বুকের বা পাশে পর্ব ২৮

বুকের বা পাশে পর্ব ২৮
written Nurzahan akter Allo

তুয়ার আম্মু চলে গেল। আর তুয়া জোর পূর্বক একটা হাসি দিলো। চোখের পানিটা মুছে রুমের দিকে হাঁটা দিল। মা মেয়ের এমন কথাবার্তা প্রত্যয়ের কাছে ভালো না লাগলেও, চুপ করে থাকতে হলো। কারন এখন পরিস্থিতিই বাধ্য করছে চুপ থাকতে।
সন্ধ্যার পর পরই তিন্নির বাসায় থেকে লোকজন চলে আসলো। তুয়ার বাবার শরীর টা ভালো নেই। তাই তিন্নির পরিবারকেই আসতে হলো। তুয়ার এমন কাজে আপাতত পরিস্থিতিটাকে ঠান্ডা করতে, তুয়ার বাবা মা তুরাগের বিয়েটা দ্রুত সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যার আজানের পর, প্রত্যয় আর তুয়াও চলে এসেছে। বড়রা সবাই কথা বলছে। তুয়া আর তুয়ার আম্মু রান্নাঘরে কাজ করছে। তুয়া ওর আম্মুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু তুয়ার আম্মু টু শব্দটা পর্যন্ত করছেনা। তুয়া ওর আম্মুর শাড়ির আঁচল ধরে বললো,

–“আম্মু আমার সাথে কথা বলো। তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারিনা। প্লিজ আম্মু একটু কথা বলো। আমাকে মারো! তাও চুপ করে থেকো না।” (তুয়া)
–“তোর এসব অভিনয় করাটা কি এখন খুব জুরুরী?” (দাঁতে দাঁত চেপে)
তুয়া ওর আম্মুর কথা শুনে আর টু শব্দটা করতে পারলো না। তাই চুপ করে রান্নাঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকলো।দুইটা বুয়া আর তুয়ার আম্মু রাতের খাবারের ব্যবস্থা করছে।ড্রয়িংরুমে বড়দের মাঝে কথাবার্তা চলছে। প্রত্যয় আর তুরাগ পাশাপাশি বসে আছে। ওরা দুজন বড়দের কথা শুনছে। প্রয়োজনে দুই একটা কথা বলছে। তুয়ার বাবা প্রত্যয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। প্রত্যয়ও মুচকি হেসে সবার সাথে বিনয়ীভাবেই কথা বললো। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রত্যয় যেনো সবার সাথে মিশে গেছে। ওর কথা বলা,আর বিনয়ী ব্যবহারের জন্য দুজন মুখের উপর প্রশংসাও করে ফেললো। প্রত্যয় এবারও মুচকি হেসে ব্যাপারটা কোন রকমে এড়িয়ে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিন্নির পরিবার দুইদিন পর ওদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করলো। মধ্যেখানে মাত্র দুইটা দিন। তাতে সবাই রাজিও হলো। বড়দের খোঁশগল্পের মাঝেই ৯ টার দিকে ডিনারটাও সবাই সেরে ফেললো। প্রত্যয়কেও সবাই খেতে বলেছে। কিন্তু প্রত্যয় খুব সুন্দর ভাবে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে।
ডিনার সেরে আর কিছুক্ষণ থেকে তুয়ার পরিবারের সবাই চলে গেল। তুয়ার বাবা সবদিক সামলে নিয়ে,প্রত্যয়ের সাথে কথা বলে,উনি রুমে চলে গেছে। প্রত্যয়ের আম্মু আর তুয়ার আম্মু তিন্নির বাসায় থেকে আসা মহিলাদের সাথে ভদ্রতার খাতিরে তাদেরকেও খেতে হয়েছে। এর মধ্যেই পাশের ফ্ল্যাটের তিনজন মহিলা খোঁজ নিতে চলেও এসেছে। এরা মিনি সাংবাদিক বলে কথা। এজন্য তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছে। তুয়ার আম্মু আর প্রত্যয়ের আম্মু উনাদের সাথে ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছে।
সবার খাওয়া দাওয়ার পর্ব সমাপ্ত ঘটলেও। এখন শুধু প্রত্যয় আর তুয়ার খাওয়া অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। তুয়ার আম্মু তুয়ার কাছে গিয়ে বললো,

–“প্রত্যয়ের খাওয়া হয়নি এখনো। ওকে ডেকে খেতে দে। সব কথা আমাকে বলে দিতে হবে? প্রত্যয়কে এক্ষুণি ডেকে খাবার বেড়ে খেতে দে।” (তুয়ার আম্মু)
–“হুম।”
প্রত্যয়ের ফোনে একটা জরুরী কল এসেছিলো। তাই একটু বাইরে গিয়েছিলো। কথা শেষ করে প্রত্যয় ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই তুয়া এসে বললো,
–“ভাইয়া খেতে এসো।” (তুয়া)
–“কি রে তুয়া প্রত্যয়কে ভাইয়া বলছিস কেন? হা হা হা আর স্বামীকে কেউ ভাইয়া ডাকে?” (পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি)
–“বিয়েটা যেভাবে হলো, বাবা রে বাবা। আনকমন বিয়ে যাকে বলে হা হা হা।” (অন্য জন)
–“তুয়া আমাকে খেতে দে,চল চল।” (প্রত্যয়)

প্রত্যয় আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না। ওখান থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে ডায়নিং এর চেয়ার টেনে বসে পড়লো। প্রত্যয়ের আম্মুও তখন ওই মহিলাদের সাথে অন্য কথা বলতে শুরু করলো। তুয়া ধীর পায়ে প্রত্যয়ের পাশে গিয়ে,খাবার বেড়ে দিতে থাকলো। তুয়ার চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। সবাই কোনো না কোনো অজুহাতে কথা শুনাচ্ছে। সবাই খোঁচাতেই পারে,কেউ বুঝেনা ভেতরের দগ্ধ হওয়া মনটার অবস্থা। প্রত্যয়ের প্লেটে তুয়া ভাত দিয়ে, ডাল দিলো। প্রত্যয় মুখ তুলে তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কাউকে খেতে দিলে। প্রথমে কোন ভাজাভুজি দিয়ে খাবার বেড়ে দিতে হয়,পরে ডাল দিতে হয়।” (প্রত্যয়)
–“ওহ্।”
–“আচ্ছা তুইও বসে পড়।আমি নিজে তুলে নিতে পারবো,সমস্যা নেই।”
–“হুম।”

প্রত্যয় তুয়ার দেওয়া,ডাল দিয়েই মুখে খাবার তুলতে যাবে। ওমনি তুয়ার আম্মু এসে হাজির। তখনই তুয়াকে আরেক দফা ঝাড়তে শুরু করলো। তুয়ার আম্মু ওদের কিছু লাগবে কি না দেখতে এসেছিলো। আর এসেই দেখে প্রত্যয়ের প্লেটে শুধু ডাল। এখন প্রত্যয় এই বাসার একমাত্র জামাই। আর জামাই কি না শ্বশুড়বাড়িতে এসে শুধু ডাল দিয়ে ভাত খাবে।এটা তো মোটেও শ্রী যুক্তকর কাজ হবে না। তুয়ার আম্মু তুয়াকে বলেছিলো প্রত্যয়কে খেতে দিতে। যাতে প্রত্যয় আনইজি ফিল না করে। তুয়ার আম্মুর এটা অজানা নয়, যে শুধুমাত্র তুয়ার জন্য প্রত্যয় এতক্ষণ খেতে রাজি হয়নি। আর এখন কি না ছেলেটাকে শুধু ডাল ভাত খেতে দিয়েছে। এজন্য তুয়ার আম্মু রেগে গেছে।
আসলে তুয়া প্রত্যয়কে অন্য কিছু তুলে দিতে যাবে। তার আগেই তুয়ার আম্মু তুয়াকে বকতে শুরু করলো। তুয়া টু শব্দ করলো না। মাথা নিচু করে বসে থাকলো। তুয়াকে বকতে দেখে প্রত্যয় বললে উঠলো,

–“না না আন্টি আমিই বলেছিলাম তুয়াকে ডাল দিতে। রাতের বেলা ভাজাভুজি খেলে আমার সমস্যা হয়। ওর কোন দোষ নেই।” (প্রত্যয়)
–“আসলেই কি তাই? নাকি ওকে বাঁচাতে এই কথা বলছো?” (ভ্রু কুচকে)
–“না না ওকে বাঁচাতে যাবো কেন? আমি নিজে থেকেই ডাল দিতে বলেছি।” (প্রত্যয়)
–“আব্বু শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়না। আমি তো জানি আমার মেয়ের কাজের ধরণ। ওকে আর কত বাঁচাবে তুমি? এ আর নতুন কিছু না। আমরা ওকে বলি এক আর ও করে আরেক। আর মাঝখান থেকে আমাদের অপদস্থ করে। এটাই তো ওর কাজ,এতেই ওর শান্তি । আচ্ছা আমি তুলে দিচ্ছি।” (তুয়ার আম্মু)
–“না না আন্টি আমি কিছু নিবো না।” (প্রত্যয়)
–“আমি তুলে দিচ্ছি তো।” (তুয়ার আম্মু)

কথাটা বলে তুয়ার আম্মু প্রত্যয়কে আরো কিছু তুলে দিতে এগিয়ে গেল। কিন্তু প্রত্যয় তো আগেই ওসব খাবেনা বলে দিয়েছে। এখন নেওয়াটা কেমন দেখায়। তাই প্রত্যয়কে সব কিছু বাদ দিয়ে, একপ্রকার বাধ্য হয়েই ডাল দিয়ে খেয়ে উঠতে হলো। আর খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকে গেলে। প্রত্যয় আর তুয়াও চলে এলো। তুয়া প্রত্যয়ের আব্বু আম্মুর সাথে টুকটাক কথা বলে,রুমে চলে গেল। আর প্রত্যয় ওর আব্বু আম্মুর সাথে ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসলো। সবাই মিলেই টুকটাক কথা বলছিলো। হঠাৎ করে প্রত্যয়ের আম্মু ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো,
–“প্রত্যয়ের বাবাই একটা গল্প শুনবে?” (আম্মু)
–“হুম হুম” কেন নয়,বলো শুনি।” (প্রত্যয়ের আব্বু আরাম করে বসে)

–“এক দেশে একটা রাজার একটা মাত্র রাজপুত্র ছিলো। রাজপুত্রটা ছিলো খুব শান্ত স্বভাবের। কোন খারাপ অভ্যাস ওর মধ্যে নেই। তো রাজপুত্রটা তাদের বাবা মায়ের সব কথা শুনতো। জেদ আর রাগ ছেলেটার মধ্যে বিদ্যমান থাকলেও, সেটা সে কারো সামনে প্রকাশ করেনা। যাকে বলে শান্ত স্বভাবের আর ঠান্ডা ব্রেণের ছেলে। কিন্তু খাওয়ার সময় কয়েকটা জিনিস মোটেও সে খেতে পছন্দ করতো না।যেমনঃডাল,শসা,ফুলকপির তরকারি, ইত্যাদি। তারপর সেই রাজপুত্র দিন দিন বড় হলো। আর সে একদিন বিয়েও করলো। আর তার শ্বশুড়বাড়ি গেল দাওয়াত খেতে। রাজপুত্র যে রাজকন্যাকে বিয়ে করেছে, সে রাজকন্যা তেমন ভাল ভাবে কোন কাজই জানেনা। তো সেই রাজকন্যা রাজপুত্রকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলো। রাজকন্যা সে সব কাজে আনাড়ি, তাই সে এত কিছু রেখে আগে রাজপুত্রের প্লেটে ডালই দিলো। সেই মুহূর্তে রাজকন্যা আম্মু এসে রাজকন্যাকে বকাবকি শুরু করলো। রাজকন্যাকে বকা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য, রাজপুত্র তার শ্বাশুড়িকে কয়েক প্রকার ঢপ মারলো। বললো, “সে ডাল খেতে খুব পছন্দ করে”। তারপর আর কি? রাজকন্যাকে বকা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে, রাজপুত্রকে তার অপছন্দের ডাল দিয়েই খেয়ে উঠতে হলো।” (প্রত্যয়ের আম্মু)

–“বাহ্ দারুন গল্প তো। তবে গল্পটা থেকে এটাই বোঝা গেল, রাজপুত্র টা বউপাগল। তা না হলে এত খাবার রেখে কেউ ডাল দিয়ে খেয়ে উঠে। বাব্বা রাজপুত্রের মনে রাজকন্যার জন্য কত্ত ভালোবাসা। আর রাজকন্যার তো দেখছি সোনা বাঁধানো কপাল। যে এই রকম রাজপুত্র তার জীবন সঙ্গী।” (প্রত্যয়ের আব্বু হাসতে হাসতে)
–“আম্মু,বাবাই থাক না এসব কথা।” (প্রত্যয় লজ্জা পাওয়ার মতো করে)
–“আমি তো গল্প বললাম। গল্পটা দারুন তাই না রে আব্বু। এই গল্প থেকে কি বোঝা গেল জানিস? এই গল্প থেকে এটাই বোঝা গেল যে,প্রিয় মানুষটার জন্য মাঝে মাঝে অপছন্দনীয় কাজ গুলোও করতে হয়। আর সেটা আপসোস বা ক্ষোভ থেকে নয়। যদি করতে হয় তাহলে তাকে ভালবেসে তার ভালোর জন্য করতে হয়। তাহলে যেখানেও খুঁজে পাওয়া যায় এক টুকরো নিঃস্বার্থ ভালবাসা।” (প্রত্যয়ের আম্মু)
–“হুম!আচ্ছা আমি গেলাম। আম্মু, বাবাই শুভ রাত্রি।”
–“শুভ রাত্রি আব্বু।” (আব্বু আম্মু দুজনেই)

প্রত্যয় আর ওখানে থাকেনি। বরং দ্রুত পায়ে ওখান থেকে চলে গেল। তবে আসার সময় ওর আব্বু আম্মু হাসির আওয়াজ ঠিকই শুনতে পেয়েছে। বাবা মা যতই ফ্রি হোক না কেন, তাদের কাছেও কিছু কিছু বিষয়ে লজ্জা পাওয়াটাও স্বাভাবিক। তবে প্রত্যয়ের এমন কাজে প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু খুশি হয়েছে। কতজনই বা পারে প্রিয় মানুষটাকে এমন ভাবে প্রটেক্ট করতে। প্রত্যয়ের বাবা মা ব্যাপারটাতে খুশি হলেও,প্রত্যয় ওর আব্বু আম্মুর সামনে একটু লজ্জা পেয়েছে।
তুরাগ আর তিন্নি ফোনালাপে ব্যস্ত। কত কথা চলছে তাদের মধ্যে, কত কল্পনা,কত ইচ্ছে সেসব দুজন দুজনের কাছে শেয়ার করছে। আর মধ্যেখানে দুইটা দিন এটাও যেন ওদের কাছে বছরের সমান। প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ার জন্য, মনের ভেতর এমন ব্যাকুলতা হওয়াটাই বুঝি স্বাভাবিক।
প্রত্যয় রুমে গিয়ে দেখে তুয়া ঘুমিয়ে গেছে। প্রতিদিনের মতো আজও হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমাচ্ছে। প্রত্যয় তুয়ার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো। আর মনে মনে বললো,
–“ঘুমানোর কি শ্রী? এভাবে কেউ ঘুমাতে পারে?

মেয়ে মানুষ ঘুমাবে সুন্দর ভাবে,চুপটি করে। তা না করে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে মনে হয়। এটাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত মেয়ে। আর জাগ্রত থাকা অবস্থায় কথার কি তেজ,বাবা রে বাবা। ধানী লঙ্কা একটা।(প্রত্যয় মুচকি হেসে)
তারপর প্রত্যয় তুয়াকে সুন্দর করে শুইয়ে দিলো। নিজেও এক সাইডে শুয়ে পড়লো। প্রত্যয় তুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
–এই আমার পিচ্চি বউটা, কবে আমাকে বুঝতে শিখবি তুই? যেদিন যেভাবে সবার সামনে আমার উপর জোর দেখাচ্ছিলি। এমন করে মন থেকে কবে আমাকে চাইবি? কবে বলবি “প্রত্যয় আমি তোমাকে ভালবাসি”। আমি সেই অপেক্ষাতেই আছি রে দুষ্টু বউটা। অনেক অনেক ভালবাসি তোকে। আমার অবুজ মনের অনুভূতি টা কিভাবে তোকে বোঝায়? তুই কি ফিল করতেও পারিসটা আমার নিঃস্বার্থ ভালবাসাটাকে? তবে শোন,যত কিছুই হয়ে যাক। আমি আছি তোর পাশে,আর থাকবোও। আমাকে সবসময় সব পরিস্থিতিতে তোর পাশে পাবি। আই লাভ ইউ আমার দুষ্টু বউটা।” (প্রত্যয় মুচকি হেসে)

বুকের বা পাশে পর্ব ২৭

এই কয়েকদিন প্রত্যয় সেইম কাজটাই করে আসছে। তুয়া ঘুমিয়ে গেলে, প্রত্যয় ওর মনের সব কথা গুলো ঘুমন্ত তুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে। প্রতিটা ছেলের যেমন তাদের বউকে নিয়ে, কিছু আদুরে কল্পনা থাকে। প্রত্যয়েরও তেমনি কিছু আদুরে ইচ্ছে আছে। সেগুলো প্রয়োগ করতে সময়ের অপেক্ষা করাটা, ওর জন্য অবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতেও প্রত্যয়ের মনে কোন ক্ষোভ নেই।
পরেদিন সকালে__!!
প্রত্যয়রা সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে। প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু টুকটাক কথা বলছে। প্রত্যয়ের সামনের চেয়ারে তুয়া বসে আছে। ব্রেকফাস্ট করতে করতে তুয়া প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“ডক্টর সাহেব আমাকে একটু সময় দিতে পারবে? আমার একটু বাইরে বের হওয়ার দরকার ছিলো।” (তুয়া মাথা নিচু করে)
তুয়ার এমন ভাবে সম্বোধন করার ধরণ দেখে, প্রত্যয় চোখ তুলে তুয়ার দিকে তাকালো। অবাক হওয়ার সাথে সাথে ভীষমও খেলো। তুয়া এই প্রথম প্রত্যয়কে এমন ভাবে ডাকলো। যেটা প্রত্যয়ের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো। যদিও বা খাওয়ার সময় অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে ভীষম লাগাটা স্বাভাবিক। এমন অপ্রত্যাশিত কিছু পেয়ে, প্রত্যয়ের ক্ষেত্রেও
তাই হয়েছে। প্রত্যয়ের এই অবস্থা দেখে প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু হো হো হেসে দিলো। এবার তুয়াও লজ্জা পেয়ে
মাথা নিচু করেই থাকলো।

প্রত্যয়ের তো কাশতে কাশতে জান শেষ। বেচারা প্রত্যয় সকাল বেলা এমন শক খাওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তবে প্রত্যয় যে তুয়ার এমন ডাকে ঠিক কতটা খুশি হয়েছে। এটা প্রত্যয় কাউকে ওর খুশির পরিমানটা বলে বোঝাতে পারবে না। তবে এমন ডাকে, কাশতে কাশতেই প্রত্যয়ের মুখে মুচকি হাসির রেখা দেখা গেছে। যেটা তুয়ার চোখ এড়ায়নি।

বুকের বা পাশে পর্ব ২৯