বিপরীতে তুমি আমি শেষ পর্ব 

বিপরীতে তুমি আমি শেষ পর্ব 
সুমাইয়া ইসলাম

দুপুরের তপ্ত রোদের প্রভাবে অর্ণবের সাদা মসৃণ শার্টটি ঘামে গায়ের সাথে এঁটে রয়েছে। ভিজে চিপ চিপে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরে পরছে কানের কাছ বেয়ে। টিস্যুর সাহায্যে বার বার ঘাম মুছলেও ঘাম কমছে না। হাতের নোংরা টিস্যুটা জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়ে টিস্যু বক্সের দিকে পুনরায় হাত বাড়ালে খেয়াল করলো টিস্যু নেই।

বিরক্তিতে মুখ থেকে আপনাআপনি বেড়িয়ে এলো ‘চ্যাহ্’ সূচক শব্দ। চোখে চশমা দিয়েও যেন বাহিরে তাকানো যাচ্ছে না। হাতের রূপালি ও সোনালি রঙ্গের সংমিশ্রণের রিচ ওয়াচটার দিকে তাকিয়ে সময় পরোখ করে সামনের রাস্তার দিকে তাকাল। গাড়ির সামনে চালকের পাশের সিটটায় বসে প্রায় মিনিট পনেরো সে তার সহোযোগীর জন্য অপেক্ষা করছে। গাড়িটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে সে যেন উধাও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সামান্য একটা কাজের জন্য সে তার এতো সময় নষ্ট করছে। পাঁচ মিনিট পর অর্ণবের সহযোগী লিয়াকত হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলে সিটে বসে পড়লো। সে যখন সিট বেল্ট বাঁধতে ব্যস্ত তখন অর্ণব লিয়াকতের ভাবমূর্তি পরোখ করে যাচ্ছে। এ ছেলেটা বড্ড চঞ্চল স্বভাবের। বরাবরের মতো ভীতিগ্রস্তও বেশি। অর্ণবের জন্য ওর মনে সম্মান যতটা ততটাই ভয়ও বিদ্যমান। আর সেই ভয় থেকেই নির্ধারিত কাজটা বেশি ভুল করে ফেলে। তবুও অর্ণব লিয়াকতকে সর্বদা নিজের কাজের সহযোগী হিসেবে রাখতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তার প্রধান কারণ লিয়াকতের সততা, আনুগত্যতা।

লিয়াকত বেল্টটা বাঁধা শেষে পাশে অর্ণবের দিকে তাকালো। অর্ণবের ত্রীশুল ধরনের দৃষ্টি ও গম্ভীর মুখের ভাবে লিয়াকতের প্রাণ কুচকে এলো। ঢোক গিলে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বললো,
স্যার! রাগ করবেন না। জানি দেরি হয়ে গিয়েছে কিন্তু পাবলিক টয়লেটের অবস্থা বুঝেনই তো স্যার। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

অর্ণব চোখ বন্ধ করে ঘাড় ঘুড়িয়ে সামনে তাকালো। প্রকৃতির ডাক না হলে লিয়াকতকে নিশ্চিত শাস্তি স্বরূপ বাহিরে আধ ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখতো। এ যাত্রায় দোষের ভাগ কম বলে ছেড়ে দিয়েছে। আর এমনই আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। বিগত কয়েক বছর যাবৎ এমন দিনেরই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তবে একেবারেই ছেড়ে দেয় নি। লিয়াকত তৈরী হয়ে বসতেই আবার তাকে পাঠানো হয়েছে নতুন টিস্যুর বক্স আনতে। এবারো লিয়াকত প্রায় দৌড়ে এলো। গাড়িতে বসে টিস্যুর বক্স ছিড়ে সামনে রেখে দিল। অর্ণব সেখান থেকে টিস্যু নিয়ে কপাল মুছতে মুছতে বললো,

কাজ শেষ হওয়ার আগে আমার গাড়ি গ্যরেজ থেকে আনাবে। আমি ওটাতে করে বাড়ি ফিরবো। তোমার এই টমটমি যদি আর একদিন আমার সামনে এনেছো তো যা বাকি আছে সেটুকুও যাবে। এসিটা পর্যন্ত ঠিক নেই। মাইনে দিয়ে গরুর ঘাস কা*টার ছু*ড়ি কিনো ইডিয়েট?

শেষের ধমকে লিয়াকত কেঁপে ওঠে। সত্যিই তার এ গাড়িটা টমটমির থেকে কম নয়। বরং বলা চলে এর থেকে টমটমিই ভালো চলে। টাকা বাঁচানোর চক্করে গাড়ির অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসও ঠিক করা হচ্ছে না। কিন্তু এবার সে করবেই। অর্ণবকে দিয়ে ভরসা নেই। গাড়ির গ্লাসগুলো এক বাড়িতে ভেঙ্গে দিতেও তার প্রাণে মায়া হবে না হয়তো। পাঁচশত টাকার কাজ তার তখন পাঁচ হাজার টাকায় নিয়ে তুলবে। অবশ্য সে যদি জানতো তার এই টমটমির যাত্রী ঘটনাক্রমে কখনো অর্ণব হবে তাহলে নিশ্চয়ই গাড়ির উন্নতি করিয়ে ফেলতো। কিন্তু আপাতত নিজের উন্নতির কথা ভাবতে হবে। গরমে অর্ণবের অবস্থা নাজেহাল। অর্ণবকে দেখে তার নিজেরই মায়া লাগছে। তাই বিলম্ব না দ্রুত গাড়ি চালু করে। গন্তব্য তাদের আর মাত্র কয়েক মাইল।

অর্ণব কানে কালো রঙ্গের ব্লু টুথ লাগিয়ে ফোনটা হাতে নিল। পায়ের উপর কয়েকটা ফাইল রাখা। সকাল থেকে এখানে সেখানে দৌড়িয়ে কাগজগুলো সংগ্রহ করেছে। তবে তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটা পেনড্রইভ। একটা খামের ভেতর থেকে পেনড্রাইভটা বের করে ভালো করে দেখে নিল। গন্তব্যে পৌঁছানোর পূর্বে সবকিছু ভালো মতো পুনরায় পরীক্ষা করে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তিলার্ধ পরিমাণ ভুলেরও কোনো অবকাশ নেই। সবকিছু দেখে নেওয়া শেষে গুরুত্বপূর্ণ এক নম্বর ডায়াল করে। দুবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো। অর্ণব রাশভারি কন্ঠে অপর পাশের ব্যক্তিকে বলে,

ইজ এভ্রিথিং আন্ডার কনট্রোল?
ইয়েস স্যার!
এনিথিং ফিসি?
নো স্যার! ওরা কেউ এখন পর্যন্ত কিছু আন্দাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে না। আশা করছি আমাদের প্ল্যান মতোই সব কিছু হবে।
ওকে। আমি সকল ডকুমেন্টস ও ভিডিও ক্লিপের কপি তোমাকে সেন্ড করছি। এর পরের কাজ তোমার। বি কেয়ারফুল!
ইয়েস স্যার!

ফোনটা কাটাতেই অর্ণব পুনরায় ফোনের ডায়াল লিস্টে যায়। কিরণের অবস্থান জানা প্রয়োজন। কিন্তু একবার দুবার কল করার পর কিরণকে না পেয়ে কপালের মাঝে দুটো ভাজ পড়ে যায়। কিরণ শুনবে তো তার কথা?
লিয়াকত গাড়ি চালাতে চালাতে পাশ ফিরে অর্ণবের দিকে তাকালো। কালো চশমার আড়ালে অর্ণবের চোখজোড়া দেখা দুঃসাধ্য। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে অর্ণব কিছু ভাবছে। কিন্তু তার জানা মতে এ মুহুর্তে অর্ণবের চিন্তা করার কোনো কারণও নেই। সকল কিছু যা অর্ণব চেয়েছে তা ওর সামনেই। নিঃসন্দেহে এ কাজটাও সফল হবে। তবে চিন্তার কারণ?
স্যার! কোনো সমস্যা হয়েছে?

অর্ণব হাতের কুনই জানালায় ঠেকিয়ে হাতটা নাকের কাছে রেখেছে। অপর হাত দিয়ে ক্রমাগত ফোনটা নাড়িয়ে যাচ্ছে। লিয়াকতের ডাকে তার দিকে চোখ ফেরাতেই লিয়াকত পুনরায় জিজ্ঞাসা করে,
আপনাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। সবকিছু তো একদম গরম গরম সামনে তৈরীই। তবে চিন্তা কিসের স্যার?
অর্ণব দৃষ্টি ঘুড়িয়ে সামনে আনলো। কাচঁটা ভেদ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
এ চিন্তা সে চিন্তা নয়। তুমি গাড়ি চালাও ঠিক মতো।

কিন্তু স্যার আরেকটা কথা। সবকিছু তো পাঠিয়েই দিয়েছেন তবুও শুধু শুধু আপনি কেন যাচ্ছেন?
অর্ণব এবার হাসলো। দুর্বোধ্য হাসি। হেসেই উত্তর দিলো,
ওর ধ্বংস আমি নিজ চোখে দেখবো। তবেই না ষোল কলা পূর্ণ হবে।

মিনিট দশেকের মাঝেই অর্ণব পৌঁছে গেল নির্দিষ্ট স্থানে। সাবধানে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে রেখেছে। দুজনেই গাড়ির ভেতরে বসে আছে। অর্ণব চোখের কালো চশমাটা খুলে জানালা দিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রয়েছে স্টেজে অতি নম্রভাবে বসে থাকা মুখোশধারী শয়*তান রফিকউল্লাহ খানের দিকে। ব্যবসায়িক পরিচয় পেড়িয়ে এবার সে পা রাখতে চলেছে রাজনীতিতে। অবশ্য এর আন্দাজ অর্ণবের পূর্বেই ছিল। রফিকউল্লাহ হলেন ক্ষমতার লোভে পিপাসিত। ক্ষমতার জোড়ে উপরে ওঠার লোভ তার আদিম কাল থেকে। বারবার অসৎ উপায়ে উপরে উঠতে গিয়ে আচড়ে পড়েছেন। এখান থেকেও মুখ থুবড়ে পড়তে কতক্ষণ!

অর্ণব সময়ের অপেক্ষায় স্থির হয়ে আছে। ঠিক মনোনয়ন পাওয়ার ঘোষণা পূর্বেই সে খেলা শুরু করবে। অর্ণবের ঠোঁটের কোণায় ফুটে ওঠলো সূক্ষ হাসি। তবে সে হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। স্টেজের সামনে কিরণের হাতে মাইক্রোফন দেখে বিদ্যুতের ন্যায় চমকে ওঠে। সিট থেকে নড়েচড়ে বসে। নিজের কল্পনা অথবা ভ্রান্তি ভেবে পুনরায় সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই বুঝতে পারলো কিরণ সত্যিই এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত। তবুও মানতে পারছে না। লিয়াকতকে ডেকে অস্থির চিত্তে জিজ্ঞাসা করে,

লিয়াকত! ইজ দ্যাট রিয়েলি ইয়্যুর ম্যম?
ম্যম শব্দটা শুনতেই লিয়াকতও চমকে ওঠে। অর্ণবের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই কিরণকে দেখতে পেলো। তার পাশেই দাঁড়িয়ে হৃদ ও ক্যামেরা হাতে ওদের বয়সী একজন ছেলে। লিয়াকত এ স্থানে কিরণকে দেখে হতবাক হয়ে চেয়েই রইলো।
অর্ণবের অবাকের সীমা যেন পার হচ্ছে না। এতো জায়গা থাকতে কিরণ এই জায়গায়ই কেন? শুধু উপস্থিতই নয়, সাংবাদিক হয়ে উপস্থিত। এতো বড় একটা খবর কিরণ তাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না?

তার থেকে আরো অবাক হলো রফিকউল্লাহ খান যখন নিজ থেকে কিরণের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। কিছু কথা বলছেন। কিরণের মাথায় হাত রাখতেই অর্ণবের মস্তিষ্কের নিউরন সমূহে তুমুল বিবাদের সৃষ্টি হয়। রাগে যেন মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে রফিকউল্লাহর কতটা নীরব ঘাতকের মতো চাল চেলেছে। এতোদিনের তিল তিল করে জমানো এতো সকল প্রমাণ, এতো সকল চেষ্টা রফিকউল্লাহর শুধুমাত্র একটা চালের বিপরীতে ব্যর্থ হতে পারে না। অর্ণব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। এই মুহুর্তে এসে কিছুতেই রাগের বশে এমন কিছু করা যাবে না যাতে আম ছালা দুটোই খোয়াতে হয়।

চুলগুলো এক হাত দিয়ে টেনে সিটে শরীর এলিয়ে আছে। চোখজোড়া ভিষণ ব্যাথা করছে। হঠাৎ ফোনটা কেঁপে ওঠলো ওর। অপর হাতে থাকা ফোনটা তুলে দেখলো বিপরীত পাশর ব্যক্তিটি অধীর আগ্রহে বসে আসে তার একটা ইশারার জন্য। তার একটা ইশারায় এই মজলিশ ভেঙ্গে ছাই হয়ে যেতে পারে। এতো আনন্দ অনুষ্ঠান হয়ে যেতে পারে গোপন তথ্যের ভান্ডার। কিন্তু আটকে গেছে একটা জায়গায়। রফিকউল্লাহ খুবই চালাকির সাথে শুধুমাত্র একটা চালেই খেলা পাল্টে দিয়েছে। খুঁজে খুঁজে ঠিক অর্ণবের দুর্বল জায়গাটা তুলে সামনে রেখে দিয়েছে।

কিরণকে ঢাল করে নিজে পিছনে নিজের কার্যসিদ্ধি করে যাচ্ছে। চোখের সামনে রফিকউল্লাহর মনোনয়ন, অভ্যর্থনা সকলকিছুই দেখে গেলো। রফিকউল্লাহ খানের মুখে বিজয়ের হাসি। এ হাসি যেন বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট নেশা এই ক্ষমতার নেশা। এ নেশা যাকে পেয়েছে তাকে হয় নিঃশ্ব করেছে নতুবা রাজা করেছে। রফিকউল্লাহর মতো মানুষ এক ক্ষমতা থেকে চ্যুত হয়ে আরেক ক্ষমতার পেছন ছুটবেন এটাই স্বাভাবিক। অর্ণব দু আঙ্গুল দিলে চোখ জোড়া চেপে বসে আছে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে আজ তার।

একটা দিকের বেখেয়ালি তাকে আজ চরম আফসোসে এনে ফেলেছে। কিরণের ব্যপারটা তার আরো আগে মাথায় রাখা উচিৎ ছিল। শার্টের উপরের দুই বোতাম খুলে দিলো অর্ণব। হাতের ফোনটা ছুড়ে দিলো সামনের দিকে। বদ্ধ গাড়িতে শব্দটা বেশ শ্রুতিকটু হলো। লিয়াকত চুপচাপ বসে আছে। সেও বড় আশায় ছিল রফিকউল্লাহর পতন দেখবে। সেও জানে মনোনয়ন পাওয়া মানেই সে ক্ষমতায় উঠবেই। যে করেই হোক। অর্ণবের পাশাপাশি রফিকউল্লাহ প্রতি লিয়াকতের আক্রশও ব্যক্তিগত। অর্ণবের সাথে অফিসের বাহিরেও কাজ করার এটাও একটা প্রধান কারণ। কিন্তু তার আশাটাও সেগুড়ে বালি হলো কিরণের জন্য। মনে মনে না চাইতেও একটা ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। কিন্তু আবার এটাও বুঝতে পারলো কিরণ নিজেও এখানে একটা গুটি। লিয়াকত সভার দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎই অর্ণবের কন্ঠে ধ্যান ভঙ্গ হয়,

আমার গাড়ি আসার কথা ছিল। কতদুর?
জ্বি বলেছি আসতে। পাঁচ-সাত মিনিট লাগবো।
আমি তোমার গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। তুমি তোমার ম্যামকে নিয়ে আমার গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেবে সাবধানে।
জ্বি স্যার।

অনুষ্ঠান শেষ হলো সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে। কিরণদের সব ব্যাগ প্রবেশের সময় জমা নেওয়া হয়েছিল। ব্যাগগুলো নিয়ে হুদ ও রোহানকে বিদায় জানিয়ে বাহিরে আসতেই চোখে পরলো লিয়াকতকে। অর্ণবের গাড়িটা চিনতেও অসুবিধে হয় নি কিরণের। লিয়াকত এগিয়ে এসে খুবই নম্রভাবে সালাম দিয়ে বললো,
ম্যাম! স্যার আপনাকে নিতে আমাকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়েছেন। তাড়াতাড়ি চলুন।

কিরণ বুঝতে পারলো অর্ণব জেনে গিয়ে সে এখানে এসেছে। গাড়িতে বসতে বসতে চিন্তায় মাথা হঠাৎ ভার হয়ে এলো। অর্ণবকে না জানানো, কথা না শুনে চল আশায় কি অর্ণব খুব বেশি কিছু বলবে? সে কি একটু বেশিই করে ফেলেছে?
গাড়ি বাড়ির দরজার কাছে থাকতেই লিয়াকতকে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো কিরণ। বসার ঘরে জান্নাত ও শ্বাশুড়িকে দেখে সৌজন্যমূলক এক হাসি দিয়ে উপরে ওঠে গেল। এ মুহুর্তে উপরে যাওয়া বেশি প্রয়োজন। দারোয়ান চাচার কাছে জেনে এসেছে অর্ণব বাড়িতে ফিরেছে। ওর মনটা ভিষণ খচখচ করছে।

বারবার মনে হচ্ছে ভিষণ খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। আবার সেই মনই চাচ্ছে তার এই মন হওয়া ভুল হোক। কিন্তু ঘরের সামনে পা রাখতেই বুঝতে পারলো তার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়র পূর্বাভাস সত্য। ঘরের মাঝে যেন তুফান বয়ে গিয়েছে। বিছানার চাদর, বালিশ পড়ে আছে নিচে। ড্রেসিংটেবিলের সাজ সজ্জাকার অবহেলায় ছিটিয়ে আছে এদিক ওদিক। কিরণর বুক ধুকপুক করা শুরু করলো। কাঁধের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে নিশব্দে এগিয়ে গেল সামনে।

সামনে এগিয়ে দেখসে পেলো অর্ণব কাউচের উপরে বসে আছে। দু হাতের মুঠোয় ঝলমলে চুলগুলো। মাথা ঝুকে বসে আছে। অর্ণবের হঠাৎ এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ বুঝতে না পেরে কিরণের ভেতরটা ভয়ে কুঁকড়ে এলো। এসব কি তার দোষে হয়েছে? সে কি কোনো বড়সড় ভুল করে ফেলেছে? আরেকটু এগিয়ে যেতেই অর্ণব মাথা উপরে তুলে চোখ খুলে তাকালো। র*ক্তবর্ণ চোখজোড়া দেখে কেঁপে ওঠলো কিরণের রুহ। অর্ণবের এতো ভয়ংকর রূপ কিরণের আগে দেখা ছিল না। অজান্তেই ভয়ে দু কদম পিছিয়ে গেল। কিরণকে দেখে অর্ণব ওঠে এলো কিরণের দিকে। কিরণের দু হাতের বাহু যেন শরীরে সমস্ত শক্তি হাত দিয়ে চেপে ধরলো। চিৎকার করে বললো,

কেন এমন করো সবসময় কিরণ? কেন? সবসময় নিজের জেদকে কেন এতো প্রধান্য দাও? একটা দিন! শুধমাত্র এটা দিন আমার কথাটা শুনলে কি খুব ক্ষতি হতো তোমার? এতো বড় একটা কাজ করতে যাচ্ছো সেইটা পর্যন্ত বলার প্রয়োজন মনে করলে না? তোমার জীবনে আমার মূল্য কোথায় কিরণ?
অর্ণবের প্রতিটি চিল্লিয়ে ওঠা কথায় কিরণ থরথর করে কেঁপে ওঠছে। ভয়ে শ্বাসকষ্ট বাড়তে লাগলো। অর্ণব হাতের বাহুতে চাপটা বেশিই দিয়ে ফেলেছ। ব্যথায় রক্ত সঞ্চালন যেন বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি বেয়ে পড়লো। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

অ..অর্ণব! হাহাহাতটা ছাড়ুন । লাগছে আমার।
কিরণের চোখর পানি দেখ অর্ণবের হুস ফিরে। নিজের কৃতকর্ম বুঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ কিরণকে ছেড়ে দেয়। পিছু ফিরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। দু আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘষে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কিরণের দিকে তাকায়। কিরণ এখনো সেভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অশ্রুভরা চোখে তাকিয়ে আগে অর্ণবের দিকে। অর্ণব কিরণের সেই চোখে তাকাকেই বুকের ভেতর সুক্ষ ব্যথা অনুভব করলো। কি করেছে সে? কিরণকে আঘাত করে ফেলেছে যে।

অর্ণবের বুক কাঁপছে। হাতও কাঁপছে। হাত কাঁপছে বুঝতে পেরে হাত জোড়া পকেটে ঢুকিয়ে মুষ্টিমেয় করে। অর্ণবের মাঝে খারাপ লাগা ও ক্ষোভের এক মিশ্র অনুভুতি কাজ করছে। নিজেকে ধাতস্ত করে শান্ত হয়ে কিরণের দিকে তাকালো। ধীর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

কেন এমন করছে কিরণ? তুমি জানো তুমি আজকে কতো বড় ক্ষতি করে ফেলেছো?
কিরণ বিছানায় বসে মাথা নিচু করে ছিল। অপরাধবোধ তারমাঝেও কাজ করছে তবে তার থেকে বেশি কাজ করছে কৌতুহল। কি এমন হয়েছে যে অর্ণব এতোটা রেগে আছে। অর্ণবের এ প্রশ্ন পেয়ে বজ্রগতিতে অর্ণবের দিকে চাইলো। অবাক হয়ে উল্টো জিজ্ঞাসা করল,

মানে?
তোমাকে আমি বলেছিলাম পরীক্ষা দিয়ে সোজা বাসায় আসতে। তুমি আসো নি। চলে গেলে অজানা, অচেনা একটা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকতা করতে। সেটাও না জানিয়ে।
কিরণ এবার ওঠে দাঁড়ালো। দুরত্ব বজায় রেখে অর্ণবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
আমার স্বপ্ন, আমার ইচ্ছা পূরণের এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই নি। কেউই চাইবে না। এখানে আমার ভুলটা কোথায়? আর অজানা অচেনা কাকে বলছেন? রফিকউল্লাহ খান একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী। কে না চেনে ওনাকে?

তোমার ভুলটা কোথায়? তোমার ভুলটা আমাকে না জানানো। তোমার শুধুমাত্র না জানানোর ফলে আজ আমার তিলে তিলে করা দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ব্যর্থ হয়ে এলো। আর তোমার সো কোল্ড বিখ্যাত ব্যবসায়ী রফিকউল্লাহ কে জানো?
অর্ণব এগিয়ে গিয়ে টেবিলে রাখা নিজের ল্যপটপটা খুলে কিরণের সামনে রাখলো। কিরণ কৌতুহলী হয়ে পুরো ভিডিও দেখলো। একজন মধ্য বয়স্ক যুবকের স্বীকারোক্তি।

রফিকউল্লাহ খানের হয়ে মাদ*ক পাচা*রকারী। কিরণ বিষ্ময়ে চমকে উঠলো। বিকেলে তার সাথে করা অমায়িক ব্যবহারকারী সেই ব্যক্তি নাকি দুর্নীতিবাজ। অর্ণব একে একে দু তিনটে ফাইল এনে রাখলো কিরণের সামনে। কিরণ সেগুলো খুলে দেখে আরো এক দফা অবাক। তার করা ব্যবসায়ের প্রায় সত্তর শতাংশই দুই নম্বরই ব্যবসা। বাকি তিশ শতাংশ লোক দেখানো সৎ। যার ভিত্তিতেই সে আজ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিরণ উল্টিয়ে পাল্টিয়ে কাগজ গুলো দেখতে দেখতে অর্ণব বলে,

তার আরো একটা পরিচয় আছে। জানো কি?
কিরণ কাগজগুলো ছেড়ে অর্ণবের দিকে তাকালো। কিরণের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে অর্ণব বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। লোহার রেলিং দু হাত চেপে ধরে। উপরে তাকিয়ে দেখতে পেলো আকাশে চাঁদ নেই। অমাবশ্যার রাত! চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিরণ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে অর্ণবের দিকে। দীর্ঘশ্বাস কানে এলো। তারপরই শুনতে পেলো অর্ণবের কন্ঠ,

আনিলা আপুর খু*নি। শোয়ো*রের বাচ্চাটাকে আবারো শাস্তি দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে গেলাম।
কিরণের শ্বাস যেন রোধ হয়ে এলো। নিঃশ্বাস আটকে গেলো গলায়। অবিশ্বাস্যের চোখে অর্ণবের পিঠের দিকেই তাকিয়ে। মিনিট দুয়েক পর অর্ণবে ঘুরে কিরণের দিকে তাকালো। কিরণের অবিশ্বাস্য চোখ নজরে পড়লো। সেই চোখে চোখ রেখেই পুনরায় বললো,

প্রায় একটা মাস কাছে থেকেও তোমার মন থেকে আমার প্রতি বিদ্বেষটা কমাতে পারলাম না কিরণ তাই না! সবসময়ই #বিপরীতে_তুমি_আমি। দুজনে সমান্তরালে একদিকে চললেও অবস্থান বিপরীত বাহুতে। তোমার জীবনে আমি মূল্যহীন হয়ে আছি। যার জীবনে আমার মূল্য নেই সেই নারী আমার না হোক।
কিরণ হৃদকম্পন যেন থেমে গেল। আশপাশটা হঠাৎ শব্দবিহীন মনে হলো। বাতাসও যেন অনুপস্থিত। শুধু একটা বাক্যাংশই প্রতিধ্বনি আকারে ফিরে এলো কর্ণকুহরে ” সে নারী আমার না হোক “।

কিরণের গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। গলা যেন রেউ চেপে ধরেছে। কথা বলতেও ভুলে গেছে। কি থেকে কি হতে যাচ্ছে? কিরণ কোনো রকমে বলে,
কি..কি বলছেন এসব? আমার জীবনে আপনার মূল্য নেই? আমার মনে আপনার জন্য কোনো অনুভুতি নেই? আপনি এতোদিন পরও এসব কিভাবো বলছেন?
আমি বলছি না বলে ফেলেছি। শুরু থেকেই তোমাকে পাওয়ার লড়াইটা আমার এক তরফা ছিল কিরণ। তুমি নীরব ভূমিকা পালন করেছো শুধু। যাই হোক আমি আর কথা বাড়াতে চাই না।

এক তরফা ছিল? আমার তরফ থেকে কিছুই ছিলো না?
কি ছিল কিরণ? বিয়ে তুমি করবে না। কত কাহিনী করেছো ভুলে গিয়েছো? আমি নীরবে সেগুলো সামলে তোমায় আপন করতে চেয়েছিলাম। বিয়ের পর তোমার জেদ, তোমার দুরত্ব, তোমার অভিমান, ঘৃণা সব মেনে আজ প্রায় এক মাস। কিছুই পরিবর্তন হয় নি। তোমার সেই জেদ, অভিমানে আমি কোথায় কিরণ? কোথাও নেই।

অর্ণবে বারান্দা ধীর পায়ে ছেড়ে ঘরে আসলো। ধীরে ধীরে নিচের বালিশ, চাদর উঠিয়ে কাবার্টের দিকে এগিয়ে গেলো। একটা বড় লাকেজ বের করে নিজের জামা কাপড় বের করে। সেগুলো গুছাতে গুছাতে বলতে থাকে,
তাই তোমার কথাই থাক। আমার মিশনে যাওয়ার তারিখ এগিয়ে এসেছে। পাঁচদিন সময় আর মাত্র। দুদিন আগে এমনিতেই অফিসে যেতে হয়। কিছু ফরমালিটিস থাকে। আমি আজকে রাতেই চল যাবো। আর বাকি রইলো তোমার ইচ্ছা। জোর করে যখন আমিই বিয়ে করেছি সেহেতু মুক্তিটাও তোমাকে আমই দেবো।

কিরণ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে কেবল অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছু তার কাছে একটা দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। পরপর ঘটে যাওয়া এাটা খারাপ ছবি। অর্ণবের প্রতিটি কথা কেবল কানে বাড়ি খেয়ে ফিরে যাচ্ছে। কিছুই যেন তার বোধগম্য হচ্ছে না।

অর্ণব ব্যাগটায় কাপড় রেখে চেনটা আটকিয়ে নিলো। ব্যাগটা দাঁড় করিয়ে এক কোণায় রাখতে রাখতেই বললো,
আমার মিশনের সময়কাল ছয়মাস। চিন্তা করো না। মিশন থেকে ফিরে ডিভোর্স পেপারটা আমি বানিয়ে ফেলবো। এছাড়া বিয়ের ছয় মাসের আগে ডিভোর্স দেওয়া যায় না। তাই তুমিও তোমার ব্যাগ গুছিয়ে নাও। তোমাকে বাড়িতে নামিয়ে আমি অফিসে চলে যাবো।

কিরণ এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে। দর্শকের ন্যায় কেবল শুনে যাচ্ছে। অর্ণব কিরণের অবিচল অবস্থান দেখে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কিরণের চোখে কি গভীর ভাষা। অর্ণব চাইলেই হয়তো পড়তে পারতো কিন্তু আজ সে চেষ্টা আর করলো না। চোখের গভীর ভাষা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র তাকিয়ে বললো,
আমার বাড়িতে থেকে আমি চাই না বাড়ির সবাই তোমার মিথ্যা মায়ায় জড়িয়ে পড়ুক। মায়া খুবই বাজে জিনিস। মায়া কাটানোটা খুবই কঠিন। খুবই।

কিরণ এবার নড়েচড়ে ওঠলো। হাত নাড়াতে গিয়ে বুঝতে পারলো তার হাত ভার হয়ে আছে। একটু নাড়াতে গেলেই দারুণভাবে কাঁপছে। তবুও সেই কাঁপা কাঁপা হাত অর্ণবের হাতের দিকে বাড়ায়। শক্ত করে হাতটা ধরে বলে,
আপনি মজা করছেন তাই না?
অর্ণবের সোজাসাপটা জবাব,
ঠাট্টার সম্পর্ক তোমার আমার নয়।
কিরণের কন্ঠে আজ ব্যকুলতা,

আপনি বিশ্বাস করুণ আমি সেভাবে কিছু বোঝাতে চাই নি। আপনি ভুল বুঝছেন।
দুঃখিত কিরণ! আমি আর বিশ্বাস করতে পারছি না।
পারছেন না নাকি চাইছেন না?
যা ভেবে খুশি হও।

কিরণ চুপ হয়ে গেলো। চোখের পানি মুছে চলে গেলো ওয়াশরুমে। প্রায় আধঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখতে পেলো ঘর আগের মতো টিপটপ হয়ে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে অর্ণবকে কোথাও পেলো না। খুঁজবেও না আর। অর্ণব তাকে চাইছে না। কিরণ বেশ বুঝতে পারলো। তাই সেও পুতুলের মতো চুপচাপ তৈরী হয়ে নিল। বিছানায় বসতেই অর্ণব ঘরে এলো। কিরণের দিকে একবার তাকাতেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। সে যে দুর্বল হতে চায় না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কিরণের কোনো ব্যগ নেই। নিজের প্রয়োজনীয় আরো কিছু ব্যগে গুিয়ে নিতে নিতে শান্তভাবে কিরণকে জিজ্ঞাসা করলো,
ব্যাগ গোছালে না?

কিরণ অর্ণবের দিকে তাকালো। প্রাণহীন দৃষ্টি তার। প্রাণহীন কন্ঠে বললো,
এখান থেকে কিছুই নিতে চাই না। যা কিছু আছে তা কিছুই আমার নয়। না মানুষ, না জিনিস। আমার সাথে শুধু আমিই যাবো।

কথাটা বলে কিরণ অর্ণবের দিক তাকিয়ে রইলো। মন বলছে এই বুঝি অর্ণব এসে বলবে ‘ ধুর বোকা মেয়ে! কে বলেছে কিছুই তোমার না। এই যে মানুষটাকে দেখছো, সে তো আপাদমস্তক তোমারই। ‘
কিন্তু অর্ণবের মুখে সামান্য পরিবর্তনটুুকু দেখলো না। কঠিন হয়ে এলো মন আরো। নিচে নেমে এল কিরণ। সকলের সাথে দেখা করে নিলো। কাউকে এখনো সরাসরি জানায় নি ব্যপারটা। তবে বুঝতে পেরেছে গুরুতর কিছু অবশ্যই। নতুবা এই রাতেই দুজন দু মেরুর পানে ছুটবে কেন?

বাড়ি ছাড়ার সময় কিরণের বুক ফেটে কান্না বেড়োতে চাইলো। কিন্তু বরফের মতো জমে রইলো বুকেই।
প্রায় দেড় ঘন্টা পর কিরণ এসো পৌছালো নিজের বাড়িতে। প্রধান দরজাটা খুলে গাড়িটা ভেতরে ঢুকলো। সদর দরজার সামনের সিঁড়িটার সামনে গাড়িটা থামে। কিরণ নিথর দেহের মতো গাড়ি থেকে নেমে গেল। সিঁড়িতে ওঠে দরজার কাছে যেতেই গাড়ি চালু হওয়ার শব্দ শুনে চমকে পেছনে তাকালো। তারমানে অর্ণব নামলও না। এবার ছলছল করে ওঠলো কিরণের নয়নজোড়া। অর্ণবের গাড়ির পানে চেয়ে রইলো। ধীর স্বরে বললো,

ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবারো ঘটলো। ছেড়ে যাওয়ার ভূমিকাটা আবারো আপনার দাঁড়াই সম্পূর্ণ হলো। আমি সেদিনও নির্বাক ছিলাম, আজও নির্বাক হয়ে পড়ো রইলাম। ও প্রকৃতি! আমি কেন বার বার এই নিষ্ঠুর পুরুষকেই চাইলাম?

বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ২০

গল্পের প্রথম পরিচ্ছদের সমাপ্তি এখানেই। অনেক রহস্য রয়ে গিয়েছে। ইনশাআল্লাহ সবকিছু খুলাসা হবে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদটা দেওয়ার পরিকল্পনাটা খুবই দ্রুতই ছিল কিন্তু সামন আমার গুচ্ছের পরীক্ষা। এডমিশন পরীক্ষার্থী হওয়ার কারণে গল্পটা নিয়মিত দিতে পারি নি। এইটা এতোদিন বলি নি তার কারণ পরীক্ষা সামনে এ কথা বলা প্রযোজ্য ছিল না। তাই শেষের পর্বে বললাম। পরীক্ষা শেষে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই পরবর্তী পরিচ্ছেদ নিয়ে আসবো। আশা করি ততদিন প্রিয় পাঠক পাঠিকা সাথে থাকবেন। এখন যেমন সাথে ছিলেন তখনও সাথে থাকবেন। কেউ রেগে যাবেন না অনুগ্রহ করে। বরং অনেক অনেক দোয়া করে দিয়েন যেন আমি পরীক্ষায় সফল হয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারি। দোয়া রাখবেন এবং আমার তরফ থেকে অঢেল ভালোবাসা।