বুকের বা পাশে পর্ব ১১

বুকের বা পাশে পর্ব ১১
written Nurzahan akter Allo

প্রায় ৬ মাস পর _______
প্রত্যয়ের হসপিটালের কাজ শেষ। ডাক্তারদের নিয়োগ করা থেকে শুরু করে সব কাজ শেষ। প্রত্যয় দেশে ফিরবে খুব তারাতাড়ি ওখানকার সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে পৃথা প্রত্যয়কে দুইবার প্রোপোজও করেছে, কিন্তু প্রত্যয় পৃথাকে বুঝিয়েছে যে, ওদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই বেস্ট। সাদ আর পৃথা প্রত্যয়ের ফেরার এক সপ্তাহ আগেই ওরা বাংলাদেশে ফিরে গেল। প্রত্যয় ওর সিরিয়াস একটা রুগীর জন্য ওর ফ্লাইটের টিকিটটা ক্যানসেল করছে। কারণ দেশে ফেরার খুশিতে থাকলেও প্রত্যয় একজন রুগীকে অবঙ্গা করে চলে যেতে পারেনি! আর করবেই বা কেন? এটাই তো ওর কাজ। শরীরের প্রাণ থাকা অবধি, রুগীদের সেবা প্রদান করেই যাবে, এটাই প্রত্যয়ের নিজের কাছে নিজের ওয়াদা।
প্রত্যয়ের আম্মু আর তুয়ার আম্মু শপিংমলে গিয়েছে।বিকেলের দিকে তুয়া বাসায় বসে বসে টিভি দেখছিলো।এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। তুয়া উঠে দরজা খুলে দেখে পাশের বাসার বাচাল আন্টির আগমন। তুয়া ভদ্রতার সুরে কিছু বলার আগেই উনি গটগট করে বাসার ভেতর দুম করে ঢুকে পড়লো। তুয়া দরজা আটকে সোফাতে বসতেই উনি বললো,

–“তুয়া দিন দিন এতো গ্লো করছো কেন? ফেসে আলাদা কিছু দিচ্ছো নাকি? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
–“জি না আন্টি।” (জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)
(হু গোবর আর গন্ধযুক্ত পঁচা কাদা দেই। আপনার কি তাতে? উফফ! এখন তো শুরু করবে কাহিনী। ও আল্লাহ! এ কোন বিপদে ফেললে আমাকে! এই বজ্জাত মহিলা আসার আর সময় পেলো না। আম্মু! আম্মু রে তারাতাড়ি ফিরে এসো রে! তা না হলে এই মহিলা আমার কানের পোকা বের করে দিবে। তুয়া মনে মনে)
–“ওহ! আমার মেয়েও কিছু দেয় না। কিন্তু ও ন্যাচারাল বিউটি। আমার মেয়েটার ফেসও দিন দিন অনেক গ্লো করছে। এখনই তো এতো এতো বিয়ের প্রস্তাব আসে। আমার মেয়ে রুপে গুনে সব দিক দিয়ে মাশাল্লাহ। তবে আমার মেয়েকে আমি বাসার কোন কাজ করতে দেই না। যদি ওর হাত পায়ের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় এই ভেবে।”
–“ওহহ!”
–“আমার মেয়েটা খুব লক্ষী।‌ আমার সব কথা শুনে।পড়াশোনাতেও অনেক ভালো। ওর টিচাররা ফোন দিয়ে কত গুনগান করে। আমার তখন কি যে ভালো লাগে বলে বোঝাতে পারবো না।”
–“ওহহ!”
–“তা তোমার আম্মু কই?”
–“আম্মু বাসায় নেই। আচ্ছা আন্টি আপনি বসুন। আমি কোচিং এ যাবো তো রেডি হতে হবে।”
–“এক্ষুনি যাবে?”
–“জি! যেতে চাইছিলাম না, কিন্তু একটা প্যারা জুটে গেল তাই যেতেই হবে।” (রুমের দিকে যেতে যেতে)
–“ওহ আচ্ছা!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারপর তুয়া ঝটপট রেডি হয়ে এলো। উনার এখনো যাওয়ার নামই নেই। এখনো বসে আছে ব্যাঙের মত। আর কানের কাছে বকবক করেই যাচ্ছে। তুয়াও পারছে না জোর দিয়ে কিছু বলতে। এমন ছ্যাচড়া মহিলা তুয়া জীবনেও দেখেনি। তুয়া আর উপায় না পেয়ে, নিজেই বের হয়ে দরজার কাছে দাঁড়ালো। তারপর উনি হেলেদুলে বের হলো আর তুয়া তারাতাড়ি দরজা লক করে দিলো। উনি কিছু বলার আগেই তুয়া দ্রুত পায়ে হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো আর লিফ্টের ভেতর ঢুকে বড় সরো একটা দম ছাড়লো! যেন কেবলই বাঘের খাঁচা থেকে বের হলো বেচারী।
প্রিয়মের আজকে গানের প্রোগ্রাম ছিলো। প্রিয়ম গান গেয়ে যখন ওখান থেকে বের হয়ে আসবে, তখন হুট করে কোথায় থেকে একটা মেয়ে এসে,
“আই লাভ ইউ ” বলে একগুচ্ছ গোলাপ প্রিয়মের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। প্রিয়ম অবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকলো। আর প্রিয়মের পাশে থাকা ওর বন্ধুরা হো হো করে হেসে দিলো। প্রিয়ম ওদের দিকে বিরক্ত হয়ে তাকালো। তারপর প্রিয়মের বন্ধু গুলো কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবারও হো হো করে হেসে দিলো। প্রিয়মও এবার ওদের হাসি দেখে, নিজেও হেসে দিলো। তারপর বন্ধুরা মিলে সবাই প্রিয়মদের একটা ফ্ল্যাটে গিয়ে আড্ডায় মেতে উঠলো। আড্ডার সাথে সবাই নিজেদের ফোনে পাবজি খেলায় মত্ত হলো। সব বন্ধুদের মাঝে একজন বন্ধুর ভালো ফোন ছিলো না। তার বাবা এতো উচ্চ বিত্তের না। কলেজে ভালো ছেলে আর ভালো ছাত্র হওয়ার কারণে প্রিয়মের বন্ধু হয়ে উঠছে। তবে প্রিয়ম কখনো তাকে ছোট করে দেখেনি।

সব বন্ধু গুলো যখন দামী দামী ফোনে পাবজি খেলায় বিজি তখন রিমন নামের ছেলেটি চুপচাপ বসে আছে।কেউ কোন কথা বললে, সেও কথার তালে তালে দুই একটা কথার উত্তর দিচ্ছে। আর খেলার মধ্যে কথা বললে খেলার প্রতি মনোযোগ নষ্ট হয়, তাই কেউ খুব একটা কথা বলছে না। প্রিয়ম কফি করে আনলো, আর ওর ফোনে ওয়াইফাই কানেক্ট করে গেম অন করলো।প্রিয়ম কফির মগে এক চুমুক দিচ্ছে, আর একবার আড়চোখে রিমনের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর প্রিয়ম হুট করে উঠে দাঁড়ায়! আর খেলার মাঝখানে তাড়াহুড়া করে ওর ফোনটা আর ফ্লাটের চাবিটা রিমনকে দিয়ে বললো,
–“ওহ হো আমার তো একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ছিলো। আমি ভুলেই গেছি!” (উঠে দাঁড়িয়ে)
–“কই যাবি?” (রিমন)
–“আচ্ছা তোরা আড্ডা দে। আমি গেলাম। রিমন, যাওয়ার সময় ফ্ল্যাটের ডোর লক করিস। আমি পরে চাবি নিয়ে নিবো।” (প্রিয়ম)
প্রিয়ম যেতে যেতে রিমনকে গেমের বাকিটা শেষ করতে বলল। রিমন কিছু বলার আগেই প্রিয়ম ওর কাজের বাহানা দেখিয়ে চলে গেলো। আর রিমন প্রিয়মের ফোনটা নিয়ে খেলা শুরু করলো। কেউ কিছু না বুঝলেও রিমন ঠিকই প্রিয়মের চালাকি বুঝে। এটা নতুন কিছু না; প্রিয়ম সব সময়ই এমন করে। কত অজুহাত বাহানা দেখিয়ে রিমনকে সাহায্যে করে ।তবে কখনো ধরা দেয় না সহজে কারো কাছে! আর রিমনও প্রিয়মকে খুব ভালবাসে, একদম ভাইয়ের মত।

কয়েকদিন হলো প্রত্যয়ের চাচি-চাচা এসেছে প্রত্যয়দের বাসায়। আজকাল উনারা একটু বেশিই আসে; বিশেষ করে প্রত্যয়ের দেশে ফেরার কথা শুনে। তাদের একমাত্র মেয়ে নাতাশা সাথে এসেছে। উনারা যখন শুনলো প্রত্যয় একটা কাজে আটকে গেছে তাই ফিরতে পারছেনা, কয়েকটা দিন দেরি হবে; তখন উনারা আবার আসবে বলে উনাদের বাসার পথে গমন করেছে।
প্রত্যয় আজকে একটা রুগীর হার্ট সার্জারী করবে। রুগী বাসায় লোকদের শান্তনা দিয়ে ওটিতে ঢুকতে যাবে, ঠিক তখনই একটা মেয়ে এসে প্রত্যয়ের পায়ের কাছে বসে পড়ে। প্রত্যয় একপ্রকার লাফিয়ে উঠে উনার এমন কাজে। প্রত্যয়ও সাথে সাথে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে আর মেয়েটিকে বলে,
–“আপনি প্লিজ শান্ত হোন! এভাবে কান্না করবেন না।”
–“প্লিজ ডাঃ আপনি আমার হাজবেন্ডকে সুস্থ করে তুলুন। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা। আমি একেবারেই নিঃসঙ্গ হয়ে যাবো, আমার হাজবেন্ডের কিছু হলে! আমি এক মুহূর্তও বাঁচবো না। আপনার যত টাকা লাগে আমি দিবো তবুও আমার হাজবেন্ডকে সুস্থ করে তুলুন। প্লিজ ডাক্তার! প্লিজ!” (কেঁদে কেঁদে)
–“আপনি নিজেকে শান্ত করুন। আর সুস্থ তো করবে আমাদের সৃষ্টিকর্তা! আপনি যে ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকুন, আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন।যাতে আপনার হাজবেন্ডের অপারেশনটা সাকসেসফুল হয়। কারণ সৃষ্টিকর্তাই পারে উনাকে সুস্থতা দান করতে, সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার হাতে আর আমরা হলাম একটা মাধ্যম। ম্যাম আপনি নিজেকে শান্ত করুন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আপনি কান্না-কাটি না করে রুগীকে সাহস দেন। যাতে উনি নিজের মনের জোর বাড়াতে পারে।”(প্রত্যয়)

–“হুম।” (চোখ মুছে)
তারপর প্রত্যয় বুঝিয়ে শুনিয়ে উনাকে শান্ত করলো। আর রুগীকে সবার সাথে একবার দেখা করিয়ে দিলো।এবার আর কেউ কান্না করেনি বরং উৎসাহ দিয়েছে।প্রত্যয় ওটিতে ঢুকে মুচকি হেসে রুগী সাথে দুই একটা কথা বলছে, রুগীকে ইজি ফিল করানোর জন্য। কথা বলার মাঝেই নার্সদের ইশারায় সব কিছু রেডি করে নিতে বললো। প্রত্যয় কথার মাঝেই রুগীকে ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে। কয়েক সেকেন্ডেই রুগী অঙ্গান হয়ে গিয়েছে। প্রত্যয় অপারেশনের জন্য ড্রেস পড়ে নিলো, তারপর বিসমিল্লাহ্ বলে ওর কাজ শুরু করলো।অপারেশন থিয়েটার এ কোনো কথা নেই, চুপচাপ নিরবতা চলছে, মাঝে মাঝে কথা হচ্ছে ইশারায়। আর খুব প্রয়োজনে কয়েকটা শব্দ উচ্চারণ করছে।
তুয়া কোচিংয়ে যাওয়া জন্য রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দুরভাগ্যবর্শত এটা রিকশারও সন্ধান মিলছে না। তুয়া কয়েক পা এগিয়ে গেলো সামনের দিকে, তখন প্রিয়ম এসে ওর সামনে স্বজোরে ব্রেক কষে!তুয়া ভয় পেয়ে দুই পা পিছিয়ে যায়। তুয়াকে ভয় পেতে দেখে প্রিয়ম হো হো করে হেসে দেয়। তুয়া ভ্রু কুচকে প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ম তুয়াকে ইশারায় বাইকে বসতে বললো। তুয়াও সুবোধ বালিকার মতো বিনাবাক্যে বাইকে উঠে বসলো। প্রিয়ম মুচকি হেসে বললো,

–“কি গো টুপা, রাণী চুপ কেন?”
–“চুপ থাকবো না তো বাঁচালদের মতো বকবক করে অন্য কারোর মাথা খাবো নাকি?”
–“ইয়ে মানে, আজকে তাওয়া এতো তেতে আছে কেন গো সুন্দরী ললনা?”
–“প্রিয়ম একদম ফাজলামি করবে না।” (বাজখাই গলায়)
–“ওকে ওকে! কুল ম্যাম।”
–“হুম।”
প্রিয়ম গুনগুন করে গান গাইতে থাকলো। আর তুয়া প্রিয়মের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে স্বচ্ছ বাতাস, ভালবাসার মানুষটার সঙ্গ আর সাথে তার গাওয়া গান উপভোগ করছে। আর প্রিয়ম….
” তুমি চাঁদের জোছনা নও! ফুলের উপমা নও
নও কোন পাহাড়ি ঝর্ণা,
আয়না আ আ তুমি হৃদয়ের আয়না!
তুমি সাগর নীলিমা নও, তুমি মেঘের বরষা নও
তুমি শুধু আমারই জানটা,
আয়না আ আ তুমি হৃদয়ের আয়না!”

–“এই তুমি ভুল গান গাইলে কেন?” (তুয়া)
–“কই ভুল গাইলাম?” (প্রিয়ম মুচকি হেসে)
–” ‘আমারই গয়না’ এখানে গয়না না বলে জানটা বললে কেন?”
–“আমার তো গয়না নাই। আমি তো গয়না পড়ি না আর এই কথা তো মেয়েরা বলবে, আমি ছেলে হয়ে গয়না বলবো কেন শুনি?” (প্রিয়ম হো হো করে হেসে)
–“ওহ তাই তো!” (মুচকি হেসে)
প্রিয়ম আর তুয়াকে কোচিংয়ে না নিয়ে “জান্নাতের বাগান” এ নিয়ে আসলো। এই জান্নাতের বাগানটা হলো একটা বৃদ্ধাশ্রম। এটা প্রিয়মের নিজের উদ্যোগে তৈরী করা জান্নাতের বাগান! যেখানে মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত, সেখানে এতগুলো জান্নাত আছে একখানে একসাথে। তাই এখানকার নামকরণ করা হয় “জান্নাতের বাগান” নামে। যদিও প্রিয়ম আর তুয়াকে এখানে এসে একেক টা চরিত্র পালন করতে হয়। ওদের সাজতে হয় এসব মায়েদের কলিজার টুকরা। কারণ যারা খুব বৃদ্ধ হয়েছে, চোখে দেখতে পান না, কানেও কম শুনে কিন্তু ছেলে মেয়েকে একটা বার দেখার জন্য আত্মনার্দ করে, উনাদের হতভাগা ছেলেগুলো বৃদ্ধাশ্রম এ রেখে সেই যে মুক্ত হয়েছে, আর খোঁজ নেওয়ার সময় হয়নি ওদের। এই বৃদ্ধ মায়ের চোখের পানি আর হাজারো আহাজারিতে প্রিয়ম আর তুয়াকে সাজতে হয় তাদের সন্তান।
এখানে এসে প্রিয়ম একজন বৃদ্ধার পাশে এসে বসেছে।বৃদ্ধকে বলা হয়েছিলো উনার ছেলে আসবে। উনার বার বার আহাজারির কারণে এটা বলা হয়েছিলো শান্তনাস্বরুপ। আর বৃদ্ধা এটা শুনে চাতক পাখির মত অপেক্ষার প্রহর গুনছিলো। প্রিয়ম ওই বৃদ্ধার শিয়রে বসলো,

–“মা! মা কেমন আছো?”
–“কে? কে? আমার সাইফুল? আমার আব্বাজান আইছোস? মানিক আমার! আমার কাছে আয় বাপজান। আয় আমার কাছে আয়। (হাতড়ে খুঁজে )
–“হ্যা মা আমি এসেছি! কেমন আছো তুমি?”
–“ভালো নেই বাপজান তোকে ছাড়া! তুই কেমন আছিস বাপ? শরীর ঠিক আছে তো?‌ কত শুকিয়ে গেছিস, তুই খাওয়া দাওয়া করিস না?” (চোখে না দেখেও প্রিয়মের মুখে হাত বুলিয়ে)
–“আমি ভাল আছি। তুমি শুধু কাঁদছো কেন মা? আমি তো তোমাকে মাঝে মাঝেই দেখে যাই।”
–“বাপজান আমাকে বাড়ি নিয়া চল না বাপজান।কতদিন বাড়ি যায়নি! তোদের ছেড়ে আমার এখানে ভালো লাগে না রে বাপ। আমার নাতনি টুম্পা কেমন আছে? ওর জন্যও বুকটা পুড়ে রে বাপজান। আমারে তোর সাথে নিয়া চল বাপ। আমি তোর সাথে থাকতে চাই বাপ!” (বৃদ্ধা কেঁদে কেঁদে)
–“আমি তো দেশের বাইরেই বেশি থাকি এখন কাজের জন্য। মা তুমি চিন্তা করো না, খুব তারাতাড়ি তোমাকে নিয়ে যাবো মা৷ আর সবাই ভালো আছে। মা তুমি কি কিছু খাবে? মা তোমার কি খেতে মন চাচ্ছে বলো তো?” (প্রিয়ম উনার চোখ মুছে)
–“বাপজান আমার খুব দই খাইতে মনডা চাই। তুই আমারে একটু দই খাওয়াবি বাপজান। আমি তোর হাতে একটু দই খাবো। আমি আমার মানিক আমার সোনার টুকরা, আমার কলিজার হাতে একটু দই খাবো। কতদিন আমি তোকে নিজ হাতে কিছু খাইয়ে দেয়নি রে বাপ।খাবি, খাবি বাপ আমার হাতে?”

বুকের বা পাশে পর্ব ১০

–“হু হুম! মা আজকে আমি তোমার হাতে খাবো।”(ধরা গলায় প্রিয়ম)
–“আচ্ছা মা তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি তোমার জন্য দই নিয়ে আসি।”
–“না থাক তুই দই আনার নাম করে আবার আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবি তাই না রে আব্বা? আমি দই খাবো না! তুই আমার কাছে একটু বস। আমি তোকে একটু দেখি।‌ কতদিন তোর চাঁদমুখ খানা দেখি নি। আমি সব সময় দোয়া করি যেন তুই খুব ভালো থাকিস বাপজান।” (প্রিয়মের মুখে কপালে আদর দিয়ে)
প্রিয়ম ওর চোখের পানি আটকাতে পারে না এসব মায়ের আত্মনার্দ শুনলে। এতক্ষণ তুয়া দরজায় দাড়িয়ে সব শুনছিলো, ছলছল চোখে ওদের তাকিয়ে। একটা মা ঠিক কতটা ব্যাকুল হয়ে থাকলে এমন আত্মনার্দ করে তার সন্তানকে কাছে পাওয়া জন্য! এটা তুয়া আর প্রিয়মের জানা নেই। একটা সন্তান যে একটা মায়ের জন্য কতটা মুল্যবান সেটা এখানে এসব মায়ের চোখের পানি দেখলেই বোঝা যায়।
তারপর প্রিয়ম নিজে গিয়ে দই এনে বৃদ্ধাকে খাইয়ে দিলো আর বৃদ্ধাও উনার কাঁপা হাতে প্রিয়মকে খাইয়ে দিলো। বৃদ্ধাও নিজের ছেলে মনে করে কত কত মনের কথা জানালো প্রিয়মকে। প্রিয়মের এক মা হয়তো ওকে সময় দেয় না। কিন্তু প্রিয়ম এভাবে অনেক মায়ের ভালবাসা আর দোয়া অর্জন করে নেয়। এভাবে যদি ক্ষণিকের কষ্ট ভুলে একটা মায়ের ছেলে সেজে একজন মাকে এভাবে খুশি করতে পারলে ক্ষতি কি?

ছেলে আমার ভালো থাকুক! থাকুক অতি সুখে
তোমার জন্য করবো দোয়া!
খোকা তুমি থাকো দুধে ভাতে!
নেই রে কষ্ট, নেই রে অভিযোগ
নেই রে অশ্রুুর দাম
কাকে বলবো? কে বুঝবে? এই মায়ের আত্মনার্দ।
তোমার সুখের আশায় আমি সব দিয়েছি পাড়ি!
তুই যে আমার মানিক রতন তুই যে আমার হাসি!
এত আদর এত ভালবাসা দিয়ে করলাম তোমায় বড়
এখন আমি তোমার কাছে অবহেলার পাত্র
এতো কিছু করেও আমি তুচ্ছ তোমার কাছে
এজন্য পায়নি যে ঠায় তোমার মস্ত ঘরের কোণে!
এতকিছুর পরেও খোকা, বলবো আমি সুখী।
কত ভালবেসে করেছো খোকা আমায় এই
বৃদ্ধাশ্রমের সঙ্গী।

বুকের বা পাশে পর্ব ১২