বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫০

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫০
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

অনিমার বাবা তার পরের দিন সকালেই আদ্রিয়ানদের বাড়ি থেকে ওকে নিয়ে চলে গেছে। যাওয়ার সময় অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আদ্রিয়ান ঐ মুহূর্তে নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখেছে। হাসি মুখেই বিদায় দিয়েছে নিজের মায়াবিনীকে। কিন্তু অনিমার মোটেও ভালো লাগছিল না। নিজের বাড়িতে, বাবার কাছে ফিরে যাওয়ার আনন্দের সাথে আদ্রিয়ানকে ছেড়ে থাকার কষ্টটা মিশে এখন দুটো অনুভূতি-ই ফিকে হয়ে গেছে। সারা রাস্তাই মন খারাপ করে বসে ছিল ও। আদ্রিয়ান এমন একটা মানুষ যার সাথে অনিমা ভীষণভাবে জড়িয়ে গেছে। যে স্মৃতি থেকে মুছে গেলেও মন থেকে কোনদিনও মুছবে না।

হাসান কোতয়াল গম্ভীরমুখে বসে আছেন। তার আশরাফ মৃধা, রাহেলা আর ওনাদের ছেলে অর্ক। ওনারা তিনজনই অনিমার বাবার বাড়িতেই থাকছেন। হাসান কোতয়ালকে দেখে তিনজনই ভুত দেখার মত চমকে গেছিল। স্বাভাবিক! পাঁচবছর আগে যেই মানুষটা মারা গেছে সে ফিরে এলে যে কেউ চমকাবে। তারওপর অনিমাকে দেখে আরও অবাক হয়েছে। এই মেয়ে হুট করে আবার কোন গর্ত থেকে উঠে এলো? ওনারা তো ভেবেই নিয়েছিল যে বাপের সাথে সাথে ওও বিদায় হয়েছে। হাসান কোতয়াল পরে ওনাদের বুঝিয়েছেন যে লাশটা ওনার ছিলোনা। বেশ অনেকটা সময় পর ওনারা শান্ত হয়েছে। ওরা দুজন ফিরে আসাতে যে ওনারা কতটা খুশি, সেটাই নানারকম মনোভাব প্রকাশ করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। রাহেলা অনিমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” এতোদিন কোথায় ছিলি মা? এভাবে হুট করে চলে যায় কেউ?”
আশরাফ মৃধা বললেন,
” কোথায় কোথায় না খুঁজেছি তোকে? মামার কথা তো একবার ভাববি? কেমন আছিস?”
অনিমা ওনাদের দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধীর কন্ঠে বলল,
” যতটা এক্সপেক্ট করেছিলে তারচেয়ে অনেক বেশি ভালো আছি।”
অনিমার উত্তর শুনে দুজনেই একটু হকচকিয়ে গেছিল। অর্ক একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। অনিমা অর্কর দিকে তাকিয়ে শুধু হেসেছিল হালকা। যেটাকে তাচ্ছিল্যের হাসি বলে। দীর্ঘ সময়ের নিরবতা ভেঙ্গে হাসান কোতয়াল বললেন,

” আমার সবসময়ই একটা ভরসা ছিল যে আমার কিছু হয়ে গেলেও আমার চিন্তা নেই। আমার মেয়ের মামা-মামী ওকে দেখে রাখবে। অথচ আজ পাঁচ বছর পর ফিরে এসে আমাকে আমার মেয়েকে অন্যকারো বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হল। তাও সেই ছেলেটা ওকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছিল। অথচ আপনারা আমারই বাড়িতে বসে বসে আমারই টাকায় আয়েশ করছেন। এটাকে আমি কী বলব?”
আশরাফ একবার নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তারপর খুব দুঃখী গলায় বললেন,

” হাসান, আমরা তোমার মেয়েকে বেড় করে দেইনি। ও নিজেই উধাও হয়ে গেছিল কোথাও। ঐ ইন্ডিয়ান একটা মেয়ে ছিল। কী যেন নাম হ্যাঁ, আর্জু ছিল হয়তো। ওর সাথেই কোথাও একটা বেড়িয়েছিল। কিন্তু আর ফেরেনি। আমরা অনেক খোঁজ করেছিলাম ওর, কিন্তু পাইনি।”

আর্জুর কথা উঠতেই অনিমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। ওর ছোট্ট একটা ভুলের জন্যে সেদিন কী ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিলো। সেই রক্তপাত, সেই চিৎকার, বাঁচতে চাওয়ার আকুতি সব যেন চোখে ভাসছে। মাথা ভার হয়ে আসছে। অনিমা দু-হাতে মুখ চেপে ধরল নিজেকে স্বাভাবক করার জন্যে। হাসান কোতয়াল দুই হাত একত্রিত করে একটু ঝুঁকে বললেন,

” কোথায় কোথায় খোঁজ করেছিলেন আশরাফ ভাই?”
আশরাফ মৃধা আর রাহেলা দুজনেই এবার আমতা আমতা করতে শুরু করলেন। হাসান কোতয়াল বলল,
” যাক, যা হওয়ার হয়েছে। এতদিন আমার অফিস সামলেছেন তার জন্যে ধন্যবাদ। এবার আমার কাজ আমি করতে পারব। কাল থেকে আমি অফিসে বসছি।”

তারপর হাসান কোতয়াল অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখল অনিমা মাথা চেপে ধরে বসে আছে। হাসান কোতয়াল বললেন,
” মামনী? অসুস্থ লাগছে? চল রুমে গিয়ে রেস্ট করবে।”
রাহেলা আল্লাদি কন্ঠে বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ। দেখেই মনে হচ্ছে ও অসুস্থ। ওপরের ওর রুম পরিষ্কার করিয়ে রেখেছি একটু আগে। যা মা গিয়ে বিশ্রাম নে।”

অনিমা ভাবছে সত্যিই মানুষ স্বার্থের পাগল। আজ ওর বাবা ফিরে এসছে বলে এখন ওর প্রতি কত দরদ। অথচ ওর বাবা যখন ছিলোনা তখন জ্বর, সর্দি, আরও সবরকম অসুস্থতা নিয়েও কাজের লোকের মত বাড়ির সব কাজ করেছে ও। হাসান কোতয়াল অনিমাকে নিয়ে দাঁড়াতেই আশরাফ মৃধা বলে উঠলেন,
” অ্ আমরা কী চলে যাবো? এখান থেকে?”
হাসান কোতয়াল ভ্রু কুচকে বললেন,

” যদি থাকতে ইচ্ছে হয় থাকো কয়েকদিন। শত হোক তোমার বোনের বাড়ি এটা। সে বেঁচে নেই বলে যে বাড়িটা তার নেই এরকম ভাবার কারণ নেই।”
বলে অনিমাকে নিয়ে ওপরে চলে গেল। অর্ক ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে বাইরে চলে গেল। এদিকে আশরাফ মৃধা আর রাহেলা ভাবছেন যে হঠাৎ করে দুটোই একসঙ্গে উদয় হলে কোথা থেকে? সবকিছু হাতে এসেও আসলোনা, হাতছাড়া হয়ে গেল। তাই আড়ামে থাকতে হলে বাকি জীবন হাসান কোতয়ালকে তেল মেরেই চলতে হবে।

বেশ রাত হয়েছে। মেঘলা আকাশ তাই চারপাশটা আরও ঘুটঘুটে অন্ধকার। হালকা শো শো বাতাস বইছে। যেকোন সময় বৃষ্টি হতে পারে। বাড়ির ছাদের এক কোণায় বসে আছে রিক। অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর জীবটাও এখন এই আকাশের মতই মেঘ আর অন্ধকারে আচ্ছন্ন। নিজের ওপরেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মদের বোতলে চুমুক দিতে গেলেই স্নিগ্ধা এসে আটকে নিলো। রিক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

” তুই এখানে কী করছিস?”
স্নিগ্ধা বোতলটা টেনে নিয়ে বলল,
” জানতাম এখানে বসে এসব ছাইপাস গিলছো। একজন ডক্টর তুমি। তারপরেও?”
” এসব প্যাচাল পারতে এসছিস এখানে? দে ওটা দে।”
স্নিগ্ধা দূরে সরিয়ে নিল বোতলটা। তারপর রিকের হাতে হাত রেখে বলল,
” ও বাড়ি থেকে আসার পর থেকে নিজেকে ঘরবন্দী করে নিয়েছ। ঠিকমতো খাচ্ছোনা, ঘুমাচ্ছোনা, বাড়ির কারো সাথে কথাও বলছোনা। এমনকি মামার সাথেও কথা বলছোনা তেমন। ওদের করা কাজের জন্যে তুমি নিজেকে শাস্তি কেন দিচ্ছো?”
রিক বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এখান থেকে যা আর আমাকে একা থাকতে দে।”
বলে বোতলটা টেনে নিয়ে গিয়ে তাতে চুমুক দিতে গেলেই স্নিগ্ধা বলে উঠল,
” অনি কিন্তু ড্রিংক করা মোটেও পছন্দ করেনা রিকদা। ও তোমাকে নিজের খুব ভালো বন্ধু ভাবে। তোমার নীলপরী যেটাকে অপছন্দ করে সেটা তুমি করছ প্রতিনিয়ত। একজন বন্ধু হিসেবে ও কিন্তু কষ্ট পাবে।”

রিক থেমে গেল। কিছুক্ষণ বসে রইল ওভাবে। বেশ অনেকটা সময় পর বোতলটা পাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। স্নিগ্ধাও কিছু না বলে রিকের পাশেই চুপচাপ বসে রইল। হঠাৎ রিক করুণ কন্ঠে বলে উঠল,
” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমোতে চাই। তোর কোলে মাথা রাখতে দিবি?”

স্নিগ্ধা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রিকের দিকে। রিকের বলা কথাটা ওর বিশ্বাসই হচ্ছেনা। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। রিক কিছু না বলে স্নিগ্ধার কোলে মাথা রেখে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু স্নিগ্ধার মনের মধ্যে ঝড় চলছে। এমন অনুভূতি হচ্ছে কেন ওর? মনে হচ্ছে এই মানুষটার জন্যে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে দেওয়া যায়। এর আগেতো এমন হতোনা! এসব ভাবতে ভাবতে রিকের মাথায় হাত চলে যায় ওর। আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে রিকের মাথায়।

দেখতে দেখতে তিনটা দিন কেটে গেছে। এই তিনদিনে অনিমা আদ্রিয়ানের ফোনে ফোনেই কথা হয়েছে শুধু। তাও খুব কম। ইদানীং আদ্রিয়ান রেকর্ডিং, স্টেজ শো, ইন্টারভিউ এসব নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে আছে। একটার পর একটা কাজ লেগেই আছে। সারাদিনের খাটাখাটনির পর রাতে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ঘুমানোর আগে একটু কথা বলে ফোনে একটু কথা বলতে পারে অনিমার সাথে। কিন্তু সারাদিন দুজনেই দুজনের জন্যে ভেতরে ভেতরে ছটফট করে বেড়ায়। এই নিয়ে বেশ চলছে এদের বিরহ পর্ব।

ক্লাস করে কলেজের ক্যান্টিনের পাশের পুকুরপারে বসে আছে অনিমা, তীব্র আর অরুমিতা। তিনজনই আপাতত চুপ আছে। তিনজনেরই তিন কারণে মন খারাপ। অনিমা ঢিল ছুড়ছে শুধু পুকুরের পানিতে। অরুমিতা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আর তীব্র দেবদাস স্টাইলে সিঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছে। অনিমা আড়চোখে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

” কীরে দেবদাস? তোর ‘পারো’ আজ আবার তোকে কোন ছ্যাকা দিল?”
তীব্র বরাবরেই মতোই হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
” কালকে খেলা দেখছিলাম তাই ফোনের দিকে খেয়াল ছিলোনা। মহারানি পাঁচ বার কল করেছিল দেখিনি, তাই ধরিনি। এরপর আমি পঞ্চাশবার কল করেছিলাম কিন্তু সে আর ধরেনি।”
অনিমা হেসে দিয়ে বলল,

” ঠিক হয়েছে! কীসের এতো খেলা হ্যাঁ? আগে গার্লফ্রেন্ড তারপর খেলা। এবার বোঝ ঠ্যালা।”
তীব্র দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলল,
” আগে যদি জানতাম গো বন্ধু! এ জীবনে প্রেম করতাম না।”
অনিমা খিলখিলিয়ে হেসে দিল। অরুমিতা এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও ওও এবার হেসে ফেলল। এরমধ্যেই স্নেহা চলে এসে অনিমার পাশে বসে তীব্রই দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিল। অনিমা বলল,

” তোর দেবদাস তোর বিরহে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে।”
স্নেহা বিরক্তি নিয়ে বলল,
” এই পানিতে ডুবে মরতে বল।”
তীব্র গলা ঝেড়ে ঠিকঠাক হয়ে বসল। অনিমা অরুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কীরে? তোর মুড অফ কেন?”
অরুমিতা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে লম্বা এক শ্বাস ফেলে বলল,
” অয়ন স্যারের ব্যাপারটা আসলেই ভালো লাগছেনা আমার। কোথা থেকে নম্বর জোগাড় করেছে কে জানে? কাল রাতে কল করেছিল।”
অনিমা হেসে দিয়ে বলল,

” সেটাতো তোদের ভাইয়া অনেক আগেই বলেছে আমাকে। স্যার মানুষ হিসেবে তো ভালোই মনে হয়। সমস্যা কোথায়?”
অরুমিতা কিছুই বলল না। চুপ করে রইল। ওদের কীকরে বোঝাবে যে ওর মনের অনেকটা অংশ জুড়ে এখনো আশিস-ই আছে। চেষ্টা করেও সেই জায়গাটা এখনো অন্যকাউকে দিতে পারছেনা ও। স্নেহা অনিমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” এইযে মিসেস, তোমার মনের খবর নিচ্ছেন এবার আপনার কথা বলুন। কেমন কাটছে আপনাদের দিন? আদ্রিয়ান ভাই সুস্থ আছেতো তোকে ছাড়া?”
তীব্রও হেসে দিয়ে বলল,
” সেইতো! তিন তিনটে দিন হয়ে গেছে। নো দেখা সাক্ষাৎ! ভাবা যায়! ভাই যে এখনো সুস্থ আছে এটাই অনেক।”
অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল,

” লেগপুল করবিনা তো একদম। রাগ লাগছে আমার এখন! লোকটা একটু বেশিই ব্যস্ত! সারাদিনে একটু ফোন করেনা। করে সেই রাতে গিয়ে। তাও বেশিক্ষণ কথাই বলতে পারেনা”
অরুমিতা হেসে বলল,
” ব্যাপারটা কিন্তু মজার। বিবাহিত দম্পতি হয়েও এখন কলেজ লাইফের প্রেমিক-প্রেমিকার মত অবস্থা এদের। প্রেম একেবারে মাখো, মাখো। আহা!”
সবাই ওরা বেশ অপেক্ষণ হাসাহাসি করল এটা নিয়ে। অনিমাও হাসল। এটা ঠিক আদ্রিয়ান ফোনে বেশ পাগলামি করে। মাঝেমাজে কীসব বাচ্চাদের মত উদ্ভট কথাও বলে। যে কেউ তখন তখন ওর কথা শুনে বলবে আস্ত বউ পাগল।

রাতে ডিনার করে এসে শুয়ে শুয়ে বেশ অনেক্ষণ পর্যন্ত আদ্রিয়ানের ফোনের অপেক্ষা করল অনিমা কিন্তু আদ্রিয়ান ফোন করেনি। এরপর অনিমা ট্রায় করেছিল কিন্তু বন্ধ বলছে। তাই মন খারাপ করে শুয়ে শুয়ে আদ্রিয়ানের ফোনের অপেক্ষা করতে করতে চোখ লেগে আসতেই ওর ফোন বেজে উঠল। অনিমা দ্রুত চোখ খুলে ফেলল। ফোন হাতে নিয়ে দেখল আদ্রিয়ান। ওর মুখে স্বস্তির হাসি ফুটে উঠল। তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে বলল,

” আজ এতো দেরী করে ফোন করলেন যে?”
ওপাশ থেকে ক্লান্ত কন্ঠে আদ্রিয়ান বলল,
” খুব ব্যস্ত ছিলাম। একটু আগে একটা শো শেষ করলাম। একটু ব্যালকনিতে আসবে?”
অনিমা চোখ বড়বড় করে ফেলল। ও ঝট করে উঠে বসে বলল,
” মানে? কোথায় আপনি?”
” তোমার বাড়ির পাশের রোডে।”
অনিমা অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গেল। এতো রাতে আদ্রিয়ান চলে এসছে এখানে? যদিও এই পাগলের দ্বারা সব সম্ভব। ও উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” আপনি দাঁড়ান আমি আসছি।”
আদ্রিয়ান দ্রুত বলে উঠল,

” না, তোমাকে নিচে আসতে হবেনা। আমি থাকতে পারবোনা। এখনই চলে যেতে হবে। একটু ব্যালকনিতে আসবে জানপাখি? জাস্ট দু মিনিট নেব।”
আদ্রিয়ান কথা শেষ করার আগেই অনিমা দৌড়ে ব্যলকনিতে চলে গেল। গিয়ে দেখে সামনের বড় রাস্তাটায় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে ওকে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। গায়ের জ্যাকেকটা খুলে হাতে নিয়েছে। পরনে সাদা টিশার্ট। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,

” উফফ! এতক্ষণে কলিজা একটু হলেও ঠান্ডা হল। তেরাশি ঘন্টা, ছাব্বিশ মিনিট পর তোমাকে দেখলাম। আরেকটু হলে নির্ঘাত মরে যেতাম। বাঁচিয়ে দিলে।”
অনিমা হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। চোখ ছলছল করে উঠছে ওর। ও কাঁপা গলায় বলল,
” পাগল আপনি?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
” অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পরেছিলে নিশ্চয়ই? যাও রুমে যাও। আর একটু জেগে থেকো প্লিজ। আমি গিয়ে ফোন করব।”

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৪৯

অনিমা কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান চলে যাওয়ার পর ও ধীরপায়ে নিজের রুমে গিয়ে বসে রইল। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু ঘুমালে তো চলবে না? আদ্রিয়ান জেগে থাকতে বলেছে তো। প্রায় দেড় ঘন্টা পর আদ্রিয়ানের ফোন এলো। অনিমা সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে ফেলল। আদ্রিয়ান ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

” সরি জানপাখি, খুব ঘুম পাচ্ছে না?”
অনিমা বুঝল আদ্রিয়ান আজ সারাদিনের ব্যস্ততায় খুব ক্লান্ত। তাই বলল,
” আপনি ঘুমিয়ে পরুন। খুব ক্লান্ত লাগছে আপনাকে।”
আদ্রিয়ান আবারও ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

” তোমার বাবার প্রতি খুব রাগ হচ্ছে আমার। সেদিন ঠিকই বলেছিলাম। একদম বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত কাজ করেছে তোমার আব্বু। তুমি জানো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মরে যাচ্ছি আমি। এই কটা মাস কীকরে থাকব? আগে জানলে তোমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করে, এক বাচ্চার বাবা হয়ে তারপর ওনাকে আনতাম। তাহলে এই এক্সট্রা প্যারা নিতে হতোনা আমাকে। তোমাকে খুব জ্বালাচ্ছি তাইনা? ঘুমাও জানপাখি। গুড নাইট!”

এরপর ওপাশ থেকে আর কোন কথার আওয়াজ এলোনা। অনিমা বুঝল আদ্রিয়ান ঘুমিয়ে পরেছে। ও কলটা কেটে মন খারাপ করে শুয়ে রইল। কবে পরীক্ষা আসবে আর কবে শেষ হবে? ওর নিজের কষ্টের চেয়েও এই লোকটার কষ্ট যে ওকে বেশি পোড়ায়, বড্ড বেশি পোড়ায়।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫১