বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৫
Arshi Ayat
চৈতির গালে রেভানের শক্ত হাতের একটা চড় পড়তেই গালটা ব্যাথায় চিনচিন করে উঠলো।চৈতি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রেভানের দিকে।রেভান চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’কেউ এতটা অমানুষ হতে পারে সেটা এই মহিলাকে না দেখলে জানতাম না।নিজের বোনের সংসার নষ্ট করে,তারই প্রাক্তনকে বিয়ে করে,তার নামে অন্য মানুষের কাছে কুৎসা রটাতে বিবেকে বাঁধলো না?এত ন’ষ্টা কোনো মেয়ে মানুষ হয় আমি জানতাম না।আর কি?তোর সাথে আমার সম্পর্ক?ছিঃ পৃথিবীতে একমাত্র মেয়েও যদি তুই হস তবুও তোর দিকে ফিরে তাকানোর মত রুচি আমার হবে না।অসভ্য,বেয়াদব,বেলাজ মহিলা।আর কখনো যদি মিলাতের ক্ষতি করার কথা চিন্তাও করিস কেটে কুত্তাকে খাওয়াবে।মনে রাখিস।’
প্রচন্ড হিংস্র স্বরে কথাগুলো বলল রেভান।তারপর সাইফুলের দিকে চেয়ে বলল,’আর তুই!তোকে কিছু বলার নাই।আমার ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে তোর মত অমানুষ আমার বন্ধু ছিলো।মিলাতের মত ভালো একটা মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার ফল তুই হাড়ে হাড়ে পাবি।’
কথাগুলো বলে রেভান চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে চৈতি চেচিয়ে বলল,’মিলাত একটু আগে একজনকে বিয়ে করেছে।’
রেভানের আবার মাথা খারাপ হলো।হাঁটা থামিয়ে ঘুরে দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে চৈতির ওপর আক্রমণাত্মক হওয়ার আগেই সাইফুল বাঁধা দিলো।রেভান তবুও দমলো না।রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল,’আরেকটা মিথ্যা বললে জিভ টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলবো ন’ষ্টা কোথাকার।’
‘এবার মিথ্যা বলছি না।খোঁজ নিলেই বোঝা যাবে।’
‘সাইফুল তোর বউকে থামা নয়তো ওর লাশও পাবি না।’
সাইফুল চৈতিকে ইশারা দিয়ে সরে যেতে বলল।চৈতি অবস্থা বেগতিক দেখে সরে গেলো সেখান থেকে।রেভান নিজেকে শান্ত করে বেরিয়ে গেলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনুরুপ ঘরে এসে ভাবতে লাগলো কিভাবে বাবা-মাকে বলা যায় ব্যাপারটা।জেদের বশে বিয়ে করলেও এখন চিন্তা হচ্ছে।বাবা-মা যদি মেনে না নেয়?বিশেষ করে মা!অনুরুপ বেশ কয়েকবার শ্বাস টেনে নিজেকে আশ্বস্ত করে বাসায় ফোন করলো।আর মনে মনে জপতে থাকলো যেন কলটা বাবা ধরে।ওর মনের আশা পূর্ণ হলল।আমিনুল সাহেব ই ফোন ধরলেম।অনুরুপ সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে বলল,’বাবা আশেপাশে কি মা আছে?’
আমিনুল সাহেব চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বললেন,’না তো!কেন?’
‘বাবা,আমি না একটা কাজ করে ফেলেছি।তুমি মা’কে একটু বুঝিয়ে বলো।’
‘কি করেছিস সেটা তো বল।’
‘বাবা,আমি বিয়ে করেছি।’
হারুন সাহেব আশ্চর্য হলেন।হঠাৎ করে ছেলে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললো কেন?তিনি বিস্মিত স্বরে বললেন,’সত্যি?’
‘হ্যাঁ,বাবা।’
‘কিভাবে হলো এসব?’
‘আমি দুদিন পর শুক্রবারে বাড়ি এসে সব বলব।’
‘তোর মা’কে বলব?’
‘না,থাক।আমি এসে বলব।’
‘আচ্ছা।’
বাবাকে বলে কিছুটা শান্তি পেলো অনুরূপ।ও জানতো বাবা ছাড়া ওর পথ নেই।বাবা ই হলো ওর জীবনের দমকল বাহিনী।
চৈতি ক্ষেপে গেলো ভীষণ।এভাবে কেউ কখনো ওকে অপমান করে নি।আর আজ কি না যাকে ভালোবাসে সে-ই করলো।সব হয়েছে ওই মিলাতের জন্য।ঘুরেফিরে সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো মিলাতের ওপর।চৈতি মনে মনে পণ করলো রেভানকে ও হাসিল করবেই আর যদি না পারে তাহলে মিলাতের এমন অবস্থা করবে যেন ওকে ভালোবাসে এমন প্রতিটা মানুষ কষ্ট পায়।
চৈতি বাসায় ফিরলো না রাতে।কোথায় আছে কেউ জানে না।বাসার সবাই ভাবলো সাইফুলের কাছে আছে।আর সাইফুল ভাবলো বাসায় আছে।কিন্তু চৈতি এই দুই জায়গার কোথাও নেই।
রাতে ঘুমানোর সময় অনুরুপ ফোন করলো।মিলাত মনে মনে সুপ্ত বাসনা রেখেছিলো এই কলটা আসার।খুশি মনে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অনুরুপ বলল,’ঘুমিয়েছিলে?’
‘না,,,বই পড়ছিলাম।’
‘ও।কাল আমার সকালের শিফট।যদি ভার্সিটিতে যাও তাহলে বের হওয়ার সময় কল দিও।’
‘আচ্ছা।আপনি ঘুমাবেন না?’
‘হ্যাঁ,কথা শেষ করেই।’
‘ও,আচ্ছা।’
এরপর আর কারো মুখেই কথা এলো না।দু’জনেই ফোনের অপরপ্রান্তের মানুষটিকে অনুভব করছে।একটা সময় মিলাত বলল,’আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আমাদের বিয়ে হয়েছে।’
‘হ্যাঁ,অনেকটা তাড়াহুড়োয় হয়েছে তাই।তুমি একদমই চিন্তা করো না।আমাদের বিয়ে ধুমধামে হবে আবার।’
মিলাত হাসলো বলল,’আর ইচ্ছে নেই।আমার সব ইচ্ছে মৃত।আপনার যা মন চায় তাই করবেন।’
‘না,মিলাত।তুমি যা চাও তাই হবে।তোমার প্রত্যেকটা ইচ্ছা,অনিচ্ছা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
‘আমি জানি না আপনি কেন আমাকেই বিয়ে করেছেন তবে আপনি আশেপাশে থাকলে আমার ভালো লাগে।’
এইটুকু কথাই যথেষ্ট ছিলো অনুরুপের জন্য।ভীষণ ভালো লাগার একটা রেশ ছুঁয়ে গেলো মনেপ্রাণে।
বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৪
অনুরুপ রোগী দেখছিলো তখনই ফোন এলো ডিটেকটিভ বন্ধু হিমেলের।এতদিন পর ফোন পেয়ে অনুরুপ রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে হিমেল বলল,’দোস্ত!একটা মেয়ের কথা বলেছিলি না এক মাস আগে ওরই বড়বোনকে দেখতে পেয়েছিলাম আজ।কৌতুহলবশত পিছু নিতেই জানতে পারলাম ওই মহিলা আজ ছোটো বোনের ওপর হামলা করাবে।দু’জনকে ভাড়া করেছে মেয়েটার মুখে এসিড মারার জন্য।আমার মনে হলো তোকে জানানো দরকার তাই বললাম।’
কথা শুনে অনুরুপের গলা শুকিয়ে গেলো।ও চেম্বার ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো আর লাগাতার মিলাতকে ফোন করতে শুরু করলো।কিন্তু মিলাতের ফোন বন্ধ বলছে।চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর।