বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৩

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৩
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

বিকেলটা আজকে অনেকটাই ঝলমলে। দুপুরবেলার তীব্র বৃষ্টির ফলে আকাশটা এখন একটু বেশিই সচ্ছ। ভেজা প্রকৃতির ওপর রোদের আলো একটু ভীষণ ভালো লাগছে। অফিস থেকে ফিরে ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়ে সেই প্রকৃতি উপভোগ করছে আদ্রিয়ান। একটু ক্লান্ত লাগছে এই মুহূর্তে, এক কাপ কফির দরকার ছিল খুব। কিন্তু এখনও কফি এলোনা কেন?

সার্ভেন্টকে ফোন করে বলতে হবে। পকেট থেকে ফোন বার করতে যাবে তখনই কারো গলা ঝাড়ার আওয়াজ পেল। আদ্রিয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখল অনিমা দুহাতে দুইটা কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে একটা কফির মগ এগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে চোখ ছোট করে কফির মগটার দিকে তাকাল। অনিমা আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান ভ্রু নাচালো। অর্থাৎ ‘এসব কী?’ অনিমা মুখে হালকা একটু হাসি ফুটিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আপনি নাকি বাড়ি ফিরে কফি খান। তাই নিয়ে এলাম।”
আদ্রিয়ান কফির মগটা হাতে নিয়ে বলল,
” বাড়িতে সার্ভেন্ট থাকতে তুমি আনলে যে?”
” এমনিই ইচ্ছে হল।”
” বাহ। হঠাৎ এমন ইচ্ছে হল?”
অনিমা আদ্রিয়ানের পাশে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বলল,
” আমি এনেছি বলে কী খাবেন না?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে কফির মগের দিকে তাকিয়ে বলল,
” না ঠিক তা না। কিন্তু হঠাৎ তুমি নিজেই থেকে আমার রুমে ঢুকলে। ভয় করল না? যদি উল্টোপাল্টা কিছু করি?”

অনিমা একটু লজ্জা পেল। সত্যিই এতোদিন বেশ খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে। ছেলেটা হয়ত মনে মনে সত্যিই কষ্ট পেয়েছে। অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,
” সরি।”
আদ্রিয়ান অতি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
” সরি ফর?”
” আমার এতদিনকার বিহেভিয়ার এর জন্যে।”
” ও আচ্ছা।”
” আমি কিন্তু সত্যিই খুব দুঃখিত। প্লিজ রাগ করে থাকবেন না?”
” বললাম তো ইটস ওকে।”
অনিমা মুখটা একেবারে ছোট করে বলল,
” আমি জানি আপনি এখনও রেগে আছেন।”
আদ্রিয়ান গম্ভীর মুখে জবাব দিল,

” আমি রেগে থাকলেই বা কী? আমিতো তোমাকে আর বেড় করে দিচ্ছিনা। নিজের মত থাকতে পারো। আমি কোন ইন্টারফেয়ার করব না। শুধু কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলে দিও।”
কথাটা বলে আদ্রিয়ান কফির মগে চুমুক দিল। চুমুক দেওয়ার পর কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,

” কফিটা কে বানিয়েছে?”
অনিমা এবার একটু ভয় পেল। কফিটা কী ভাল হয়নি? কিন্তু রিক তো বলত ওর হাতের কফিই নাকি বেস্ট। বাড়ির সবার জন্যে কফি সার্ভেন্ট বানালেও ও কফি না বানালে রিক খেতোনা।এমনকি কারো জন্যে কফি বানাতেও দিতো না। এমনকি ও ওর নিজের তৈরী কফিটাও খায়নি আজ অবধি। তাই ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কেন খারাপ হয়েছে?”

অাদ্রিয়ান চুপচাপ কিছুক্ষণ কফির মগটার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসল কিন্তু কিছু বলল না। অনিমা চেক করার জন্যে নিজের কফি মগটায় চুমুক দিয়ে দেখল সব ঠিকঠাকই আছে। তাহলে কী আদ্রিয়ানের ভালো লাগেনি? কিছুতো বললও না। অনিমা মন খারাপ করে আদ্রিয়ানের পাশে দাঁড়িয়েই কফি শেষ করল। অনিমাকে থাকতেও বলল না যেতেও বলল না। অনিমা মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিল। অনিমাকে যেতে দেখে আদ্রিয়ান দেখল অনিমা বাম পা হালকা টেনে টেনে হাটছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

” দাঁড়াও।”
অনিমা দাঁড়িয়ে গেল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে রেখেই অনিমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
” পায়ে কী হয়েছে? পরে গিয়ে কেটে গেছিল নাকি? ব্যাথা করছে?”
অনিমা মাথা নিচু করে রেখেই বলল,
” না, অনেকটা কমেছে। কিন্তু আমিতো আপনাকে বলিনি যে আমি পরে গেছিলাম। জানলেন কীকরে?”
আদ্রিয়ান কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বলল,
” পায়ে কী হয়েছে সেটা বল।”
” একটু কেটে গেছিল।”
আদ্রিয়ান হালকা উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” কী ? কাল রাতে তো খেয়াল করিনি।”

বলে অনিমার হাত ধরে নিয়ে নিজের বিছানায় নিয়ে ওর পা ধরে উঠিয়ে দেখল পায়ের নিচে হালকা একটুখানি কেটে গেছে। অনিমা বাধা দিতে গিয়েও দিতে পারল না।আদ্রিয়ান বিড়বিড়িয়ে বলল, ‘কাল দেখলাম না কীকরে?’ অনিমা মুখ ফুলিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলল,
” নাকের ডগায় রাগ নিয়ে থাকলে দেখবেন কীকরে?”
আদ্রিয়ান রাগী দৃষ্টিতে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” কী বললে?”
অনিমা হালকা হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
” ন্ না কিছুই না।”
আদ্রিয়ান দ্রুত উঠে ফার্স্ট এইড বক্স বেড় করে নিয়ে এসে ওর সামনে বসে কাটা জায়গাটায় ঔষধ লাগাতে লাগাতে বলল,
” কেটে গেছে বলবে তো? আর নিজেও ঔষধ লাগাও নি। এতো ইরেসপন্সিবল হও কীকরে তুমি। এভাবে কাটা পা নিয়ে মানুষ কীভাবে এত স্বাভাবিক থাকে। জ্বলছিল না?”
” অভ্যেস আছে।”

নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কথাটা বলল অনিমা। আদ্রিয়ান অনিমার মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার ঔষধ লাগানোতে মনোযোগ দিল। ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ে বলল,
” এরপর যেন এরকম কেয়ারলেসের মত কাজ করতে না দেখি।”
অনিমা ভদ্র মেয়ের মত মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান উঠে বিছানায় ওর পাশে বসে পরল। এরপর ফোনটা নিয়ে স্ক্রল করতে শুরু করল। অনিমা আড়চোখে আদ্রিয়ানকে দেখছে। ছেলেটা কথা বলছে না কেন ওর সাথে? আগে তো যেচে কথা বলত? এভাবে একটুও ভালো লাগছে না। অনিমা একটু গলা ঝাড়ল। আদ্রিয়ান চোখ তুলে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” কিছু বলবে?”
অনিমা ইনোসেন্ট একটা মুখ করে ঘাড় বাঁকা করে এক কানে ধরে বলল,
” সরি তো! আর বলব না।”
আদ্রিয়ান এক হাতে বিছানায় ভর দিয়ে অনিমার দিকে একটু ঝুঁকে বলল,
” কী বলবে না?”
অনিমা অনেকটা ভয় পেয়ে মাথা দুলিয়ে বলল,
” কিছুই বলব না।”
” কিছু তো বলতে হবেই।”
” সব ভালো ভালো বলব।”

আদ্রিয়ান অনিমার কথা শুনে হালকা হাসল। মেয়েটা আসলেই বাচ্চা। বয়সেও খুব বড় কই?উনিশের বেশি হবেনা। আর এই বয়সে মানুষ কারো মুখের কথা কম শুনতে চায়। আদ্রিয়ান একশবার বললেও অনিমা বুঝত না যে বাইরে পরিবেশটা কেমন আর আদ্রিয়ান ওর জন্যে কেমন। তাই একটু কষ্ট দিয়ে হলেও প্যাকটিক্যালি বুঝিয়ে দিল যে কোনটা ওর জন্যে ঠিক। হঠাৎ করেই ওর অনিমাকে একটু জ্বালাতে ইচ্ছে করছে। তাই অনিমার দিকে আরেকটু ঝুকে বলল,

” কী ভালো ভালো বলবে? না মানে আমার ব্যাপারে কী কী ভালো লাগছে তোমার?”
অনিমা হালকা একটুখানি পিছিয়ে গিয়ে বলল,
” সবটাই। সবটাই ভালো লেগেছে।”
আদ্রিয়ান কোণাকোণি স্টাইলে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
” সবটা? আমার কতটা দেখেছ যে সবটা ভালো লাগল?”
অনিমা চোখ বড়বড় করে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। এই ছেলে কোথা থেকে কোথায় চলে গেল? ও অবাক কন্ঠে বলল,

” মানে?”
আদ্রিয়ান শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল,
” না কিছুনা, কিছুনা।”
অনিমার অকারণেই এবার বেশ লজ্জা লাগছে। নিচের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাত কচলে উঠে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান হাত ধরে ফেলল। অনিমা ঘুরে না তাকিয়ে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ওর। হাত ধরে রেখেছে কেন ছেলেটা। আদ্রিয়ান ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অনিমার দিকে তারপর বলল,

” আজ থেকে আমার কফিটা তুমিই বানাবে।”
মৃদু চমকে উঠল অনিমা। এর আগেও কেউ একজন বলেছিল ওকে এই কথা। কিন্তু বলার ধরণটা অনেকটাই আলাদা। কেন জানিনা ওর একটা পরীক্ষা করতে ইচ্ছে হল। তাই বলল,
” যদি বলি পারব না?”
আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল,
” সোজা বিয়ে করে নেব। তাহলে এমনিতেও বানিয়ে দেবে। একটা মাত্র বর, না দিয়ে থাকতে পারবে বল?”
অনিমা বেশ অনেকটাই অবাক হল কিন্তু পেছন ঘুরে তাকাল না। কিন্তু ও নিজেও জানেনা ওর ঠোঁটের কোণে কখন হাসি ফুটে উঠেছে। আদ্রিয়ান হাত ছেড়ে দিতেই একপ্রকার দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। আদ্রিয়ানও অনিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফোন দেখায় মন দিল।

নিজের কাজ সেড়ে বাড়ি ফিরে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে বসল রিক। আজ আর ডিনার করবে না। কফিটুকুও খাওয়ার ইচ্ছা নেই এইমুহূর্তে। এদের কফি ওর ভালোলাগেনা। ওর তো একমাত্র ওর নীলপরীর কফি ভালোলাগে। এরা কী কেউ কফি বানাতে পারেনা না কি? না পারাটাই তো ভালো। যেটা ওর নীলপরী পারে সেটা অন্যকেউ কেন পারবে? পারাটা উচিতও না। এসব ভেবে হালকা হাসল রিক। কিছু একটা ভেবে কবির শেখের নাম্বারে ফোন করল, অনেকদিন হল মামার সাথে কথা হয়না। এরকম তো আগে হয়নি। উনিতো রোজ ফোন দিত। কিন্তু গত কয়েকদিন হল ফোন দেয়না। আর ওও ব্যস্ততার জন্যে ফোন দিতে পারেনা। এসব ভাবতে ভাবতে কবির শেখ ফোন রিসিভ করে ওপাশ থেকে বললেন,

” কী ব্যাপার বাবাই? কেমন আছ?”
” এটা কী ঠিক মামা? আমি ব্যস্ত তাই ফোন দিতে পারিনা তাই বলে তুমিও দেবেনা?”
কবির শেখ ব্যাপারটা সামলাতে বলল,
” আরে তুমি ব্যস্ত থাক বলেই তো ফোন করিনা। ফিরে এলে কথা হবেই।”
রিক হেসে বলল,
” ভালো আছো না?”
” এইতো চলে যাচ্ছে। আদ্রির সাথে কথা হয় তোমার?”
” হ্যাঁ হয়েছিল ক’দিন আগেই।”
এরপর দুজনেই চুপ রইল কিছক্ষণ। নিরবতা ভেঙ্গে রিক বলল.

” মামা শোননা।”
” হ্যাঁ বলো।”
” অনি ভালো আছেতো?”
কবির শেখের বেশ রাগ হল। সবসময় ঐ মেয়ের নাম যপ করার কী আছে? তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে। সব ঠিক আছে।”
” তুমিতো জানোই বাবা ওকে পছন্দ করেনা। প্লিজ একটু দেখে রাখো ওকে।”
কবির শেখ চোখ উল্টে দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করল। এরপর বলল,
” হ্যাঁ তুমি চিন্তা করোনা খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখব।”
” আচ্ছা এখন রাখছি, একটু ঘুমাবো।”
” হ্যাঁ হ্যাঁ রেস্ট করো। রাখছি।”
রিক ফোনটা রেখে সোজা শুয়ে পরল। ক্লান্ত থাকায় শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল। আর এদিকে কবির শেখ ভাবছে যে যেকোনো ভাবে অনিমাকে খুঁজে পেতে হবে রিক আসার আগে। না হলে সব ভেস্তে যাবে। কলেজে গিয়ে চেক করতে হবে একবার।

সময় অতি দ্রুত প্রবাহমান। কখন কীভাবে চলে যায় বোঝাই যায়না। বৈশাখ মাস চলেছে। মাঝেমাঝে বেশ গরম পরছে আবারও যখন ঝড় বৃষ্টি এসে পরিবেশ নিমেষেই শান্ত, ঠান্ডা করে দেয়। সময়ের এই পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমন প্রকৃতি নিজের রূপ বদলায়, ঠিক সেরকম মানুষের জীবনও বদলায়, রুটিন বদলায়, সম্পর্কও বদলায়। সেদিনের পর থেকে অনিমা আদ্রিয়ানের সম্পর্কও ধীরে ধীরে বদলে গেছে। ওদের অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। যদিও মাঝখানে দু-বার অনিমা বলেছিল ওর অন্য একটা ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা। কিন্তু ততবারই আদ্রিয়ান ভীষণ রেগে গেছে, আর দুদিন কথাই বলেনি। তাই অনিমা এখন আর কিছু বলেনা। পাগল ক্ষেপানোর শখ আর নেই ওর।

বিকেলে আদিব, আশিস, অভ্র তিনজনই এসছে আদ্রিয়ানের বাড়িতে। আদ্রিয়ান ওদের সাথে কথা বলছে আর অনিমা রান্নাঘরে রান্না করছে। ওদের জন্যে পাকোড়া আর চা বানাচ্ছে। সবটা বানিয়ে অনিমা নিয়ে এসে অনিমা প্লেটে প্লেটে দিয়ে সবাইকে সার্ভ করেছে দিচ্ছে। ওদের তিনজনের সাথেও অনি এখন বেশ ফ্রি হয়ে গেছে। আদিব আর আশিসকে ভাইয়া বলে ডাকে ও, অভ্রকেও ভাইয়া ডাকতো কিন্তু অভ্রর জোরাজুরিতে এখন নাম ধরেই ডাকে। আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে দেখছে অনিমাকে। চুলগুলো উঠিয়ে কাঠি দিয়ে আটকে রেখেছে, ছোট চুলগুলো বাইরে বেড়িয়ে আছে, ওড়না কোমড়ে বেঁধে নিয়ে কী সুন্দর কাজ করছে, মুখটা হালকা ঘেমেও আছে। একদম গিন্নি লাগছে। আচ্ছা ও যদি অামার বউ হত তাহলেও তো এভাবেই কাজ করত। ‘আমার বউ?’ কথাটা মনে মনে রিপিড করতেই আদ্রিয়ান মনে মনে হেসে উঠল। তখন আশিস বলে উঠল,

” ভাবী তুমিও বসে পর।”
অনিমা অবাক হয়ে তাকাল আশিসের দিকে। আদ্রিয়ান আশিসের দিকে শক্ত চোখে তাকাল। আদ্রিয়ানের চোখ রাঙানিতে আশিস চুপ হয়ে গেল। অভ্র ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
” কী করেন আশিস ভাই, এত ঠিকঠাক নামে ডাকতে হয়?”
আদ্রিয়ান অভ্রর দিকে তাকাতেই অভ্র দ্রুত চোখ বাইরের দিকে নিয়ে বলল,
” আজ মনে হয় বৃষ্টি হবে, আকাশটা মেঘলা লাগছে।”
আদিব ব্যাপারটা সামলাতে বলল,
” হ্যাঁ অনি তুমি বসে পরো।”
অনিমাও কোন কথা না বাড়িয়ে আদ্রিয়ানের পাশে বসে পরল। গল্প করার মাঝে খেতে খেতে আদ্রিয়ান বলল,

” অনি তোমাকে কিন্তু এবার ভার্সিটির ভর্তি হতে হবে?”
অনিমা অবাক দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা ও। আদ্রিয়ান সত্যিই ওকে পড়াতে চাইছে। আদিব বলল,
” কিন্তু ভার্সিটি চেঞ্জ করানোতে তো অনেক বেশি ঝামেলা আছে। তারওপর ওর পেপারস তো নেই আমাদের কাছে।”
আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলল,

” ভার্সিটির প্রবলেম আমি দেখে নেব। আচ্ছা অনিমা তুমি আগে কোন ভার্সিটিতে পরতে?”
অনিমা হালকা ভয় পেল। ও ওর আগের ভার্সিটিতে যেতে পারবেনা। ও চায়না আর পেছনে ফিরে তাকাতে। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল,
” ডোন্ট ওয়ারি। তোমাকে পাঠাবোনা, আমি নিজেই যাবো। আমি গিয়ে বললে কোন প্রবলেম হবেনা।”
” আমি না গেলে কীকরে হবে মানে..”
” সেটা আমি বুঝে নেব।”
অনিমা হালকা স্বস্তি পেল। আদ্রিয়ানকে ভার্সিটির নামটা বলে দিল। নাম শুনে আশিস বলল,

” ওটাতো অন্য শহরে । ওকে ভর্তি কোথায় করবি?”
আদ্রিয়ান বলল,
” অবশ্যই এই শহরে। এখান থেকে কাছে হবে একটা ভালো ভার্সিটি আছে। ওখানেই এডমিট করে দেব।”
সবাই এই বিষয়েই টুকটাক আলোচনা করতে শুরু করল। অনিমার এমনিতে অস্বস্তি হচ্ছে। সম্পূর্ণ অন্য একজনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন চলছে ওর। কিন্তু এবিষয়ে কিছু বলতেও পারছেনা আদ্রিয়ান রেগে যাবে তাই। ছেলেটার রাগ বড্ড ভয়ংকর। আর ওরও খুব প্রয়োজন একটা ওর পড়াশোনাটা কনটিনিউ করা। ও ওর লক্ষ্যে এখনও অবিচল। একবার যখন ওই জেলখানা থেকে বেড়োতে পেরেছে তখন ওদের ধ্বংসের রাস্তা ওকেই বেড় করতে হবে। ভয় পেয়ে পেছানোর মেয়ে ও নয়। যেই কাজ ও শুরু করেছে তার শেষ ওই করবে। নাহলে জবাব দিতে হবে যে।

আদ্রিয়ান অনিমার আগের ভার্সিটি থেকে প্রয়োজনীয় সব পেপারস কালেক্ট করে বেড়িয়েছে। তাদের এটাও বলে দিয়েছে এই খবরটা কেউ যাতে না জানতে পারে। আজ ক্লাস অফ তাই স্টুডেন্ট তেমন নেই। যারা আছে তাদের অটোগ্রাফ, সেলফি ইত্যাদি দিয়ে সামলে নিয়ে। বডিগার্ড দিয়ে সবটা ফাঁকা করে নিল। করিডর দিয়ে যাওয়ার সময় ওর কবির শেখ পরল। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে জরিয়ে ধরল। তারপর বলল,

” মামা তুমি এখানে?”
কবির শেখও বেশ অবাক হয়েছে আদ্রিয়ানকে দেখে। কিন্তু তবুও মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল,
” আর বলোনা দুলাভাই পাঠিয়েছিল একটা কাজে। তুমি এইখানে কী করতে এলে?”
” আমারও একটু কাজ ছিল। কিন্তু ঐ ফাউল মন্ত্রীটার পেছন পেছন না ছুটলে হয়না?”
” এভাবে বলে? খালু হয় তোমার!”
” সেটাই তো দুর্ভাগ্য। রিক তো এই সপ্তাহের মধ্যেই চলে আসছে তাইনা?”
” হ্যাঁ। চল বাড়ি চল?”
” নাহ মামা স্টুডিওতে কাজ আছে। আজ আসতে হবে। পরে যাবো। তোমার সাথে দাবাটা জমেনা অনেকদিন হল।”
” হ্যাঁ সেই। একমাত্র তুমিই আছ যার সাথে দাবার প্যাঁচে জিততে পারিনা আমি।”
আদ্রিয়ান হাসল। আদ্রিয়ানকে বিদায় দিয়ে কবির শেখ অনিমার খোঁজ করতে গেলেন ভেতরে কিন্তু কিছুই জানতে পারলেন না।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১২

দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা দিন চলে গেছে। অনিমা রেডি হয়ে নিচ্ছে কারণ আজ আবার ভার্সিটিতে যাবে ও। নতুন ভার্সিটি, নতুন জায়গা, নতুন মানুষ সব মিলিয়ে কেমন একটা লাগছে ওর কাছে। এরমধ্যে আদ্রিয়ান ভেতরে আসতে আসতে বলল,
” অনি হয়েছে তোমার?”
কথাটা বলে অনিমার দিকে দেখে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। এরপর মুচকি হেসে বলল,
” বাহ! লুকিং নাইস।”
অনিমা মাথা নিচু করে লাজুক হাসল। আদ্রিয়ান বলল,
” চল, লেট হয়ে যাবে নয়ত।”

অনিমা মাথা নেড়ে ব্যাগটা নিয়ে বলল, ‘চলুন’ । আদ্রিয়ানও অনিমাকে নিয়ে রওনা হল। সারা রাস্তা আদ্রিয়ান অনিমাকে নানারকম টিপস দিল। কীভাবে কী করবে না করবে সবকিছুই। ভার্সিটিতে পৌছে আদ্রিয়ান অনিমাকে বলল,
” যা যা বলেছি মাথায় রেখো হুম? আর আমি ডিন আর ডিপার্টমেন্টের বাকিদের সাথে কথা বলে নিয়েছি। সবাই চেনে তোমাকে। আর আমি এখন ভেতরে যেতে পারব না। সবাই জেকে ধরল।”
অনিমা মুচকি হেসে বলল,
” না সমস্যা নেই।”

অনিমা আদ্রিয়ানকে ‘বাই’ বলে গাড়ি থেকে নেমে গেল। ভেতরে ঢুকে চারপাশটা দেখতে দেখতে ভেতরে ঢুকছে অনিমা। হঠাৎ কারো সাথে হাতে ধাক্কা লাগতেই অনিমা ‘সরি’ বলে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে দেখে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা ও। সামনের দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার অবস্থাও একই রকম। ও স্বপ্নেও ভাবেনি এখানে এসে এতোটা সারপ্রাইজড হবে।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৪