বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৭
Arshi Ayat
রাত সোয়া দশটা।হারুন সাহেব,মিনারা বেগম আর মিলাত একসাথে খেতে বসেছেন।চৈতি এখনও বাসায় ফেরে নি।কোথায় আছে জানা নেই।অবশ্য কেউ জানতেও চায় না।খেতে খেতেই হারুন সাহেব বললেন,’আমি একটা বিষয়ে ভেবেছি।তোমাদেরকে বলছি।তোমরাও তোমাদের সিদ্ধান্ত জানাও।’
‘কি বাবা?’মিলাত প্রশ্ন করলো।মিনারা বেগমের একই দৃষ্টি।
‘ভাবছি আমার সব সহায়সম্পদ আমি মিলাত আর তোমার নামে লিখে দেব।’
‘বাবা এটা তো ঠিক না।আমি তো তোমার একমাত্র নই।তোমার আরেকজন সন্তান আছে।ওর ও হক আছে।’
‘কিন্তু আমি চাই না আমার সম্পত্তি ও পাক।ওকে আমি ঘৃণা করি।’
এবার মিনারা বেগমও একই স্বরে বললেন,’ওর মতো মেয়ে কিছুরই যোগ্য না।’
‘কিন্তু আমি মানতে পারছি না বাবা,মা।তারচেয়ে বরং ও যা পায় তা ওকে দিয়ে দাও।আমি কারো ভাগ নিতে চাই না।এতে করে ও আরও হিংস্র হয়ে উঠবে।তোমরা আমাকে এমন পরিস্থিতি ফেলো না,প্লিজ।’
হারুন সাহেব মেয়ের কথা শুনলেন।মাথা নেড়ে বললেন,’ঠিকাছে আমি আরেকটু ভাবি।’
খাওয়া শেষে মিলাত নিজের ঘরে এলো।বিছানার ওপর রাখা ফোনটা ভাইব্রেশন হচ্ছে।অনুরুপের ফোনকল।মিলাত এগিয়ে এসে রিসিভ করতেই অনুরুপ বলল,’একটু বাসার নিচে আসবে?’
‘এখন?’
‘হ্যাঁ,আমি নিচেই আছি।’
‘বাসায় আসুন।’
‘না,চট্টগ্রাম যাব।শুধুমাত্র তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।’
‘আচ্ছা,নামছি।’
মিলাত ফোন রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করে,হালকা একটু লিপগ্লস দিয়ে নিলো।তারপর ওড়নাটা গায়ে,মাথায় ভালো করে জড়িয়ে নিজের ঘর ছেড়ে বের হয়ে সদর দরজার দিকে যেতে যেতে বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,’অনুরুপ এসেছে।নিচে যাচ্ছি।’
মিনারা বেগম বললেন,’উপরে আসতে বলিস নি?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘বলেছি।উনি চট্টগ্রাম যাবেন।তাই এখন আসবেন না।শুধু আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন।’
মেয়ের কথা শুনে মিনারা বেগম হাসলেন তবে হারুন সাহেবের চেহারায় পরিবর্তন এলো না।
মিলাত নিচে নামতেই দেখলো অনুরুপ দাঁড়িয়ে আছে।অফহোয়াইট শার্ট,জিন্সের কালো প্যান্ট,কালো শু,ঘড়ি,চুলগুলোও সুন্দর করে সেট করা,চোখে রিমলেস চশমা,শার্টে হাতা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত রাখা।দু-হাত পকেটে রেখে মিলাতের দিকেই তাকিয়ে আছে।ভীষণ সুন্দর লাগছে ওকে।মিলাতের মনে হলো ছেলে মানুষ এত সুন্দর হওয়া অপরাধ।অনুরূপ এগিয়ে আসলো মিলাতের দিকে।ওষ্ঠে মৃদু হাসির রেখা নিয়ে বলল,’খেয়েছো?’
‘হ্যাঁ,আপনি?’
‘হ্যাঁ,ওই মেয়েটা বাসায় ফিরেছে?’
‘না,দু’দিন ধরে খোঁজ নেই।’
‘না ফিরলেই ভালো।তুমি সাবধানে থাকবে।আমি দ্রুত ফিরব।’
‘আচ্ছা,সাবধানে যাবেন।’
‘এটাই প্রথমবার যে তোমাকে ছাড়া তোমার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি।পরবর্তীতে তোমাকে নিয়েই যাব।’
মিলাত ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো।বলল,’ঠিকাছে।এবার রওনা হন।আর সাবধানে যাবেন।আমাকে ফোন করবেন।’
‘আর?’
‘আর কি?’
‘আর কি কি করব?’
‘আপাতত এইটুকুই।’
‘কিন্তু আমার তো আরও কিছু করতে ইচ্ছে করছে।’
‘কি?’
‘কিছু না।বাসা থেকে এসে বলব।’
‘আপনাকে যতটা ইনোসেন্ট ভেবেছি ততটাও নন আপনি।’
অনুরূপ উচ্চস্বরে হেসে ফেললো।বলল,’তাহলে কেমন আমি?’
‘সেয়ানা টাইপ।’
‘তাই?’
‘হ্যাঁ।তবে আমিও কম না।’
‘ঠিকাছে দেখব তুমি কতটুকু।এখন ঘরে যাও।’
“আপনিও সাবধানে যাবেন।’
অনুরুপকে বিদায় জানিয়ে মিলাত ঘরে ফিরে এলো।
অনুরুপ মিলাতের সাথে দেখা করে স্টেশনের দিকে যেতে যেতে হিমেলকে ফোন করলো।হিমেল ফোন রিসিভ করেই বলল,’কি অবস্থা,ব্রো?’
‘একটু প্যারায় আছি।’
‘কেনো?’
‘ফোনে বলা সম্ভব না।চট্টগ্রাম যাচ্ছি।এসে সব বলব।তোর হেল্প দরকার এই মুহুর্তে।’
‘কি হেল্প?’
‘তোকে একজনকে সেফটি দিতে হবে আমি চট্টগ্রাম থেকে না আসা পর্যন্ত।’
‘কাকে?’
‘মিলাত।’
‘ওই যে সুইসাইড করতে গিয়েছিল ওই মেয়েটা?’
‘হ্যাঁ।’
‘কিন্তু কেন?’
‘বলব সব।শুধু খেয়াল রাখিস আমি আসা পর্যন্ত কেউ যেন ওর ক্ষতি করতে না পারে।’
‘ওর ডেইলি শিডিউলটা দিয়ে দিস।’
‘আমি টেক্সট করে দেব।’
‘ওকে।সাবধানে যা।কিছু হলে আমি জানাবো।’
‘আচ্ছা,ব্রো।ধন্যবাদ।’
রেভানের কাজিনের সপ্তাহ ব্যাপী বিয়ে শেষ হয়েছিলো গতকাল।তাই আজ রাতেই ওরা সবাই চট্টগ্রাম রওয়ানা হবে।তবে রেভান আজই ফিরবে না।কাজের কথা বলে এখানেই থাকবে আরেকদিন।যাওয়ার আগে অন্তত মিলাতের সাথে সব ঠিক করতে চায়।
চৈতি বাসায় ফিরেছে রাত বারোটার পর।ওর কাছে ঘরের এক্সট্রা চাবি থাকায় আর কাউকে ডাকতে হয় নি।ঘরে ঢুকেই প্রথমে বসার ঘরের টেবিল আর ডাইনিং টেবিলের নীচ থেকে টেপ রেকর্ডারটা নিয়ে নিজের ঘরে গেলো।ওর মাথায় ঘুরছে অন্য প্ল্যান।যদি রেভান ওর হয় তো হলো আর নাহলে রেভানের সামনেই ওর প্রিয়তমাকে এমন মৃত্যু দেবে যে ও বেঁচে থেকেও জড়বস্তু হয়ে রবে।চৈতি জানে এসব করলে ও নিজেও বাঁচবে না তবে ও চায় রেভান এই যন্ত্রণাটা অনুভব করুক।
বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৬
সকালে বাসায় পৌঁছেই অনুরুপ নিজের ক্লান্ত মুখশ্রীর একটা সেলফি নিয়ে মিলাতকে পাঠালো আর সাথে লিখলো,’সুপ্রভাত আমার রুপসী প্রিয়তমা।আমি পৌঁছেছি তোমার শ্বশুরবাড়ি।আমার জন্য দোয়া করিও।আজকে তোমার শ্বাশুড়ি আমার ওপর দিয়ে সিডর,আইলা বইয়ে দেবে।’
মিলাত তখন জেগেই ছিলো।উঠেছে একটু আগেই।মেসেজটা দেখে হেসে রিপ্লাই করলো,’সুপ্রভাত ডাক্তার সাহেব।যু’দ্ধের জন্য দোয়া রইলো।’