ও স্হির চাহনীতে কিছুক্ষণ দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে কেঁদে দিল। তীব্র আর অরুমিতা ওকে ধরে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে বসাল। অনিমা নিরবে কেঁদেই যাচ্ছে। অরুমিতা বলল,
” কান্না বন্ধ কর।”

অনিমা জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলল,
” জানিস কত মিস করছিলাম তোদেরকে?”
তীব্র গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” সেইজন্যেই এভাবে গুম হয়ে গেছিলি?”
” আমি কীকরে থাকতাম। আব্বু মারা যাওয়ার পর আমিতো গ্রামে আমাদের দেশের বাড়ি চলে গেছিলাম।”
অরুমিতা বলল,

” আঙ্কেলের এক্সিডেনট আর মারা যাওয়ার কথা জানি আমরা। তাই বলে একটু যোগাযোগ করবি না? জানিস কতবার তোর সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম?”
অনিমা কিছক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” আমি চাইলেও যোগাযোগ করতে পারতাম না। আমার কাছে কোন উপায় ছিলোনা।”
তীব্র ভ্রু কুচকে বলল,
” কিন্তু তুই এই ভার্সিটিতে? তোর হাজবেন্ড কোথায়?”
অনিমা অবাক হয়ে গেল। কী বলছে কী তীব্র? হাজবেন্ড কোথা থেকে আসবে। ও অবাক হয়ে বলল,
” হাজবেন্ড?”

অরুমিতা অনিমার এরকম প্রতিক্রিয়ায় অবাক হয়ে বলল,
” হ্যাঁ! আমরা তো গেছিলাম তোদের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তোর মামা মামী তো বলল তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে? মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর ছেলে রিক চৌধুরীর সাথে?”
অনিমা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকার পর একটু হাসল। নাক টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

” মিথ্যা কথা বলেছে। আমার কোন বিয়ে হয়নি। তবে এটা ঠিক যে গোটা একটা বছর আমি মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর বাড়িতে তার হবু বউমার পরিচয়েই ছিলাম।”
তীব্র, অরুমিতা দুজনেই চরম অবাক হল। অরুমিতা অস্হির কন্ঠে বলল,
” কিন্তু ওনারা মিথ্যা কথা কেন বলল? আর তুই বা ঐ বাড়িতে কেন ছিলি? তাও বিয়ের আগেই?”
তীব্র বলল,

” দেখ আমরা জানি তুই কেমন মেয়ে। তুই অন্তত নিজের ইচ্ছাতে ওরকম বাড়িতে বিয়ে করে যেতে চাইবিনা। বিয়ের আগেই ঐ বাড়িতে পরে থাকাতো অনেক দূরের কথা। কী হয়েছে সেটা বল। মাঝখানে নিশ্চয়ই অনেক কিছুই ঘটে গেছে। ক্লিয়ারলি বল।”

অনিমা কিছু বলল না। হঠাৎ করেই আবার মাথা হালকা ব্যাথা করে উঠল। আগের মত ও হুটহাট সব ভুলে যায়না ঠিকই কিন্তু আগের কথা ভাবলেই এখন মাথা ব্যাথা করে ওঠে। এখনও তাই করছে। তীব্র ব্যাপারটা বুঝতে পারল। তাই কথা ঘুরিয়ে নিল। এরপর অনেকটা সময় বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা বলল। চারবছর পর বেস্টফ্রেন্ডদের সাথে দেখা হলে যা হয় আরকি। আস্তে আস্তে অনিমাও নরমাল হল। সেভাবেই ওদের সাথে মিশে গেল যেভাবে চারবছর আগে মিশতো। কথায় কথায় তীব্র বলল,

” এখন কোথায় আছিস? ঐ বাড়িতেই?”
অনিমা না বোধক মাথা নাড়ল। অরুমিতা বলল,
” তাহলে কোথায় আছিস?”
অনিমা আশেপাশে তাকিয়ে মুখ ছোট করে বলল,
” আগে বল অভার রিঅ‍্যাক্ট করবি না?”

তীব্র আর অরুমিতা দুজনেই সম্মতি জানালো। অনিমা এরপর ওর ঐ মেয়ে পাচার এর ঘটনা থেকে শুরু করে আদ্রিয়ানের সাথে দেখা হওয়া বাকি সব খুলে বলল। সবটা শুনে অরুমিতা আর তীব্র দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেল। যেনো আকাশ থেকে পরেছে দুজন। অরুমিতা চরমভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,

” রকস্টার এ.ডি.। মানে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের বাড়িতে কথা বলছিস তুই?”
অনিমা মাথা নাড়ল। তীব্র একইরকম অবাক হয়ে বলল,
” আই কান্ট বিলিভ! যেই এ.ডি এর সাথে একটা সেলফি তুলতেও আমাদের হুমরি খেয়ে পরতে হয়। আমাদেরই বেস্ট ফ্রেন্ড তার সাথে একই বাড়িতে থাকছে, খাচ্ছে, ইভেন তার দায়িত্বে এই ভার্সিটিতে স্টাডিও শুরু করেছে? ভাবা যায়?”

অনিমা মাথা নিচু করে বসে আছে। তীব্র আর অরুমিতা অনেকটা সময় পর শক থেকে বেড়িয়ে এল। অরুমিতা এবার একটু গলা ঝেড়ে বলল,
” না মানে ব্যাপারটা কী শুধু দায়িত্ব, শ্রদ্ধা এ বাড়িতে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে নাকি সামথিং সামথিং?”
অনিমা হেসে অরুমিতার পিঠে থাপ্পড় মেরে বলল,
” শয়তান। এখনও সেই আগের মতই আছিস।”
তীব্র বলল,

” আরে ভুল কী বলল? দেখ এমনি এমনি তো আর উনি তোর জন্যে এতকিছু করছেন না। আচ্ছা তোর কী মনে হয়? একটা অপরিচিত মেয়ের জন্যে শুধুই দায়িত্বের খাতিরে কেউ এতকিছু করে?”
অনিমা মুচকি হেসে বলল,

” তোরা ওনাকে চিনিসনা তাই এসব কথা বলছিস। উনি মন থেকে একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ। ওসব সো কলড সেলিব্রিটিদের মত একদম না। একদিন কথা বললেই বুঝতে পারবি।”
তীব্র অরুমিতা একেওপরের দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা শ্বাস ফেলল। মেয়েটা একটুও বদলায় নি এখনও ঠিক আগের মতই আছে। এইসব বিষয় সহজে বুঝতে পারেনা। আর অনিমা মনে মনে প্রচন্ড খুশি আজ। আজ ও ওর পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়েছে ওর বেস্ট ফ্রেন্ডদের খুঁজে পেয়েছে। আর সবটাই পেরেছে আদ্রিয়ানের জন্যে। লোকটাকে চাইলেও ও কোনদিন ভুলতে পারবেনা। ওর জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট ঐ মানুষটা।

রাত আটটার পর আদ্রিয়ান বাড়িতে ফিরল। একটু তাড়াতেই আছে ও। আজ অনিমা প্রথম দিন ছিল নতুন ভার্সিটিতে। কাজের জন্যে মেয়েটাকে আনতে যেতেও পারেনি। কেমন গেছে দিনটা কে জানে? বেল চাপতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিল। আদ্রিয়ান ভেতরে ঢুকে ড্রয়িং রুম পাস করতে যাবে তখনই অনিমা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান কয়েক সেকেন্ডের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেল। অনিমা নিজেও বুঝছেনা এক্সাইটমেন্টে ও কী করছে। অনিমা আদ্রিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

” থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
আদ্রিয়ান ইতস্তত করে ওখানে থাকা দুজন সার্ভেন্টের দিকে তাকাল। ওনারা ঠোঁট চেপে হেসে চলে গেল। আদ্রিয়ান এখনও বুঝতে পারছেনা কী হয়েছে। আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই অনিমা আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে রেখেই বলল,
” আজকে আমি অনেক খুশি। আপনি জানেন আজ আমার কাদের সাথে দেখা হয়েছে?”
সাথেসাথেই আদ্রিয়ান মুখ অন্ধকার হয়ে এল। কোন পরিচিতদের সাথে দেখা হয়েছে? তারমানে কী? অনিমা চলে যাবে এ বাড়ি ছেড়ে? আদ্রিয়ান কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

” কার সাথে?”
অনিমা আদ্রিয়ানকে না ছেড়েই উচ্ছসিত কন্ঠে বলল,
” আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ডস। ইনফ্যাক্ট আমার অলটাইম বেস্ট ফ্রেন্ডস। অরুমিতা আর তীব্রর সাথে দেখা হয়েছে। জানেন ওরা আমার সাথেই আমার ডিপার্টমেন্টে আছে।”
আদ্রিয়ান একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে এতক্ষণ বাড়তে থাকা হৃদস্পন্দন আর টেনশনকে কমিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে অনিমার পিঠে হাত রেখে বলল,

” বুঝতে পেরেছি। এবার ছাড়ো।”
অনিমার সাথে সাথেই হুস এলো যে ও কী করছে। দ্রুত ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়াল। লজ্জায় আদ্রিয়ানের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা। নিজের ওপরই নিজের রাগ হচ্ছে এই মুহূর্তে ওর। এতো ওভার এক্সাইটেড হয়ে কী উল্টোপাল্টা কাজ করছিল।আদ্রিয়ান অনিমাকে লজ্জা পেতে দেখে ঠোঁট চেপে হাসল। তারপর বলল,

” কফি নিয়ে রুমে এসো। ওখানে কথা বলছি।”
বলে জ্যাকেট খুলতে খুলতে ওপরে চলে গেল। অনিমা মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হেসে দিয়ে নিজের মাথাতে একটা চাটা মারল। আজ ওর মনটা বেশ ফুরফুরে। ও ভার্সিটি গেছে তাও স্বাধীনভাবে, মুক্তভাবে, নিজের মত করে। কারো তৈরী করে দেওয়া নিয়ম বা গন্ডিতে থেকে না। তারওপর অরুমিতা আর তীব্রকে ফিলে পাওয়া সব মিলিয়ে অনেকটা হালকা লাগছে নিজেকে। সবটাই আদ্রিয়ানের জন্যে। এসব ভাবতে ভাবতেই ও রান্নাঘরে চলে গেল। কফি বানিয়ে নিয়ে আদ্রিয়ানের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখল আদ্রিয়ান ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে গেছে। চুল মুছছে। পরনে একটা গেঞ্জি আর থ্রি কোয়ার্টার। অনিমা গলা ঝেড়ে বলল,

” আসব?”
” হ্যাঁ এসো, এসো।”
অনিমা কফিটা নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান কফিটা হাতে নিয়ে বলল,
” থ্যাংকস।”
অনিমা চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ডেকে বলল,
” আরে কোথায় যাচ্ছ? বসো।”
অনিমা জানে এখন ও না বসলে ওকে টেনে বসাবে। তাই চুপচাপ বেডের একপাশে বসে পরল। আদ্রিয়ানও ওর পাশে বসে বলল,
” কোন বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে বললে?”

অনিমা সব সংকোচ কাটিয়ে আবার খুশি হয়ে উঠল। খুশি মনে আদ্রিয়ানকে সব বলল। এমনকি তীব্র, অরুমিতা ওর কেমন বন্ধু, কীকরে বন্ধুত্ব হলো, ওদের স্কুল লাইফের অনেক অনেক সুন্দর মুহুর্তগুলোর কথা বলছে। বলছে তো বলেই চলেছে থামছেই না। আদ্রিয়ান একদৃষ্টিতে দেখছে ওর মায়াবিনীকে আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। আজ একটাদিন মুক্ত পাখির মত উড়তে পেরে কতটা খুশি ও। কয়েকদিনেই অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে মেয়েটা তাকে। যত সময় যাচ্ছে সেই মায়াজালে ততই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে। কেন জানিনা এই মেয়েটার হাসিখুশি মুখটা ওকে অদ্ভুত শান্তি দেয়। এমন মনে হয় ওর জীবনের একটাই লক্ষ্য, জগতের সমস্ত সুখ এই মেয়েটার পায়ের কাছে এনে ফেলা। ওকে সম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী ঘোষণা করা।

আজ সকালেই রিক বাংলাদেশে ল্যান্ড করেছে। গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে এখন। মনটা অস্হির হয়ে উঠছে নিজের নীলপরীকে দেখার জন্যে। কতদিন দেখেনি ওকে। আজকে বাড়ি ফিরেই তাকে দেখতে পাবে বিষয়টা ভেবেই মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠছে। কিন্তু মেয়েটার প্রতি যথেষ্ট রাগও জমে আছে ওর। এতগুলো দিন ওর সাথে কথা বলেনি, এতো সাহস হয় কীকরে?

এর জন্যে কড়া রকমের একটা শাস্তি তো ওর পাওনাই আছে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই ও গাড়ি থেকে নেমে সোজা ভেতরে ঢুকল ও। ড্রয়িং রুমে রঞ্জিত চৌধুরী, কবির শেখ দুজনেই বসে আছেন। রিকের জন্যেই অপেক্ষা করছে। রিক ফিরে এসে যে একটা কুরুক্ষেত্র বাঁধাবে সেটা জানে তারা। আর সেই কুরুক্ষেত্রের ভয়াবহতা সামলাতে গুহ রচনা করে ফেলেছেন কবির শেখ। রিক ভেতরে এসে ওনাদের দেখে হাসল। হাসি মুখেই বলল,

” হাই ড্যাড, কেমন আছো?”
রঞ্জিত চৌধুরী নিউজপেপার থেকে চোখ সরিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বললেন,
” আছি। তোমার কী খবর সেটা বল? সব ঠিকঠাক আছে তো?”
” হ্যাঁ।”

কবির শেখ উঠে এসে রিককে জড়িয়ে ধরলেন। একটু কুশল বিনিময় করলেন। রিক এদিক ওদিক তাকিয়ে অনিমাকে খুঁজছে। ও এতদিন পরে এসছে একটু দেখতেও এলোনা। সত্যিই মেয়েটা রুড, ভীষনই রুড। মিসেস লিমা রিকের গলার আওয়াজ পেয়ে একপ্রকার ছুটে এলেন। এতদিন পর ছেলেকে দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশি উনি। রিকের দিকে এগোতে গিয়েও উনি থেকে গেলেন। রিক তো এখনই অনিকে খুঁজবে। যখন জানবে অনি নেই তখন কী হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই রিক ‘মা’ বলে ডেকে উঠল। মিসেস লিমা এসে রিককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। রিক জড়িয়ে ধরে বলল,

” এভাবে কাঁদছো কেন? মরে গেছি আমি?”
” একটা থাপ্পড় মারবো, বেয়াদব ছেলে।”
রিক হেসে মিসেস লিমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে
“অনি কোথায়? আর স্নিগ্ধু? দুজনেই রুমে রাইট? আমি দেখা করে আসছি। ”

বলে ওপরে চলে গেল। মিসেস লিমা কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারল না। কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চুপচাপ বসে রইলেন। রিক ভেতরে গিয়ে অনিমার রুমে গিয়ে দেখল দরজাটা ভেরানো। ও নক না করেই ভেতরে গিয়ে দেখে স্নিগ্ধা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। রিককে দেখে কোন প্রতিক্রিয়া করল না, একইভাবে বসে রইল। রিক চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,

” অনি কোথায়?”
স্নিগ্ধা কিছু বলল না। রিক ওকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে বিরক্তি নিয়ে বলল,
” কী হয়েছে কী? এভাবে চুপ করে আছিস কেন? ছাদে আছে?”
বলে ছাদের দিকে যেতে নিলেই স্নিগ্ধা বলল,
” খুঁজে লাভ নেই। বাড়িতে নেই ও।”
রিক ভ্রু কুচকে ফেলল। স্নিগ্ধার দিকে ঘুরে বলল,

” বাড়িতে নেই মানে? ভার্সিটি গেছে? কিন্তু আমিতো ওকে বলেছিলাম যে
আমি এসে ওকে এডমিট করিয়ে দেব? এর আগে যাতে না যায়। একটা কথা যদি শুনতো আমার। বাবা একদম ঠিক বলে আল্লাদ দিয়ে মাথায় তুলেছি ওকে আমি। ওকে বেড়োতে দিলো কে?”
স্নিগ্ধা কিছু বলছেনা চুপ করে আছে। রিক রাগে গজগজ করে নিচে চলে এলো। বাইরে যেতে নিলো তখনই রঞ্জিত চৌধুরী বলে উঠলেন,

” কোথায় যাচ্ছ?”
রিক থেমে গিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
” ভার্সিটি। অনির কাছে। ও বেড়োলো কীকরে সেটা বল। গার্ডরা কী করছিল?”
কবির শেখ আয়েশ করে বসা অবস্থাতেই বলল,
” তুমি কী আমাদের বলে গেছিলে ওকে আটকে রাখতে? বা বেড়োতে না দিতে?”
” ওকে তো বারণ করেছিলাম।”
” আর তোমার মনে হল ও সেসব শুনবে?”
রিক উত্তর দিলো না। বেড়িয়ে যেতে নিলেই রঞ্জিত চৌধুরী বলে উঠলেন,

” ভার্সিটিতে নেই ও।”
রিক এবার চরম অবাক হল। বাড়িতে নেই, ভার্সিতে নেই তাহলে আছেটা কোথায়? রিক চরম অবাক অবস্থাতেই বলল,
” মজা করছ তোমরা আমার সাথে? উবে গেল মেয়েটা?”
মিসেস লিমা কোণায় দাঁড়িয়ে আছেন। স্নিগ্ধাও নিচে নেমে এসছে এর মধ্যেই। কবির শেখ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
” তিনদিন আগে সে ভার্সিটির নাম করে বেড়িয়ে ছিলো ঠিকই। কিন্তু আর ফিরে আসেনি।”
রিক চমকে উঠল। হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৩

” মানে?”
রঞ্জিত চৌধুরী ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন,
” মানেটা এখনও বুঝছোনা? পালিয়ে গেছে ও।”
” ওর তো কোন বিপদও হতে পারে। তোমরা..”
রিক কথাটা শেষ করার আগেই কবির শেখ বললেন,
” ওর জামা কাপড় মিসিং। এখনও এসব বলবে?”
রিক কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে কম্পিত কন্ঠে বলল,
” ওর এতো সাহস হবেনা মামা।”
কবির শেখ হেসে বললেন,

” সেটাই তো! ওর একার এত সাহস হবেনা। খোঁজ নিয়ে দেখ নিশ্চয়ই কারো সাথে পালিয়ে গেছে। আগেই বলেছিলাম এতোটা স্বাধীনতা দিওনা ওকে। কিন্তু আমার সব কথাতো পছন্দ হয়না তোমার। এবার নাও।”

রিক স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে নিজের মামার দিকে। কবির শেখ রিকের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
” বনে উড়ে বেড়ানো পাখি কখনও পোষ মানেনা। তাকে খাঁচায় বন্দি করে রাখতে হয়। মনে হবে সে পোষ মেনে গেছে আর সেটা ভেবে যখনই খাঁচা খুলে দেবে, সুযোগ বুঝে সে উড়ে চলে যাবে। ঠিক সেই ভুলটাই তুমি করেছ।”

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৫