বৃষ্টি হয়ে নামো গল্পের লিংক || ইলমা বেহরোজ

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ১
ইলমা বেহরোজ

তিক্ত মেজাজ নিয়ে বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে বিভোর সিগারেট টানছে একটার পর একটা।পুরো নাম মুহতাসিম মাহতাব বিভোর।সরকারি চাকরিজীবী।বাবা আর্মি ছিলেন।বর্তমানে রিটায়ার।
এইতো গত সপ্তাহে মা’কে নিয়ে নানা বাড়ি যাওয়ার যাত্রাকালে জ্যামে আটকায়।তখন রাস্তায় একটা মেয়েকে দেখে সে।বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মেয়েটা হাসছে।মেয়েটার গেঁজ দাঁত ঝিলিক দিচ্ছিলো।
বিভোর মুগ্ধ হয়ে মা’কে বললো,

——-“মেয়েটার হাসিটা সুন্দর তাইনা আম্মা?”
ছেলের মুখে কোনো মেয়ের প্রশংসা শুনে খুশিতে মন নেচে উঠে সৈয়দা লায়লার।ছেলের বউয়ের আশায় শুকিয়ে খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে যেনো বৃষ্টি নামে।তিনি দ্রুত নেমে পড়েন।বিভোর অবাক হয়ে ডাকে,
——“ও আম্মা কই যাও?”
তিনি প্রতুত্তরে কিছু বললেন না।রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে উঠেন।বিভোর দেখতে পায় গেঁজ দাতের মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি।বিভোর মাথায় হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে মুখ দিয়ে ‘চ’ র মতো উচ্চারণ করে।তারপর কি কথা হলো সৈয়দা লায়লা আর ওই মেয়ের বিভোর জানেনা।জরুরি কাজে সে যশোর গিয়েছিলো।তিন দিন আগে এসে শুনে তিনদিন পর নাকি তাঁর বিয়ে!বিভোর নাকচ করাতে সৈয়দা লায়লার সেকি বিলাপ!সব ঠিক হয়ে গেছে।এখন বিয়ে ভাঙ্গলে মান-সম্মান যাবে।কতো কি!বাধ্য হয়ে পাগড়ী পরতেই হলো মাথায়।এবং বিয়ে করতে গিয়ে দেখে বউ সেই গেঁজ দাঁতের মেয়েটা!
এতো কিছুর পরও বিভোর সব মেনে নিলো।শপথ নেয় নিজ মনে সে তাঁর বউকে সর্বোচ্চ ভালবাসবে।নতুন করে নতুন জীবন শুরু করবে।রাতে রুমে ঢুকে দেখে বধূবেশে ঘোমটা টেনে এক রমণী বসে আছে।বিভোর মুচকি হেসে আওড়ায়,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

——-“আমার বউ।”
দরজা লাগিয়ে বিছানায় এসে বসে সে।কিছু বুঝে উঠার আগেই রমণী আক্রমণ করে বসে।তাঁর হাতে ধারালো ছুরি।বিভোরের গলায় ধরে রেখেছে!ঝাঁঝালো কন্ঠে রমণী বলে উঠে,
——-“ছুঁয়েছেন তো মেরে দেবো।”
বিভোর অবাকের চরম পর্যায়ে।এ কেমন বউ তাঁর?প্রথম রাতেই গলায় ছুরি ধরেছে!
——-“এই মেয়ে গলা থেকে এটা সরাও।তারপর কথা বলো।” ধমকের স্বরে বললো বিভোর।
——-“আগে বলুন আমায় ভুলেও ছুঁয়ে দেখবেন না।”
——-“আচ্ছা ছোঁব না।”রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে বললো বিভোর।
রমণী দূরে গিয়ে বসে মাথা নত করে।বিভোর ভুরু নাচিয়ে রাগ নিয়ে বললো,
——-“কাহিনি কি?আর নাম কি তোমার?”
বিপরীত মানুষটা একটু অবাক হয়।ভাবে,যাকে বিয়ে করলো তাঁর নামই জানেনা এই লোক।কিন্তু তা নিয়ে টু শব্দও করলোনা।কাঠ গলায় বললো,

——-“ধারা!সিদ্রাতুল ধারা।”
——-“ওহ নাইস নেম।তো কাহিনি কি?”
ধারা দায়সারাভাবে বললো,
——“আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।বিয়েটা চাপে করেছি।”
বিভোরের মেজাজ খিঁচড়ে গেল।কপট রাগ নিয়ে বললো,
——“চাপ দিলেই বিয়া করে ফেলবা নাকি?”
——“দেখুন আমি সত্যি বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছি।আর আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে খুব ভালবাসি।”
——“আপনার বয়ফ্রেন্ড বাসে?”
——“অবশ্যই।”
——“তাহলে বিয়ে ভাঙ্গলোনা কেন?বয়ফ্রেন্ডের নাম কি?”
—–“কারণ সে দেশে নেই।এক বছর হলো ফ্রান্সে গেছে।আরো এক বছর লাগবে ফিরতে।সেখানেই জব করে।আর নাম আয়ুশ রহমান।”
বিভোর ভারী অবাক হয়ে বললো,
——“প্রতিষ্ঠিত ছেলে।তো বাপ-মা বিয়ে দিলোনা কেন?”
ধারা চোখ গরম করে তাকায়।কিড়মিড় করে বললো,
——“সব বলতে হবে নাকি?”
বিভোর রাগের তেজ বাড়িয়ে বললো,
——-“ভদ্রভাবে মাথা নিচু করে কথা বলো।এইটা আমার বাড়ি আমার ঘর।”
ধাড়া নিভলো।বললো,

——-“আয়ুশ আমার চাচাতো ভাই।আর আমার বাপ-চাচার সম্পর্ক সাপে-নেউলে।এইটাই সমস্যা। ”
বিভোর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো,
——“তো ডিভোর্স চাই?”
ধারা তাকায়।আবার চোখ সরিয়ে নেয়।বললো,
——“এক বছর পর।আয়ুশ ফিরলেই আমি চলে যাবো।”
——“ইউর উইশ!”
বিভোর সিগারেটের বাক্সটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসে।ইজি চেয়ারে বসে সিগারেট টানে আর ভাবে, সারাজীবন প্রেম করলোনা।বউয়ের সাথে প্রেম করবে বলে।যখন বউ হলো তখন জানা গেলো বউয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে।তাকে ছোঁয়া যাবেনা।ছুঁলেই মেরে ফেলবে,অদ্ভুত!
——–“আপনার ফোনটা দিবেন একটু?”
বিভোর পিছন ফিরে তাকায়।ধারা কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বিভোর কাঠ গলায় বললো,
——-“কি দরকার?”
——-“আমার বয়ফ্রেন্ডকে কল দিবো।” ধারার স্বাভাবিক কন্ঠ।বিভোর হতচকিত!হকচকানো চোখে সে তাকায়।ধারার তাড়া,
——-“দিবেন? একটু জলদি দেন?”
বিভোর ব্যপারটা গিলে নিলো।বাইরে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,
——“এই প্রথম কোনো স্ত্রী তাঁর স্বামীর কাছে ফোন চাইলো বয়ফ্রেন্ডকে কল করার জন্য!”
——“কিন্তু আমি আপনাকে স্বামী মানিনা।”ধারার দ্রুত জবাব।
বিভোর কিছু বললোনা।ফোন এগিয়ে দেয়।তারপর রুমে ঢুকে পড়ে।
ধারা কল করে আয়ুশের নাম্বারে।প্রথম কলেই আয়ুশ ধরলো।

——“হ্যালো?”
——“হ্যালো? আয়ুশ আমি? আমি ধারা?”
——“ধারা!এটা কার নাম্বার? তুমি কোন বাড়ি?”
——“এটা আমার বরের নাম্বার।আর বরের বাড়িতেই আছি।”
——“তোমার বর মানে? তোমার বর তো আমি হবো!” আয়ুশের কন্ঠে তেজ।
——“মানে যার সাথে বিয়ে হলো তাঁর নাম্বার।”
—–“তোমাকে ছুঁয়েছে?”
——“না। লোকটাকে ভালোই মনে হলো।তোমার কথা বলেছি…….
ধারা আয়ুশের সাথে কয়েক মিনিট কথা বলে রুমে আসে।বিভোরকে ফোন ফেরত দেয়।সাথে দেয় ‘ধন্যবাদ’।উত্তরে বিভোর তাচ্ছিল্য হাসলো।
——“আমি কি রুম থেকে বেরিয়ে যাবো?”
——“সেকী!কেনো?”
——“স্বামী মানো না।আবার এক রুমে থাকতে চাও?ইন্টারেস্টিং!”
——” দেখুন চাইনা বাকিরা জানুক, আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা আসলে কি।আপনি বাইরে গেলে সবাই সন্দেহ করবে।আপনি রুমেই থাকুন।আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি।”
——“থাক আমি ই সোফায় ঘুমাচ্ছি।”
বিভোর বালিশ, কাঁথা নিয়ে সোফায় এসে শুয়ে পড়ে।ধারা শাড়ি চেঞ্জ করে বিছানায় আসে।তখন বিভোর কথা ছুঁড়ে দেয়,

——“শাড়ি-টাড়ি সামলিয়ে ঘুমাবেন প্লীজ।স্বামী তো!ছুঁয়ে ফেলতেও পারি।”
ধারা কিছু বললোনা।দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো।শুয়ে পড়ে চট করে।ঘুমাতে পারলেই সে বাঁচে।কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছেনা।অচেনা বাড়ি,অচেনা রুম,অচেনা মানুষজন,অন্য জনের বিছানা।কেমন ছটফটানি হচ্ছে ভেতরে।বার বার এপাশ-ওপাশ করছে সে।বিভোর তা টের পেয়েছে।সোফা থেকে বললো,
——“কোনো সমস্যা?ঠান্ডা লাগছে?আমি কি বারান্দার দরজা বন্ধ করে দেবো?”
——“উহু।ঠিকাছে।”
——“কিছু লাগলে বলো।”
——“স্বামীগিরি করতে হবেনা আপনার।”
বিভোর পাশ ঘুরে চোখ বুজে।ভবিষ্যতের দিনগুলোর কথা ভেবে সে আতংকিত।তারপর আবার বললো,
——-“এক বছর যে থাকবেন আমার সাথে।তারপর আপনার বয়ফ্রেন্ড মেনে নিবে?”
——“আমার বয়ফ্রেন্ড আমায় চোখ বুজে বিশ্বাস করে।”
——“গুড।কিন্তু ততদিনে আপনি আমার প্রেমে পড়ে গেলে?”
——“ইম্পসিবল। ”
——–“বিভোরের প্রেমে কত মেয়ে দিওয়ানা।দেখি,কি হয়!” বিভোরের কন্ঠে আত্মভাব প্রবল।সে যেনো শিওর তার প্রেমে ধারা পড়বেই।
আর ধারা বিভ্রান্ত বোধ করছে।এতো সহজে সব মেনে নিলো স্বামী নামে মানুষটা?কোনো স্বার্থ কি আছে?নাকি ছুরি দেখে ভয় পেয়েছে?

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২