বৃষ্টিময় প্রেম বোনাস পর্ব 

বৃষ্টিময় প্রেম বোনাস পর্ব 
তাসফিয়া হাসান তুরফা

রোজকার মতোই উজ্জ্বল একটি দিন। বাড়ির ভেতরকার পরিবেশও রাফসান পূর্ণতার চঞ্চলতায় বাহিরের প্রকৃতির মতোই উজ্জ্বল। ক’দিন পরেই ঘটবে পহেলা বৈশাখের আগমন। রাফসানের স্কুলে সব বাচ্চারা লাল-সাদা ড্রেসে স্কুল মাতাবে, সেই সুবাদে তাকেও লাল পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছে রাইসা। স্কুল থেকে ফিরেই নিজের পাঞ্জাবি পেয়ে মহাখুশি ছেলেটা এক দৌড়ে চলে এসেছে আমাদের রুমে। আমি তখন মেয়ের সাথে টিভি দেখতে ব্যস্ত। কার্টুনের এক ইন্টেরেস্টিং সিন চলায় পূর্ণতাও বেশ মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। এমন সময় আগমন ঘটলো রাফসানের। দৌড় দিয়ে টিভির সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজের ছোট্ট হাতে সে তার লাল পাঞ্জাবি প্রদর্শন করলো আমাদের সামনে। পূর্ণতা টিভি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ভাইয়ের দিক তাকিয়ে বললো,

—এতা কি, বাইয়া?
—এটা আমার পাঞ্জাবি। আম্মু কিনে দিসে। এটা পড়ে স্কুল যাবো। সুন্দর না?
—খুব সুন্দল পাঞ্জাবি।
উচ্ছাস নিয়ে বলে উঠলো পূর্ণতা। আমিও প্রশংসা করলাম পাঞ্জাবির। আমাদের কথায় খুশিতে গদগদ হয়ে উঠলো রাফসান।
—থ্যাংকিউ। তুমি কি পড়বে, পূর্ণি?
—আমাল তো পাঞ্জাবি নাই, বাইয়া। আম্মু কিনে দেয়নি। আমি কি পলবো, আম্মু?
আমার দিক চেয়ে কাদো কাদো মুখে প্রশ্ন করলো পূর্ণতা। ওর প্রশ্নে কিছুটা দ্বিধান্বিত হলাম। মেয়েকে কি উত্তর দিবো ভাবতে ভাবতেই রাফসান আবার বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—কেদোনা, পূর্ণি। আমি এখনি যেয়ে আম্মুকে বলবো। আম্মু তোমাকেও কিনে দিবে।
—আত্তা, বাইয়া।
ভাইয়ের কথায় খুশিতে তালি দিয়ে উঠলো পূর্ণতা। রাফসানও দৌড়ে দৌড়ে রাইসার কাছে চলে গেলো বোনের পাঞ্জাবি কিনে দেওয়ার আবদার করতে! নিষ্পাপ দুই বাচ্চার অবুঝ কথায় শুনে হেসে ফেললাম আমিও। অতঃপর চ্যানেল পাল্টিয়ে পুনরায় মনোযোগ দিলাম টিভিতে। কিন্তু পূর্ণতার এখন সেদিকে মন নেই, ওর মুখ দেখেই আমি বুঝেছি এখন সে আছে নিজের পাঞ্জাবির চিন্তায়। একটু পর আর থাকতে না পেরে মুখ ফুটে ডেকেই উঠলো আমায়।

—আম্মু, একতা কতা বলি?
—একটা কেন? তুমি হাজারটা কথা বলো, মা।
মেয়ের গালে চুমো দিয়ে বলে উঠলাম আমি। সে-ও হাসিমুখে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
—আমাকে একতা পাঞ্জাবি কিনে দাও না, আম্মু। আমিও পলবো বাইয়ার মতো পাঞ্জাবি।
—মেয়েরা পাঞ্জাবি পড়ে না তো, মা। ওটা ছেলেরা পড়ে। তোমার বাবা, দাদু, চাচ্চু, ভাইয়ারা পড়ে। আমাকে পড়তে দেখেছো কখনো?
আমার কথায় পূর্ণতা কি বুঝলো কে জানে? বড় বড় চোখজোড়ায় একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। হঠাৎ করে বলে উঠলো,

—বাবা ককন আসবে, আম্মু? আমি বাবা সাতে কতা বলব।
—বাবা রাতে আসবে, মা। এখন জিদ করে না। আম্মু তোমাকে সুন্দর টুকটুকে জামা কিনে দিবে, ঠিকাছে?
—না, আমি বাবা সাতে বলব। ফোন দাও বাবাকে।
—জিদ করেনা, পূর্ণতা। একবার বলেছি না?
কিছুটা রাগী সুরেই বললাম ওকে। পরক্ষণেই মেয়েটা মুখ ফুলিয়ে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেছে। সেদিক চেয়ে হতাশায় এক দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মেয়েটা একদম বাপের মতোই হয়েছে, রেগে দু-একটা কথাও বলা যাবেনা তাদেরকে। কিছু একটা বললেই অভিমানের পাল্লা ভারী করে বসে থাকে! এক পলক পূর্ণতাকে দেখে সাইড টেবিল থেকে ফোন হাতে নিয়ে ফোন দিবো কি না ভাবতে ভাবতে অবশেষে দিয়েই ফেললাম ফোন। বারকয়েক রিং হওয়ার পর যখন ভেবেছিলাম ফোন ধরবেন না, ঠিক তখনি কিছুটা সময় নিয়েই ফোন ধরলেন পূর্ণ। আমি কিছু বলার আগেই নিচুস্বরে বলে উঠলেন,

—হ্যাঁ, তুরফা। বলো।
—আপনি কি ব্যস্ত?
তার কথায় ও আশেপাশের কোলাহলে সন্দেহাচ্ছন্ন কণ্ঠে বলে উঠলাম। উনি জবাব দিলেন,
—হুম, একটা মিটিং এ আছি। এখন সাময়িক ব্রেক চলছে। ইম্পোর্টেন্ট কিছু থাকলে এখনি বলে ফেলো।
—আচ্ছা, থাক তাহলে পরে ফোন দিই…
কথাটা শেষ করার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে বাবার কণ্ঠ শুনে আমার কোলে উঠে বসলো পূর্ণতা। হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে কানে লাগিয়ে বললো,

—বাবা, তুমি ককন আসবা? আই মিশ ইউ।
—আই মিস ইউ টু, মাই প্রিন্সেস। বাবা তাড়াতাড়ি বাসায় আসবে।
—বাবা, তুমি আমাল জন্য একতা পাঞ্জাবি নিয়ে আসবা। আত্তা?
স্বভাবতই পূর্ণতার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন পূর্ণ। নীরব শুনালো উনাকে, এ সুযোগে আমি পূর্ণতার হাত থেকে ফোন নিতে নিতে বললাম,
—বাবা এখন কাজ করে। পরে কথা বলবে।
ফোন কানে নিতেই উনার কণ্ঠ শুনা গেলো,

—পূর্ণি কি বলছে, তুরফা? পাঞ্জাবি কেন আনবো ওর জন্য?
—আরে কিছুই না। আপনার মেয়ের কথা! হঠাৎ জিদ করলো বাবার সাথে কথা বলবে তাই বাধ্য হয়ে ফোন দিলাম। এখন এসব বাদ দিন। মিটিং করুন। আমি পরে ফোন দিই?
পূর্ণ কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে একজন স্যার বলে উঠলো তাকে। লোকটার সাথে কথা শেষ করে তিনি ফোন কাটার আগে নিচু কণ্ঠে বললেন,
—মিটিং শেষে কলব্যাক করছি। তখন সব শুনবো। মেয়েকে বলো বাবা পরে ফোন করছে।

সন্ধ্যা পেরোতেই বাড়িতে এলেন পূর্ণ। পূর্ণতা তখন বড়াম্মুর রুমে, দাদির থেকে গল্প শুনছে রাফসানের সাথে। এটা ওদের গল্প শুনার সময়। উনি বরাবরের মতোই ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে কফি চাইবেন তাই আমি আগেভাগেই চলে এসেছি কফি বানাতে। মগে ঢেলে পেছনে ঘুরতেই আচমকা পূর্ণকে দেখে চমকে উঠলাম, যার ফলশ্রুতিতে কেপে উঠলো হাত, মগ থেকে ছিটেফোঁটা কফি পড়ে গেলো আমার বাম হাতে। বিস্ময়ে হতবাক পূর্ণ আঁতকে উঠে তড়িঘড়ি করে হাত থেকে কফির মগ সরিয়ে রাখলেন পাশের কেবিনেটের উপর। সিংক এ নিয়ে যেয়ে হাত ধুয়ে দিলেন চটজলদি। বেসিন বন্ধ করতেই আমি হাত সরিয়ে নিলাম। ডান হাতে ইষৎ লালচে হওয়া স্থানটুকু ডলতে ডলতে বললাম,

—আপনি কখন এলেন এখানে? আমি তো বুঝতেই পারিনি।
ফ্রিজ থেকে আইস কিউব বের করে বরফের টুকরো হাতে ঘষতে ঘষতে তার জবাব,
—তা টের পাবে কেন তুমি? কোথায় ভেবেছিলাম পেছন থেকে একটু জড়িয়ে ধরবো কিন্তু ওই সময়ই তোমার ঘুরতে হলো। স্টুপিড!
—আশ্চর্য তো! দোষ সব আপনার, অথচ আমায় বকছেন? আমি কি করে জানতাম আপনি হঠাৎ এখানে চলে আসবেন?
এবার উনি জবাব দিলেন না। খানিকবাদে বললেন,

—জ্ব/লছে খুব? সরি, তুর পাখি।
—ইটস ওকে। ঠিক আছি আমি।
আমি না-বোধক মাথা নাড়তেই উনি ছোট করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। অতঃপর বরফ ডলা শেষ হতেই এক হাতে কফি মগ নিয়ে অন্যহাতে আমার হাত ডান হাত চেপে ধরে এগিয়ে চললেন রুমের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে বড়াম্মুর রুম থেকে মেয়েকেও নিয়ে নিলেন আমাদের সাথে।
খাটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে পূর্ণতা। উচ্ছ্বসিত ওর হাতে ছোট্ট লাল টুকটুকে জামা। মধ্যে মধ্যে ছোট সাদা ফুল বসানো। বেশ দৃষ্টিনন্দন, আমাদের মেয়েটাকে খুব মানাবে। নতুন জামা পাওয়ার খুশিতে সে পাঞ্জাবির দুঃখ ভুলে গেলো! সেটা হাতে নিয়েই খাটের উপর লাফাতে লাফাতে বললো,

—আমাল বাবা জামা আনসে। পুন্নি কুব হ্যাপি।
মেয়ের চঞ্চলতায় হেসে ফেললেন পূর্ণ। অতঃপর ওকে কোলে তুলে গালে চুমু দিয়ে বললেন,
—প্রিন্সেস হ্যাপি মানে বাবাও হ্যাপি।
—এতা পড়ে আমরা ঘুরতে যাব আত্তা, বাবা?
—আচ্ছা, মা। আমরা সবাই ঘুরতে যাবো। এখন সবাইকে তোমার জামা দেখাবেনা? যাও!
—দেকাবো তো। আমাল সুন্দল জামা।
জামা বুকে চেপে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করলো পূর্ণতা। হাস্যোজ্জ্বল বাচ্চাটার স্বাস্থ্যবান গালে টোল পড়লো, এ সময় তাকে এতটাই আদুরে দেখালো যে পূর্ণ ওর গাল টেনে দিয়ে আরও কিছুক্ষণ আদর করলেন ওকে। বাবার আদরে চাপা পড়ে ছটফটিয়ে উঠলো মেয়েটা, কোল থেকে নামতে নামতে বললো,

—দেকো আম্মু, বাবা যেতেই দিচ্চেনা আমায়। সবাইকে জামা দেকাবোনা? বাবা দুত্তু হয়ে গেসে।
পাজি মেয়েটা একগাল হেসে বাপের উপর দোষ দিয়ে এক ছুটে পালালো রুম থেকে। নির্ঘাত এখন সবার রুমে যেয়ে যেয়েই ড্রেসটা দেখাবে। পূর্ণতার কথায় হাসি চেপে রাখা দায় হয়ে গেলো। হাসির মাঝেই টের পেলাম পূর্ণ চলে এসেছেন কাছে, বাচার উপায় নেই আর! সেখান থেকে কেটে পড়তে উদ্যত হতেই পেছন থেকে চেপে ধরলেন শক্ত করে। কানের লতিতে আলতোভাবে কামড় দিতেই লজ্জায় বিমুঢ় হয়ে চেচিয়ে উঠলাম,

—কি করছেন? পূর্ণতা চলে আসবে যেকোনো মুহুর্তে। ছাড়ুন।
—আসবেনা। যেই এক্সাইটমেন্ট নিয়ে বের হয়েছে এক ঘণ্টার আগে রুমের ত্রিসীমানায় পাওয়া যাবেনা আমার মেয়েকে। এমনি কি আর ওকে রুম থেকে তাড়ালাম?
কথাটা বলেই ভ্রু নাচালেন পূর্ণ। তার কথায় চোখ বড় বড় করে ধূর্ত লোকটার দিকে তাকালাম! দাতে দাত চেপে বললাম,
—ছি! আপনি তো আসলেই খারাপ।
—তোমায় কাছে পাওয়ার জন্য একটু খারাপ তো হতেই পারি, তুর পাখি।

ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললেন উনি। আমি প্রতুত্তরে কিছু বলার আগেই তিনি কাবার্ড থেকে একটা ব্যাগ বের করে হাতে ধরিয়ে দিলেন। ভ্রু কুচকে ব্যাগ খুলতেই লাল রঙা এক শাড়ি চোখে পড়লো। আচলে সাদা সুতোর কাজ করা। বেশ সুন্দর। শাড়িটা দেখে নিমিষেই প্রফুল্ল হয়ে গেলো মন। মিহি হেসে বললাম,
—আমার জন্য আবার কেন আনতে গেলেন এটা? আপনার মেয়ে চেয়েছিলো ড্রেস, আমি চাইনি।
—মেয়ের জন্য কিছু আনবো আর যে আমার মেয়েকে আমার কাছে এনেছে তাকে কিছু দিবোনা এটা কি হতে পারে বলো? অন্তত পূর্ণর পক্ষে এটা সম্ভব নয়। বুঝেছো, পূর্ণতার আম্মু?

—বুঝেছি, পূর্ণতার বাবা।
—পছন্দ হয়েছে?
—আপনি কিছু আনবেন আর আমার পছন্দ হবেনা এটা হয়েছে কখনো?
তার প্রশ্নে প্রসন্ন হেসে উঁচু হয়ে হঠাৎ পূর্ণর গালে চুমু দিয়ে বললাম আমি। গালে হাত রেখে আমার দিক চেয়ে হেসে ফেললেন পূর্ণ নিজেও। খানিকক্ষণ বাদে মুখভঙ্গি গম্ভীর করে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন,
—সামনের সপ্তাহে আমার চিটাগং যাওয়া লাগতে পারে। এখনো শিওর না যদিও।
তার চট্টগ্রাম যাওয়ার কথায় আঁতকে উঠলাম আমি! অতীতের তিক্ত স্মৃতি মুহুর্তেই ভেসে উঠলো মনের দৃশ্যপটে! সহসা তার বাহু চেপে ধরে বললাম,

—আপনি যাবেন না প্লিজ। কথা দিন।
—এভাবে করলে হয়, তুরফা? গত কয়েক বছরে তুমি একটা ট্রিপেও আমায় যেতে দেও নি। যদিও বাবা নিজে থেকেই হ্যান্ডেল করেছেন সব, আমাকে বলেন নি কিছু। কিন্তু এখন তো তার বয়স হয়েছে, তাই না? এমন করলে হয়, তুর পাখি?
বড়াব্বুর কথা শুনে আসলেও খারাপ লাগলো। পূর্ণর কথায় যুক্তি আছ বটে। তবুও অশান্ত মন মানতে নারাজ। তাই অস্থিরভাবেই তাকে বললাম,

—কিচ্ছু শুনবোনা আমি। আপনি জানেন না আমি কেন আপনাকে যেতে দিতে চাইনা? আমার ভয় লাগে, পূর্ণ। আপনার ওই অবস্থার কথা মনে হলে আজও আমার বুক কাপে!
—কিন্তু, আমার কথা তো শুনো…
—ঠিক আছে। আপনি যাবেন তো? যান। যা মন চায় করুন, আমার কি! আমি আপনার কে! আমার চিন্তা নিয়ে কারও যায় আসে না!
—তুমি আমার বাবুর আম্মু।

আমার অভিমানী কথার বিপরীতে বুকে টেনে নিয়ে কপালে স্পর্শ করে বললেন পূর্ণ। ততক্ষণে আমার চোখ দিয়ে দু ফোটা অভিমানি জল গড়িয়েছে। তার বুকে হাত রেখেই চোখের দিক চেয়ে বললাম,
—প্রমিস করুন, দেখেশুনে ড্রাইভ করবেন। যতকিছুই হয়ে যাক, ফিরতে তাড়াহুড়া করবেন না। যেভাবেই যাবেন আমার কাছে ফিরে আসবেন?
উনি কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকলেন। একটুপর খানিকটা ঝুকে এসে শান্ত কণ্ঠে বললেন,
—আসবোনা তোমার কাছে।

বলাবাহুল্য এমন সিরিয়াস মুহুর্তে তার এমন ঠাট্টা আমার একদমই পছন্দ হলোনা। নাকের ডগায় চড়াও হলো রাগ। চোখ পিটপিটিয়ে তার কাছে থেকে সরে আসতেই দুহাতের মুঠোয় আমার হাত আগলে ধরে তিনি বললেন,
—আরে বাবা, তোমায় তো নিয়েই যাচ্ছি আমি। একা যাবোনা এবার। বাবা বললো পূর্ণতা ও তোমায় নিয়ে যেয়ে চট্টগ্রাম ঘুরিয়ে আনতে। এজন্যই তোমার কাছে ফিরে আসবোনা। কারণ তুমি ও পূর্ণতা আমার সাথেই থাকবে। আমি তো তোমার চোখে আমায় হারানোর ভয় দেখতে চেয়েছিলাম বলেই পুরোটা বলিনি এতক্ষণ!

কথাটি বলেই চোখ টিপে আমায় ছেড়ে দিয়ে হাসতে শুরু করলেন পূর্ণ। কিছুক্ষণ লাগলো আমার ব্যাপারটা বুঝতে। যতক্ষণ বুঝে এলো অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম তার দিকে। সদা গম্ভীর লোকটা যে হঠাৎ করে এমন ফাজলামি করবেন আমি কি করে ধরতাম? একটু আগের আমার আবেগমাখা কথাগুলো মনে করে লজ্জায় আড়চোখে তার হাসি মুখ দেখে নাক ফুলিয়ে হাটা ধরতেই হাত চেপে ধরলেন পূর্ণ। আলগোছে কোমড় জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বললেন,

—রাগ করেনা, পূর্ণতার আম্মু। চকলেট খাবে?
—এই আপনি সরেন তো। ঢং করবেন না একদম!
পূর্ণ কিছু বলার আগেই রুমে ঢুকতে ঢুকতেই চকলেটের নাম শুনে এগিয়ে এলো পূর্ণতা।
—আম্মু চক্কেত খাবে? আমিও চক্কেত খাবো, বাবা। আমাকেও দাও।
আচমকা মেয়েকে দেখে আমায় ছেড়ে দিয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হালকা কেশে উঠলেন পূর্ণ। দরজার দিক এগিয়ে গিয়ে পূর্ণতাকে কোলে তুলে নিলেন। প্যান্টের পকেট থেকে চকলেট বের করতে করতে মেয়ের হাতে দিয়ে বললেন,

—দিবো তো। আমার মেয়েকে চকলেট দিবোনা তো কাকে দিবো?
চকলেট খুলে পূর্ণতাকে নামিয়ে দিতেই বিছানায় বসে সেটা খাওয়া শুরু করলো সে। ওদিক থেকে আমি দৃষ্টি ফিরাতেই আমার কাছে এগিয়ে এলেন পূর্ণ। আমার হাতে আরেকটা চকলেট ধরিয়ে দিয়ে কণ্ঠ নামিয়ে বিড়বিড় করলেন,
—তোমার তো লক্ষণ ভালোনা, তুরফা। আমার মেয়ের চকলেটেও নজর দেও আজকাল। এত জেলাস হলে হয়? ভেরি ব্যাড, তুর পাখি।

এ মুহুর্তে উনার এমন কথাবার্তায় চোখমুখ খিচিয়ে উনার দিকে চকলেট ছুড়ে মারলাম হালকাভাবে। সেটা ক্যাচ ধরে আবারো হাসতে শুরু করলেন তিনি। লোকটা আজকাল আমায় রাগাতে ভীষণ মজা পান! এদিকে পূর্ণতা অবাক চোখে একবার বাবাকে দেখছে তো একবার আমাকে। ছোট্ট বাচ্চাটা বুঝলোনা হঠাৎ করে তার গম্ভীর বাবার কি এমন হলো? তবুও বাবার হাসি দেখে সে নিজেও হেসে ফেললো। এতকিছুর মধ্যে বাবা-মেয়েকে দেখে হাসি ফুটলো আমার ঠোঁটের কোণেও! বাপ যেমন মেয়েটাও তেমন! শুধু তাদের মধ্যে পার্থক্য একটাই- মজার ছলেই সবকিছু নিজে করে পূর্ণ দোষ চাপাবে আমার উপর, আর পূর্ণতা দোষ চাপাবে তার বাবার উপর! তখন পূর্ণর মুখটা দেখার মতো হবে! আর এ চক্রটা ঘুরতেই থাকবে আজীবন!আসলে ভালোবাসার মানুষদের সাথে জীবন সত্যিই সুন্দর! প্রতিটা মুহুর্ত-ই সুন্দর!

বৃষ্টিময় প্রেম শেষ পর্ব 

বহুদিন পর লিখতে বসলাম। উদ্দেশ্য এখন রাইটিং ব্লক কাটানোর। জানিনা এতদিন পর কেমন লিখেছি, রিচেক করা হয়নি, ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। নতুন গল্প নিয়ে শীঘ্রই দেখা হচ্ছে ❤️

বৃষ্টিময় প্রেম সারপ্রাইজ পর্ব