বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫১

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫১
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

আদ্রিয়ান আজ বেশ সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেছে। অনিমা-ই জাগিয়েছে ফোন করে। আজ ও কক্সবাজার যাবে। ওখানে তিনদিন থাকতে হবে। একটা শো আছে ওর। মন মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে আছে ওর। ভেবেছিল আজ গিয়ে অনিমার সাথে দেখা করবে কিন্তু সেটা হল না। শো পরে গেল। যদিও শো-টা আরও পরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইমার্জেন্সি কারণে এগিয়ে আনতে হয়েছে। এখন ওর মনে হচ্ছে শুধু ওর শশুর না, পরিস্থিতিও ওদের একসঙ্গে থাকাটা সহ্য করতে পারছেনা। এসবের মানে হয়? আদ্রিয়ান একেবারে রেডি হয়ে ফোনটা বেড় করে কল করল অনিমার নম্বরে। কিন্তু রিসিভ করলেন হাসান কোতয়াল। তিনি বললেন,

” কী জুনিয়র? এতো সকাল সকাল ফোন করলে কিছু বলবে?”
নিজের শশুরের গলা পেয়ে আদ্রিয়ানের অবাক হল। এমনিতে ওর বউটাকে নিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন কী ফোনেও কথা বলতে দেবেনা না-কি? তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে একটু ইতস্তত করে বলল,
” না মানে.. মিস্টার সিনিয়র ভালো আছো?”
” হ্যাঁ আমি ভালো আছি। তোমার কী খবর?”
” হ্যাঁ আছি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হাসান কোতয়াল কিছু বলছেন না আদ্রিয়ানও কী বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। অনিমার কথা জিজ্ঞেস করতেও ইতস্তত বোধ করছে। কী বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। নিজের বিয়ে ঈর বউয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেও কত হেজিটেড করতে হচ্ছে। একেই বলে কপাল। হাসান কোতয়াল বললেন,
” অনিমা শাওয়ার নিতে গেছে।”
আদ্রিয়ান একটু হকচকিয়ে গেল। তারপর কোনরকমে মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল,

” ও আচ্ছা।”
” হুম রাখি তাহলে?”
” হুঁ? হ্যাঁ রাখো।”
আদ্রিয়ান মুখ ফুলিয়ে ফোন রেখে দিলো। হাসান কোতয়াল ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। বেশ ইনজয় করছেন ব্যাপারটা উনি। ওনাকেও পাঁচবছর নিজের মেয়ের থেকে দূরে রেখেছে আদ্রিয়ান। যদিও তার সেটা ইচ্ছাকৃত না। কিন্তু রেখেছে তো? এবার নিজেও একটু বউ ছাড়া কয়েকমাস থাকুক। তাছাড়াও ওনার স্বপ্ন ছিল যে ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে শশুর বাড়ি পাঠাবেন। মেয়ে শশুরবাড়ি থাকলে সেটাতো আর হবেনা। এরমধ্যেই অনিমা চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে ওর বাবাকে দেখে বলল,

” আরে আব্বু! তুমি এখন? কিছু লাগবে?”
হাসান কোতয়াল ফোনটা বিছানায় রেখে বলল,
” না। তুমি ভার্সিটি যাচ্ছো আজকে?”
” হ্যাঁ আব্বু যেতে হবে আজ। তোমার মত ফাঁকিবাজ নই আমি।”
হাসান কোতয়াল হেসে দিলেন। কিন্তু মেয়ের দেওয়া অপবাদের প্রতিবাদ না করে তা সাদরে গ্রহণ করে বললেন,

” শোন আজ আমার ফিরতে লেট হবে। এসে খাওয়া-দাওয়া করে নিও। আর ড্রাইভার আমাকে ছেড়ে দিয়ে তারপর তোমাকে ভার্সিটির জন্যে পিক করতে আসবে, ততক্ষণ অপেক্ষা করো।”
” আচ্ছা। খেয়ে যাবেনা?”
” হ্যাঁ চল। একসঙ্গে খাবো। আর হ্যাঁ আদ্রিয়ান ফোন করেছিল কথা বলে তারপর এসো।”
হাসান কোতয়াল বেড়িয়ে যাওয়ার পর অনিমা দ্রুত ফোন বেড় করে আদ্রিয়ানকে ফোন করল। আদ্রিয়ান তখন নিচে নামার জন্য তৈরী হচ্ছিল। অনিমার ফোন পেয়ে সাথেসাথেই রিসিভ করে বলল,

” উফফ, থ্যাংক গড। বেড় হওয়ার আগে তুমি ফোন করলে।”
অনিমা মুখ গোমড়া করে বলল,
” বেড়িয়ে যাচ্ছেন?”
” হ্যাঁ। ওখানে অনেক বিজি থাকবো। সো যোগাযোগ খুব একটা হবেনা।”
অনিমা এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বলল,
” এতো এতো কাজ করতে আপনাকে কে বলে বলুন তো? শো এর পর শো লেগেই থাকে। এতো জায়গায় যেতে কে বলে আপনাকে? এতো খেটে হবেটা কী?”
আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” আচ্ছা তিনদিন পর চলে আসবো তো!”
অনিমা কিছুই বলল না। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” এই! মন খারাপ করলে?”
অনিমা এবারও কোন উত্তর দিলোনা। আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,
” পাগলী! আচ্ছা শোন, সাবধানে থাকবে। একদম ছটফট করবে না। মনে থাকবে?”
” হুম। সাবধানে যাবেন। পৌঁছে ফোন করবেন।”
” যথা আজ্ঞা মহারাণী। বাই।”
অনিমাও মুচকি হেসে বলল,
” বাই।”

ফোনটা রেখে দিয়ে অাদ্রিয়ান নিচে চলে গেল। নিচে গিয়ে দেখে আদিব আর আশিস অলরেডি চলে এসছে। ওরা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। আদ্রিয়ান গিয়ে চেয়ার টেনে বসল। জাবিন পানির জগ রেখে দিয়ে চলে যেতে নিলে আদ্রিয়ান বলল,
” পুটি, অভ্রকে ডেকে দে তো। লেট হয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ কী করছে?”
জাবিন মাথা নেড়ে চলে গেল ডাকতে। অাদ্রিয়ান আদিব আর আশিসের সাথে হালকা-পাতলা কথা বলছে। কিন্তু ও খেয়াল করল যে আশিস মাঝেমাঝেই অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

” তোর কী হয়েছে? হঠাৎ হঠাৎ কোন রাজ্যে চলে যাস?”
আশিস একটু হকচকিয়ে গেল। এরপর কনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বলল,
” ক-কই? তেমন কিছুই না। এমনিই।”
আদ্রিয়ান ওর সেই আড়াআড়ি স্টাইলে ভ্রু বাঁকিয়ে কয়েকসেকেন্ড আশিসের দিকে তাকিয়ে থেকে খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
জাবিন অভ্রর দরজার কাছে গিয়ে দেখল দরজা পুরোটাই খোলা। আর অভ্র আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। জাবিন একটু গলা ঝেড়ে বলল,

” আসব?”
অভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে জাবিনকে দেখে বলল,
” হ্যাঁ আসুন।”
জাবিন ভেতরে এসে অভ্রর দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। এরপর বলল,
” ভাইয়া ডাকছে আপনাকে।”
অভ্র জাবিনের দিকে না তাকিয়েই বলল,
” হুম যাচ্ছি।”

জাবিন এবার সত্যি সত্যি একটু বিরক্ত হল। এতো ভাব কীসের এই ছেলের? একটু ফিরেও তাকাতে চায় না। সবার সাথে কত ফ্রি হয়ে কথা বলে। আথচ ওর বেলাতেই পেটে বোমা ফাটালেও কথা বেড় হতে চাইবেনা এরকম ভাব। জাবিনের সাথে দরকার ছাড়া কোন কথা বললেই যেন কেউ ওর গর্দান নিয়ে নেবে। জাবিন বিরক্তি নিয়ে বলল,

” আপনি কী মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভয় পান হ্যাঁ? এতো বেশি ভাব কেন আপনার? মানুষই মনে করেন না আমাকে? দু একটা কথা বললে সমস্যা কী? জানেন আমার কাছে একটু পাত্তা পাওয়ার জন্যে কত ছেলে কতকিছু করে? আর আপনি?”
অভ্র ওর ব্যাগটা হাতে নিয়ে জাবিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” তোমার পাত্তা পাওয়া ছাড়াও আমার অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে। সেগুলো করতে হয় আমাকে। এনিওয়ে, বাই।”
অভ্র যেতে নিলেই জাবিন বলল,

” একটু পাত্তা নিয়ে দেখতে পারেন। হতাশ হবেন না।”
অভ্র একটু দাঁড়িয়ে গিয়ে, এরপর চলে গেল। জাবিন বোকার মত দাঁড়িয়ে রইল ওখানে। কী ভাব! তবে এবার ওর রাগ হলোনা। বরং ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। অভ্রর এই এটিটিউট টা ইদানীং ওর ভালোই লাগে।

অনিমা ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে এমন সময় হঠাৎই ওর হাত টেনে ধরল অর্ক। অনিমা প্রথমে চমকে গেলেও অর্ককে দেখে মুখে বিরক্তি ফুটে উঠল। ও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
” হাত ছাড়ো ভাইয়া!”
অর্ক একটু হেসে বলল,

” এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? হাতই তো ধরেছি। এরচেয়ে বেশি কিছুতো করিনি।”
অনিমা কিছু না বলে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। অর্ক বলল,
” বাই দা ওয়ে! এখন আর বাচ্চা নেই, বড় হয়ে গেছিস তুই। আগের চেয়ে অনেকটাই __”
অর্কর এরকম বাজে ইঙ্গিতের কথা শুনে অনিমা হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিল। ঘৃণার দৃষ্টিতে অর্কর দিকে তাকিয়ে বলল,

” কিছু মানুষকে ঝাটা পেটা করলেও শোধরায় না। যেমন তুমি! তখন আর্জু আপুর দিকেও তোমার খারাপ নজর ছিল। আর এখন_ ছিঃ”
” ওও ভালো কথা মনে করেছিস। তোর সেই আর্জু আপু কই রে? খুব মিস করছি।”
” তোমার না জানলেও চলবে।”
বলে অনিমা চলে আসতেই নিলে অর্ক বলল,
” খুব বেশি কথা বলছিস আজকাল? একেবারে আগের ফর্মে ফিরে গেছিস মনে হচ্ছে?”
অনিমা ঘুরে তাকিয়ে বলল,

” হুম। কারণ আগের সবকিছু ফিরে পেয়েছি। আর তার সাথে তো আমার স্বামীকেও পেয়েছি। আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট। তুমি এখনো ওনাকে তেমনভাবে চেনোই না। উনি যদি কোনভাবে জানতে পারেন যে তুমি আমার হাত ধরেছ। তোমার ঐ হাতটা তোমার সাথে থাকবে কি-না তার গ্যারান্টি দেওয়া মুসকিল। তাই বলছি সাবধান হয়ে যাও। নিজের বিপদ নিজে ডেকে এনোনা। উনি এমনিতে খুব ঠান্ডা স্বভাবের, কিন্তু আমার গায়ে আচড় লাগলে উনি ঠিক কী করতে পারেন, সেটা অনুমান করা খুব কঠিন।”
অর্ক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা যেতে নিয়েও থেমে গিয়ে বলল,

” আর হ্যাঁ। যতদিন এখানে আছো ভদ্র হয়ে থাক। আব্বু এসব জানলে ঘাড় ধরে বেড় করে দেবে তোমাদের। এতে শেষমেশ ক্ষতিটা তোমাদের-ই।”
অর্ক একটু ঘাবড়ে গেছে বোঝাই যাচ্ছে। অনিমা আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে গেল। ও এদের নিয়ে খুব একটা ভাবছে না। এদের দৌড় ওর জানা আছে। এরা স্বার্থপর হলেও ভয়ংকর নয়। সব জায়গায় স্বার্থ খুঁজলেও, কারো ক্ষতি করে দেওয়ার সাহস ওদের নেই।
অর্ক ওর বাবা-মার রুমে গিয়ে দেখে তারা অনিমা আর ওর বাবাকে নিয়েই আলোচনা করছেন। আশরাফ মৃধা অর্কর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুই নিশ্চয়ই জানতি যে অনিমাই ঐ রকস্টারের বউ?”
অর্ক স্বাভাবিকভাবে বসে বলল,
” হুম জানতাম তো। তোমরাও জানতে।”
রাহেলা বললেন,
” এইজন্যই কালকে তুই অবাক হসনি? উল্টে সিটি বাজাতে বাজাতে বেড়িয়ে গেলি। আদ্রিয়ানের বউয়ের নাম অনিমা শুনেছিলাম। আমাদের বলিসনি কেন যে এই অনিই সেই অনি ছিল?”
অর্ক ভ্রু কুচকে বলল,

” এইজন্যই তোমাকে বলি সারাদিন সিরিয়াল না দেখে মাঝেমাঝে খবর-টবর দেখ। আর বাবার সাথেতো বিনোদন পৃষ্ঠার জন্মগত শত্রুতা। অর্ধেক জানা থাকলে এমনই হয়। যাই হোক, যেটা বলতে এলাম আরকি। ওদের বেশি না ঘাটিয়ে চুপচাপ থাকো। এবার কিন্তু ঐ রকস্টারও আছে ওদের সাথে। অনির কথায় বুঝলাম ছেলেটা ডেঞ্জারাস। লাগতে গেলে নিজেরই ক্ষতি। তাই কোন ক্যাচাল না করে ভালোভাবে থাকো। এখন এতেই ভালো।”
রাহেলা বললেন,
” হুম সেটাতো বুঝেছি। হাসান ভাই ভালোর ভালো আর খারাপের যম। তাই চুপ থাকাই ভালো হবে।”

মাঝের তিনটা দিন পার হয়ে গেছে। এরমধ্যে আদ্রিয়ানের সাথে খুব কম কথা হয়েছে অনিমার। আদ্রিয়ান-ই বেশ ব্যস্ত ছিল তাই কথা তেমন হয়নি। অনিমার সারাদিন ভার্সিটিতে, বন্ধুদের সাথে, ওর বাবার সাথে সময় কেটে গেলেও রাতের বেলায় ভীষণ মনে পরে আদ্রিয়ানকে। মাঝে একবার রিক আর স্নিগ্ধার সাথে কথা হয়েছিল। আদ্রিয়ানের ক্ষেত্রেও তাই সারাদিনের প্রচন্ড ব্যস্ততায় কেটে যায় কিন্তু রাতটা কাটে শুধু-ই ওর মায়াবিনীর ভাবনায়।

আজকে সারাদিনে আদ্রিয়ান ফোন করেনি। অনিমা ফোন করেছিল কিন্তু বন্ধ ছিল ফোন। সারাদিনে ততটা না ভাবলেও রাতে বেশ চিন্তায় পরে গেছে অনিমা। যদিও কাল সকালে আদ্রিয়ানের ঢাকায় এসে পৌঁছে যাবার কথা তবুও। আদ্রিয়ানকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ও ঘুমিয়ে পরেছে নিজেই জানেনা। কিন্তু মাঝরাতে ঘুমের মধ্যেই অনিমা অনুভব করল যে কারো গরম নিশ্বাস পরছে ওর মুখের ওপর, আলতো স্পর্শে কেউ ওর গালে, কানে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অনিমা ঘুমের ঘোরে প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে ঝট করে চোখ খুলে তাকাল। তাকিয়ে দেখে কেউ ওর ওপরে আধশোয়া হয়ে আছে। আকষ্মিক এমন ঘটনায় ও চেঁচিয়ে উঠতে নিলেই লোকটা ওর মুখ চেপে ধরে বলল,

” আরে ডাফার আমি! মাঝরাতে মান-সম্মানের ফালুদা বানাবে না-কি?”
অনিমা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। হ্যাঁ এটা আদ্রিয়ান-ই। আদ্রিয়ান হাত সরিয়ে নিতেই অনিমা অবাক হয়ে বলল,
” আপনি? এখানে কীকরে এলেন?”
” সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে তারপল এলাম।”
” আমি বলতে চাইছি যে বাড়ির ভেতরে কীকরে এলেন?”
আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,

” জামাল চাচা খুলে দিয়েছে। ওনার নম্বর রেখে দিয়েছিলাম।”
” কিন্তু আপনার তো আজ রাতে রওনা দিয়ে কাল সকালে এসে পৌঁছনোর কথা ছিল তাইনা?”
” হ্যাঁ কিন্তু মিস করছিলাম তোমাকে খুব। আজ কোন কাজ ছিলোনা শুধু রাতে একটা পার্টি ছিল। আমি সেটা জয়েন না করে দুপুরের দিকে বেড়িয়ে পরেছি। জানপাখি, কতদিন পর তোমার কাছে আসতে পারলাম আর তুমি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছো! নট ফেয়ার।”

বলে অনিমাকে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে ধরল। অনিমাও এতোদিন পর আদ্রিয়ানের শরীরের উষ্ণতা পেয়ে গুটিয়ে গেল আদ্রিয়ানের বুকে। আদ্রিয়ান অনিমার চুলে আঙুল নাড়তে নাড়তে বলল,
” জানো কতটা মিস করেছি তোমাকে? একশ বাহাত্তর ঘন্টা, মানে দশহাজার তিনশ বাইশ মিনিট, মানে ছয় লক্ষ উনিশ হাজার দুইশ সেকেন্ড পর তোমাকে ছুঁতে পারলাম। মনে হচ্ছে এতোদিন আমার শ্বাস কেউ আটকে রেখে দিয়েছিল। এতক্ষণে শান্তির নিঃশ্বাস নিলাম।”
অনিমাও শক্ত করে আকড়ে ধরল আদ্রিয়ানকে তারপর বলল,

” আমিও খুব মিস করছিলাম আপনাকে।”
” অনেক রাতে হয়েছে। এবার ঘুমাও। কাল সকালে উঠে কথা হবে।”
অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইল। কতদিন পর আদ্রিয়ানের বুকে মাথা রাখতে পারল। আপাতত একটা শান্তির ঘুম দিতে চায় ও।

সকালবেলা দরজায় টোকা পরাতে অনিমা-আদ্রিয়ান দুজনেরই ঘুম ভাঙল। ওপাশ থেকে হাসান কোতয়াল ডাকছে ওদের। অনিমা দ্রুত আদ্রিয়ানের বুক থেকে উঠে বসে বলল,
” এবার কী হবে? আব্বুকে কী বলব?”
আদ্রিয়ান একটা হাই তুলে উঠে বসে বলল,
” কী হবে? নিজের বউয়ের সাথেই তো ঘুমিয়েছি। কোন ক্রাইম করেছি না-কি?”
” তবুও! আমাদের তো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়নি। ব্যাপারটা কেমন দেখায় না।”
” কিছুই দেখায় না। তুমি খোল।”

অনিমা উঠে গিয়ে অনেক অস্বস্তি নিয়েই দরজা খুলল। হাসান কোতয়াল বললেন,
” কী ব্যাপার আজ উঠতে এতো দেরী হল যে? খাবে না?”
কথাটা বলতে বলতে ভেতরে এসে আদ্রিয়ানকে দেখে একটু অবাক হলেন। আদ্রিয়ান তখন গেঞ্জি পরছে। ওনাকে দেখে ও মেকী হেসে সালাম দিল। সালামের জবাব দিয়ে উনি বললেন,
” তুমি কখন এলে?”
আদ্রিয়ান খুব স্বাভাবিকভাবে বলল,

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫০

” কাল রাতেই এসছি। আসলে বউকে ভীষণ মিস করছিলাম। এক সপ্তাহ হয়ে গেল বউকে ঠিকভাবে দেখতেও পাইনা। তাই কক্সবাজার থেকে সোজা এখানে।”
অনিমা গোল গোল চোখে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানের এমন কথায় আর কিছুই বললেন না হাসান কোতয়াল। ওদের ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে বলে চলে গেলেন। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে ওয়াসরুমে চলে গেল। অনিমা শুধু তাকিয়ে রইল বোকার মত।
খাওয়ার টেবিলে অনিমার মামা-মামি আর অর্কর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল আদ্রিয়ানের। ওনারাও হাসিমুখে পরিচিত হলেন। খাওয়ার মাঝে হাসান কোতয়াল আদ্রিয়ানকে বলল,

” তো? কখন যাচ্ছো?”
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল,
” মানে?”
” মানে, বাড়ি ফিরবে না? বউকে দেখাতো হয়ে গেছে। এখন যাবে না-কি লাঞ্চ করে যাবে?”
আদ্রিয়ান মুখ ছোট করে বলল,
” লাঞ্চ করে যাই?”
হাসান খেতে খেতে বলল,
” হুম, গুড।’

আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে হাসান কোতয়ালের দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল,
” মিস্টার সিনিয়র? কোনভাবে তুমি আমার ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছো না তো?”
হাসান কোতয়াল ফিসফিসিয়ে একই ভঙ্গিতে বললেন,
” আমি প্রতিশোধ নিতে গেলেতো তোমাকে পাঁচবছর ওয়েট করতে হবে, জুনিয়র। নেবো?”
আদ্রিয়ানের মুখ কাচুমাচু হয়ে গেল। ও একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
” না থাক। আমি এভাবেই ঠিক আছি।”

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫২