বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব ৩১

বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব ৩১
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা

গুটি গুটি পায়ে ধ্রুবর রুমে প্রবেশ করলো তারা।
ধ্রুব বিরক্ত গলায় বলে উঠলো, তুই এখানে কী করছিস ?
ধ্রুব ভাইয়া তুমি এমন কেনো বলো তো ? আমি তোমার এত খেয়াল রাখি তবু তুমি আমাকে দেখতেই পারো না। দেখলেই কেমন ধমকে উঠো।
ধ্রুব কপাল কুঁচকে বললো, দেখ তারা একদম জ্বালাবি না আমাকে। দেখছিস প্যাকিং করছি তবু বিরক্ত করছিস।
তারা ধ্রুবর হাত থেকে টিশার্ট কেড়ে নিয়ে বললো, আমাকে দাও আমি গুছিয়ে দিচ্ছি।
ধ্রুব কোমরে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ফ্রক পড়া বছর দশের তারার দিকে, তুই নিজের চুল বাঁধতে পারিস না আর তুই আমার ব্যাগ প্যাকিং করে দিবি ?
তারা দাঁত বের করে হেসে বললো, আমি নিজের কাজ নিজে করতে না পারলেও তোমার কাজ খুব ভালো করেই করতে পারি।

তারার হাসি দেখে ধ্রুব নিজেও মুচকি হাসলো। তাহিয়া চৌধুরী তারা, পাখি আর আহানের একমাত্র মেয়ে। একটা চার বছরের ছেলেও আছে তাদের, তার নাম প্রান্তিক চৌধুরী।
সেদিন তাজ আহানকে সাথে করে বাংলাদেশ নিয়েই এসেছে, তখন থেকে সামনের বাড়িটাতে আহান থাকে সবাইকে নিয়ে। পাখি এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছে। পাখি একদিন ছোট একটা এক্সিডেন্ট করে। তখন মাথায় আঘাত পেলে আহান তাকে চিকিৎসা করার সময় জানতে পারে পাখি জন্মগতভাবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নয়। জন্মের পর তার মাথায় আঘাত লেগেছিলো, হয়তো সেই রাতে কোনোভাবে লেগেছিলো। আহান নিজের সবটা দিয়ে পাখির চিকিৎসা করেছে, পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়, তবে অনেকটা সুস্থ হয়েছে পাখি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিতির প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন বলতো তার ছেলে হলে নাম রাখবে তাহিয়ান খান ধ্রুব আর মেয়ে হলে নাম রাখবে তাহিয়া খান তারা। আহান সেই নামটা রেখেছে নিজের মেয়ের। বয়স কেবল দশ বছর তারার কিন্তু কথায় মনে হয় পাকা বুড়ি একটা। তারা আর প্রান্তিক দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ। দেখতে একদম জীবন্ত পুতুলের মত দু’জনই। তারা সারাদিন ধ্রুবর পিছনে আঠার মতো লেগে থাকে তাই ধ্রুব ওকে ধমকের উপর রাখে।
দু’দিন পর ধ্রুবর আঠারো বছর পূরণ হবে, তাই সবাই সিলেট যাবে। ধ্রুবর আজই এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে আর এসেই ব্যাগ প্যাকিং শুরু করে দিয়েছে সে। ধ্রুব অনেক বেশি এক্সাইটেড এবারের জন্মদিন নিয়ে, একে তো পরীক্ষা শেষ, ইচ্ছে মতো মজা করবে আর এবার তার মায়ের রেখে যাওয়া গিফট পাবে সে। সেটা নিয়ে ধ্রুব খুব বেশি এক্সাইটেড।

তারা এলোমেলো করে ব্যাগ প্যাক করে দিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো, দেখছো আমি করতে পারি কিনা ?
ধ্রুব নিজের ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বললো, প্যাকিং ভালোই করেছিস কিন্তু আমার আইরন করা শার্টের একটার আইরনও আর আস্ত নেই। তুই নিজের ব্যাগ প্যাক করেছিস ? এবার কিন্তু আমরা অনেকদিন সিলেটে থাকবো।
তারা মাথা চুলকে বললো, আমার ব্যাগ তো গ্র্যানি প্যাক করে দিয়েছে মনে হয়।
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারার দিকে আর তারা দাঁত বের করে হাসলো।
ধ্রুব বললো, মাম্মাম আর প্রান্তিক কোথায় ?
আমি তো মা আর প্রান্তিকের সাথে লুকোচুরি খেলতে এখানে এসে লুকিয়েছি।
ধ্রুব নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়ে বললো, এখন আমার রুম থেকে যা তুই। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো।

তারা মাথা চুলকে বললো, দাদুমণি তো আমাকে পাঠিয়েছিলো তোমাকে খাবার খেতে ডাকার জন্য।
ধ্রুব থেমে দাঁড়িয়ে বিরক্ত গলায় বললো, যেটা করতে এসেছিলি সেটা না করে বাজে বকবক করলি এতক্ষণ। যা এখন গিয়ে দাদুমণিকে বল আমি বন্ধুদের সাথে বাইরে খেয়ে এসেছি। এখন ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো, আমাকে যেনো কেউ বিরক্ত না করে।
কথা শেষ করে ধ্রুব ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো। তারা সেদিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো।
ধ্রুব ওয়াশরুমের দরজা আটকে ভেতর থেকে চেঁচিয়ে বললো, বলেছিলাম না ভেংচি কাটলে আমি তোর ঠোঁট কেটে দিবো।
থতমত খেয়ে গেলো তারা আর মনে মনে ভাবলো, ধ্রুব ভাইয়ার মনে হয় পেছনেও দু’টো চোখ আছে। নাহলে দেখলো কীভাবে আমি ভেংচি কেটেছি ?

তারা চিন্তায় পড়ে গেলো ধ্রুব কীভাবে দেখলো ও ভেংচি কেটেছে। গাধা মেয়েটা বুঝতে পারেনি দরজা বন্ধ করার আগে ওয়াশরুমের আয়নায় তারাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। প্রশ্নটা মাথায় নিয়ে তারা বের হয়ে গেলো ধ্রুব রুম থেকে। ধ্রুব ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে তারার কথা ভেবে মুচকি হাসলো। মেয়েটাকে ধমকের উপর রাখলেও তার বোকা বোকা কথা আর এলোমেলো কাজ ধ্রুবর খুব ভালো লাগে। তার পেছন পেছন ঘুরে বলে বকা দিলেও, ধ্রুবও মনে মনে চায় তারা তার সাথেই থাকুক।
লম্বা চওড়া দেহ, সদ্য গোঁফ দাঁড়ির রেখা দেখা দিয়েছে চেহারায়, মুখের কিশোর ছাপটা কাটতে শুরু করেছে ধ্রুবর। এই বয়সটা খুব আবেগের বয়স, এই বয়সে কেবল নিজের সিদ্ধান্ত নিজে গ্রহণের প্রবণতা তৈরি হয়। সেই সময়ে ধ্রুবর জন্য হয়তো কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হবে না। কিন্তু তার জন্য তো তেমন কিছুই অপেক্ষা করছে।

চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে তাজ। হঠাৎ মনে হলো কপালে শীতল হাতের স্পর্শ পেলো। মাথার দু একটা পাকা চুল জানান দিচ্ছে বয়স বাড়ছে। দেখতে দেখতে বেলা যে কম হলো না। ইকবাল খান গত হয়েছেন তাও দুই বছর হতে চললো। সময় কী কারো জন্য অপেক্ষা করে ?
তাজ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো হাসোজ্জল এক রমণীর মুখ। আজও গায়ে জড়ানো ধবধবে সাদা শাড়ি। ঠোঁটের কোণে হাসিটা তাজের বুকে কম্পন ধরালো।
রমণী মুচকি হেসে বললো, মাথা ধরেছে ?
তাজ রমণীর হাতটা নিজের কপালে চেপে ধরলো, তুমি হাত বুলিয়ে দাও তাহলে ভালো লাগবে।
তাজের কথার অবাধ্য হলো না সেই রমণী। আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তাজের। তাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রমণীর দিকে।
সেটা খেয়াল করে রমণী বললো, কী দেখেন ?

তাজ মুচকি হেসে বললো, দেখছি তোমার মুখে বয়সের ছাপ পড়ে না কেনো ? তোমার চুলে পাক ধরে না কেনো ?
খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রমণী, আমার যে বয়সই বাড়ে না জনাব। আমার বয়স তো একটা সংখ্যাতেই আঁটকে আছে। তাহলে বয়সের ছাপ কীভাবে পড়বে ?
তাজ মুগ্ধ চোখে দেখছে সে হাসি, তোমার মুসকান নামটা সার্থক।
মুসকান মুচকি হেসে তাজের কপালে নিজের শীতল ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো তাজ।
May I come in sir ?
সবুজের গলা শুনে চোখ মেলে তাকালো তাজ। আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজলো মুসকানকে। কই কেউ তো নেই এখানে।
তাজ মুচকি হেসে বললো, আবার পালিয়েছে।

সবুজকে আসার অনুমতি দিয়ে কাজে মন দিলো তাজ। মুসকানের বিচরণ তার একাকিত্বে। তাজ জানে না মুসকান তার ভ্রম, হ্যালুসিনেশন নাকি অন্যকিছু আর জানতেও চায় না। সে ভালো আছে এভাবেই। যখনই সে একা থাকে দেখতে পায় মুসকানকে, তার গন্ধ, তার স্পর্শ অনুভব করতে পারে। নিজের মনের কথা শেয়ার করে তার সাথে। কত দুষ্টুমি, মান অভিমান চলে তাদের। তবে সেটা একান্ত তাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কাউকে বললে হয়তো তাজকে পাগল বলবে, কী দরকার বলার ? তাজ তো বেশ আছে নিজের স্ত্রী সন্তান নিয়ে। ধ্রুবকে কোলে নিয়ে যখন ঘুম পাড়িয়ে দিতো, আলতো করে কাঁধে মাথা রাখতো মুসকান। এভাবেই কাটছে তাজের দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর। তবে কারো উপস্থিতি অনুভব করলেই কোথায় পালিয়ে যায় মুসকান। আগে তাজের কষ্ট হতো, তবে এখন মুসকান এভাবে পালিয়ে গেলে সে মুচকি হাসে।

স্যার সিলেট যাবেন কখন ?
তাজ ফাইলে মুখ গুঁজেই বললো, আগামীকাল সকালের ট্রেনে। ধ্রুব এবার ট্রেনে যাবে বায়না ধরেছে।
সবুজ মুচকি হাসলো তাজের কথায় আর পুনরায় বললো, বাসায় যাবেন কখন ?
বিকেলেই যেতে হবে। ধ্রুবর সাথে আবার ক্রিকেট খেলতে হবে গিয়ে।
সবুজ ঘড়ি দেখে বললো, স্যার চারটার বেশি তো বাজে আর কখন যাবেন ?
সবুজের কথা শুনে তাজ নিজের ঘড়ি দেখলো, ওহ্ শিট লেইট হয়ে গেলো মনে হয়। ছেলেটা গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে। বুঝলে সবুজ, আমি বুঝি না আমার ছেলেটা এমন মেয়েদের মতো গাল ফুলানোর অভ্যাস কোথায় পেলো ?

সবুজ হেসে বললো, আসলে স্যার যে মেয়েরা বাবার বেশি আদর পায় তাদের এমন গাল ফুলানোর অভ্যাস হয়। ছোট স্যার তো আপনার অতিরিক্ত ভালোবাসা পায় তাই এমন গাল ফুলায়।
সবুজের কথা শুনে তাজ মুচকি হাসলো শুধু, কিছু বললো না। তাজ সত্যি অতিরিক্ত আদরে বড় করেছে ধ্রুবকে। কোটি টাকা লস দিয়েও ছেলের অনেক ইচ্ছে পূরণ করেছে। এমন অনেক দিন গেছে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছেড়ে ছেলের এক ফোনে ছুটে গেছে তার স্কুলে। অনেকবার ধ্রুব মিথ্যা বলে তাজকে স্কুলে নিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকা সত্ত্বেও। শুধু বন্ধুদের দেখাতে তার বাবা তাকে কতটা ভালোবাসে। তবু তাজ একটা ধমক পর্যন্ত দেয়নি ধ্রুবকে, সেটা এখন পর্যন্ত কোনদিন দেয়নি। ধ্রুব কোনো ভুল করলে তাজ কৌশলে সেটা বুঝায়, রেগে নয়। তাই তো সবার এতো ভালোবাসা পেয়েও বখে যায়নি ছেলেটা।

ধ্রুবর যখন ষোল বছর তখন একদিন সিগারেট মুখে দিয়েছিল বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। সেটা তাজের কানে আসতে দু সেকেন্ড সময় লাগেনি, কারণ ধ্রুবর আশেপাশে ছায়ার মতো বেশ কয়েকজন গার্ড থাকে সবসময়। তবে সেই ব্যাপারে ধ্রুব কিছু জানে না। সিগারেট নিয়ে তাজ ধ্রুবকে কিছুই বলেনি।
তবে আহান একদিন ধ্রুবকে তার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যায়। ধ্রুবর মনটা তখন খুব ভালো, আহান তাকে বলে কতটা কষ্ট করে তিতির তাকে জন্ম দিয়েছে। নিজের জীবনের বিনিময়ে ধ্রুবকে বাঁচিয়েছে। এই জীবনটা নষ্ট করা মানে তিতিরকে কষ্ট দেওয়া। আহান এমনভাবে সব বুঝিয়ে বলেছে ধ্রুবকে, সে কেঁদে কেটে ওয়াদা করেছে এই জীবনে সে কখনো খারাপ পথে পা রাখবে না। এভাবেই তাজ আর আহান আগলে রেখেছে ধ্রুবকে।
তাজ দ্রুত বাসায় চলে গিয়ে সোজা ধ্রুবর রুমে গেলো। গিয়ে দেখে ধ্রুব ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত ছেলের কপালে চুমু খেলো তাজ।

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, জানি না তোমার মায়ের ডায়েরি আমাদের সম্পর্কটার মোড় কোনদিকে নিবে। তবে তোমার সিদ্ধান্ত যাই হোক আমি মেনে নিবো।
ধ্রুব ঘুমের ঘোরে ধ্রুবর কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা রেখে ঘুম জড়ানো গলায় বললো, বাবা তুমি আজও লেইট করেছো।
তাজ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, লেইট কোথায় করলাম তুমি তো এখনো ঘুমাচ্ছো।
ধ্রুব পিটপিট করে তাকালো তাজের দিকে, তুমি আসছিলে না দেখেই তো আমি ঘুমচ্ছিলাম।
তাজ ধ্রুবর চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো, ঠিক আছে আমি সরি। তুমি এখন ফ্রেশ হয়ে ব্যাট বল নিয়ে গার্ডেনে যাও, আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ধ্রুব উঠে ঢুলতে ঢুলতে চলে গেলো ওয়াশরুমে আর তাজও উঠে নিজের রুমে গেলো। তাজের বিকেলটা সবসময় তার ছেলের নামে। ফ্রেশ হয়েই দু’জন গার্ডেনে চলে গেলো খেলতে। ধ্রুবর খেলার জন্য বাড়ির একপাশে বাগানকে মাঠে পরিণত করেছে তাজ। বিকেল হলেই বাড়ির সব গার্ডসহ খেলাধুলা করে বাবা ছেলে। মাঝে মাঝেই তাদের সাথে যুক্ত হয় আহান।

জ্ঞান হওয়ার পর থেকে রাহি যাকে নিজের বাবা বলে জেনে এসেছে সে রাহির নিজের বাবা নয়। এই সত্যিটা জানার পর রাহির কী রিয়াকশন দেওয়া উচিত সে বুঝতে পারছে না। কতই বা বয়স তার, এই তো মাস কয়েক আগে পনেরো বছরে পা রেখেছে। ছোট্ট মনে এতবড় ধাক্কা সামলাতে পারছে না। আবার সামনে শুয়ে থাকা মুমূর্ষু রোগীর কথা অবিশ্বাস করতেও পারছে না। মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কেউ নিশ্চয়ই মিথ্যে কথা বলবে না। রাহির সামনে হসপিটালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে রকি নামের লোকটা। যার ভাষ্যমতে সেই রাহিকে কিডন্যাপ করে রায়হানের হাতে তুলে দিয়েছিলো।
লম্বা শ্বাস টেনে রকি বললো, আমি মিথ্যা বলছি না রাহি। তোমার নাম রাহি চৌধুরী নয়, তোমার আসল নাম শায়িনী আহমেদ।

রকি প্রথম থেকে সব খোলে বললো শায়িনীকে। শায়িনীর চোখ টলটল করছে নোনাজলে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে তার চোখে কখনো পানি আসতে দেয়নি বাবা নামক লোকটা আর আজ তার জন্যই শায়িনী কাঁদছে।
সব বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো রকি, জীবনে অনেক পাপ করেছি আমি। তার শাস্তিও পেয়েছি, পরিবার হারিয়ে এখন নিজের জীবনটাও শেষ হতে চলেছে। তাই মৃত্যুর আগে তোমাকে সত্যিটা জানালাম, যদি পাপের বোঝাটা একটু কমে। তবে একটা কথা সত্যি বলছি রাহি মা। রায়হান চৌধুরী জীবনে অনেক পাপ করেছে কিন্তু তোমাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে। হয়তো নিজের সন্তানকেও এতোটা ভালোবাসতো না।
শায়িনী আর বসে থাকতে পারলো না। টলমল পায়ে বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। পনেরো বছরের জীবনে অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে আজ সে। বুঝে উঠতে পারছে না তার এখন কী করা উচিত।

বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব ৩০

(শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু করতে পারলাম না। এতদূর এসে এখন হুট করে শেষ করলে পুরো গল্পটা নষ্ট হবে। তাই যতটা পারি সুন্দর করে শেষ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এতে আরো দু-চার পর্ব হতে পারে। হ্যাপি রিডিং, আল্লাহ হাফেজ।)

বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব ৩২