বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৪

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৪
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

আদ্রিয়ান চলে গেছে প্রায় বারো ঘন্টা হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও আদ্রিয়ান একবারও ফোন করেনি অনিমাকে। শেষে অনিমাই করেছিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু আদ্রিয়ান রিসিভ করেনি। এই নিয়ে খুব চিন্তিত অনিমা। ডিনারের সময় মানিক আবরারকে বলেছেও এই কথা। উনি ওকে এটা বলে আশ্বস্ত করেছে যে, আদ্রিয়ান বলেছিল ওর আজ স্টেজ শো আছে, সেসব নিয়েই ব্যস্ত আছে হয়তো।

ফ্রি হলে নিশ্চয়ই ফোন করবে। ও আগেও এরকম করেছে অনেকবার। রিমা অবরারও তাই বললেন। ওনাদের এসব কথা শুনে অনিমার চিন্তা কিছুটা কমলেও মনের মধ্যে খচখচ করছে। রিক শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। এতো শক্ত করে স্পুন চেপে ধরে আছে যেন হাতের মধ্যে ঢুকে যাবে। সকলের সামনে আছে তাই দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। মাত্র কয়েকঘন্টা যোগাযোগ হয়নি তাতেই আদ্রিয়ানের জন্যে এতো চিন্তা?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কয়েকমাসেই এতো ভালোবাসা? অথচ ওর সাথে একটা বছর থাকার পরেও বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছুই ভাবতে পারেনি অনিমা ওকে। এটাকে কী বলে? আদ্রিয়ানের সার্থকতা? রিকের ব্যর্থতা? না-কি নিয়তি? কিন্তু ওর কী দোষ ছিল? যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছিল তাকে প্রতিনিয়ত অন্যের হয়ে যেতে দেখতে হচ্ছে। সেই মেয়েটা অন্যকারো জন্যে চিন্তা করছে, ছটফট করছে। প্লেটে স্পুন ঘষতে ঘষতে সেসবই ভাবছিল রিক। সেবেলাও ওর ঠিকভাবে খাওয়া হয়নি ওর।

অনিমা আদ্রিয়ানকে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু এখন ফোন বন্ধ বলছে। অনিমার এবার আরও বেশি টেনশন হচ্ছে। রঞ্জিত চৌধো আর কবির শেখ এখন জানে ও কোথায় আছে। এটাও জানে যে আদ্রিয়ান ওর বর। আর কাছের মানুষকে হাতিয়ার করে যুদ্ধ লড়া ওনাদের মূল যুদ্ধনীতি। আদ্রিয়ানের সাথে খারাপ কিছু করবেনা তো ওনারা? অনিমা এসব নানারকম চিন্তায় বিভোর থেকে শেষ রাতের দিকে শেষের পাতা এক করল।

সকালবেলায় অনিমা মুখ ভার করে সোফায় বসে আছে। ওর মধ্যে অস্হিরতা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মানিক আবরার রেডি হয়ে নিচে এসে অনিমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে হেসে বলল,
” মামনী?”
অনিমা মলিন মুখ নিয়ে ওনার দিকে তাকাল। ধীর কন্ঠে বলল,
” জি বাবা।”
মানিক আবরার অনিমার পাশে বসে বলল,

” আদ্রিয়ানের জন্যে চিন্তা হচ্ছে? ও তো বাচ্চা নয়, তাইনা? আর খুব বেশি ব্যস্ত থাকলে এরকমম করে ও। দেখবে দুপুরের মধ্যেই ওর ফোন চলে আসবে। আর না আসলেতো আমরা আছিই, তাইনা?”
রিমা আবরার কিচেন থেকে বেড়িয়ে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বললেন,
” সেটাইতো বোঝাচ্ছি ওকে। সকালে ঠিককরে খায়ও নি। দেখ কেমন মুখ করে আছে।”
মানিক আবরার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” আচ্ছা, তোমরা থাকো। আমাকে আবার একটু অফিস থেকে ঘুরে আসতে হবে।”
রিমা আবরার সম্মতি জানালেন। কিছুক্ষণ পর জাবিনও নিচে নেমে এলো। ও এসে অনিমার সাথে টুকিটুকি কথা বলে ওকে নরমাল করার চেষ্টা করছে। ঘন্টখানেক পর মিসেস রিমা রেডি হয়ে নিচে নেমে বলল,

” অনি, জাবিন আমি একটু আমার বান্ধবীর বাড়িতে যাচ্ছি। চলে আসব দুপুরের আগে। তোরা থাক। রিক ওপরে ঘুমাচ্ছে। দেখিস ওর কিছু লাগবে কি-না।”
অনিমা আর জাবিন দুজনেই মাথা নাড়ল। মিসেস রিমা বেড়িয়ে যাওয়ার পর অনিমা আর জাবিন দুজনেই সোফায় বসে বই পড়ছিল। কিন্তু অনিমার মনোযোগ বইয়ের চেয়ে বেশি ফোনের দিকে। আদ্রিয়ান ফোন করে যদি? কিন্তু আদ্রিয়ান ফোনই করছেনা। জাবিন ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বলল,

” আরে, এতো চিন্তা করছ কেন? ঠিক ফোন করবে দেখ। শোননা ভাবি, আমার না একটা ক্লাস আছে এখন। রুমে যেতে হবে। তুমি আমার সাথে রুমে আসবে না-কি এখানেই থাকবে?”
অনিমা বলল,
” না, না তুমি ক্লাস কর। আমি বরং এই ফাঁকে আদ্রিয়ানের ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ারটা সেড়ে নেই।”
জাবিন মাথা নাড়ল। জাবিন আর অনিমা বই-টই নিয়ে একসাথেই ওপরে গেল। জাবিন ওর রুমে গেল আর অনিমা আদ্রিয়ানের রুমে গেল শাওয়ার নিতে।

প্রায় এক ঘন্টার মত শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে অনিমা আয়নার দিকেই যাচ্ছিল চুল মুছতে। কিন্তু বিছানায় চোখ পরতেই দেখল রিক বসে আছে। ওর চোখেমুখে ভয়ংকর রাগ। অনিমা হঠাৎ ওকে এখানে দেখে ঘাবড়ে গেল। রিক কীকরে ঢুকল? ও কী তবে দরজা আটকায় নি? সেদিনের মত আবার কিছু করবে না-তো রিক? কথাটা মনে হতেই ও দ্রুত দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতে নিলেই রিক এসে ওর হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে দরজা থেকে সরিয়ে নিল। অনিমা টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় বসে পরল।

ও কোনরকমে উঠে দাঁড়াল আবার। রিক ক্রোধিত দৃষ্টিতে দেখছে অনিমাকে। এতোদিন আদ্রিয়ানের জন্যেই অনিমার কাছে আসতে পারত না। কোন না কোনভাবে ঠিক আদ্রিয়ান চলে আসত সেই মুহূর্তেই। কিন্তু আজ সুযোগ যখন পেয়েছে তখন ওকে সবটা জানতেই হবে। অনিমাকে ওর সব কথার উত্তর দিতে হবে। ওকে জবাব দিতে হবে এরকম কেন করল ও? রিককে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে অনিমা কম্পিত কন্ঠে বলল,

” দেখুন, আমার কাছে আসবেন না আপনি। কেন এসছেন এখানে? আর কী চান আমার কাছ থেকে? কেন এভাবে অশান্তি সৃষ্টি করছেন আমার জীবনে?”
রিকের রাগ অনিমার এরকম কথায় আরও বেড়ে গেল। রিক অনিমার হাত চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,
” আমি অশান্তি সৃষ্টি করছি? আমি? আর তুমি যেটা করেছো সেটা কী হ্যাঁ? বারবার এমনভাবে কথা বলছ যাতে আমি তোমাকে ঠকিয়েছি! আমি তোমাকে ছেড়েছি। আমি সব অন্যায় করেছি। নিজের দোষ ঢাকতে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছো?”

অনিমা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
” আমি কিছুই করিনি। যেতে দিন আমায়।”
রিক আরও শক্ত করে হাত চেপে ধরে বলল,
” যেতে তো দেবোনা। আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর তুমি যাবে। এই দোটানা, সংশয়, অনিশ্চয়তা আমি জাস্ট নিতে পারছি না। ইউ হ্যাভ টু এক্সপ্লেইন মি।”
অনিমা কান্নামাখা গলায় বলল,

” রিক, আমি আপনার ভাইয়ের বউ! সম্পর্কে আপনার ভাবি। এরকম করতে পারেন না আপনি আমার সাথে।”
রিক ঝাড়ি মেরে বলল,

” হ্যাঁ জানি! আর সেইজন্যেই তোমার কাছে শুধুমাত্র উত্তরটুকু চাইছি আমি। য‍দি তুমি আদ্রিয়ানের বউ না হতে তাহলে এতক্ষণে আমি তোমাকে__ কী যেন বলছিলে? তুমি কিছুই করোনি। সত্যিই কিছু করোনি? তোমার জন্যে এতোটা করার পরেও অকারণেই আমার সাথে বাজে ব্যবহার করোনি? আমার সাথে বিয়ে ঠিক থাকার পরেও আমার অনুপস্থিতিতে তুমি ঐ বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে আসোনি? তারপর মাত্র কয়েকমাসের পরিচয়ে আমার ভাইকে পটিয়ে নিয়ে তাকে বিয়ে করে ফেললে। আর আজ বলছ যে আমি তুমি কিছুই করোনি। আমি তোমার শান্তি নষ্ট করছি?”

অনিমার এবার রাগে সমস্ত গা জ্বলে যাচ্ছে। একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছে রিক ওর নামে। অথচ নিজে সাধু সাজছে। অনিমা রিককে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
” হ্যাঁ করছেন! আপনি আমার শান্তি নষ্ট করছেন। আজ আপনি আমার দিকে আঙুল তুলছেন? হ্যাঁ এটা সত্যি আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তারজন্যে আমি আপনার কাছে সেদিনও কৃতজ্ঞ ছিলাম আর আজও আছি। সেইজন্যই আপনার প্রতি কোনরকম অনুভূতি না থাকার সত্ত্বেও অাপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম। শুধুমাত্র আপনার ঋণ শোধ করার জন্যে।”

রিক অবাক দৃষ্টিতে তাকাল অনিমার দিকে। শুধুমাত্র ঋণ শোধ করার জন্যে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল? অনিমা চোখ মুছে বলল,
” হ্যাঁ এটা ঠিক একপর্যায়ে আপনাকে নিজের সবথেকে ভালো বন্ধু মনে হতো আমার। তবে এটাও ভাবতাম যে আপনি আমাকে বিয়ে কেন করতে চান। কিন্তু আপনি? আপনি কী করছিলেন? নিজের বাবা আর মামার কুকীর্তি যাতে আমি বাইরে কাউকে না জানাতে পারি তাই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন আমায়। নিজের বউ নয়, বন্দি দাসী বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন আমাকে।”

রিক বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাল অনিমার দিকে।এসব কী বলছে অনিমা? কীসের কুকীর্তি? অনিমা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
” অবাক হচ্ছেন? আমি কীকরে জানলাম? আপনার বাবা আর মামা নিজেই বলেছিল আমাকে সবটা। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ওদেরক‍ে বিশ্বাস করিনি। আমি জানতাম ওরা নিজের স্বার্থে নিজের কাছের মানুষকেও ফাঁসাতে পারে। তাই পাত্তাই দেইনি ওদের কথায়।

কিন্তু আমার বিশ্বাস আপনি সেদিনই হারিয়েছেন যেদিন এটা জানতে পেরেছি যে আপনারই ইনসট্রাকশনে রোজ আমাকে ইনজেকশন দেওয়া হতো। আমি জানিসা সেটা কীসের ইনজেকশন ছিল। আমার শরীরে সেটা কতটা ড্যামেজ করেছে। আর ভবিষ্যতে এর কারণে আমার কী ক্ষতি হতে পারে। জানেন তো আপনারা।”

রিক হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
” অনি আমি..”
” এখন প্লিজ এটা বলবেন না যে আপনি ইনজেকশন দিতে বলেননি। কারণ সেটা আপনি নিজে স্বীকার করেছেন। ওরা যখন আমায় বলেছিল আমি মানিনি। আমি ভাবতেই পারিনি আপনি আমার সাথে এতো খারাপ কিছু করতে পারেন। কিন্তু মনে আছে আমি নিজে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাকে? যে আপনি সুমি আপুকে আমায় কোন ইনজেকশন পুশ করতে বলেছেন কি-না? আপনি সেদিন নিজে স্বীকার করেছিলেন যে হ্যাঁ আপনি বলেছেন এটা করতে।”

রিক একপ্রকার পাথরের মতই দাঁড়িয়ে আছে। ওর সব কথা যেন গলায় আটকে গেছে। অনিমার একেকটা কথা ওকে জমিয়ে দিচ্ছে। অনিমার নাক টেনে বলল,
” সেদিনের পর থেকে এমনিতেই আপনাকে সহ্য হতোনা আমার। আপনি যে রক্তের ধারাটাই পেয়েছেন সেটা বুঝে গেছিলাম। আর ঐসময় আমার সবকিছুই অসহ্য লাগত। আপনাকে একদমই সহ্য হতোনা আমার।

আর তখনই আপনি আপনার আসল রং দেখিয়েছিলেন আমার ওপর। তাইনা? একেকটা দিন আমার কেমন কাটতো তখন জানেন আপনি? আর বারবার বলছেন যে আমি আপনার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসছি? সত্যি যদি পালাতে পারতাম ঐ নরক থেকে, খুব ভালো হতো। কিন্তু আমি পালাই নি! কীকরে পালাবো? আমাকে তো আপনি জেলের আসামীর মত বন্দি করে রাখতেন।

কিন্তু সেদিন আপনার বাবা আমাকে একদল পাচারকারীর হাতে তুলে দিয়েছিল। আর সেটাতো আপনার জানাই। কারণ সেই দলের এরেঞ্জমেন্ট তো অাপনিই করেছিলেন। সবকিছু যাতে ঠিকঠাক হয় সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন অাপনি। যদিও এই কথাটাই আছে যেটা আপনার মুখ থেকে শুনিনি আমি। কিন্তু বাকি সব সত্যি হলে এটাও নিশ্চয়ই সত্যি?”

রিক এখনও ওভাবেই তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা বিছানায় বসে পরল। তারপর ভাঙা কন্ঠে বলল,
” আমার কোন অনুরোধ, কোন আকুতি সেদিন আপনার বাবার মন গলাতে পারেনি। আমি ওনার পায়ে পর্যন্ত পরেছিলাম। বলেছিলাম আমি অনেক দূরে চলে যাবো তবুও যাতে আমার এতোবড় ক্ষতি না করে। কিন্তু উনি শোনেন নি। জোর করে ওদের হাতে তুলে দিয়েছিল আমায়। সেটাতো আল্লাহর রহমত ছিল যে যেদিন আমায় হ্যান্ডওভার করা হচ্ছিল সেদিন আদ্রিয়ান চলে এসছিল ওখানে। না হলে আজ হয় আমি কবরে থাকতাম নয়তো কোন পতিতাপল্লীতে অন্যে__”

রিক সাথে সাথেই থমকে বলে উঠল,
” চুপ! একদম চুপ!”
বলে রিক দুহাতে নিজের চুল উল্টে ধরে দুকদম পিছিয়ে গেল। অনিমার কথাগুলো ওর মস্তিষ্কে ভনভন করে ঘুরছে। কী বলল এসব মেয়েটা? রিক ওর মামা আর বাবার ব্যাপারে যথেষ্ট দুর্বল। ওনাদের ব্যাপারে খারাপ কিছু ভাবতে চায়না। এটা ঠিক। কিন্তু এমনিতে ও যথেষ্ট বুদ্ধিমানও। তাই পুরো ব্যাপারটা মেলাতে ওর বেশি সময় লাগল না। অনিমা প্রচন্ড জোরে জোরে শব্দ করে কাঁদছে।

রিক ওকে সামলাবে সেই মানসিক পরিস্থিতি ওর নেই। এখন ওকে কে সামলাবে? ওর হৃদপিণ্ড থেমে যেতে চাইছে। শ্বাস আটকে আসতে চাইছে। এখন ওর আদ্রিয়ানকে দরকার। খুব দরকার! কিন্তু সে-ও তো নেই। অনিমাকে নিজের হয়ে সাফাই দেওয়ার মত মানসিক অবস্থা ওর নেই তাই কিছু না বলে ধীরপায়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। অনিমা কান্না করতে করতে বিছানায় শুয়ে পরল। মাথাটা হঠাৎ আবার ব্যাথা করছে। ও তো ঐসব দিনগুলো ভুলতে চায়। কেন পারছেনা? বারবার কেন এগুলোই ওর সামনে আসে।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৩

দুপুরে রিমা আবরার এসে অনিমাকে ডেকে নিচে আনলেন। অনিমা একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিচে এল। একেতো আদ্রিয়ানের খবর নেই, তারওপর রিকের সাথে ওসব নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছে।কান্নাকাটি করাতে চোখমুখ শুকনো লাগছে।নিচে এসে দেখে রিক আর জাবিনও আছে। রিকের সাথে চোখাচোখি হতেই ও চোখ সরিয়ে নিল। রিকের চোখমুখও লালচে হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেঁদেছে। মিসেস রিমা বলল,

” দেখেছ মুখচোখের কী অবস্থা হয়েছে? এবার আসুক ঐ ছেলে। আচ্ছা করে ধোলাই দেব। আমার মেয়েটাকে এভাবে কাঁদায়?”
অনিমা আর নিজেকে সামলাতে পারল না। মিসেস রিমাকে জড়িয়ে ধরে সত্যিই কেঁদে ফেলল। জাবিন অবাক হয়ে বলল,
” আরে ভাবি, কেঁদোনা প্লিজ। ভাইয়ার খবর পেয়ে যাবো ঠিক। কিচ্ছু হবেনা।”
” বোকা মেয়ে, আমার ছেলে আমি চিনি ওকে। দেখ গিয়ে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে। কান্নাকাটি থামা।”

বলে মিসেস রিমা অনিমাকে নিয়ে সোফায় বসলেন। অনিমা নাক টেনে কেঁদেই যাচ্ছে। রিক সোফায় বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে অনিমাকে। দেখছে ওর নীলপরী ওর ভাইয়ের জন্যে কতটা উদ্বিগ্ন হতে পারে। কতটা ভালোবাসলে এটা সম্ভব। জাবিন টিভি অন করে বলল,

” দেখি টিভিতে কিছু বলে কি-না। ভাইয়ার তো কাল শো ছিল।”
নিউস চ্যানেলে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই টিভিতে খবর এলো যে, ‘শো করতে আসেন নি বিখ্যাত রকস্টার আদ্রিয়ান অাবরার জুহায়ের। ক্ষুদ্ধ দর্শকরা, স্টেজে ভাঙচুর! বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন ওরগানাইজাররা।’

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৫