বসন্ত এসেছে পর্ব ২

বসন্ত এসেছে পর্ব ২
মাহিমা রেহমান

বেলাকে রুমে এনে খাটে বসতে ইশারা করে নিজে চলে গেল আলমারির দিকে।ভেতর থেকে একটা ফুল স্লিভের হোয়াইট শার্ট আর ব্ল্যাক ড্যামিন জিন্স বের করে হাতে নিল।সেদিক তাকিয়ে বেলা রায়াযের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে,
-“আপনি এখন এগুলো পড়বেন বুঝি?”

ভ্রু কুঁচকে নিল রায়ায।এই মেয়েটা যে কত বড় গাধা! তা আর বলতে।গোপনে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে রায়ায বলল,
-“তাহলে তুই কী চাচ্ছিস আমি তোর সামনে সারাদিন অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াই?”
মাথা নিচু করে নিল বেলা। রিনরিনে বলে উঠল,
-“না রায়ায ভাই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রায়ায আর কিছু বলল না।ভেনিটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরল।কোমরে বেধে রাখা তোয়ালেতে কেবল হাত দিবে সেই সময় বেলা এক ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে দুহাতে চোখ ঢেকে নিল।চকিতে বেলার দিকে তাকাল রায়ায।ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে?এভাবে চিৎকার দিলি কেন?”
লজ্জায় মইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বেলা বলল,

-“রায়ায ভাই এ আপনি করতে যাচ্ছিলেন।আপনি আমার সামনেই জামা পরিবর্তন করতে যাচ্ছিলেন? আর একটু হলেই তো আমি হার্টফেল করতাম।”
পুনরায় দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করল রায়ায। এই মেয়ের বুদ্ধিসুদ্ধি কবে হবে কে জানে? কয়েক মিনিট ব্যয় হয়েই বেলার কর্ণপাত হলো রায়াযের গম্ভীর কণ্ঠ,

-“চোখ খোল।”
-“এমা না, ছিঃ ছিঃ আমার ভীষণ লজ্জা করবে।”
বড় বড় কদম ফেলে বেলার দিকে এগিয়ে এলো রায়ায।সত্বর বেলার চোখের উপর থেকে জোর করে হাত সরিয়ে নিল।চোখ বড় বড় করে রায়াযের দিকে তাকাল বেলা।পরমুহুর্তে রায়াযের পরিধানে মানসম্মত বস্ত্র দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল সে। দাঁত বের করে হাসলো বেলা।সেদিক তাকিয়ে ললাট কুঁচকে নিল রায়ায।

একমনে বেলার চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে রায়ায। কৌতুহল দমন করতে পারল না বেলা।জিজ্ঞেস করল,
-“রায়ায ভাই আপনি চুলে তেল ও দিতে যানেন?এর আগে কাউকে তেল দিয়ে দিয়েছিলেন বুঝি।”
গম্ভীর কণ্ঠে রায়যের জনাব,

-“বেশি কথা আমার মোটেও পছন্দ না বেলা। তাই চুপচাপ বসে থাক।”
বেলা আর কথা বাড়াল না।রায়ায খুব ধীরে ধীরে বেলার চুলের জটলা খুলে দিয়ে দুপাশে দুটো বেনুনি করে দিল।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলছে বেলা।সে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে।বেলার দিকে একপলক তাকিয়ে রায়ায নিজের কাজে মন দিল।চুলে ব্রাশ করতে করতে রায়ায বলল,
-“ব্যাগ নিয়ে গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়া।আমি আসছি।”
বেলা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে চলে গেল।

বেলাকে বাইকে উঠার জন্য ইশারা করতেই উঠে পরল সে।রায়ায বলল,
-“আমাকে ঠিক মত ধরে বস।নয়তো পড়ে যাবি।”

রায়াযের কথা শেষ হতেই তাকে একপ্রকার জড়িয়ে ধরল বেলা। নিঃশ্বাস আটকে আসছে রায়াযের।তার অবাধ্য অনুভূতি নিয়ে এই মেয়ে যা খেলা খেলছে! নিজেকে ধাতস্থ করে বেসামাল অনুভূতিগুলোকে আটকায় রায়ায।ধমকে উঠে বেলাকে,
-“সমস্যা কী বেলা? আমাকে ধরে বসতে বলেছি।জড়িয়ে ধরতে বলি নি, স্টুপিড! আমার কাঁধে হাত রেখে বস।”
রায়াযের কথা মত বেলা ও তাই করল। বাইক থামতেই বেলা নেমে পরল।কয়েক পল বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে রায়ায বলল,

-“ভিতরে যাহ।সাবধানে থাকিস।চার পিরিয়ড ক্লাস করে ছুটি দিয়ে দিবে।আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে বলে দিব।
বেলা সায় জানিয়ে চলে যেতে চাইলে রায়ায ডেকে উঠল,
-“আর শোন! আমি এসে নিয়ে যাবো।একদম পাকামো করে কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করবি না।”
বেলা মাথা নাড়ল।

টিফিন পিরিয়ড।কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হামি তুলতে তুলতে বাহিরে বেরিয়ে এলো বেলা।গ্রীষ্মের গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা তার।তবে সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে চারপাশ চোখ বুলিয়ে কাউকে খুঁজতে ব্যস্ত সে।সেই মুহূর্তে একপ্রকার লাফিয়ে এসে বেলার কাঁধে হাত রাখল চিংকি।বেলার বেস্টফ্রেন্ড।জিজ্ঞেস করল,
-“কীরে বেলা!আমাকে না জানিয়েই চলে যাচ্ছিলি?তা কার সাথে বাসায় যাবি এখন?”
-‘”রায়ায ভাই আসবে বলেছে।”
সঙ্গে সঙ্গে হাবভাব পাল্টে গেল চিংকির।মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল,

-“বলছি কী বেলা! একটু লাইন করিয়ে দে না রায়ায ভাইয়ার সাথে।যা সুন্দর উনি।একদম রসগোল্লার মতন।ইচ্ছে করে একদম খেয়ে নেই।”
অকস্মাৎ চুলে টান পড়তেই বিভৎস এক চিৎকার দিয়ে উঠল চিংকি। জোরে জোরে চুল টানতে টানতে রাগান্বিত স্বরে বেলা বলল,
-“একদম রায়ায ভাই সম্পর্কে উল্টা পাল্টা কথা ভাববি না।আর না উনার দিকে চোখ তুলে তাকাবি।নয়তো তোকে আমি একদম মেরে ফেলব।”
দ্বিগুণ ঝাঁঝানো কণ্ঠে চিংকি বলল,

-“তোর এতে সমস্যা কোথায়?রায়ায ভাই কী তোর প্রেমিক লাগে? নাকি উনি তোকে ভালোবাসে..যে কোনো মেয়ে তাকে পছন্দ করলেই তুই এমন করস?”
দমে গেল বেলা, ছেড়ে দিল চুল। টু শব্দ না করে এগোতে লাগল সামনের দিকে।পিছন ফিরে চিংকিকে বলল,
-“রাগ করিস না।আর সন্ধ্যায় রেডি হয়ে চলে আসিস জান।”

মুখ ভেংচি কাটল চিংকি।মৃদু হাসল বেল।পা চালালো আবার সামনের দিকে।বেশ কিছুদূরে দর্শন মিলল রায়াযের।সেদিক এগোলো সে।বেলাকে নিজের দিকে আসতে দেখে সামনের দিক এগিয়ে গেল সে।রায়াযকে এগিয়ে আসতে দেখে পা জোড়া থামিয়ে দিল বেলা। দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায় এক ভঙ্গিতে।কয়েক পল বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল রায়ায।অতঃপর পকেট থেকে রুমার বের করে ঘামে ভিজে যাওয়া পুরো মুখ মুছে দিল বেলার।মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে বেলা।রায়ায জিজ্ঞেস করল,

-“খুব গরম লাগছে কী?”
মাথা নাড়ল বেলা।রায়ায বলল,
-“আচ্ছা চল।”
বেলার একহাত নিজের মুঠোয় পুরে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগল রায়ায।স্কুল গেট পেরিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলো।সামনে গিয়ে হাঁক ছেড়ে রিকশা ডাকতে লাগল।অবাক হলো বেলা।বলে উঠল,

-“রিকশা ডাকছেন কেন রায়ায ভাই? ঐ’তো আপনার বাইক দেখা যাচ্ছে।তাহলে রিকশা কেনো?”
-“তোর না গরম লাগছে তাই।”
-“গরম লাগছে দেখে বাইক রেখে রিকশা দিয়ে যেতে হবে?এ আবার কোন দেশের নিয়ম?”
-“তাপমাত্রা জানিস আজকের? ৩৪° ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোদের তেজ দেখেছিস?বাইকে বসলে রোদ লাগবে তোর।বাসায় যেতে যেতে অসুস্থ হয়ে পড়বি।”

আরো বেশি অবাক হলো বেলা।কখনো কখনো হয়তো অতি বুদ্ধিমান মানুষগুলো ও বোকা বোকা কথা বলে! এমন কথা জীবনেও শুনেনি সে।বাইকে গেলে নাকি রোদ লাগবে।রিকশায় গেল নাকি লাগবে না।জিজ্ঞেস করল,
-“তাহলে আপনার বাইকের কী হবে?”
কয়েক পল বেলার ঘামার্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে রায়ায জবাব দিল,
-“কাউকে পাঠিয়ে দিব।এসে নিয়ে যাবে।”
একটা রিকশা ডেকে তাতে বেলাকে নিয়ে উঠে বসল রায়ায।বলে উঠল,
-” রিকশায় হুডটা উঠিয়ে দিন মামা।”

এবার বিষয়টা বেলার বোধগম্য হলো বেলার কাছে।বেশ আনন্দ অনুভব হলো চিত্তপটে।রায়ায ভাই তার কত খেয়ালই না রাখে! তার নিজেরও রায়াযকে দেখলে কেমন একটা লাগে।বুকের ভিতর কেমন ধুক ধুক করে।পেটের মধ্যে কেমন সুরসুরি লাগে। তবে তারও বেশ লাগে রায়ায ভাইয়ের পাশে পাশে থাকতে।আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে রায়াযের কাধে মাথা এলিয়ে দিল বেলা।চকিতে বেলার মুখপানে তাকিয়ে রায়ায গম্ভীর কণ্ঠে সুধালো,

-“কী সমস্যা, সোজা হয়ে বস।”
সম্বিত ফিরল বেলার।সত্বর তাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে বসল।রিকশা চলতে লাগল আপন গতিতে।কিয়ৎ কাল বাদ ফের রায়াযের কণ্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই সেদিক তাকাল সে,
-“তোর কী কোথাও কষ্ট হচ্ছে?খারাপ লাগছে?গরম কী খুব বেশি লাগছে? এদিকে আয় দেখি।”
বেলা মুখ খুলে কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই রায়ায তার মাথাটা নিজের কাধে রাখল।বলল,
-“খারাপ লাগলে এভাবেই কিছুক্ষন থাক।”

বেলার আর কিছু বলল না।তারও বেশ ভালো লাগছে এভাবে থাকতে।কেমন সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে! কিন্তু কেনো হচ্ছে তা তার আজও অজানা। তবে সে এটা জানে রায়ায ভাইয়ের সবকিছুই তার বেশ ভালো লাগে।সে যাই করুক না কেনো?কেবল বকলে একটু কষ্ট লাগে! তাতে কী? রায়ায ভাইতো তাকে বেশ আদর ও করে।চোখ বুঁজে নিল বেলা।সময়টা বেশ লাগছে তার কাছে।

এই কাঠফাটা গরমের মধ্যে হঠাৎ নিজের আশেপাশে মৃদু বাতাসের আভাস অনুভব করে চিকিতে চোখ মেলল বেলা।দেখতে পেল রায়ায নিজের ওষ্ঠের সাহায্যে তাকে বাতাস দিতে চাচ্ছে। নিজের ওষ্ঠের দ্ধারা পরপর ফুঁ দিয়ে চলছে তার মুখমণ্ডলে।সত্বর নিজের মাথা রায়াযের কাধ থেকে উঠিয়ে নিল বেলা।রায়াযকে নিজের এতো বেশি কাছে দেখে তার জানি কেমন কেমন লাগছে!সন্তর্পনে একটা শুকনো ঢোক গিলল বেলা।পুনরায় বেলার মাথা নিজের কাধে রেখে রাশভারী স্বরে রায়ায বলল,

-” এতো নড়াচড়া না করে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে থাক।”
রিকশা এসে থামল রওশন বাড়ির গেটে।দ্রুত নেমে পরল বেলা। দূরেই তাদের সকল কাজিনদের দেখা যাচ্ছে।সেদিক দৌড় লাগল সে।সেদিক তাকিয়ে ললাট কুঁচকে নিল রায়ায।ধমকে উঠল,
-“আস্তে যা! পড়ে যাবি কিন্তু।”

বসন্ত এসেছে পর্ব ১

যার যার জামকাপড় আর প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী গুছিয়ে সকলে ব্যাগে ভরে নিল।এখন বাড়ির সকল মেয়েরা পার্লারে যাবে সাজতে।তোড়জোড় চলছে সমান তালে।বাড়ির বড়রা ব্যস্ত বিয়ের কাজে।ফুরসত নেই কারো।সবার আগে ব্যাগপত্র নিয়ে ছুটলো বেলা।বাগানে ডেকরেশনের কাজ দেখছিল রায়ায।বেলাকে ব্যাগপত্র নিয়ে সবার আগে কোথাও ছুটতে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিল সে। হাঁক ছাড়ল,
-“এই বেলা কোথায় যাচ্ছিস?এদিকে আয়।”

বসন্ত এসেছে পর্ব ৩