বৃষ্টিময় প্রেম সারপ্রাইজ পর্ব 

বৃষ্টিময় প্রেম সারপ্রাইজ পর্ব 
তাসফিয়া হাসান তুরফা

“জানালার সাইডে আমি বসি?”
“বসবে? আচ্ছা, বসো”
“বাহ! এত তাড়াতাড়ি রাজি হলেন যে? প্রান্ত ভাইয়া তো বলছিলো আপনি নাকি ট্রেনে উঠলে উইন্ডো সিট কাউকে দেন না!”
খানিকটা বিস্ময় নিয়েই বললাম আমি। পূর্ণ হাসলেন শুধু, আমার কথার বিপরীতে কোনো উত্তর দিলেন না। তার কথার উত্তর না পেয়ে আমিও চুপচাপ নিজের সিটে বসে পড়লাম জানালার পাশে!

এবার ঈদ করতে দাদুবাড়ি ট্রেনে যাওয়া হবে। বাচ্চারা কখনো ট্রেন ভ্রমণ করেনি, ওদের ব্যাপক আগ্রহ ট্রেন জার্নি নিয়ে! সেই সুবাদেই ট্রেনে উঠা। বাচ্চারা দাদা-দাদির সাথে কেবিনে বসে আছে আরামসে। কিন্তু প্রান্ত ভাইয়ার ইচ্ছার দরুন আমাদের চারজনের কেবিনের বাইরে বসা। প্রান্ত ভাইয়ার কথা ছিলো রাফসান পূর্ণতাকে নিয়ে বড়াম্মুরা কেবিনে আরাম করতে করতে আসুক, এদিকে আমরা চারজন বাহিরে বসে আর ক’টা দম্পতির মতো একে-অপরের সাথে প্রথম ট্রেন ভ্রমণ উপভোগ করতে করতে যাবো। মনে মনে বেশ খুশি হয়েছিলাম প্রান্ত ভাইয়ার উপর, একিসাথে পূর্ণ-ও দ্বিমত করলেন না। যার ফলশ্রুতিতে সেভাবেই বসা হলো সবার। যথারীতি ট্রেন চলতে আরম্ভ করলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঝিকঝিক করে চলছে ট্রেন, জানালা ভেদ করে আসা দমকা হাওয়ার দোলায় ক্ষণে ক্ষণে দুলছে চুল! সামনের সিটে প্রান্ত ভাই ও রাইসা একে-অপরের সাথে প্রেমালাপে মত্ত। আর কোনোদিকে যেন হুশ-ই নেই তাদের! হালকা হেসে সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে পূর্ণর দিক তাকালাম। উনি মনোযোগ দিয়ে ফোনে কি যেন দেখছেন। এ লোকটার সাথে আর পারা গেলোনা! হতাশ মুখে উনার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পুনরায় জানালা দেখায় মনোযোগ দিলাম।

ট্রেন শহর পেরিয়ে কিছুদূর পেরোতেই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিললো। সারি সারি গাছপালা ও গ্রামের প্রাকৃতিক রুপ মিলে যেন এক অভিনব সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে! এবার বুঝলাম পূর্ণ কেন ট্রেনে উঠলে জানালার পাশের সিট কাউকে দিতে চান না! এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখা কে-ই বা ছাড়তে চাইবে? আমার ভাবনার মাঝেই পূর্ণর গম্ভীর আওয়াজ ভেসে গেলো কানে। রোজকার ন্যায় তার ব্যক্তিগত নামে ডেকে উঠলেন গভীর ভাবে।

“তুর পাখি!”
“বলুন?”
উনার দিক না তাকিয়েই জবাব দিলাম।
“জানতে চাইবেনা তোমায় এত সহজে জানালার পাশে বসতে দিলাম কেন?”
“কেন?”

এবার আগ্রহ নিয়ে উনার দিক তাকাতেই চোখে পড়লো তার ঠোঁটের কোণে লেপ্টে থাকা মুচকি হাসির রেখা। ঠিক ওই মুহুর্তে জানালা ভেদ করে আসা এক টুকরো রোদের আলো উনার চেহারায় পড়ে যেন সেই পুরুষালি সৌন্দর্যের ষোলকলা পূর্ণ করে দিয়েছে। শুষ্ক এক ঢোক গিলে মুহুর্তেই চোখ জানালার দিকে ফিরিয়ে নিলাম আমি। জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম,

“লস হলো কিন্তু আপনার, এত সুন্দর জিনিস মিস করছেন। এরপর থেকে কখনো ট্রেনে উঠলে কিন্তু আপনাকে আর উইন্ডো সিট দেবোনা আমি। জানালার বাইরের এ দৃশ্য আমার ভীষণ প্রিয়! এর ভাগ আমি দিচ্ছিনা”
“ঠিক আছে, তুমিই নিয়ো। আমি কি মানা করেছি?”
“ধুর, আপনি ঝগড়াও করছেন না এখন আমার সাথে। সব কথায় সায় দিচ্ছেন। অনেক বোরিং হয়ে গেছেন আপনি!”
আপাতত জানালার বাহিরে দৃষ্টি রেখেই উত্তর দিলাম। পূর্ণ একটু জোরেই হেসে উঠলেন। সেখান হতে নজর সরিয়ে বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে পুনরায় দৃশ্য দেখায় মনোযোগ দিলাম। খানিকবাদে পূর্ণ আবারো একিভাবে ডেকে উঠলেন নিচু স্বরে।

বৃষ্টিময় প্রেম বোনাস পর্ব 

“তুর পাখি?
“হুম”
“আমার উত্তর না শুনেই মুখ ফিরিয়ে নিলে যে। জানতে চাইবেনা কারণটা কি?”
এবার আমি নিরুত্তর রইলাম। সামান্য ক্ষণ অতিক্রম হলো, অনুভব করলাম উনি নিঃশব্দে কাছে এগিয়ে এলেন। বেশ খানিকটা ঘনিষ্ঠ হলেন। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,
“কারণ জানালার বাইরের দৃশ্যটা তোমার প্রিয়, আর আমার প্রিয় জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকা এ মুখ!”

বৃষ্টিময় প্রেম সারপ্রাইজ পর্ব