বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৪

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৪
লেখিকা: তানজিল মীম

থাইগ্লাসের সাথে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান আহিকে। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ বোঝা যাচ্ছে তার। আর আদ্রিয়ানের এমন চাহনি দেখে ভয়ে প্রান যায় যায় অবস্থা আহির। আহি শুকনো ঢোক গিলে বললো,
‘ প্লিজ আমায় মারবেন না আমি বুঝতে পারি নি এখানে আপনি থাকবেন।’
আদ্রিয়ান আহির কথার তেমন পাত্তা না দিয়ে রাগী লুক নিয়ে বলে উঠল,
‘ তুমি বার বার আমার সামনেই কেন আসো?’ আর শ্রীমঙ্গল কি করছো?’
‘ বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে এখানে আসি নি আসলে বন্ধুদের সাথে চা বাগান দেখতে এসেছিলাম তখন রাস্তা হারিয়ে ফেলে এইখানে চলে আসছি?’
‘ মিথ্যে বলার জায়গা পাচ্ছো না আর, তুমি আমায় ফলো করছো না তো?’
‘ না না বিশ্বাস করুন এমন কিছু নয়।’

এমন সময় আহির হাতে থাকা খরগোশ ছানা লাফ মেরে উঠে চলে গেল আদ্রিয়ানের গায়ের উপর। আচমকা এমনটা হওয়াতে পুরো চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের সাদা শার্টকে কাঁদা দিয়ে চলে যায় সে। খরগোশের কাজে আদ্রিয়ান সরে এসে নিজের শার্টের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠল,
‘ হোয়াট দা হেল?’
আদ্রিয়ানের কথা আর শার্টের অবস্থা দেখে আহির অবস্থা তো আরো খারাপ সে ছিঁটকে এগিয়ে এসে খরগোশ ছানাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
‘ প্লিজ প্লিজ ওকে কিছু করবেন না আমি আপনার শার্ট ভালো মতো ধুয়ে দিবো?’
আদ্রিয়ান ভয়ংকর ভাবে রেগে গিয়ে আহির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠল,
‘ একি তো না বলে আমার রুমে ঢুকেছো তারওপর তোমাদের তো আমি..
বলেই আদ্রিয়ান তেড়ে আসলো আহির দিকে। আদ্রিয়ানের কাজে আহি ভয় পেয়ে এদিকে সেদিক দৌড় লাগালো আর বললো,
‘ প্লিজ এমন করবেন না ওর হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।’
কিন্তু কে শোনে কার কথা আদ্রিয়ান মনে হয় আজকে আহিকে মেরেই ফেলবে এমনিতেও সেদিনের অফিসে বসে বলা কথা আদ্রিয়ান এখনো ভোলে নি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

একটা টি শপের দোকানে বসে আছে নীরব অথৈ,মীরা,সোহান,শরীফ, সুজন আর রিনি। দৌড়াতে দৌড়াতে অবস্থা তাদের বেজায় খারাপ। সবাই বেশ জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে এখানে বসে। আর একটু হলেই বৃষ্টিতে ভিজে সবার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত। যদিও এখনও অল্প স্বল্প ভিজে গেছে তারা। তখন হুট করে আকাশের বাজে অবস্থা দেখে নীরব সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বললো ফেরার জন্য এরই মধ্যে বলতে না বলতে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। বৃষ্টি পড়তে দেখে সবাই একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে আসলো চা বাগানের ভিতর থেকে। সামনে এই চায়ের দোকানটা দেখতে পেয়ে এসে বসলো সবাই। হঠাৎই অথৈ আশেপাশে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ আহি কোথায়?’
অথৈর কথা শুনে এতক্ষণ পর সবার মনে পড়লো আহির কথা। সবাই আশেপাশে তাকালো কিন্তু কোথাও আহিকে দেখতে না পেয়ে নীরব বলে উঠল,
‘ ওহ তো তোমাদের সাথে ছিল তাহলে..
এতটুকু বলে শপের আশেপাশে খুঁজতে লাগলো নীরব কিন্তু কোথাও আহিকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ ও কি তবে তখন চা বাগান থেকে বের হতে পারে নি?’
বাহিরের মুসল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে!’ আর শপের ভিতরে সবাই চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে বসে আছে এখন কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না তাঁরা?’

‘ প্লিজ প্লিজ আমায় আর আমার খরগোশ ছানাকে মারবেন না?’
এক প্রকার হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে সোফার পিছনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলে উঠল আহি আদ্রিয়ানকে। আর আদ্রিয়ান আহির দিকে তেড়ে এসে বললো,
‘ কিছু করবো না মানে এমনিতেও সেদিনের অপমান আমি এখনো ভুলি নি মিস আহি।’
আদ্রিয়ানের কথা আর কাজ দেখে আহি আরেকদিকে সরে বললো,
‘ সেদিনের জন্য সরি প্লিজ প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন আমি আর কোনোদিন আপনাকে ওইনামে ডাকবো না।’
বলেই আর একটু সরতে গেলেই আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে ধরে ফেললো আহির হাত। তক্ষৎনাত আহির হাতে থাকা খরগোশ ছানা লাফ মেরে চলে গেল অন্যদিকে। আদ্রিয়ানের কাজে আহি ভয়ে ঘাবড়ে উঠলো এবার নির্ঘাত তাকে মেরেই ফেলবে। আদ্রিয়ান আহির হাত ধরে নিজের কাছে এনে রাগী কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে উল্টো পাল্টা নামে ডাকার?’Do you have any idea what I can do with you now?

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো আহি। না জানি সত্যি সত্যি রেগে গিয়ে এই লাল চোখওয়ালা হনুমান কি করে তাঁর সাথে। আহি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,
‘ প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন না।’
‘ ক্ষমা ইজ মাই ফুট?’
বলেই আদ্রিয়ান ঝুঁকে পড়ে আহির দিকে। আদ্রিয়ান কাজে আহিও ঘাবড়ে গিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আদ্রিয়ান যত তাঁর দিকে এগোচ্ছে আহিও ততই তাঁর মাথাটা নিচু করছে। আর আদ্রিয়ান আহির দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে বলে উঠল,
‘ আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাহস হয় নি এই আদ্রিয়ানের সাথে বাজে ব্যবহার করার আর সেখানে তুমি আমায় ইন্সার্ট করেছো। তোমার সাথে যে কি করবো আমি নিজেও জানি না..
বলেই আহির হাত ছেড়ে দিল আদ্রিয়ান। অনেকখানি নিচের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার কারনে আদ্রিয়ান আহির হাত ছেড়ে দিতেই ধপাস করে নিজের দিকে পড়ে যেতে নিলো আহি। চোখ বড় বড় করে তাকায় সে আদ্রিয়ানের দিকে হঠাৎই তাঁর হাত চলে যায় আদ্রিয়ানের গলার টাইয়ের দিকে। আচমকা গলায় টান লাগতে আদ্রিয়ান পড়ে যেতে নিলো আহির দিকে। তারপর আর কি যা হওয়ার তাই হলো আহির পিছনে সোফা থাকায় ধপাস করে সোফার উপর পড়লো সে আর আদ্রিয়ান আহির উপর হুমড়ে পড়তে যাবে তাঁর আগেই সোফার ওপর হাত রেখে নিজেকে সামলে নিলো সে। তবে আহির অনেকটাই কাছে চলে গিয়েছিল সে। চোখাচোখি হয় দুজনেরই হঠাৎই আদ্রিয়ানের কেমন একটু লাগতেই চটজলদি নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। তারপর কর্কশ কন্ঠে বললো,

‘ Get out of my room?’
বাহিরে তুমুল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে তাঁর সাথে আকাশেও জোরে জোরে ব্রজপাত হচ্ছে,বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে এমন একটা মুহূর্তে আহি কোথায় যাবে?’ — কথাটা ভাবতেই ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠছে তাঁর। আহিকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আদ্রিয়ান আরো রেগে গিয়ে ধমকের স্বরে বলে উঠল,
‘ কি হলো তোমায় কিছু বলেছি আমি, বের হও আমার রুম থেকে?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে কেঁপে উঠল আহি। কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো সে,
‘ এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবো আমি? ‘প্লিজ আজকের রাত আমাকে এখানে থাকতে দিন আমি কথা দিচ্ছি কাল সকালেই আমি চলে যাবো।’
আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,
‘ what?’

আহির হাত ধরে একপ্রকার টেনে দরজার বাহিরে বের করে দিলো আদ্রিয়ান। কারণ আর যাই হোক এই মেয়ের সাথে কোনোভাবেই একসাথে এক ঘরে থাকবে না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান আহিকে রুমের বাহিরে বের করে দিয়ে ধারাম করে দরজা বন্ধ করে দিলো। দরজাটা এতটাই জোরে বন্ধ করলো আদ্রিয়ান যে দরজার শব্দে আহি পুরো কেঁপে উঠলো। একরাশ হতাশা আর নিরাশ হয়ে দরজার নিচে বসে পড়লো আহি। কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। ফোনটাও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে কাউকে যে একটা কল করবে সেটাও পারছে না সে। এমন সময় আদ্রিয়ান আবার তাঁর দরজাটা খুললো আদ্রিয়ানের কাজে আহির চোখে মুখে হাল্কা হাসি ফুটে উঠলো কারন সে ভেবেছিল হয়তো তার ওপর একটু মায়া হয়ে আদ্রিয়ান দরজাটা খুললো কিন্তু তার সেই ভাবনাটাকে বেঘাত ঘটিয়ে আদ্রিয়ান আহির কোলের উপর তাঁর খরগোশটাকে আস্তে ছুঁড়ে মেরে আবার দরজা বন্ধ করে ফেললো। আদ্রিয়ানের কাজে আবারো কেঁপে উঠলো আহি। তারপর খরগোশ ছানাকে ধরে বললো সে,
‘ এই সব তোর জন্য হয়েছে এখন কি করবো বল তো এই অচেনা জায়গা,তারওপর বৃষ্টি!’
ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আহির।’

অন্যদিকে দরজা আঁটকে পুরো রুমে চোখ বুলালো আদ্রিয়ান। পুরো রুম তাঁর উলোট পালোট হয়ে গেছে। রাগে গা জ্বলছে আদ্রিয়ানের, সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না বার বার এই মেয়েটাই কেন তার সামনে চলে আসে। এতটুকু ভেবে নিজের শার্টের দিকে তাকাতেই আরো রাগ হয় আদ্রিয়ানের প্রচন্ড রাগ নিয়েই চলে যায় সে ওয়াশরুমের দিকে।’

বেশ কিছুক্ষন যাবৎই বসে আছে নীরব- অথৈ ওঁরা টি শপের ভিতর। কিন্তু এখনও আহির কোনো খোঁজ খবর না পাওয়ায় বেশ চিন্তিত তাঁরা। অনেকবার কলও করা হয়েছে আহিকে কিন্তু আহির ফোন বন্ধ। একরাশ অস্থিরতা নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো নীরব তারপর বললো,
‘ আর এভাবে বসে থাকা যাবে না আহিকে খুঁজতে হবে?’
নীরবের কথা শুনে সোহান বলে উঠল,
‘ খুঁজতে তো যাবো কিন্তু এই ঝড় বৃষ্টিতে কি করে সম্ভব।’
‘ ওতোশতো জানি না আমি খুঁজতে যাবো মানে খুঁজতে যাবো আর সেটা এক্ষুনি?’
বলেই নীরব হেঁটে বের হতে নিলো শপের ভিতর থেকে। নীরবকে যেতে দেখে অথৈ আর রিনিও দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
‘ আমরাও যাবো?’
ওদের কথা শুনে একে একে সবাই বলে উঠল,
‘ হুম আমরাও যাবো।’
সবার মুখে এক কথা শুনে নীরব বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ সবাই একসাথে যাওয়া ঠিক হবে না এমনিতেই বৃষ্টি পড়ছে। তার চেয়ে একটা কাজ কর তোরা রিসোর্টে যা আমি আর সোহান যাচ্ছি আহিকে খুঁজতে।’
নীরবের কথা শুনে রিনি আর অথৈই দু’জনেই বলে উঠল,
‘ আমরাও তোমাদের সাথে যাবো?’

‘ একটু বোঝার চেষ্টা কর এভাবে বৃষ্টির মধ্যে সবাইকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।’
কিন্তু নীরবের কথা শুনতে নারাজ অথৈ আর রিনি। শেষমেশ শরীফ, সুজন আর মীরাকে রিসোর্টে যেতে বলা হলো আর নীরব, অথৈ, সোহান, রিনি ওঁরা যাবে আহিকে খুঁজতে। মীরারাও যেতে চেয়ে ছিল কিন্তু পরে নীরবের কথা শুনতে বাধ্য হলো তাঁরা। অতঃপর গাড়ি করে চলে গেল মীরা,শরীফ আর সুজন। তিনজনই বেশ রেগে আছে। এরই মধ্যে ওদের সামনে দোকানদার এসে দুটো ছাতি এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ এই দুইটা ছাতি ছিল দোহানে তোমাগো লগে নিয়া যাও!’
দোকানদারের কথা শুনে খুশি হয়ে যায় নীরব ওঁরা। তারপর দুজন করে চারজন দু’দিকে চলে গেল। একদিকে রিনি সোহান আর অন্যদিকে নীরব অথৈ। দুজন এক ছাতিতে থাকায় বেশ অসস্থি ফিল হচ্ছে অথৈর। কারন কিছুক্ষন পরপর প্রায় তার সাথে টার্চ লাগছে নীরবের। তবে আপাতত কিছু করার নেই এটা ভেবে এগিয়ে চললো দুজন।’
কিছুদূর এগোতেই অথৈ নীরব দুজনেই আহি আহি বলে ডাকতে লাগলো কিন্তু আশেপাশে কোথাও আহির খবর নেই।’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৩

বিছানার ওপর বসে আছে আদ্রিয়ান। ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড আনিজি ফিল হচ্ছে তার, এভাবে একটা মেয়েকে বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে বের করাটা ঠিক হয় নি। কিন্তু আহিকে দেখলেই যে তার মাথাটা গরম হয়ে যায়। হঠাৎ আকাশে ভিষণ জোরে বিদ্যুৎ চমকালো যেটা দেখে আদ্রিয়ান আর বসে থাকতে পারলো না আস্তে আস্তে বিছানা থেকে সরে চলে যায় সে দরজার কাছে।’
দরজা খুলতেই….

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৫