বুকের বা পাশে পর্ব ১২

বুকের বা পাশে পর্ব ১২
written Nurzahan akter Allo

তুরাগ অফিস থেকে ফেরার সময় রাস্তায় তিন্নিকে দাড়িয়ে থাকলো দেখলো। তুরাগ গাড়ি থেকে নেমে তিন্নির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু তিন্নির কোনো দিকে খেয়াল নেই, সে একমনে ভেলপুরি খেতে ব্যস্ত। তুরাগ তিন্নিকে বললো,
–“সারাজীবনের খাওয়া কি একেবারেই খাচ্ছিস নাকি রে তিন্নি?” (তুরাগ)
–“হু!”
তিন্নি হু বলে ভ্রু কুচকে পাশে তাকাতেই দেখে তুরাগ দাড়িয়ে। তুরাগকে দেখে তিন্নি ভীষম খায়ে কাঁশতে শুরু করে। তুরাগ তিন্নিকে পানি খাইয়ে ওর হাত ধরে টেনে এনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। তিন্নি আড়চোখে একবার তুরাগের দিকে তাকাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। কারণ তুরাগ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!

–“তুই একা একা এখানে কি করছিস?”
–“কো.. কোচিং থেকে ফিরছিলাম।”
–“বাসায় না গিয়ে রাস্তায় এই সময় দাঁড়িয়ে কেন ছিলি?”
–“ভে.. ভেলপুরি খেতে ইচ্ছে করছিলো, তাই!”
–“এরপর যদি আর কোনদিন এমন কাজ করতে দেখি, তোর হাত পা ভেঙ্গে বেড এ ফেলে রাখবো। সারাজীবনের জন্য তোর ভেলপুরি খাওয়ানোর স্বাদ মিটিয়ে দিবো আমি।” (ধমক দিয়ে)
— (চুপ)
–“বড় হচ্ছো এটা মাথায় রাখো। অসভ্যের মতো রাস্তায় একা একা দাড়িয়ে এসব খাওয়া। এই তুই কান ধর তারাতাড়ি, কান ধর না হলে তোকে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো!” (জোরে ধমক দিয়ে)
তুরাগের ধমকে তিন্নি ভেজা বিড়াল সেজে বসে ছিলো। কিন্তু তুরাগ ওকে এতো জোরে ধমক দিয়েছে যে, বেচারী চমকে উঠে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। কারণ তিন্নি তুরাগকে খুব ভয় পায়! আর তুরাগেরও কেন জানি তিন্নিকে ভয় পেতে দেখলে, ওর খুব খুশি লাগে। তিন্নি কান ধরে সরি বললো। তারপর তুরাগ আর কিছু বলেনি বরং তিন্নিকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাড়ে তিন ঘন্টা পর প্রত্যয় ওটি থেকে বের হলো। তারপর নিজের কেবিনে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেলো। এখন কি করতে হবে, না করতে হবে প্রত্যয় সব বুঝিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। এখন শুধু রোগীর সেন্স ফেরার অপেক্ষা। প্রত্যয় বাসায় ফিরে সাওয়ার নিয়ে খেয়ে নিলো। তারপর একটা ঘুম দিলো। টানা দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছে ও। ফোন কলের শব্দে ঘুমটা ভাংলো।হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে, একবার যেতে হবে; তাই ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা সেরে আবার হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।
প্রিয়ম আর তুয়া ওখানকার সব খবরাখবর নিলো। প্রিয়ম এই মাসের টাকাটা দিলো। তারপর ওরা ওখান থেকে চলে আসলো। প্রিয়ম তুয়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ওর বাসায় চলে গেলো। তুয়া বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো। একটু পর তুরাগ এসে অকারণে তুয়ার সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়। ভাইদের কাজ না থাকলে যা করে আর কি! প্রিয়মের আম্মু প্রিয়মকে বাসায় ঢুকতে দেখে বললো,

–“তুমি এখন কোথায় থেকে ফিরলে প্রিয়ম?”
—“জান্নাতের বাগানে গিয়েছিলাম। কেন কিছু বলবে?”
–“”তুমি একজন মডেল। তোমাকে এসব মানায় না আব্বু। এতো কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে কেন এভাবে নষ্ট করো?”
–“আমি যা করি এটাকে নষ্ট বলে না। তুমি যেভাবে চলো, যেভাবে বিলাসিতা করো এটাকে নষ্ট করা বলে।”
–“প্রিয়ম তুমি তোমার লিমিট ক্রস করছো!” (জোরে চিৎকার করে)
–“একদমই না! আমি ভুল কিছু বলিনি, আর এখন তুমি কি আমার গায়ে হাত তুলবে? তো তোলো। তাও আমি ওখানে যাবো,ওখানে টাকা দিবো। আমি নিজের টাকায় চলি, তোমার টাকা ছুঁয়েও দেখিনা। তাই বলছি এসব কথা আমাকে আর বলো না আম্মু। এমন না যে, আমি এখনো ছোট আছি, আমি কিছু বুঝিনা।” (প্রিয়ম)

–“নিজের টাকায় চলো বলে কি, সব টাকা ওই বৃদ্ধা বুড়িদের, এতিমদের জন্যে নষ্ট করবে? বলো আমাকে! আনসার মি! ওদের দান করার জন্য কি? আমরা তোমাকে পড়াশোনা করিয়ে এতো বড় করেছি। তোমার এসব কাজের জন্য আমাকে কেন ছোট হতে হয়?” (প্রিয়মের আম্মু)
–“এভাবে বলো না আম্মু! তোমারও ছেলে-মেয়ে আছে, তোমারও বয়স হবে, সারাজীবন তুমি এমন থাকবে না, তুমিও বৃদ্ধা হবে, দিন দিন অকেজো হয়ে যাবে। তখন তোমাকেও যে তোমার ছেলে মেয়ে বৃদ্ধাশ্রমে রাখবে না, এর কোন গ্যারান্টি নেই। কারণ তোমার এই উচ্চবিত্ত সোসাইটি বৃদ্ধা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসাটাও একটা রুলসে পরিণত হয়েছে।”
প্রিয়ম কথা গুলো বলে হনহন করতে করতে চলে গেলো! আর প্রিয়মের আম্মু রেগে হাতের কাছে থাকা দামী ফুলদানি টা এক আছাড়ে টুকরো টুকরো করে দিলো।তারপর রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে উনিও চলে গেলো। প্রিয়মের মা মনে করে, প্রিয়মকে হতে হবে অতিরিক্ত এটিটিউড ওয়ালা, যার মধ্যে থাকতে হবে অহংকার। কিন্তু প্রিয়ম হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো। প্রিয়ম কালকে সিলেট যাবে; তার মডেলিং এর শো আছে। এজন্য ওর প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র গুছিয়ে নিলো।তারপরে বুয়াকে বলে ওর রুমে খাবার এনে, খেয়ে শুয়ে পড়লো। প্রিয়ম শুয়ে শুয়ে একটা কথাই মনে মনে আওড়াতে থাকে,

–“আমি আর কষ্ট পাবো না! কেনই বা কষ্ট পাবো এসব পাষাণ মনের মানুষের জন্য? আমি আর নিজেকে একা ভাববো না। এবার আমি চলবো আমার মতো। এবার থেকে কষ্ট পেয়ে পিছিয়ে যাবো না। এই নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকে কিছু দিবে না, আমাকে আদায় করে নিতে হবে।এবার থেকে আমিও আদায় করে নিবো আমার প্রাপ্যটুকু।”
প্রত্যয়কে এই কয়েকটি দিন হসপিটালে অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে! প্রত্যয়ের সেই রুগীটা এখন অনেক ভালো আছে। এখানকার হসপিটাল থেকে অনেক অফার এসেছে প্রত্যয়ের জন্য, অনেকে সুযোগ সুবিধার কথাও বলেছে এখানে সেটেল হওয়ার জন্য! কিন্তু প্রত্যয় রাজি না। কারণ ওর মন আর এখানে নেই, কতদিন আব্বু আম্মু কে দেখেনি, ওর জানপাখিটারও যে অভিমান ভাঙ্গাতে হবে। প্রত্যয় এসব কথা ভাবছিলো আর শপিং করছিলো। দেশে ফেরার খুশি বয়ে যাচ্ছে এখন ওর মনে! প্রত্যয়ের দেহ এখানে উপস্থিত থাকলেও, মনটা এখানে আর একটা মুহূর্ত থাকতে নারাজ।

মিশি (প্রিয়মের বোন) একজনকে ভালোবাসে। ওদের ৪ মাসের সম্পর্ক। তবে কেউ এখানো কাউকে দেখেনি। ওদের পরিচয়টা হয়েছে অনলাইনে। আর সেখান থেকেই বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্ব থেকে ভালবাসা। ওরা খুব তারাতাড়ি দেখা করবে বলে ঠিক করে। মিশি এখন দিন রাত ফোনে কথা বলে, চ্যাট করা, এসব করেই দিন কাটে।
পরেরদিন সকালে প্রিয়ম সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। প্রিয়ম তুয়াকে আগেই ওর যাওয়ার কথা জানিয়েছিলো আর প্রিয়ম বার বার বলে গেছে তুয়াকে সাবধানে থাকতে। প্রিয়ম ফ্লাইটে যাবে, তাই এয়ারপোর্টে গিয়ে তুয়াকে ফোন করে বলে।
–“এই টুপা রাণী, শুভ সকাল।”
–“শুভ সকাল! আপনি কি বের হয়েছেন স্যার?”
–“হুম! এই শোনো, আমার একটা অমূল্য সম্পদ তোমার কাছে আমানত রেখে গেলাম। প্লিজ সাবধানে রেখো, আমার জিনিসটা। আমি ফিরে এসেই আমার আমানত আমি বুঝে নিবো।” (প্রিয়ম)
–“আমানত কই, কখন দিলে? আর কি আমানত শুনি?” (ভ্রু কুচকে)
–“এই যে তুয়া নামক আমার কলিজাটাকে রেখে গেলাম, তোমার কাছে। একটা আঁচড় যেনো না লাগে।এবার আপনার মনে পড়লো ম্যাম?” (প্রিয়ম)

–“হুম! আপনি সাবধানে যাবেন আর নিজের খেয়াল রাখবেন। মনে থাকো যেন।” (তুয়া)
–“হুম! ভালবাসি কলিজা।” (প্রিয়ম স্লো ভয়েজে)
–“জানি তো!” (তুয়া)
–“এর আনসার করতে কি হচ্ছে শুনি?”
–“পারবো না আনসার করতে।”
–“টুপা তো টুপাই। আমি ফিরে আসি তারপর তোমার হচ্ছে দাঁড়াও।”
–“কি হবে শুনি?”
–“বাচ্চা কাচ্চা আর কি!” (দুষ্টু হেসে)
–“অসভ্য!” (লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দিয়ে)
–“হা হা হা!” (প্রিয়ম)

তারপর প্রতিদিনের মতো তুয়া আজকেও সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে কলেজে যায়। কলেজ থেকে ফিরে সাওয়ার নিয়ে, দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুম দেয়। তারপর ঘুম থেকে উঠে কোচিং এ যায়। প্রিয়ম সিলেটে যাওয়ার পর, তুয়ার সাথে ফোনে কথা বলে নেয়। আর এভাবে কেটে যায় আরো দুইটা দিন। প্রিয়ম কি একটা কাজের জন্য আটকে গেছে। তাই ফিরতে পারেনি। এই দুইদিনে তুয়া প্রিয়মকে ছাড়া যেন অচল হয়ে পড়েছে। মনটাও ভালো নেই, তবে এটা প্রিয়মকে বুঝতে দেয় না তুয়া। কারণ প্রিয়ম বুঝতে পারলে ওখানে আর এক মুহূর্তও থাকবে না। বরং তুয়াকেই এখন বার বার ভিডিও কলে প্রিয়মকে তার দর্শন দিতে হয়। বলে, তুয়ার মুখ একদিন না দেখলে নাকি ও হার্ট এ্যার্টাক করবে!
কেবল সন্ধ্যা হয়ে আসছে, চারদিকে অন্ধকার এসে জানান দিচ্ছে রাতের উপস্থিতি। কাক গুলো কা কা শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে দূর আকাশে। তিন্নি আর তুয়া কোচিং থেকে ফিরছিলো। তিন্নি আর তুয়া পপকর্ন খেতে খেতে আসছিলো আর গল্প করছিলো। তারপর তিন্নি ওর বাসার দিকে চলে গেলো আর তুয়া ওর বাসার দিকে।তুয়া ওদের এপার্টমেন্টের সামনে দিকে এসে দেখে, একটা একটা ছেলে উল্টো দিকে ঘুরে, গাড়ি থেকে ট্রলি নামাচ্ছে। ছেলেটা ঘেমে একাকার অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তুয়া হালকা করে কেশে বললো,

–“এক্সকিউজ মি, সাইড দিন আমি যাবো।”
“মেয়েলি কণ্ঠ শুনে ছেলেটি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। তুয়া অবাক কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না! কারণ এখন ওর সামনে স্বশরীরে দাড়িয়ে আছে ওয়াসিক রায়হান প্রত্যয়! প্রত্যয়ও তুয়াকে দেখে অবাক আর খুশি দুটোই হয়েছে। কারণ প্রত্যয় ভাবেনি সবার আগে তুয়ার দেখা পাবে! আর তুয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এখন, এভাবে প্রত্যয়কে দেখে চমকে গেলেও, কয়েক সেকেন্ডে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। আর প্রত্যয়, সে তো তার চোখের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত। প্রত্যয় কোনো মতে, নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছে! কারণ ওর হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে চলা শুরু করেছে। আর কিছুক্ষণ এভাবে চললে নির্ঘাত হার্ট এ্যার্টাক হবে! প্রত্যয় গাড়ির ড্রাইভারকে ভাড়া মিটিয়ে দিলো। আর ওর মুখে মুচকি হাসির রেখা টেনে, তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কেমন আছিস তুয়া?”
–“ভালো আছি।”
–“কোথায় গিয়েছিলি?”
–“কোচিং এ।”

তারপর তুয়া আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায়নি, দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে, লিফটে ঢুকে গেলো। প্রত্যয় বেশ কয়েকবার তুয়াকে ডাকলো কিন্তু তুয়া ফিরেও তাকালো না। প্রত্যয়ও আর না দাঁড়িয়ে ওদের ফ্ল্যাটের দিকে চলে গেলো। প্রত্যয় যে আসবে সেটা কাউকে জানাই নি সারপ্রাইজ দিবে বলে। প্রত্যয় ওদের ফ্ল্যাটের দরজায় দাড়িয়ে কলিংবেল বাজালো। একটু পর ওর বাবা দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে থ। প্রত্যয় মুচকি হেসে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে। দুই বাবা ছেলে এতোদিন পর সামনে থেকে দেখা পেয়ে দুজনের চোখেই ভিজে গেলো। বাবা ছেলে কুশল বিনিময়েরর মাঝেই প্রত্যয়ের আম্মু রান্নাঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো। আর সামনে তাকিয়ে প্রত্যয়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য উনি চুপ থেকে, জোরে কেঁদে উঠে আর প্রত্যয় এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে।
–“আব্বু তুই এসেছিস! কতদিন পর তোকে দেখলাম।” (কেঁদে কেঁদে)
–“কেমন আছো আম্মু?*
–“ভালো আছি! তুই কেমন আছিস আব্বু?”
–“আমিও ভালো আছি। আমি এসে গেছি তো আর কেঁদো না। আর কাঁদলে তোমাকে পঁচা দেখায়।” (প্রত্যয় মুচকি হেসে)
–“হুম! আমার ছেলে কত্ত বড় হয়ে গেছে।” (ছেলের কপালে আদর দিয়ে)
–“বড় তো হতেই হবে, তোমার বুড়ি আম্মুকে বউ বানাতে হবে না।” (প্রত্যয় হেসে)
–“যা ফাজিল ছেলে!” (আম্মু)

বুকের বা পাশে পর্ব ১১

প্রত্যয়ের কথা শুনে ওর বাবা মা দুজনেই হেসে দিলো। আজকে যেনো সুখ ওর দল বল নিয়ে প্রত্যয়দের বাসায় এসে উপস্থিত হয়েছে। এতোদিন পর বাসার ছেলে বাসায় ফেরার পর, বাসাটাও যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রত্যয় পুরো বাসাটা চোখ বুলিয়ে দেখছে। সবকিছু আগের মতোই আছে শুধু নতুন আসবারপত্র এড হয়েছে। আজকে প্রত্যয় খুব খুশি নিজের বাসা, নিজের রুম, বাবা-মা আবার সব আগের মতো করে ফিরে পাবে।প্যারিসেও খুব ভালো ছিলো কিন্তু নিজের বাসা, নিজের রুমের মতো শান্তি আর কোথাও নেই। আর এতোদিন পর ছেলে ফিরেছে তাই প্রত্যয়ের আম্মু প্রত্যয়কে ফ্রেশ হতে ওর রুমে পাঠিয়ে দিলো। আর উনি দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।
তুয়া ওর বাসায় ফিরে আগে ঢকঢক করে একগ্লাস পানি খেয়ে নিলো। এতোদিন পর তুয়া প্রত্যয়কে দেখে কেন জানি খুশি হতে পারছে না! বার বার মনে হচ্ছে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়ের আগমন হতে চলেছে। আর সেই ঝড়ের তান্ডবে সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে দেবে। তুয়া ভেবে পাচ্ছে না ওর এসব মনে হওয়ার কারণ। তবে তখন প্রত্যয়ের চোখের চাহনি মোটেও স্বাভাবিক দেখেনি, ওর চোখের চাহনির গভীরতা অন্যকিছু বোঝায়। আর সেই গভীরতায় তুয়া বিনা বাধায় নির্বিঘ্নে তলিয়ে যেতে পারে। প্রত্যয়ের তাকানোটা যেন কোন তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো ছিলো। তারপর তুয়া নিজের মনকে শান্ত করার জন্য, প্রিয়মের সাথে কথা বললো কিছুক্ষণ। কারণ প্রিয়মের মাঝেই আছে ওর শান্তির আবাসস্থল। যেখানে তুয়া সব সময় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে চায়। প্রিয়মই পারে তুয়াকে সব রকমের দুঃচিন্তার হাত থেকে মুক্তির পথ দেখাতে। প্রিয়মের দুষ্টুমি, তুয়াকে পচানো, হুটহাট করে আদুরে সুরে বউ বলে ডাকা, তুয়ার মন খারাপ বুঝতে পেরে নানা কৌশলে মন ভাল করার চেষ্টা করা।

এক কথায় প্রিয়মের সব কাজই তুয়ার মন কাড়ে! কারণ প্রিয়ম সেই রকমের ই একটা ছেলে। যে খুব সহজে ওর হাসি, ওর কথা আর বুদ্ধি দিয়ে নিমিষেই যে কোনো পরিবেশকে মুখোরিত করে তুলতে পারে। তুয়া আর প্রিয়ম যেন একে অপরের প্রান! তুয়া এজন্য সব সময় সব পরিস্থিতিতে প্রিয়মকে পাশে চায়। কারণ তুয়া জানে, প্রিয়ম আর যাই করুক, ওকে ফেলে কখনো কোথাও যাবে না। এটা যেন প্রিয়মের প্রতি তুয়ার আত্মাবিশ্বাস!
এতোদিন পরে নিজের রুমে এসে প্রত্যয় চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। প্রত্যয় যে খুব শৌখিন সেটা ওর রুম দেখেই বোঝা যায়। গোছগাছ, পরিপাটি করা, মানসম্মত আসবাবপত্র দিয়ে গুছানো ওর রুমটা! রুমের সবকিছু আগের মতই আছে। প্রত্যয় ওর রুমে থাকা এ্যাকুরিয়ামের মাছ গুলোকে দানাদার খাবার দিলো। মাছগুলো একে অপরের সাথে মারামারি করে কে আগে খেতে পারে, এটা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে দিলো। তারপর প্রত্যয় আর না দাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

বুকের বা পাশে পর্ব ১৩