বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৩৯

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৩৯
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

সকাল থেকে আকাশে মেঘ ডাকছে মৃদু আওয়াজে। একেবারে সকালের দিকে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও ধীরে ধীরে মেঘ জমতে শুরু করেছিল। সেই মেঘ এখন ঘনিভূত হয়ে কালো বর্ণ ধারণ করছে। মাঝমাঝে হালকা আওয়াজে ‘গুরম’ করে উঠছে। বাতাসও বইছে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি গতিতে। যেকোন মুহূর্তে বৃষ্টি হবে। ব্যালকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে উদাসীনভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অনিমা।

ভালোলাগছেনা কিছু। এরমধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। এই বৃষ্টি! ওর মনকে বিষন্ন করে দেয়। অতীত নিয়ে এখন ভাবছেনা ও। আসলে ভাবতে চায়না। ভাবতে গেলেই মাথার সেই তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। কিন্তু ইদানিং তেমন ব্যথা হচ্ছেনা এখন আর। অনেকটাই কমে গেছে। তবুও ওসব ভেবে ও আর ওর বর্তমানটা নষ্ট করতে চায়না। আচ্ছা রিক কি সত্যিই আবার আসবে? কিন্তু কেন? উদ্দেশ্য কী ওর?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তখনই জোরে বাজ পরল। চমকে উঠল অনিমা। দ্রুত ভেতরে ঢুকে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিলো। থাইগ্লাসের এর পর্দাগুলো টেনে দিয়ে খাটে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইল। চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে আবার কখন বাজ পরবে সেই ভয়ে। কিছুক্ষণ পর কেউ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। অনিমা বুঝতে পারল এটা আদ্রিয়ান। তাই চুপ করে রইল। আদ্রিয়ান জানে অনিমা ভয় পাচ্ছে। ও রুমে বসে রেওয়াজ করছিল। কিন্তু বাজ পরার আওয়াজেই ওর হুশ আসে। অনিমার কথা মনে পরতেই দ্রুত উঠে ছুটে এসছিল ওর রুমে। এসে দেখে ওর ধারণাই ঠিক। খুব ভয় পেয়ে আছে মেয়েটা। আদ্রিয়ান বলল,

” দেখো কী সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে! ভিজবে?”
অনিমা মাথা নাড়িয়ে না করল। আদ্রিয়ান কিছু একটা বুঝতে পারল। এটাও বুঝতে পারল যে অনিমার মন ভালো নেই। ও অনিমার ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কাছে টেনে বলল,
” ভয় করছে?”
অনিমা কিছু বলল না। চোখ নামিয়ে রাখল। আদ্রিয়ান ওকে ধরে উঠিয়ে বসালো। এরপর নিজে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
” আমি আছিতো, কিচ্ছু হবেনা।”

অনিমা আলতো করে আদ্রিয়ানকে আকড়ে ধরল। লম্বা একটা সময় দুজনেই চুপ ছিল। এরমধ্যে আরও দু’বার বাজ পরেছে। অনিমা দু’বারেই আদ্রিয়ানকে জপটে ধরে ছিল। এখন বাজ পরা থামলেও বৃষ্টি পরছে মাঝারি গতিতে। অনিমাও এখন সামলে নিয়েছে নিজেকে অনেকটা। এতক্ষণ ভয়ের জন্যে খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করল যে ও আদ্রিয়ানের বুকে পুরো লেপ্টে আছে। ও সাথে সাথে সরে এলো। আদ্রিয়ানও আটকায় নি। তবে বেশিদূরে সরতে দেয় নি। নিজের পাশে বসিয়েই একহাতে জড়িয়ে রাখল। অনিমাও আর কিছু বলেনি মাথা নিচু করে নিজের হাতের নখ দেখছে। একটুপর কিছু একটা ভেবে অনিমা বলল,

” আচ্ছা আপনার জানতে ইচ্ছে করেনা আমি কোথা থেকে এসছি? আব্বু চলে যাওয়ার পর কোথায় ছিলাম, এরপর ঐ গ্যাংটার হাতে কীকরে পরলাম? এতোদিন না হয় আপনার কেউ হতাম না তাই জানতে চাইতেন না। কিন্তু আজতো আমি আপনার বিয়ে করা বউ। এখনও জানতে ইচ্ছে করেনা?”
আদ্রিয়ান চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ পর গম্ভীর স্বরে বলল,
” নাহ।”
” কিন্তু আমিতো বলতে চাই।”
আদ্রিয়ান এবার একটু রাগী কন্ঠে বলল,

” বলতে হবেনা। আমার এসবের প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই। আর তোমাকে আমি আগেও বলেছি আগের কথা ভাববে না। নট ফর আ সিঙ্গেল মুমেন্ট। তবুও তুমি এসব নিয়ে ভাবতে গেছো?”
অনিমা অবাক হল আদ্রিয়ানের রেগে যাওয়াতে। এতে রেগে যাওয়ার কী হল? একটা সামান্য কথাই তো বলেছে। ও মুখ ফুলিয়ে বলল,
” বকছেন কেন? আমিতো জাস্ট এমনিই বলেছিলাম।”
” অনি আমি আমার কথার অবাধ্য হওয়া একদমই পছন্দ করিনা। তোমাকে আমি বলেছি ভাববে না, তো ভাববে না। গট ইট!”

অনিমা মাথা নিচু করেই ঘাড় নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাল। আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে ওর ব্যবহারে অনিমা মন খারাপ করেছে। কিন্তু কী করবে? ও তো চাইলেও এখন অনিমাকে কিছু বোঝাতে পারবেনা। ও আবারও শক্ত করে অনিমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। অনিমার মাথায় ঠোঁটে ছুইয়ে বলল,
” আজ সার্ভেন্টদের রান্না করতে বারণ করে দিয়েছি। সবার আজ ছুটি। বাইরে থেকে খাবার আসবে। কী খাবে বল?”

অনিমা কোন উত্তর দিলোনা। আদ্রিয়ান মুচকি হাসল। মেয়েটা বড্ড অভিমানী। অল্পতেই অভিমানের উঁচু পাহাড় তৈরী হয়ে যায় মনে। আদ্রিয়ান এবার নরম কন্ঠে বলল,
” জানপাখি!”
অনিমা এবার চোখ তুলে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান হেসে বলল,
” বাচ্চাদের এতো রাগ করতে নেই। শরীর খারাপ হয়। বল কী খাবে।”
অনিমা একদম বাচ্চাদের মত করে মুখ ফুলিয়ে বলল,

” আমি মোটেও বাচ্চা নই।”
” হ্যাঁ সেটা দেখতেই পাচ্ছি। তাড়াতাড়ি বল!”
” আপনি যা ওর্ডার করেন।”
” শিওর?”
” হুম।”
অাদ্রিয়ান ফোনে খাবার অর্ডার করার পর অনিমা বলল,
” নাহিদ ভাইয়া, অভ্র, জাবিন ওরা কোথায়?”
” নাহিদ ওর রুমে ঘুমাচ্ছে। বৃষ্টি পেয়েছে না। আর জাবিন মনে হয় পড়ছে। অভ্র কাজ করছে আই থিংক।”

অনিমা হতাশ নিশ্বাস ফেলে বলল,
” আমাদেরই কোন কাজ নেই। দূর!”
আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে হঠাৎই দুষ্টু হেসে বলল,
” কে বলেছে কাজ নেই।”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,
” কী কাজ?”

আদ্রিয়ান ওর নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে টিশার্টের হাতা গোটাচ্ছে। সেটা দেখেই অনিমা বুঝে গেল যে এর মতলব ভালো না। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একটু এগোতে নিলেই অনিমা বলল,
” কী করছেন?”
আদ্রিয়ান বলল,
” এরকম বৃষ্টির দিনে এমন সুইট কিউট বউ পাশে থাকলে যা করা যায়। সেটাই!”
অনিমা একটু পিছিয়ে বলল,
” দেখুন! এখন অসভ্যতামি করবেন না একদমই।”

আদ্রিয়ান অনিমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আরও ঝুকে গেল। অনিমা ভাবল কী না কী করবে তাই চোখ বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ান পেছনের টি-টেবিল থেকে লুডোর কোড আর গুটির বক্সটা আনলো। তারপর অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” এইযে মিস হিরোয়িন! চোখ খুলুন!”

অনিমা চোখ খুলে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। আদ্রিয়ান গুটি বারবার করতে করতে বলল,
” এইজন্যই বলি এসব সিনেমা, ওয়েব সিরিজ কম কম দেখ। দিন দিন সিনেম্যাটিক হয়ে যাচ্ছো। আমি লুডু খেলার কথা বলছিলাম। আর ইনি কোন রাজ্যে চলে গেছেন।”

অনিমা বোকার মত তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা মুখ ভেংচি দিলো। ও বেশ বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ান ইচ্ছে করেই ওর সাথে মজা করতে এমন করেছে। আদ্রিয়ান বলল,
” চল এসো? ভেবেছিলাম দাবা খেলব। কিন্তু তোমার সাথে দাবা খেলে আমার পোশাবে না।”

অনিমা ভ্রু কুচকে ফেলল। নিজের বুদ্ধির ঢাক নিজেই পেটাচ্ছে। খবিশ লোক! কিন্তু এখন লুডু খেললে মন্দ হয়না। সময় কাটবে। অনিমা লাল গুটি আর আদ্রিয়ান নীল গুটি নিল। আদ্রিয়ান ইচ্ছে করেই একেবারে শেষ মুহূর্তে অনিমার গুটিগুলি কেটে যাচ্ছে। আর অনিমাও রেগে বম হয়ে যাচ্ছে, মুখ ফুলিয়ে বসে থাকছে। যেটা আদ্রিয়ান বেশ ইনজয় করছে। অনিমার কথা হল ওর পাকা গুটিগুলো এভাবে কাটবে কেন? এটা ঘোর অন্যায়। বারবার এমন করাতে অনিমা রাগ করে সব গুটি এলোমেলো করে দিয়ে বলল ও জিতেছে। আদ্রিয়ান অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অনিমা টেনে নিজের কাছে এনে সুরসুরি দিতে শুরু করল। অনিমার প্রচন্ড সুরসুরি থাকায় হেসে একদম কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। দুজনেই এখন নিজেদের ছোট্ট দুনিয়ায় আনন্দে ঢুবে আছে। বাকি সবে ওদের মাথাব্যথা নেই আপাতত।

জাবিন কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে কিচেনে গেল কফি করতে। শরীর ম্যাচম্যাচ করছে। কফি খেয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলে পড়ায় মন বসবে আরও। কিন্তু কিচেনে গিয়ে দেখে অভ্র কফি বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবারও সেই এলোমেলো লুক। উফ! লোকটা এরকম এলোমেলো থাকে কেন। বেশি সুন্দর লাগে বলে? অভ্র জাবিনকে দেখে চোখ নামিয়ে আবার কাজে ব্যস্ত হতে হতে বলল,

” কিছু লাগবে?”
অভ্রর কথায় জাবিনের হুশ ফিরল। ও গলা ঝেড়ে বলল,
” কফি বানাচ্ছেন?”
” হ্যাঁ অনেকক্ষণ হল কাজ করছি। একটু কফি দরকার ছিল।”
জাবিন কিছু একটা ভেবে বলল,
” আপনি রুমে যান, আমি বানিয়ে আনছি।”
অভ্র একটু অবাক হয়ে তাকাল। ব্যাপারটা হজম হল না ওর। অবাক কন্ঠেই বলল,

” আপনি কফি করবেন? আমার জন্যে?”
জাবিন বিরক্তি নিয়ে বলল,
” আজব! এতে অবাক হওয়ার কী আছে? নিজের জন্যে তো করব ই। এক কাপ বেশি করলে কী হবে? আপনি রুমে যান। আমি নিয়ে আসছি।”
” আর ইউ শিওর?”
” হুম যান, যান।”
অভ্র অবাক হয়েই চলে গেল। জাবিন কফি করে অভ্রর রুমে গিয়ে দেখে আবার ল্যাপটপে ডুবে আছেন সাহেব। জাবিন কাছে গিয়ে একটু কাশি দিয়ে বলল,

” কফি।”
অভ্র মাথা তুলে তাকিয়ে ভদ্রতার হাসি দিয়ে বলল,
” ধন্যবাদ।”
বলে আবার কাজে মন দিল। জাবিন প্রায় তিন চার মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু অভ্র আর তাকায়নি। জাবিন একগাদা বিরক্তি আর রাগ নিয়ে চলে গেল রুম থেকে। বেশি, বেশি ভাব। এতো ভাব নিয়ে এই ছেলে ঘুমায় কীকরে আল্লাহ জানেন।

রিক নিজের রুমের বিছানার উপর হয়ে শুয়ে আছে। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর। নাক চোখ সব লাল হয়ে আছে। কালরাতে আবার ভাঙচুর করেছে ও। ইচ্ছেতো করছে সব জ্বালিয়ে শেষ করে দিতে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটা সত্যিই কষ্টকর হচ্ছে। আদ্রিয়ানের বাড়ি যেতে হবে আবার। অনিমাকে দেখার জন্যে মন ছটফট করছে ওর। কী অদ্ভুত ব্যাপার! যে মেয়েটাকে দেখার জন্যে ওর মন ছটফট করছে সেই মেয়েটা সম্পর্কে ওর ভাবী হয়। কোন অধিকার আছে ওর? কেন থাকবেনা? ভালোবাসার কী কোন মূল্যে নেই। কিন্তু আদ্রিয়ানের ভালোবাসা? সেটার কী হবে? এসব ভাবতে ভাবতে স্নিগ্ধা খাবার নিয়ে এলো ওর রুমে। রিক স্নিগ্ধাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

” তোকে বলেছিলাম না যে আমি কিছু খাবোনা? কথা শুনিস না কেন?”
স্নিগ্ধা মেজাজ এমনিতেই খারাপ হয়ে আছে। রিকের কথায় ও শব্দ করে খাবারের প্লেটটা টেবিলে রেখে বলল,
” চাকর না আমি এ বাড়ির। দেওয়ার কাজ দিয়ে গেছি। খেতে ইচ্ছে হলে খাও না হলে জাহান্নামে যাও। আমার মাথা খেও না তোমরা। অসহ্য লাগছে। এরচেয়ে হস্টেলে ওঠাও হাজারগুন ভালো ছিল। কোন দুঃখে এখানে পাঠিয়েছিল মা কে জানে!”

রিক ভ্রু কুচকে শুনছিল এতক্ষণ স্নিগ্ধার কথা। স্নিগ্ধা ওর বলা শেষ করে যেতে নিলেই রিক বলল,
” দাঁড়া! বস এখানে।”
স্নিগ্ধা চোখে মুখে বিরক্তি নিয়েই বসল। রিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” কেউ কিছু বলেছে?”
স্নিগ্ধা মাথা নেড়ে না করল। রিক বলল,
” তাহলে?”
” তুমি খেয়ে নাও।”
রিক বুঝল স্নিগ্ধা ওর ওপরও একটু রেগে আছে। তাই বলল,
” খাইয়ে দে।”

স্নিগ্ধা আবারও বিরক্তি নিয়ে বলল,
” বাচ্চা তুমি যে খাইয়ে দিতে হবে?”
রিকও নিজের কন্ঠে বিরক্তি ভাব এনে বলল,
” বেশি কথা না বলে যা বলছি তাই কর।”
স্নিগ্ধা ওয়াসরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে খাইয়ে দিতে শুরু করল রিককে। খাওয়াতে খাওয়াতে বলল,
” এখানও এমন কেন করছ? অনিমা এখন অন্যকারো বউ। ওর জন্যে এভাবে ভাঙচুর করে, হাত ফাট কেটে ফেলে লাভ আছে?”

রিক গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” আর আমি যে ওকে ভালোবাসি সেটার কী হবে?”
” সব ভালোবাসা পূর্ণতা পেতেই হবে?”
রিক চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” আমি কিছু ভাবতে পারছিনা।”
” যাবে আবার ঐ বাড়ি?”
” হুম, তুই যাবি?”
” আমার পরীক্ষা চলছে। যেতে পারব না।”

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৩৮

রিক আর কিছু বলল না। চুপচাপ স্নিগ্ধার হাতে খেতে থাকল। স্নিগ্ধা ওকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেল। রিক আবার শুয়ে পরতে যাবে তখনই কবির শেখ এসে ঢুকলেন। ওনাকে দেখে রিক শুয়ে পরতে নিয়েও শুলো না। উঠে বসে বলল,
” বস, কিছু বলবে?”
কবির শেখ বিছানায় বসে বললেন,
” কী করবে কিছু ভেবেছ কী?”
” কোন বিষয়ে?”
কবির শেখ কপাল কুচকে বললেন,

” অনিমার বিষয়ে। তুমি না ওকে ভালোবাসো। তাহলে? নেক্সট পদক্ষেপ কী হবে?”
রিক একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” ও এখন আদ্রিয়ানের বউ মামা।”
” কিন্তু আমিতো তোমার কষ্ট দেখতে পারছিনা বাবাই।”
” আদ্রিয়ানও তো তোমার ভাগ্নে। এজ পার আই নো তুমি ওকেও ইকুয়ালি ভালোবাসো।”
কবির শেখ থতমত খেয়ে গেলেন। না এখন এখানে বেশিক্ষণ থাকা মানেই বিপদ। মূল কাজটা সেড়ে চলে যেতে হবে। কবির শেখ বললেন,

” দেখ বাবাই, সবকিছু স্যাকরিফাইস করা যায়না। উচিতও না। কিছুকিছু জিনিস জোর করে হলেও নিজের করে রাখতে হয়। তাহলেই জীবনে সুখী হওয়া যায়। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।”
বলে উনি উঠে চলে গেলেন। রিক নিজের মাথা চেপে ধরল। মাথা ধরে যাচ্ছে একপ্রকার। আদ্রিয়ানের জায়গায় অন্যকেউ হলে ও এক মুহূর্ত না ভেবে তখনই অনিমাকে নিয়ে আসত। কিন্তু আদ্রিয়ান ওর ভাই। তারওপর ও জানে আদ্রিয়ান ওর মায়াবিনীকে কতটা ভালোবাসে। প্রত্যেকদিন ফোনে বলা প্রতিটা শব্দ তারই প্রমাণ। বড্ড দোটানায় আছে ও। কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। ঠিক বেঠিক গুলিয়ে যাচ্ছে ওর।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪০