বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২৯
লেখিকা: তানজিল মীম
বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আহি অথৈর বোনের মুখের দিকে। তাঁর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না অথৈ ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। আহি ছলছল চোখে অথৈর বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ হুট করে ও চলে কেন গেল, আপু?’
উওরে অথৈর বোন চোখের ইশারায় ভিতরে আসতে বললেন আহি আর রিনিকে। আহি আর রিনিও ওনার চোখের ইশারা বুঝতে পেরে চললো ভিতরে।
সোফার উপর বসে আছে আহি আর রিনি। তাদের সামনেই কিছু খাবার রাখা। কিন্তু আপাতত খাবারের ওপর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আহি রিনির। তাঁরা দুজনেই অথৈর চলে যাওয়া নিয়ে ভিষন আপসেট। কেউ ভাবতেই পারে নি অথৈ এইভাবে না বলেই চলে যাবে। এরই মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো অথৈর বোন হাতে একটা চিঠি নিয়ে এসে এগিয়ে দিল সে আহি আর রিনির দিকে। তারপর বললেন,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
‘ এটা ও যাওয়ার সময় তোমাদের দিতে বলেছিল হয়তো ও জানতো তোমরা আসবে।’
এতটুকু বলে আহির হাতে দিলো সে চিঠিটা। আহিও তেমন কিছু না ভেবে হাতে নিলো চিঠিটা তারপর বললো,
‘ ঠিক আছে আপু আজ তবে আসি আমরা।’
‘ সে কি তোমরা তো কিছুই খেলে না।’
‘ আবার অন্য আরেকদিন এসে খাবো,এখন আমরা আসি আপু (রিনি)
অতঃপর ওঁরা আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল অথৈদের বাড়ি থেকে।’
চলন্ত গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে আহি তাঁর পাশেই রিনি। দুজনেই চুপচাপ কারো মুখেই কোনো কথা নেই। আহির হাতে রয়েছে অথৈর লিখে যাওয়া চিঠি। আহি জোরে এক নিঃশ্বাস ফেলে পড়তে শুরু করলো চিঠিটা প্রথমেই লেখা,
প্রিয় আহি,
আমি জানি তুই হয়তো আমার ওপর ভিষণ রেগে আছিস। বিশ্বাস কর আমি কখনো ভাবিনি আমার জীবনে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমি কল্পনাও করতে পারি নি নীরব তোর বদলে আমায় প্রপোজ করবে। বিশ্বাস কর আমি কখনোই ওনাকে সেই চোখে দেখি নি। তারপরও সেদিন যখন তুই ভার্সিটির পিছনে বসে রিনিকে ধরে কাঁদছিলি তখন কেন যেন নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়েছিল। বার বার শুধু মনে হচ্ছিল আমার জন্যই হয়তো তোর এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনো আসবো না এখানে। এটা জানানোর জন্য তোকে লাস্ট ফোন করেছিলাম কিন্তু তুই তো ধরলি না। চাইলে রিনিকে কল করতে পারতাম কিন্তু করিনি কারন আমি সেদিন ওর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম ও আমার ওপর বড্ড রেগে আছে। তাই এই চিঠি লেখা। অবশেষে বলবো, তুই, নীরব, রিনি, মীরাআপু সহ আরো যাঁরা আমার বন্ধু ছিলি তোরা সবাই ভালো থাকিস। তোদের সাথে কাটানো এই কটা দিনই আমার জীবনে স্মরণী হয়ে থাকবে। তোদের খুব মিস করবো রে। আবারো বললাম পারলে ক্ষমা করে দিস আমায়? আর হ্যাঁ আমায় খুঁজতে আসিস না আবার আমি আর ফিরবো না।’
ইতি অথৈ।’
অথৈর লেখাগুলো পড়ে আহি রিনি দুজনেরই বেশ খারাপ লাগলো। তাঁরা ভাবতেও পারে নি দু’দিনের মধ্যেই অথৈ এইভাবে সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে যাবে। যতই হোক যা কিছু হয়েছে তাতে অথৈর কোনো দোষ ছিল না। আহি আনমনেই মন খারাপ নিয়েই বলে উঠল,
‘ এটা ঠিক হলো না।’
রোদ্দুরের চিক চিক করা দুপুরের আলোতে আনমনেই একটা খোলা মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটছে আহি। অথৈর জন্য বড্ড খারাপ লাগছে তাঁর। অথৈ কাজটা একদমই ঠিক করে নি। কিছুক্ষন আগেই রিনিকে বাসায় যেতে বলে এখানে গাড়ি থামিয়েছে আহি। এর দুটো কারন এক আর এক ঘন্টার পরই সে হসপিটালে যাবে। আর দুই এই মুহূর্তে আহির বাড়ি যেতে মটেও ইচ্ছে করছে না। তারওপর মন খারাপ, ইদানীং শুধু মন খারাপই হয় আহির। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আহি কিছুই ভালো লাগছে না তাঁর। হঠাৎই আহির চোখ যায় সামনে ভীষণই অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় সে কারন তাঁর থেকে কিছুটা দূরেই আদ্রিয়ান কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করছে সাথে কানামাছি খেলছে। আহি যেন তাঁর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না আদ্রিয়ানের ওমন রাগী চোখের আড়ালে এমন একটা বাচ্চামো ভাব লুকিয়ে আছে। আহি ভীষণ অবাক হয়েই আনমনে এগিয়ে চললো আদ্রিয়ানের দিকে।
এদিকে….
আজ মা বাবার কথা মনে করে মনটা হাল্কা খারাপ থাকায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ছিল আদ্রিয়ান। তখনই এই খোলা মাঠের একটা গাছের পাশে বেঞ্চে বসেছিল সে আর তখনই দেখা হয় তাঁর সাথে কতগুলো বাচ্চাদের। কানামাছি খেলছিল তাঁরা আর সেইসয়ম বাচ্চাগুলোর মধ্যে একটা মেয়ে এসে হাসামাখা মুখ নিয়ে আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করে সেও তাদের সাথে খেলবে কি না। আদ্রিয়ান মেয়েটির হাসিমাখা মুখ দেখে কেন যেন মানা করতে পারে নি তাই সেও চলে যায় ওদের সাথে।’
বর্তমানে বড্ড ক্লান্ত হয়ে আদ্রিয়ান গিয়ে বসলো সামনের বেঞ্চটাতে। ভীষণই ভালো লাগছে তাঁর যতটা মন খারাপ নিয়ে এখানে সে এসেছিল তাঁর বিন্দুমাত্র নেই এখন। এমন সময় আদ্রিয়ানের পাশে এসে বসলো আহি তারপর বললো,
‘ আপনি এখানে?’
হুট করেই কেমন আহির কন্ঠের মতো মেইলি কন্ঠ কানে আসতেই আদ্রিয়ান ফিরে তাকালো পাশে সত্যি সত্যি আহিকে তাঁর পাশে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,
‘ তুমি এইসময় এখানে কি করছো ভার্সিটি যাও নি আজ?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি আদ্রিয়ানের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে হাল্কা মন খারাপ নিয়ে বললো,
‘ তেমনটা নয় ভার্সিটি গিয়েছিলাম কিন্তু ফুল টাইম না থেকে চলে এসেছি।’
‘ কেন শরীর ভালো নেই নাকি?’
‘ না তেমন কিছু নয়।’
‘ তাহলে?’
আদ্রিয়ানের তাহলের উওর দিতে হাল্কা সংকোচ ফিল হলো আহির। আহিকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ ইট’স ওকে বলতে হবে না।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি ছল ছল চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আসলে অথৈ আমাদের ছেড়ে চলে গেছে?’
আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান কিছুটা বিস্ময়ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ অথৈ কে?’
আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে কোনো সংকোচ ছাড়াই বলে উঠল আহি,
‘ নীরব ভাইয়া যাকে ভালোবাসে।’
‘ ওহ কিন্তু এটা তো তোমার জন্য ভালো হয়েছে অথৈ চলে গেছে।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে ভ্রু-কুচকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো আহি,
‘ কিসে ভালো হয়েছে শুনি?’
‘ কেন এখন তোমার আর নীরবের মাঝখানে কেউ থাকবে না।’
‘ আপনার মাথা।’
‘ হোয়াট?’
‘ দেখুন বেশি হোয়াট হোয়াট করবেন না মনটা ভিষণ খারাপ আর ও চলে গেলেই কি নীরব ভাইয়া আমায় ভালোবাসবে নাকি? শুধু শুধু আমার একটা বন্ধু কমে গেল। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর এভাবে আমায় না বলে যাওয়া ঠিক হয় নি।’
‘ তোমার কি সত্যি অথৈ চলে যাওয়ার জন্য খুব খারাপ লাগছে?’
‘ আপনার কি আমার কথাগুলোকে মজা মনে হচ্ছে?’
‘ না তা নয়।’
‘ তাহলে?’
‘ নাথিং নাথিং।’
উওরে আহি আর কিছু না বলে মন খারাপ নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। এদিকে আদ্রিয়ান বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আহির মুখের দিকে। এই মুহূর্তে আদ্রিয়ানের মনে হচ্ছে আহির মনটা ভিষণ ভালো না হলে ওর জায়গায় অন্যকেউ থাকলে অথৈ চলে যাওয়াতে হয়তো ভিষণ খুশি হতো। কিন্তু আহি, আনমনেই মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে হাসছে এটা বুঝতে পেরে আহি আদ্রিয়ানের দিকে না তাকিয়েই বলে উঠল,
‘ আপনি হাসছেন কেন?’
‘ না কিছু না।’
এরপর কিছুক্ষনের জন্য নেমে আসে আহি আর আদ্রিয়ানের মাঝে নীরবতা। হঠাৎই এই নীরবতা ছিন্ন করে আনমনেই নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো আদ্রিয়ান,
‘ Will be my friend?’
হুট করে আদ্রিয়ানের মুখে বন্ধুত্বের দাঁওয়াত শুনে আহি বেশ অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। তারপর আদ্রিয়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কি?’
‘ তুমি কি বুঝতে পারো নি আমি কি বলেছি?’
‘ না তেমনটা নয় আপনি আমার বন্ধু হবেন?’
‘ হুম।’
আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে বিস্ময় মাখা মুখ নিয়ে বললো আহি,
‘ সত্যি?’
‘ তোমার কি আমার কথাগুলো মজা মনে হচ্ছে?’
হেঁসে উঠলো আহি। তারপর সেও নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ আর বকতে পারবেন না কিন্তু?’
উওরে মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান। সে নিজেও জানে না এই জিনিসটা আদ্রিয়ান কেন করলো। কিন্তু তাঁর কেন যেন আহির সাথে বন্ধুত্ব করতে খুব ইচ্ছে হলো।’
রাজশাহীতে নিজের রুমে বসে আছে অথৈ। আজ দু’দিন যাবৎ সে তাঁর রুমেই আছে কোথাও বের হচ্ছে না সাথে কারো সাথে তেমন কথাও বলছে না। অথৈ এমনিতেও কথা কম বলা মানুষ। কিন্তু এখন যেন পুরোই চুপ হয়ে গেছে সে। দুজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে আজ তাঁর বড্ড খারাপ লাগছে। এমন সময় তার রুমে ঢুকলো অথৈর মা, বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে বললেন উনি,
‘ তোর কি হয়েছে বল তো আসার পর থেকেই দেখছি চুপচাপ বসে থাকিস কারো সাথে কোনো কথা বলিস না, জানি তুই এমনিতেই চুপচাপ থাকিস কিন্তু এবার যেন একটু বেশিই।’
মায়ের কথা শুনে কিছুটা বিরক্ততা নিয়েই বললো অথৈ,
‘ আমার আবার কি হবে কিছুই হয় নি।’
‘ কিছুই যখন হয় নি তখন হুট করে চলে কেন আসলি ভার্সিটি পছন্দ হয় নি নাকি?’
‘ ভার্সিটি কেন পছন্দ হবে না মা।’
‘ তাহলে কেন এসেছিস তুই? সামনে যে তোর পরীক্ষা, যে মেয়ে পড়াশোনা ছাড়া দু’মিনিট থাকতে পারে না সে হুট করে এইভাবে চলে আসলো।’
‘ এখন তুমি কি চাও আমি আবার চলে যাই।’ (রেগে)
‘ আরে রাগ করছিস কেন যা তোকে আর কিছু বলবো না এখন শোন যাবি?’
‘ কোথায় যাবো?’
‘ তোর কাকা ফোন দিয়েছিল লিলির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে পরশু গায়ে হলুুদ তারপর বিয়ে তোকে যেতে বলেছে যাবি তুই?’
‘ আমার ভালো লাগছে না তোমরা যাও।’
‘ এমন করোস কেন চল লিলিও খুব খুশি হবে আর তোরও মনটা ভালো হয়ে যাবে। তুই না গেলে লিলিকে কি বলবো বল তো?’
মায়ের কথা শুনে অথৈ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ ঠিক আছে আমি যাবো কিন্তু আমায় নিয়ে যেন কোনো বারাবারি না করে আর কাকার শাশুড়ি আইমিন লিলির নানু যেন বিয়ে কবে করবো এই নিয়ে একদম কোনো কথা না বলে?’
অথৈর কথা শুনে অথৈর মা খুশি হয়ে বললো,
‘ কেউ কিছু বলবে না তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নে আমরা বিকেলেই বের হবো?’
বলেই চলে যায় অথৈর মা আলমারির দিকে। তারপর আলমারির ওপর থেকে ব্যাগটা নামাতে নেয় সে হঠাৎই পাশে থাকা একটা বড় বাক্সের সাথে বারি লেগে বাক্সের ভিতর থেকে সব কাগজ পত্র সাথে একটা লাল রঙের ডায়রি পড়ে গেল নিচে।’
হুট করেই কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ কানে আসতেই অথৈ তাঁর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এটা করলে তুমি মা?’
‘ কিছু হয় নি এক্সাইটিং এ ব্যাগের সাথে বারি লেগে বাক্সটা পড়ে গেছে।’
হঠাৎই আহির চোখ গেল লাল রঙের ডাইরিটার দিকে। কিছু একটা মনে পড়তেই অথৈ এগিয়ে যায় সেখানে তারপর মাকে বের করে দিয়ে বলে,
‘ তুমি যাও আমি গুছিয়ে নিচ্ছি?’
‘ কিন্তু?’
‘ কোনো কিন্তু নয় তুমি যাও আমি এগুলো একাই করে নিচ্ছি..
বলেই একপ্রকার জোরপূর্বক মাকে বের করে দিয়ে দরজা আঁটকে দিলো অথৈ।’
বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২৮
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। দুদিন অপেক্ষা করানোর জন্য সরি সবাইকে আসলে শরীরটা ভালো ছিল না। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে রেগুলার গল্প পাবে। আর গল্পে কিন্তু নতুন টুইস্ট আসছে অপেক্ষা করো]
Ami onk dare kore pai porbo gulo , aga upload kora holao , aita Kno hoi ?
Ami 29 porbo porjonto paise , r aj 2/3 din dhore Kono porbo paitasena
Apu next part kobe deben