বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৬

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৬
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

সময় নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে। যেটা সময়ের স্বাভাবিক নিয়ম। আর সেই সময়ের বদলের সাথে সাথেই সবকিছু বদলে যাচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে অনিমা আদ্রিয়ানের সাথে আদ্রিয়ানের বাড়ির সাথে ততটাই মিশে যাচ্ছে। ওর এখন আদ্রিয়ানের বাড়িটা নিজের বাড়িই মনে হয়। আর বাড়ির সার্ভেন্টগুলোর সাথেও খুব ভালোভাবে মিশে গেছে ও।

জাবিন আর অনিমাকে দেখলে এখন আর কেউ বলবেই না ওরা অল্পদিনের পরিচিত। বোনের মতই বন্ডিং হয়ে গেছে ওদের। আর আদ্রিয়ানের ব্যাপারটা আরও ভয়ানক। অনিমা এখন ওর অভ্যেস হয়ে গেছে। রোজ বেড় হওয়ার আগে, আর বাড়ি ফেরার পর অনিমার মুখ না দেখলে ওর আর ভালো লাগেনা একদম ভালোলাগেনা। কিন্তু মেয়েটা বোঝেইনা এসব। সবসময় ওর কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। এত লজ্জার কী আছে? সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জাবিন আসার পর থেকে তো সাপের পাঁচপা দেখেছে। দরকার ছাড়া ওর কাছে আসেই না। শুধু কফি দিয়ে যায়, আর প্রয়োজনীয় টুকটাক কথা বলে। যেটা আদ্রিয়ানের মোটেই পছন্দ হচ্ছেনা। বিছানায় হেলান দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে সেই ভাবনাই ভেবে চলেছে আদ্রিয়ান।

” আপনার খাবার।”
কথাটা শুনে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এল আদ্রিয়ান। তাকিয়ে দেখল অনিমা ওর জন্যে বিকেলের স্কাকস পাস্তা আর কফি নিয়ে এসছে। আদ্রিয়ান ইশারা করে রাখতে বলল। অনিমা রেখে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বলল,
” কোথায় যাচ্ছো?”
” জাবিনের রুমে।”
” বসো।”

অনিমা বেশ অবাক হয়েই বসল। ওর মনে হল আদ্রিয়ান হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবে। কিন্তু অনিমাকে অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ান বলল,
” জাবিনের রুমে যাচ্ছিলে কেন?”
” এমনিই ওর সাথে একটু গল্প করতাম।”
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে বলল,
” সবসময় জাবিনের সাথে গল্প করতে হবে কেন? আমাকে চোখে পরেনা?”
অনিমা অবাক হয়ে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ওর সাথে কথা বলতে চায় সেটা আবার এভাবে বলছে। কিন্তু কেন? অনিমা অবাক ভঙ্গিতেই বলল,

” না আসলে..”
আদ্রিয়ান এবার একটু জেদি স্বরে বলল,
” এসব আসলে নকলে বাদ দাও। এখন তুমি এখান থেকে কোথাও যাবেনা।”
অনিমা অবাকের ওপর দিয়ে অবাক হচ্ছে আদ্রিয়ানের ব্যবহারে। তবুও বলল,
” জাবিন অপেক্ষা করছে। ওকে বলেছি আপনাকে খাবারটা দিয়েই আমি ওর কাছে যাবো। আমারটাও ওর রুমেই রাখা।”

আদ্রিয়ান অনেকটা চোখ রাঙিয়ে বলল,
” বললাম তো এখানে বসো। এতো কথা কীসের?”
আদ্রিয়ানের চোখ রাঙানিতে অনিমা বেশ অনেকটাই ভয় পেল। তাই ইতস্তত করে নিচু গলায় বলল,
” এখানে বসে কী করব সেটাতো বলবেন?”
আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল,

” কিচ্ছু করতে হবেনা, বলতেও হবেনা। চুপচাপ বসে থাকো এখানে।”
অনিমা কিছু বলতে নিলেই আদ্রিয়ান চোখ গরম করে তাকাল। বেচারী অনিমাও কিছুই বুঝতে না পেরে বোকার মত ওখানেই বসে রইল। আদ্রিয়ান পাস্তা নিয়ে খেতে শুরু করে দিল। অনিমা কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। এভাবে মূর্তির স্টাইলে বসে থাকা যায়? এসব ভাবতে ভাবতেই জাবিন দুহাতে দুটো প্লেট নিয়ে দরজার সামনে এসে বলল,

” অনি আপু আমি তোমার জন্যে কখন থেকে বসে আছি। আর তুমি এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছো।”
অনিমা কিছু বলবে তার আগেই অাদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,
” কেন? অনি আপুকে কী দিয়ে এত কী কাজ?”
জাবিন অবাক হয়ে বলল,
” কেন? গল্প করব।”
” গল্প করতে হবেনা যা অভ্রর কাছে যা।”
জাবিন চরম অবাক হয়ে বলল,

” কী?”
আদ্রিয়ান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইতস্তত করে বলল,
“অব আই মিন গিয়ে দেখ ওকে স্নাকস দেওয়া হয়েছে কী না? আর কিছূ লাগবে কী না। যা।”
জাবিনও বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান আবারও ধমক দিয়ে বলল,
” কী হল যা?”
আদ্রিয়ানের ধমকি শুনে জাবিন ভয় পেয়ে দ্রুতপদে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,
” ওর প্লেটটা রেখে যা।”

জাবিন দ্রুতপদে এসে প্লেটটা অনিমার সামনে রেখে একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেল। অনিমা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। ইশ! মেয়েটা কী ভাবল? নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে এখন। ও এবার একটু বিরক্তি নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাল। আদ্রিয়ান বাঁকা টাইপের একটা হাসি দিয়ে বলল,
” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? মারবে আমাকে?”

‘ইচ্ছে তো সেটাই করছে’ মনে মনে কথাটা আওরালেও মুখে বলতে পারলনা অনিমা। তাই ভ্রু কুচকে রেখেই চোখ নামিয়ে নিল ও। আদ্রিয়ানের খুব মজা লাগছে অনিমাকে জ্বালাতে। অনিমা যখন বিরক্তি নিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে সেটা খুব বেশি এনজয় করে ও। তাইতো সবসময় ইচ্ছে করেই বিরক্ত করে।খাওয়া শেষ করে প্লেটটা রেখে আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একটু এগিয়ে বসল। কোলে বালিশ নিয়ে গালে হাত দিয়ে দেখে যাচ্ছে অনিমাকে। অনিমা চোখ ছোট ছোট করে দেখছে আদ্রিয়ানকে। এসবের মানে হয়? আদ্রিয়ান ভ্রু নাচালো। অনিমা সাথেসাথেই আবার চোখ সরিয়ে নিল। একেতো আদ্রিয়ান ওকে এরকম অদ্ভুতভাবে দেখে যাচ্ছে, তারওপর ওকে এখান থেকে নরতেও দিচ্ছেনা। কী শান্তি পায় এই লোকটা ওকে এরকম অস্বস্তিতে ফেলে ও সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা ও।

অভ্র নিজের জন্যে বরাদ্দকৃত রুমে বসে বই পড়ছিল। অবসর সময় এটাই ভালোলাগে ওর ধোঁয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বই পড়াটা। তাই এখনও নিজের এই অবসর সময়টা এভাবেই কাটাচ্ছে। আসলে এতদিন ও আদ্রিয়ানের দেওয়া একটা ফ্লাটেই থাকত। কিন্তু এখন ফ্লাটটায় কিছু কাজ চলছে তাই আদ্রিয়ানের কথায় আজ সকালেই এই বাড়িতে শিফট করেছে। কতদিন থাকা লাগবে সেটা এখন ও বলা যাচ্ছেনা। আদ্রিয়ানের কথামত খবর নিতে মনে মনে একগাদা বকবক করতে করতে জাবিন চলে এল অভ্রর রুমে। এসে দেখে অভ্র কফি খাচ্ছে আর বই পড়ছে। আজকে ইনফরমাল ভাবে দেখল ও অভ্রকে। একটা পাতলা টিশার্ট, হাটু অবধি প্যান্ট, এলোমেলো চুল। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের এক সুপুরুষ বটে। নিজেকে সামলে নিয়ে জাবিন একটু গলা ঝেড়ে বলল,

” আসবো?”
অভ্র অবাক চোখে তাকাল দরজার দিকে। জাবিন হঠাৎ ওর রুমে আসবে ও ভাবেনি। অবাক কন্ঠেই বলল,
” হ্যাঁ আসুন।”
জাবিন গুটিগুটি পায়ে ভেতরে এসে বলল,
” অাপনার স্নাকস, কফি দিয়ে গেছে?”
অভ্র ভ্রু কুচকে তাকাতেই জাবিন একটু হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
” নাহ আসলে ভাইয়া পাঠাল তাই..”
” জি দিয়ে গেছে।”

কথাটা বলে আবার বই পড়ায় মনোযোগ দিল ও। জাবিন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও তাকাল না। জাবিন বিরক্তি নিয়ে বেড়িয়ে গেল।জাবিনের মেজাজটা এবার অত্যধিক মাত্রায় খারাপ হল। করণ ও চিরকাল অন্যের মুখে নিজেকে সুন্দরী বলেই জেনে এসছে। ছেলেদের এটেনশন, আর ফার্ল্ট করা এসব দেখেই অভ্যস্ত ও। কিন্তু এই ছেলেটা ওকে পাত্তাই দিল না? হাউ রুড! নিজেকে কী শাহ রুক খান ভাবে নাকি? এসব ভাবতে ভাবতেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল জাবিন।

রিক আজ বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে। একয়দিন রুম থেকেই বেড় হয়নি। যদিও অনিমাকে খুঁজতে নিজের সব লোক লাগিয়েছে। কিন্তু এতো মানুষের ভীরে একটা মানুষকে খুঁজে পাওয়া কী এতোটা সহজ? তারওপর আদোও এই শহরেই আছে কীনা তাও তো জানেনা। একটা রিস্টুরেন্টে খালি টেবিলে বসে আছে ও। কাচের গ্লাসটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরছে। অনিমাকে খুঁজে পেতে হবে। যেকরেই হোক। আর পাবেনাই বা কেন।

যেটা ওর সেটাতো ওরই। সেটাতে তো অন্যকারো কোন অধিকার নেই, থাকতে পারেনা। ওর এখানে আসার মূল কারণটা হল আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান বলেছে আজ এখানে আসবে ওর সাথে দেখা করতে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল দুপুর একটা বিশ বাজে। আদ্রিয়ানতো বলেছে সেই সকালে বেড়িয়েছে। কোন জায়গায় ব্রেক না করে গাড়ি চালিয়ে এলে পাঁচ ঘন্টার বেশি লাগবেনা। এতক্ষণে তো চলে আসার কথা। এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান চলে এলো। দুই ভাই কুশল বিনিময় করার পর আদ্রিয়ান রিকের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

” চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? কিছু হয়েছে?”
রিক মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল,
” নাহ আমি ঠিকই আছি।”
এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ স্বাভাবিক কথোপকথন চলল ওদের মধ্যে। এরমধ্যেই আদ্রিয়ান বলল,
” তো বিয়ে কবে করছিস?”
” নীলপরীকে পেলেই করে ফেলব এবার আর অপেক্ষা করব না।”
” পেলে মানে। এস পার আই নো ও তোদের বাড়িতেই থাকে।”
” এখন নেই।”

” ওহ নিজের বাড়ি গেছে? এইজন্যই বাবু এতো আপসেট?”
রিক কিছু বলল না। এখন আদ্রিয়ানকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতে পারবেনা। সবটা শুনলে আদ্রিয়ান যে ওর কিছু কাজ সাপোর্ট করবে না সেটা ও জানে। কিন্তু ওই বা কী করবে ও ওর নীলপরীকে নিজের করে রাখতে সবকিছু করতে পারে। সবকিছুই। তাই কথা ঘুরিয়ে অন্যসব আলোচনায় মনোযোগ দিল।

ভার্সিটির লাস্ট ক্লাস শেষ করে অনিমা, তীব্র আর অরুমিতা বেড় হল। আপাতত স্নেহার আসার জন্যে ওয়েট করছে। স্নেহা তীব্রর গার্লফ্রেন্ড। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার থেকেই তীব্র আর অরুমিতার সাথে পরিচয় ওদের।ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পরেই আস্তে আস্তে প্রেম। তবে একে ওপরকে তুই করে বলার অভ্যেসটা যায়নি এখনও। অনিমা স্নেহাকে চিনতো না এখানে এসেই আলাপ।

অপেক্ষা করছে কারণ স্নেহার ডিপার্টমেন্ট আলাদা। অনিমারা জার্নালিস্ম পড়ছে আর স্নেহা ইংলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্নেহা চলে এলো। আজ ওরা সবাই খুব এক্সাইটেড কারণ আজ আদ্রিয়ানের বাড়িতে ওদের সবার ইনভেটেশন আছে। বিকেল থেকে রাত অবধি থাকবে ওখানে। আদ্রিয়ানই সব করেছে কারণ অনিমার বন্ধুদের সাথে ওর এখনও আলাপ হয়নি তাই, আলাপটা সেড়ে নেওয়া জরুরী। এমনিতেই ওরা তিনজনেই আদ্রিয়ানের বেশ ভালো রকমের ফ্যান, বিশেষ করে স্নেহা। ওরা ভাবতেই পারছেনা এরকম একটা সেলিব্রিটির বাড়িতে ওরা ইনভাইটেড। যেখানে আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলার সুযোগ পাওয়াটাও বেশ কঠিন। তীব্র বলল,

” এই লেটকুমারী এত দেরী করলি কেন?”
স্নেহা বিরক্ত হয়ে বলল,
” অদ্ভুত! ক্লাস শেষ হতে লেট হলেও আমার দোষ!”
” তোকে আমি চিনিনা? নিশ্চয়ই ওয়াশরুমে গিয়ে আটাময়দা মেখে এসছিস। আফটার ওল সেলিব্রিটি ক্রাশের বাড়ি যাচ্ছিস।”
” কেন? তোর জ্বলছে?”
” বয়েই গেছে।”
অনিমা এবার বিরক্তি হয়ে চেঁচিয়ে বলল,
” চুপ!”

ওরা দুজনেই থেমে গেল। অনিমা একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” আস্ত টম এন্ড জেরী। যেখানে সেখানে শুরু হয়ে যায়। এবার চল ড্রাইভার কাকু সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছেন হয়ত।”
অরুমিতাও বলল,
” হ্যাঁ সেই চল।”
ওরা সবাই মিলে একসাথে হাটা দিল। একটু এগিয়েই তীব্র বলল,
” ওয়েট ওয়েট! দুটো কোকাকোলা কিনে নেই। যেতে যেতে খাওয়া যাবে।”
বলে তীব্র দৌড়ে চলে গেল। অনিমা ডেকেও থামাতে পারল না। বিরক্তি নিয়ে বলল,
” এই ছেলেটাও না। চল আমরা এগোই।”

বলে ওরা একটু এগোতেই কিছূ ছেলে ওদের পথ আকড়ে দাঁড়াল। বোঝাই যাচ্ছে এরা ভার্সিটির সিনিয়র ভাইরা। যারা একেকদিন একেকজনের ক্লাস নেয়, আজ ওদের পেয়েছে। স্নেহা বিড়বিড় করে বলল,
” শিট, আজকেই ওদের আসতে হল?”
অনিমা একটু বিরক্ত হল তবুও ভদ্রভাবে বলল,
” ভাইয়া পথ ছাড়ুন যাবো আমরা।”
ওদের মধ্যে একজন বলল,
” এত তাড়া কীসের? আমরা তোমাদের সিনিয়র ভাই। আমরা ডাকলে মন দিয়ে কথা শুনবে বুঝলে?”
অনিমা হাত ভাজ করে বলল,

” কী বলবেন বলুন।”
” নাম কী?”
” অনিমা।”
” কোথায় থাকো?”
অনিমার এবার একটু রাগ হল। এসব উদ্ভট প্রশ্নের মানে কী? তাই অনেকটা রেগে গিয়েই বলল,
” কেন? বিয়ের ইনভেটেশন কার্ড পাঠাবেন? এসব উট্কো ঝামেলা না করে পথ ছাড়ুন।”
ছেলেগুলো হাসল। মাঝের জন বলল,
” বাবা তেজ আছে দেখছি? তাও রবিনকৈ? আমিও দেখি কতটা তেজ আছে।”
এটা বলে অনিমার দিকে এগোতে নিলেই অরুমিতা বলল,
” ভাইয়া প্লিজ যেতে দিন না। ও আর এভাবে বলবে না।”

অরুমিতার কথায় পাত্তা না দিয়ে রবিন নামের ছেলেটা একদম অনিমার সামনে এসে দাঁড়াল। হাতের জলন্ত সিগারেটটায় একটা টান মেরে পুরো ধোঁয়াটা অনিমার মুখের ওপর ছাড়ল। অনিমা এমনিই এসব সহ্য করতে পারেনা। তাই কাশি শুরু হয়ে গেল ওর সাথে মেজাজটাও খারাপ হল। কোনমতে কাশি থামিয়ে রেগে গিয়ে থাপ্পড় মেরে দিল রবিনকে। রবিন হিংস্র চোখে তাকাল অনিমার দিকে। অনিমা নিজেও এবার খানিকটা ভয় পেয়ে গেল। অরুমিতা আর স্নেহা বেশ ঘাবড়ে গেছে। রবিন ক্ষিপ্ত হয়ে অনিমা গায়ে হাত দিতে নিলেই কেউ হাত ধরে ফেলল। ওরা তাকিয়ে দেখল তীব্র। রবিন একই দৃষ্টিতে তীব্রর দিকে তাকাল। তীব্র মেকী হেসে বলল,

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৫

” সিনিয়র ভাইয়ারা জুনিয়রদের স্নেহ করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জুনিয়রদের এভাবে হ্যারাস করাটা আপনাদের মত সিনিয়রদের ঠিক মানায় না। তাই এরকম না করাই বেটার।”
রবিন ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
” দেখ এসবের থেকে দূরে থাক।”
” পারবোনা ভাইয়া। এটাই ভালো হয় যদি আপনারা ওদের থেকে একটু দূরে থাকুন। কারণ আমি কম্প্লেইন করলে ব্যাপারটা ঘেটে যাবে।”
এরপর গেঞ্জির হাত ফোল্ড করতে করতে বলল,

” এমনিতেই জুনিয়র একটা মেয়ের হাতে চড় খেলেন আবার যদি জুনিয়র ছেলের হাতে মার খান সেটা খুব বেশি সম্মানের হবেনা।”
” তোর এত জ্বলছে কেন? তোর আইটেমকে তো আর কিছু করিনি।”
অনিমার সাথে এরকম বিহেভ করায় এমনিতেই রেগে ছিল তীব্র। স্নেহাকে আইটেম বলায় রাগটা এবার কন্ট্রোললেস হয়ে গেল। রেগে তেড়ে যেতে নিলে অনিমা বাঁধা দিয়ে বলল,

” তীব্র ছেড়ে দে। ঝামেলা বাড়াস না চল এখন।”
স্নেহাও একই কথা বলল। এরমধ্যেই ওখান দিয়ে একজন প্রফেসর আসছিল তাই রবিনরা চলে গেল। কিন্তু যাওয়ার আগে রবিন অনিমার দিকে একটা হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গেছে। পরিস্থিতি সামলে অনিমারাও বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হল।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৭