বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৭

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৭
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

বিকেল পেরিয়ে যাবার পথে। সূর্য পশ্চিম আকাশে প্রায় ডুবন্ত অবস্থায় আছে। যেকোন মুহূর্তে সে ডুব দেবে আর পৃথিবীর এ-প্রান্তে ধীরে ধীরে অন্ধকার ছেয়ে যাবে। আদ্রিয়ান বারবার ঘড়ি দেখছে আর অনিমাদের আসার অপেক্ষা করছে। আদিব আর আশিস কিছুক্ষণ আগেই চলে এসছে। এখন দুজনে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। জাবিন ফল খেতে খেতে রাইমার সাথে গল্প করছে। রাইমা হল আদিবের বাগদত্তা। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে ওদের।

এমনিতে সবরকমের আয়োজন করে রেখে দিয়েছে ও অনিমা ওর বন্ধুদের আজ নিয়ে আসছে তাই। কিন্তু হিসেব মত তো ওদের চলে আসার কথা এখনও আসছেনা কেন? এসব ভাবতে ভাবতে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে আদ্রিয়ান। জাবিন রাইমার সাথে কথা বলছে আর আড়চোখে দেখছে সোফায় বসে ফোন স্ক্রোল করতে থাকা অভ্রকে। অভ্রর প্রতি খুবই বিরক্তি ও।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ওর দিকে ঠিক করে তাকায়ও না ছেলেটা। এই বিরক্তির কারণটা যে অবান্তর সেটাও ভালোকরে জানে জাবিন। তবুও মনে এই প্রশ্নটা ওঠে যে একটা সুন্দর মেয়ে আশেপাশে থাকলে কোন ছেলে এত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কীকরে থাকে? দূর! এই ছেলে যা ইচ্ছে করুক তাতে ওর কী? এসব কথা ভেবে নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে রাইমার সাথে কথা বলায় মনোযোগ দিল জাবিন। আশিস উঠে একটু ওয়াশরুমে গেল তাই আদিব এসে আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলতে শুরু করল।

এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল। সবাই এবার একটু সক্রিয় হয়ে উঠল। কারণ কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিদের আগমন ঘটেছে। আদ্রিয়ান নিজেই গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে মুখে হাসি ফুটল ওর। ফুটবে না কেন? মায়াবিনীকে যখনই দেখে ওর মুখে এমনিই হাসি ফুটে উঠে। মেয়েটা যেন ওর মন ভালো করার খুবই কার্যকারি এক ঔষধ।আদ্রিয়ান দেখল অনিমার পেছনে আরো তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা পেছনে তাকিয়ে দেখল তীব্র, অরুমিতা, স্নেহা তিনজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। স্নেহাতো একপ্রকার ‘হা’ করে তাকিয়ে আছে। তীব্র নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” হাই আমি…”
তীব্রকে থামিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান বলল,
” ওয়েট!”
বলে অনিমাকে সাইড করে দিয়ে একটু এগোলো ওরা তিনজনেই হালকা ঘাবড়ে গেল। ওরা ভাবল হয়ত কোন ভূল করে ফেলেছে। কিন্তু ওদের অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
” তোমাদের নামগুলো আমি বলব। ভুল হলে ধরিয়ে দিও কিন্তু।”
আদ্রিয়ান তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুমি তীব্র রাইট?”
তীব্র নিজেও এবার একটু হেসে বলল,
” জি ভাইয়া।”
আদ্রিয়ান হাত বাড়াতেই তীব্র হেসে এগিয়ে এসে সাদরে আলিঙ্গন করল আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ানের এরকম বিনয় আদ্রিয়ান তীব্রকে ছেড়ে একে একে অরুমিতা আর স্নেহা দুজনের নাম বলতেই সক্ষম হল। আর ওদের সাথেই খুব ভালোভাবে পরিচিত হল। ওরা আদ্রিয়ানের মত একজন সেলিব্রিটির এরকম ব্যাবহারে অবাক তো হয়েছেই আরও অবাক হল এত ভালোভাবে চিনতে পারায়। রাখার মত অবস্থাতে নেই অরুমিতা অবাক হয়ে বলল,

” স্যার আপনি আমাদের এত ভালো করে কীকর চিনলেন? মানে এর আগেতো আমাদের..”
আদ্রিয়ান অনিমার দিকে চোখের ইশারা করে বলল,
” এইযে ইনি। যতক্ষণ আমার সাথে কথা বলে তোমাদের কথাই বলে। এতো এতো ডেসক্রিপশন দিয়েছে যে দেখেই চিনে ফেলেছি।”
স্নেহাতো এক্সাইটমেন্টে পাগল পাগল হয়ে গেছে কী বলবে কী না বলবে বুঝতে পারছে না। তীব্র, অরুমিতা নিজের উত্তেজনা চেপে রাখতে পারলেও স্নেহা উত্তেজনাবশত বলে ফেলল,
” স্যার একটা সেলফি প্লিজ?”

অনিমা চোখ বড় বড় করে তাকাল স্নেহার দিকে। মেয়েটাকে এতো করে বুঝিয়ে এসছে যে উত্তেজনায় উল্টোপাল্টা কিছু করবি না কিন্তু মেয়েটাতো সেটাই। অনিমার নিজেরই এখন লজ্জা লাগছে, সাথে তীব্র অরুমিতারও।আদ্রিয়ান হয়ত ওদের অবস্থা বুঝতে পারল তাই হেসে বলল,
” অবশ্যই তুলবে। আমিতো পালিয়ে যাচ্ছিনা। রাত পর্যন্ত আছি তোমাদের সাথে। অনেক ছবি তুলবো।”
আদ্রিয়ান এর কথাতেই স্নেহা বুঝতে পারল বেশি বেশি করে ফেলেছে। সবার মধ্যেই এখন চরম অস্বস্তি। ওদের নরমাল করতে আদ্রিয়ান বলল,

” সব কথা কী এখানে দাঁড়িয়েই বলবে নাকি? এসো ভেতরে এসো। আর এসব ‘স্যার’ ‘ট্যার’ বলে ডেকোনা। ভাইয়া বলে ডাকবে, তিনজনকেই বলছি।”
ওরাও মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ভেতর আসল। ওরা ভেতরে যেতে সবাই সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। আদ্রিয়ান একে একে আদিব, অভ্র, জাবিনের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিল। রাইমাকে দেখে অনিমা অবাক হল কারণ এর আগে দেখেনি। অনিমার চাহনী বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান বলল,

” অনি ওই হচ্ছে রাইমা। তোমাকে বলেছিলাম না আদিবের উডবি?”
এবার অনিমা চিনতে পারল এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
” ভালো আছো অাপু?”
রাইমাও হেসে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তোমার কথা কিন্তু অনেক বলে ওরা। শুনেই বুঝেছিলাম তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে আজ দেখেও নিলাম। সত্যিই তুমি খুব মিষ্টি।”

” তুমিও।”
রাইমার সাথে বাকিদের আলাপ করিয়ে দেওয়ার পর আদ্রিয়ান চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
” আশিস কোথায়?”
‘আশিস’ নামটা শুনে অরুমিতার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। অস্হির লাগতে শুরু করল ওর। কিন্তু এক নামে তো আর একটা মানুষ থাকেনা পৃথিবীতে। আশিস নামের তো অনেক মানুষই থাকতে পারে। এসব ভেবে নিজের মনটাকে সান্ত্বনা দিতে নিচ্ছিল ঠিক পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,

” আমি এখানে।”
কন্ঠস্বর শুনে দ্বিতীয়বারের মত অবাক হল অরুমিতা। ও দ্রুত পেছন ঘুরল। আর যাকে দেখল তাকে দেখার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা ও। এখানে আশিসকে দেখতে পাবে সেটা ভাবেনি ও। আশিসের চোখ অরুমিতার দিকে পরতে ওর হাসিমুখে অন্ধকার নেমে এলো। স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা ওও আশা করেনি। অরুমিতা ঠোঁট কামড়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে তীব্র আর স্নেহার দিকে তাকাল ওরাও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান বলল,

” কীরে তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখানে আয়।”
আদ্রিয়ানের ডাকে আশিসের হুস এলো ও নিজেকে সামলে নিয়ে নিচে নেমে এলো। অরুমিতাও লম্বা দুটো শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। তীব্র একটু রেগে আসতে নিলেই স্নেহা হাত ধরে ফেলে মাথা নেড়ে না বলল। আদ্রিয়ান আশিসের সাথেও ওদের পরিচয় করিয়ে দিল। তিনজনেই এমন ভাব করল যেন চেনেই না আশিসকে। অরুমিতার এরকম ব্যবহারে অবাক হল আশিস। এভাবে পুরোপুরি না চেনার ভান করতে পারল?

সকলের মিলে আড্ডা দিয়েই গোটা সন্ধ্যা পার করল। অরুমিতা ভালো একটা মুডে এখানে এসেছিল ঠিকই কিন্তু এখন আর সেই মুড বা মানসিকতা নেই ওর। তবুও বাইরে দিয়ে সবার সাথেই হেসে কথা বলছে। অনিমা ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেও এখন কিছু বলল না পরে জিজ্ঞেস করে নেবে তাই। এদিকে আশিসও এখন আর ঐরকম হৈ হুল্লোড় এর মুডে নেই। অরুমিতা যে এভাবে ওকে না চেনার ভান করবে ও ভাবেনি। কথায় কথায় তীব্র বলল,

” ভাইয়া আপনার ফ্যানস রা তো আপনার বিয়ের জন্যে অপেক্ষায় আছে। বিয়ে কবে করবেন?”
জাবিন বলল,
” আরে ভাইয়া তো বলেই দিয়েছে সে বিয়ের জন্যে রাজি। এখন শুধু স্বয়ম্বরার বরমালা পরানো বাকি।”
স্নেহা এক্সাইটেড হয়ে বলল,
” তাই নাকি কে সেই স্বয়ম্বারা। ফিক্সট আছে নাকি আমরা খুঁজে দেব।”
আদ্রিয়ান হেসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” দেখো খুঁজে পাও কি-না। স্বয়ম্বরার রাজকুমারের ওপর দয়া হোক, রাজকুমারও কুমার উপাধি থেকে মুক্তি পাক।”
সবাই হেসে দিলো আদ্রিয়ানের কথায়। আর অনিমাতো লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতেও পারছেনা। এভাবে বলতে আছে বুঝি? ছেলেটা সবসময় এতো লজ্জায় কেন ফেলে ওকে?
বেশ অনেকটা সময় আড্ডা দেওয়ার পর ডিনারের পরে ওদের বিদায় দেওয়া হল। আদ্রিয়ানের ড্রাইভার ওদের পৌছে দিয়েছে যার যার বাড়িতে।

চৌধুরী বাড়িতে সকালবেলা রঞ্জিত চৌধুরী রোজকার মতই খবর দেখতে দেখতে চা খাচ্ছিলেন। চা খেতে খেতে স্ত্রীকে হাক দিয়ে দ্রুত নাস্তা বানাতে বলল কারণ ওনাকে পার্টি অফিসে যেতে হবে। এরমধ্যেই কবির শেখ এসে হাজির হলেন ঐ বাড়িতে। এসে সোফায় বসতেই রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন,
” কী ব্যাপার? এতো সকাল সকাল?”
” দরকারি কথা ছিল।”
চিন্তিত গলায় বললেন কবির শেখ। এ চোখ ডলতে ডলতে নিচে নেমে এলো রিক। অনেকরাত অবধি ড্রিংক করেছে। নেশা এখনও কাটেনি ওর। অনিমা ছাড়া সবটাই ওর কাছে অর্থহীন লাগছে। টলমলে পায়ে কিচেনে গিয়ে দেখে মিসেস লিমা রান্না করছে আর স্নিগ্ধা হেল্প করছে। রিক গিয়ে ভাঙা গলায় বলল,

” সিগ্ধু কফি নিয়ে আয় তো।”
স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে বলল,
” পারবোনা। এত কষ্ট করে কফি বানিয়ে নিয়ে যাবো তারপর তুমি সেই কফিরই নিন্দা করবে। তোমার নীলপরি এলে তারপর খেও। আর না হলে নিজে বানিয়ে খাও।”
” এত বেশি কথা বলিস কেন? চুপচাপ নিয়ে আয়।”
বলে বেড়িয়ে এল কিচেন থেকে কারণ ও জানে স্নিগ্ধা নিয়ে আসবে। রিক ওপরে উঠতে নিলেই রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

” রিক বস কথা আছে।”
রিক ভ্রু কুচকে পেছন দিকে তাকাল, তারপর সিঙ্গেল সোফায় বসল। রঞ্জিত চৌধুরী বলল,
” পার্টি জয়েন কবে করছ?”
রিক ভ্রু কুচকে রেখেই বলল,
” কীসের পার্টি?”
” আমাদের পার্টি।”
রিক অবাক হয়ে বলল,

” কিন্তু ড্যাড আমিতো হসপিটাল জয়েন করব। ইউ নো দ্যাট।”
রঞ্জিত চৌধুরী এবার একটু রাগী কন্ঠে বললেন,
” দেখো জেদ দেখিয়ে ডাক্তারি পড়তে চেয়েছো পড়িয়েছি। এখন আমি যা বলব তাই হবে। হসপিটাল জয়েনের দিন পেরিয়ে যাচ্ছেনা আপাতত তুমি পার্টি জয়েন করছ এটাই ফাইনাল।”
” ড্যাড অনি..”
” লোক খুঁজছেতো? পেয়ে যাবে। কথা বাড়িয়োনা।”

রিকের মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কিছূ বলতে পারছেনা। রিক দাঁতে দাঁত চেপে মামার দিকে তাকাল। কবির শেখ এমন একটা মুখ করলেন যেন কিছুই জানেন না। রিক উঠে চলে গেল। কবির শেখ রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ওই মেয়েটাকে যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে মেরে ফেলতে হবে, এবার আর ওসব পাচার-টাচার এর ঝামেলায় জড়াবেন না। কোনভাবে যদি বাবাই ওকে পেয়ে যায় আর ও সব সত্যি যদি বাবাই বলে দেয়। সেদিন কিন্তু রিক বাবা বা মামা বলে আমাদের ছেড়ে দেবেনা। আর ও ওর আসল রুপে আসলে কী করতে পারে আমাদের চেয়ে ভালো কে জানে?”
রঞ্জিত চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। কবির যা বলেছে তা ঠিক। দ্রুতই কিছু একটা করতে হবে।

অনিমা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মুখের ওপর কারো গরম নিশ্বাস পরতেই নরে উঠল ঘুমের ঘোরে। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা বোধগম্য হতে চমকে তাকালো। সামনে তাকিয়ে চেঁচাতে গেলে লোকটা ওর মুখ চেপে ধরে বলল,
” চুপ! আমি! চেঁচাচ্ছো কেন? সবাই চলে আসলে মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেত।”
অনিমা বুঝল এটা আদ্রিয়ান তাই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল, সাথে বিরক্তও হল। আদ্রিয়ান মুখ ছাড়তেই ও উঠে বসে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে বলল,

” আপনি একদিন আমাকে হার্ট অ‍্যাটাক করিয়ে মারবেন। এমন করে কেউ?”
আদ্রিয়ান কিছু না বলে অনিমাকে কোলে তুলে নিল। অনিমা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানেল দিকে। আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে হাটতে লাগল। অনিমা এতো করে এতকিছু জিজ্ঞেস করছে কিন্তু আদ্রিয়ানের য়ন উত্তর নেই। ও অনিমাকে সোজা ছাদে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে পরল। অনিমা দেখল মাদুর পাতা, গিটারও আছে তারমানে বাবু সব প্লান করেই রেখেছিল। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” এসব কী?”
আদ্রিয়ান একটু বাচ্চামো টাইপ আচরণ করে বলল,
” তো কী করব? সারাদিন তুমি ভার্সিটি, জাবিন, স্টাডি এসব নিয়ে কাটিয়ে দাও। সার্ভেন্টদের সাথেও কত সময় কাটাও তুমি। অথচ আমার সাথে? হাহ্। জানো আমি এই বাড়ির সবচেয়ে অবহেলিত একটা প্রাণী? তাইতো রাতের বেলা তুলে নিয়ে এলাম। এইসময়টাই তোমাকে একা পাই। আর এখন সবাই ঘুমিয়ে আছে। তাই তুমি বাহানা দিয়ে যেতেও পারবেনা।”

অনিমা ঠোঁট চেপে একটু হাসল। তারপর বলল,
” আমি আসার আগেও তো অাপনি একা থাকতেন। তখন কীভাবে চলত?”
আদ্রিয়ান লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” ছোটবেলা থেকে একা থাকতে আমার ভালোলাগত। একদম বাচ্চা বয়সে আলাদা রুমে থাকা শুরু করি। একা একা বসে বসে গান প্রাকটিজ করাই আমার শান্তি ছিল। গান সাথে থাকলে আমার আর কিচ্ছু দরকার ছিলোনা কাউকে না। কিন্তু তুমি আসার পর আমি একাকিত্বকে ভয় পেতে শুরূ করেছি। এখন আমার শুধু গান দিয়ে হয় না, সাথে তোমাকেও চাই। তুমি ছাড়া আমিটাকে আমার কেমন যেন সুর ছাড়া গানের মত লাগে। একদম পানসে।”

অনিমা অাদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটু হেসে চোখ নামিয়ে নিল। আদ্রিয়ান কিছু বলল না। অনেকটা সময় নিরবতার পর অনিমা বলল,
” একটা গান শোনাবেন?”
আদ্রিয়ান হেসে তাকাল অনিমার দিকে। এতোদিনে আজ প্রথম অনিমা ওর কাছে গান শুনতে চাইছে তাই। যদিও আদ্রিয়ান যখন প্রাকটিজ করে অনিমা লুকিয়ে লুকিয়ে শোনে যেটা আদ্রিয়ান জানেনা। আদ্রিয়ান গিটারটা নিজের কোলে নিয়ে অনিমার দিকে তাকাল। অনিমা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গিটারে টুংটাং করে সুর তোলার পর আদ্রিয়ান গাইতে শুরু করল

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৬

ক্রমশ এ গল্পে আরো পাতা জুড়ে নিচ্ছি
দু মুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিচ্ছি
আরো কিছুক্ষণ যোগাযোগ ধরে রাখছি
আঙুলে আঙুল যেন ভুল করে ডাকছি
এ ছেলেমানুষী তুলি দিয়ে আঁকছি
তোমায় ছোঁবে বলে, আদর করবে বলে

উড়ে উড়ে আসে এলোমেলো কিছু গান
ডেকে যায় তোমার আঁচল ধরে
তুমি ছুঁলে জল আমি বৃত্ত হয়ে থাকছি
দু’মুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিচ্ছি
আরো কিছুক্ষণ যোগাযোগ ধরে রাখছি
আঙুলে আঙুল যেন ভুল করে ডাকছি
এ ছেলেমানুষী তুলি দিয়ে আঁকছি
তোমার নিশানাতে আমার এ হওয়াতে
উড়ে উড়ে আসে গুঁড়ো গুঁড়ো কিছু নীল
ডেকে যায় তোমার আকাশ জুড়ে

ক্রমশ এ গল্পে আরো পাতা জুড়ে নিচ্ছি
দু মুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিচ্ছি
আরো কিছুক্ষণ যোগাযোগ ধরে রাখছি
আঙুলে আঙুল যেন ভুল করে ডাকছি
এ ছেলেমানুষী তুলি দিয়ে আঁকছি..

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ১৮