বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬৭

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬৭
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

আদ্রিয়ানের কথাগুলো শুনে অভ্র চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ও জানতো যে আদ্রিয়ানের কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে যাওয়া ভীষণ কঠিন হবে। তবুও চেষ্টা করতো যাতে আদ্রিয়ানের সামনে স্বাভাবিক থাকতে। এ বিষয়টা যাতে আদ্রিয়ানের কানে না যায় সেটা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিল ও। কিন্তু তবুও কীকরে আদ্রিয়ানের কানে কথাগুলো পৌঁছে গেলো ও নিজেই জানেনা। যদিও আদ্রিয়ানকে ও যতটা চেনে তাতে এটা অসম্ভব কিছুই না। রিক নিজেও অবাক হয়ে গেছে এই কথা শুনে। অভ্র একটা শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে শুরু করে দিল। কিছুতেই বাক্য সম্পূর্ণ করতে পারছেনা। আদ্রিয়ান হালকা ধমক দিয়ে বলল,

” আমি _ তুমি_ করা বন্ধ করে স্পষ্টভাবে বলো!”
অভ্র এবার নিজেকে একটু শান্ত করল। লম্বা করে দুটো শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” স্যার, জাবিন বাচ্চা মেয়ে। আবেগে পরে ও আমায় ওসব বলে ফেলেছে। আমি বুঝতে পেরেছি স্যার ওর ব্যাপারটা। আমি কিন্তু ওকে প্রশ্রয় দেইনি। আমি এভাবে না করলে ও শুনতো না আমার কথা। তাই আমাকে বাধ্য হয়েই এসব মিথ্যা বলতে হয়েছে। তবে স্যার এসবে ওর কোন দোষ নেই। ছোট তাই__”
কথাটুকু বলে অভ্র মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান নিজের থুতনিতে হাত রেখে সরু চোখে কয়েকসেকেন্ড অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভালোবাসো ওকে?”
অভ্র চমকে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। রিক এখনো চুপচাপ বসে আছে। কারণ ব্যাপারটা এখনো ওর কাছে পরিষ্কার না। অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান আবার বলল,
” আমি কিন্তু এখনো আমার উত্তরটা পাইনি। ভালোবাসো জাবিনকে? আর হ্যাঁ, আমি শুধুমাত্র সত্যিটা জানতে চাইছি। ইউ নো আই হেইট লাইয়িং।”

অভ্র জানে এখন আদ্রিয়ানকে মিথ্যা বলার পরিণাম ভালো হবেনা। আর ও আদ্রিয়ানকে মিথ্যা বলতে পারেও না। সত্যিতো এটাই যে জাবিনকে ভালোবাসে। প্রথম থেকেই জাবিনের প্রতি নিজের দুর্বলতা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল ও। তাইতো সবসময় জাবিনকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো। কারণ ও জানতো যে জাবিন ওর বসের বোন। ওদের দুজনের স্টেটাস সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু যত দিন যাচ্ছিল জাবিনের পাগলামো, অধিকার খাটানো, ওকে জ্বালাতন করা এসবে আটকে গেছিল অভ্র।

ভালোবেসে ফেলেছিল জাবিনকে। কিন্তু জাবিনও যে ওকে ভালোবেসে ফেলবে সেটা ও ভাবতেও পারেনি। আর যখন জানলো তখন নিজের অনুভূতিকে চেপে রেখে জাবিনকে মিথ্যা বলে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। কারণ ও চায়নি আদ্রিয়ানের বিশ্বাস ভাঙতে, নিজের সীমার বাইরে যেতে। কিন্তু আজ আর কিছুই করার নেই। আদ্রিয়ানের সামনে ওকে নিজের সত্যিটা প্রকাশ করতেই হবে। তাই অভ্র স্হির কন্ঠে বলল,

” হ্যাঁ। না চাইতেও ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসি আমি ওকে।”
আদ্রিয়ান হালকা হাসল। এবার রিকের মুখেও হাসি ফুটেছে, কারণ এতক্ষণে ব্যাপারটা ওর বোধগম্য হয়েছে। আদ্রিয়ান আবার বলল,
” এবার সত্যি করে আরেকটা কথা বলে ফেল। তোমার কী মনে হয়? জাবিনের ভালোবাসাটা শুধুই আবেগ?”

অভ্র এবারও কিছু সময়ের জন্যে চুপ হয়ে গেল। কারণ ও জানে জাবিনের ভালোবাসাটাও সত্যি। আদ্রিয়ান যাতে জাবিনকে বকাবকি না করে তাই শুরুতে এভাবে বলেছিল। কিন্তু আদ্রিয়ানযে ওকে এভাবে চেপে ধরবে সেটা বুঝে উঠতে পারেনি। অভ্র হালকা করে গলা ঝেড়ে বলল,
” না স্যার শুধু আবেগ নয়। আমি জানি আমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে।”
আদ্রিয়ান এবার একটু সোজা হয়ে বসে ভ্রু কুঁচকে বলল,
” তাহলে সমস্যাটা কোথায় ছিল?”

রিকও এবার কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে, আসল কারণটা জানার জন্য। অভ্র ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,
” স্যার আমি ভেবেছিলাম যে__”
আদ্রিয়ান অভ্রর কথা শেষ হওয়ার আগেই বলল,
” যে তোমার আর ওর সম্পর্ক হওয়া সম্ভব নয়। আমি তোমাকে কী চোখে দেখবো। আমি এই সম্পর্কটা কীভাবে নেবো। আদোও মেনে নেব কি-না। তোমার প্রতিআমার বিশ্বাস ভেঙ্গে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাইতো?”

অভ্র চোখ নামিয়ে নিলো। কথাগুলোতো সত্যি। এইকারণেই তো ও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল ও জাবিনের কাছ থেকে। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে এবার নরম গলায় বলল,
” আমার এখন মনে হচ্ছে আমি এই কয়েক বছরে তোমাকে ভালোভাবে চিনলেও তুমি এখনো আমাকে ঠিকভাবে চিনে উঠতে পারোনি অভ্র। তোমার কী সত্যি মনে হয় এসব ফ্যামলি আর স্টেটাস দেখে বিচার করার মতো মানুষ আমি? আমার কাছে আমার বোনের খুশিটাই সবার আগে অভ্র। আর তোমাকেও আমি আমার পিএ এর চেয়েও বেশি নিজের ভাই মনে করি। ভাবলে কীকরে এই সামান্য কারণে আমি কোনরকম বাঁধা দেব কিংবা অখুশি হব?”

অভ্র মাথা নিচু করে আছে। ও সত্যি জানেনা কেন তখন এসব করেছে, কেন এসব ভেবেছে। ও শুধু এইটুকুই জানে যে তখন ওর যেটা ঠিক বলে মনে হয়েছিল ও সেটাই করেছে। কিন্তু এখন আদ্রিয়ানের কথা শুনে ওর মনে হচ্ছে তখন একবার অন্তত আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলে দেখা উচিত ছিল। এইটুকু বিশ্বাস তো করাই যেতো আদ্রিয়ানকে। অভ্র অপরাধী দৃষ্টিতে তাকালো। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” যা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে। দেখো, আমার বোনের তোমাকে পছন্দ। তোমাকে আমার বোনের হাজবেন্ড হিসেবে মেনে নিতে এর চেয়ে বড় কোন কারণের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়না। বাবা-মাকে আমি বুঝিয়ে নেব। কিন্তু আমার বোনকে এবার মানানোটা কঠিন হবে।”
অভ্র একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। আদ্রিয়ান বলল,

” জাবিনকে এবার তোমাকেই মানাতে হবে। আমি ওকে যতটা চিনি ও একবার মুখ ঘুরিয়ে নিলে ওকে আবার সেদিকে ফিরিয়ে নেওয়া মুশকিল। তারওপর যখন জানতে পারবে যে তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই, সবটাই ঢপ ছিলো তখন তো__ অল দ্যা বেস্ট।”
একটু থেমে আদ্রিয়ান এবার একটু শক্ত কন্ঠে বলল,
“তবে হ্যাঁ বিয়েটা কিন্তু তোমাকে জাবিনকেই করতে হবে। এখন ওকে কীভাবে রাজি করাবে সেটা তুমি ভাববে। আর যদি না করাতে পারো তাহলে জানোই তো আমি কী করতে পারি।”

কথাটা বলে অভ্রর দিকে একটু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাল আদ্রিয়ান। অভ্র আবার একটা ঢোক গিলল। সামনে থাকা পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিমেষেই ফাঁকা করে ফেলল। কী একটা ঝামেলায় এসে পরল। জাবিনকে যতোটা ও চিনেছে তাতে এতো সহজে সে মানবেনা। কম কষ্টতো দেয়নি মেয়েটাকে। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের বোন বলে কথা, এতো তাড়াতাড়ি মানার কথাও না। সামনে গিয়ে সব সত্যিটা বলার পর না জানি কোন টর্নেডো যাবে ওর ওপর দিয়ে। না মানাতে পারলে আবার এই আদ্রিয়ান নামক সিংহ ওর কী অবস্থা করবে কে জানে? মানে জলে কুমির ডানায় বাঘ টাইপ ব্যপার-স্যাপার। কেনো যে তখন নিজে নিজেই পাকামো করে সব বুঝে নিতে গিয়েছিল কে জানে? অভ্র একটু মেকি হেসে বলল,

” স্যার আ-আমি একটু আসছি।”
কথাটা বলে টিস্যু প্যাপার দিয়ে হাত মুছে কোনমতে ওখান থেকে চলে গেল অভ্র। আদ্রিয়ান অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হালকা আওয়াজ করে হেসে দিল। রিকও বলল,
” শুধুশুধু ছেলেটাকে ভয় দেখালি।”
আদ্রিয়ান প্লেটে চামচ নাড়তে নাড়তে বলল,
” দরকার ছিল। আমার বোনটাকে কম কাঁদায়নি। এবার নিজেও একটু ভুগে নিক।”
রিক এবার একটু নড়েচড়ে বসে কৌতূহলী কন্ঠে বলল,
” কিন্তু তুই কীকরে জানলি বলতো ব্যাপারটা?”
আদ্রিয়ান চেয়ারে হেলান দিয়ে তৃপ্তির এক হাসি দিয়ে বলল,

” আমার বউটা একদম আমার মত হয়ে যাচ্ছে। সবদিকে নজর থাকে। কয়েকমাস আগে থেকেই ও হালকা পাতলা খেয়াল করেছিল যে অভ্র আর জাবিনের মধ্যে কিছু একটা চলছে। শুরুতে গুরুত্ব না দিলেও পরে ইগনোর করতে পারেনি। গত সপ্তাহেই আমাকে বলছিল এই ব্যাপারে। আর আমি জানতাম ও এমনি এমনি কিছু বলবে না। তাই ওকে বলেছি জাবিনকে খোলাখুলিভাবে জিজ্ঞেস করে সবটা জেনে নিতে। জাবিনই সবটা বলেছে ওকে। আর ও আমাকে।”
রিক হেসে দিয়ে বলল,

” বাহ! যেমন মিয়া তার তেমন বিবি। যাই হোক তোর কী মনে হয় আমাদের ঘাড় ত্যাড়া বোন এতো সহজে মানবে?”
আদ্রিয়ান একটু ভাবুক কন্ঠে বলল,
” মনেতো হয়না। বেচারাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।”
আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেই একসঙ্গে হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। কিছুক্ষণ নিরবতার পর রিক ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে বলল,

” সময় কিন্তু এগিয়ে আসছে আদ্রিয়ান। আমাদের সতর্ক থাকবে হবে।”
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” আমি জানি। কিন্তু কথা হচ্ছে ওনারা কিছু করার আগে আমরাও এগোতে পারব না। সাদা গুটি দখল করে বসে আছে কি-না। কিন্তু ভয় একটাই। আমিও মানুষ, ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। কিন্তু সেই ভুলের কারণে বড় কোন মাশুল না দিতে হয়।”
রিক কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে রইল। সত্যিই ভবিষ্যতে যে ঝড় আসতে চলেছে সেটা সামলানো সহজ হবেনা।

আবরার মেনশানে ঢুকে আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেই অবাক হল। কারণ বাড়ির সকলেই বসে আছে আর সকলেই বেশ খুশি। ভেতরে ঢুকে চারপাশে তাকিয়ে আদ্রিয়ান বলল,
” কী ব্যাপার? সব এতো খুশি যে? কী হয়েছে?”
আদ্রিয়ান কথাটা বলতে বলতেই অনিমা মিষ্টি ভর্তি একটা নিয়ে আদ্রিয়ানের সামনে এসে পুরো একটা মিষ্টি আদ্রিয়ানের মুখ ঢুকিয়ে দিল। এরপর রিকের সামনে গিয়ে একই কাজ করল। ওরা দুজনই বোকার মতো তাকিয়ে আছে আর মিষ্টি চিবুচ্ছে। অনিমা হেসে দিয়ে বলল,

” সুখবর আছে!”
সবাই হেসে দিল একসঙ্গে। শুধু স্নিগ্ধা বাদে। ও দ্রুত পদে রুমে চলে গেল। রিক কিছুই বুঝলো না। অনিমা ইশারা করতেই রিকও স্নিগ্ধার পেছন পেছন রুমে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে। অনিমা মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল,
” স্নিগ্ধা প্রেগনেন্ট।”

কথাটা শুনে আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনিমার দিকে। এরপর হেসে দিল। আবরার মেনশানে সবাই আজকে বেশ খুশি। বাড়িতে নতুন অতিথি আসতে চলেছে বলে কথা।
রাতে অনিমা চুল বাঁধছে আর আদ্রিয়ান বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে নিজের কাজ করছে। অনিমা চুল বাঁধার ফাঁকে ফাঁকে আদ্রিয়ানকে। চুল বাঁধা শেষ করে আদ্রিয়ানের পাশে গিয়ে বসে বলল,

” শোবেন না?”
আদ্রিয়ান ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল,
” হুম, হয়ে গেছে। আর একটু।”
” আর দরকার নেই শুয়ে পরুন।”
” আরে বাবা অলমোস্ট হয়ে গেছে, আরেকটু!”
অনিমার একটু রাগ হল। পাত্তাই দিচ্ছেনা ওকে লোকটা! ও এবার রেগে গিয়ে নিজেই ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এটা কী হল?”
অনিমা চট করেই উঠে দাঁড়িয়ে হাত ভাঁজ করে বলল,
” এতো তাড়াতাড়ি আমি পুরোনো হয়ে গেছি তাইনা? তাকাতেই ইচ্ছে করছেনা আমার দিকে?”
আদ্রিয়ান ওর মতো করে কোণাকুণি স্টাইলে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
” এটা কেমন কথা হলো? কাজ করছিলাম তাই__”
অনিমা রাগী কন্ঠে বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ সব বুঝেছি।”

আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে টেনে কোলে বসিয়ে দিল। এরপর অনিমার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
” আজকাল একটু বেশিই বুঝে যান আপনি। আমাদের বিয়ের ষাট বছর পার হয়ে গেলেও তুমি আমার কাছে ঠিক তেমনই থাকবে যেমন প্রথম দিন ছিলে।”
অনিমা মুচকি হাসল। এই ছেলে সেকেন্ডের মধ্যেই ওর রাগ ভাঙানোর ক্ষমতা রাখে। অনিমা আদ্রিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬৬

” রিক-স্নিগ্ধার বিয়ের মাত্র ছ’মাস হয়েছে। স্নিগ্ধা প্রেগনেন্ট। পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যেই ওদের একটা বেবী আসবে। ছোট্ট একটা পুচকি। ভাবতেই ভালো লাগছে।”
আদ্রিয়ান অনিমার গালে আলতো করে আঙুল ছুঁইয়ে বলল,
” হুম, তাতো লাগছেই।”
অনিমা বেশ অনেকটা সময় চুপ করে থাকল। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে,চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
” আমার একটা বাচ্চা চাই, রকস্টার সাহেব।”
আদ্রিয়ান অবাক দৃষ্টিতে তাকাল অনিমার দিকে। অনিমা চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে রেখেছে। আদ্রিয়ান কিছক্ষণ অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এদিকে তাকাও।”

অনিমা চোখ বন্ধ করেই না বোধক মাথা নাড়ল। মাথা নিচু করে শক্ত হয়ে বসে আছে একদম। অনিমার অবস্থাটা বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
” আসবেতো! আমাদেরও বেবী আসবে। কিন্তু সেটা এখন না আরেকটু সময় নাও।”
অনিমা মুখ ফুলিয়ে ছলছল চোখে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। অর্থাৎ ওও ‘মা’ হতে চায়। আদ্রিয়ান বলল,
” আরে বাবা আমি কী বারণ করেছি। বাবা হওয়ার ইচ্ছেতো আমারও আছে। কিন্তু সময়তো আর পেরিয়ে যাচ্ছেনা তাইনা? এতোটাও বয়স হয়ে যায়নি আমাদের। এটলিস্ট তোমার ওনার্সের ফাইনাল এক্সামটা শেষ কর তারপর ভাবব আমরা, ঠিক আছে?”

অনিমা কিছু বলল না শুধু আদ্রিয়ানের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে রইল। কারণ ও জানে তর্কে আদ্রিয়ানের সাথে ও পারবেনা। কিন্তু স্নিগ্ধার প্রেগনেন্সির খবর পাওয়ার পর থেকেই ওর ভেতরে ‘মা’ হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছেটা হঠাৎ করে জেগে উঠেছে।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬৮