ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৪

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৪
সাইয়্যারা খান

একটা ক্যাফেতে বসে আছে রোদ আর ডক্টর রাতুল। রোদ নিজের ডান পা দিয়ে বা পাটা চেপে ধরলো। না চাইতেও পা একটু একটু কাঁপছে, এসির টেম্পারেচার লো হলেও ঘাম হচ্ছে। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। এত এত মানুষ এখানে তবুও রোদের মনে হচ্ছে ও একা। সামনের মানুষটা ওর কোন ক্ষতি করে দিবে। না চাইতেও কেমন ভয় লাগছে। রাতুল পানির বোতলটা এগিয়ে দিতেই রোদ ঢকঢক করে অর্ধেক খেয়ে নিলো। কম্পমান হাত দিয়ে চেহারার ঘাম মুছে নিলো। রাতুল রোদকে ভরসা দিয়ে কিছুটা ইজি হয়ে বললো,

— বাসায় সবাই কেমন আছে রুদ্রিতা?
— হু? ও ভালো।
রোদের এমন বেখেয়ালি আচরণ বেশ লক্ষ্য করেছে রাতুল। কি সুন্দর ফুরফুরে মেয়েটা এমন চুপসে আছে কেন ভেবে পেল না রাতুল। রোদ বা হাতটা আরেকটু চেপে ধরে বললো,
— আমি যাই?
— একটু কথা ছিলো।
— হু।
— আ’ম সরি ফর দ্যাট ডে রুদ্রিতা। আমি শুধুই তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিলাম। তুমি যে এতটা অসুস্থ হয়ে পরবে জানতাম না। তুমি চিৎকার করায় আমি মুখ চেপে ধরেছিলাম নাহয় কেউ দেখলে ভুল ভাবতো। আর প্যানিক এট্যাক! এভাবে কবে থেকে হচ্ছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— যবে আপনি না ধরা হাত ছেড়ে দিয়েছিলেন আমি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম এটা জানার পর।
ব্যাস্ত হলো রাতুল। চোখ দুটো জ্বলে উঠলো যেন। একবার চাইলো রোদের হাত দুটি ধরে বলতে, “আমি অসহায় ছিলাম রোদ”। কিন্তু আফসোস সেই অধিকার নেই রাতুলের। নরম ভেজা গলায় রাতুল বলে উঠলো,

— আ’মি সরি বলারও যোগ্য না সেটা আমি জানি। আম্মু আমাকে ঐ দিন নিজের কসম দিয়েছিলো যাতে বিয়ে ভেঙে দেই। আমি হেল্পলেস ছিলাম রুদ্রিতা। তোমাকে কতটা চাই তা বলে বুঝাতে অক্ষম আমি। ভাইয়ের মতো বন্ধুও এখন আমার দিকে ফিরে তাকায় না রুদ্রিতা। তাকাবেই বা কেন বলো? তার কলিজায় আঘাত করেছি। দিন শেষে আমিই সব হারালাম। আম্মু এখন হয়তো বুঝে। কিন্তু তাতে কি লাভ হলো বলো৷ সেই তো আমি সবই হারালাম। আমার দিকটা কখনো কেউ ভাবে নি রুদ্রিতা। আমিও সাফার করেছি কিন্তু সেটা ছিলো একান্ত আমার। আমার ব্যাথার সাথী আমিই ছিলাম রুদ্রিতা। নিজের সবটুকু দিয়ে প্রথম কাউকে ভালো…

“ভালোবাসা” কথাটা আর শুনতে চাইলো না রোদ। থামিয়ে দিলো রাতুলকে। পুরোনো কথা মনে পরায় দূর্বল লাগলো নিজেকে। মনের ভিতর যতটুকু সাহস ছিলো সবটুকু একত্রে করে বললো,
— আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার ছিলো আমার।
রাতুল তীব্র ব্যাথার মধ্যেও অবাক হয়ে গেল। রোদ একটু হাসার চেষ্টা করলো। বললো,

— ধন্যবাদ ঐ দিন আমার হাত ছেড়ে দেয়ার জন্য। নাহয় যদি বিয়ের পর জানতেন যে আমি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম তাহলে নিশ্চয়ই তখনও ছেড়ে দিতেন। আগেই ছাড়ার জন্য ধন্যবাদ। আর দ্বিতীয় বার ধন্যবাদ কারণ আপনি না ছাড়লে ওনাকে আমি পেতাম না৷ দুটো বাচ্চার মা হতে পারতাম না। কারো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পেতাম না।
রাতুল ব্যাথিত চোখ করে তাকালো। কিছু বলতে চাইলেই রোদ তার আগেই বলে উঠলো,
— আজ আসি। আল্লাহ হাফেজ ভাইয়া।

বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একেবারে হেটে ক্যাফের বাইরে এসে শ্বাস নিলো। এতক্ষণ যেন দমটা আটকে ছিলো গলায়। রোদ নিজেই অবাক হলো নিজের কাজে। কিভাবে পারলো রাতুলকে এতগুলো কথা শুনিয়ে দিতে? নিজের উপর বিশ্বাস বাড়লো রোদের একধাপ। রোদ এখন থেকে আর ভয় পাবে না। কেন ভয় করবে রোদ? এখন তো সব আছে রোদের তাহলে কিসের ভয়? হঠাৎ ইয়াজ আসতেই চমকালো রোদ। মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার আগেই ইয়াজ কানে ধরে ইনোসেন্ট একটা চেহারা করে বললো,

— অনেক অনেক সরি রুদ্রি। আমি আগে তোকেই বলতাম বাট আই ওয়াজ নট সিউর।
রোদ ফিক করে হেসে দিলো। এতক্ষণ যে ইয়াজ ওকে পাহাড়া দিচ্ছিলো তা বেশ টের পেয়েছে রোদ। পাশের টেবিলে ম্যানু দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলো হয়তো এই জন্যই রোদ এতক্ষণ সাহস করে বসে ছিলো। ইয়াজ অসহায় চোখ করে তাকিয়ে রইলো। রোদ ওর পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে বললো,
— সে যাই হোক ট্রিট দে এবার।

হাসি ফুটে উঠলো ইয়াজের লটকানো মুখে। এই রোদ নামক বন্ধুটা অতিসয় মূল্যবান ওর জীবনে। ইয়াজের সাথে জারবার সম্পর্ক চলছে আজ ১ মাস ধরে কিন্তু ইয়াজ নিজেই সিউর ছিলো না এ ব্যাপারে। যখন নিজের অনুভূতি বুঝলো তখনই জারবাকে জানিয়ে দিলো। জারবার দিক থেকেও গ্রীণ সিগনাল ছিলো তাই তো জারবাও রাজি হয়ে গেল। এ কথা রোদ জেনেছে পরশু দিন। আগে কেন জানায় নি এ নিয়েই মুখ গুমড়া করে ছিলো ইয়াজের সাথে। আজকে অবশেষে ম্যাডাম মানলো। হঠাৎ আদ্রিয়ানের ফোন পেয়ে রোদ রিসিভ করতেই গম্ভীর কণ্ঠে আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করলো,

— কোথায় তুমি?
— মেডিকেলের বাইরে। টি এস সির দিকে।
— ওখানে কি তোমার? সাথে কে?
— ইয়াজ আছে থাকে।
— এতক্ষণ কে ছিলো?
এবার রোদ তোতলাতে লাগলো। কি বলবে রাতুলের সাথে ছিলো? ঐ দিন রাতে রাতুলের নাম বলাতে যেভাবে রেগেছিলো না জানি আজ আবার যদি রেগে যায়। ভাবতেই রোদ কোনমতে বললো,
— আপনি এসেছেন নিতে? আমি আসছি এখনই।
— বার্ণ ইউনিটের সামনে গাড়ী রাখা। আসো কুইক।
— আচ্ছা।

বলে কল কাটলো রোদ। একটু টেনশন ও হচ্ছে। রোদ তো ভেবেছিলো আদ্রিয়ান হয়তো গাড়ী নিয়ে এখানেই আসবে কিন্তু না উল্টো পথ ধরে আবার মেডিকেলে যেতে বললো। ইয়াজের কথায় রোদের ধ্যান ভাঙলো। বাইকে পিছনে উঠে বসলো।
ওদের বাইক যেতেই রাতুল বের হলো ক্যাফে থেকে। আজ রাতুলের সাথে থাকার কথা ছিলো রোদের অথচ রোদের হাতটা ধরার অধিকারও আজ নেই ওর। মা কেন বুঝলো না রাতুলকে? এটা কেন বুঝলো না রাতুল যে মন প্রাণ উজার করে ভালোবাসে তার রুদ্রিতাকে। ছোট রোদ যখন রাদের সাথে ওদের বাসায় আসতো ঠিক তখন থেকে ভালোবাসে রোদকে।

কতটা কষ্টে বাবাকে দিয়ে রোদের চাচার হাত জোর করে রাজি করিয়েছিলো। কিন্তু রয়ে গেল আফসোস। রাতুলের আজীবনের একটা আফসোস। এই রোদটা তার হলে কি আর লাগতো জীবনে? মাকে কত বুঝিয়েছিলো ওরা নাহয় বাচ্চা এডপ্ট নিতো কিন্তু মা শুনে নি। ছেলের হাহাকার, ভালোবাসা, ইচ্ছে সবকিছুর বিনাস করেছিলো এক ওয়াদা দিয়ে। অথচ এই যে রাতুল দাঁড়িয়ে এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে। আজও এই মন যে ঐ ছোট্ট রুদ্রিতাকে ভালোবাসে। কত বিয়ের প্রস্তাব নিষেধ করে দেয় রাতুল। মাকে শাস্তি দেয় নিজেকে আঘাত দিয়ে। কি হতো ভালোবাসাটা আজ রাতুলের বুকে থাকলে?
ভাবতেই জোয়ান তাগড়া পুরুষটির এক চোখ গড়িয়ে পানি পরলো যা কারোই দৃষ্টিগোচড় হলো না।

রাদ এগিয়ে এসেই সজোরে এক থাপ্পড় মারলো মানুষটির গালে। শক্ত রাদের শক্ত থাপ্পড় খেয়ে নড়ে গেল মেয়েটি। চোখ গড়িয়ে অঝোরে পানির বর্ষন হতে লাগলো অথচ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাদের এতে কিছু যায় আসে না। বেহায়া, নিলজ্জ মেয়ে মানুষ রাদের পছন্দ না। মেয়েরা থাকবে কোমল, শালীন, ভদ্র অথচ এই মেয়ে একটা বেহায়া। এতবার অপমান করে দেয়ার পরও রাদের পেছনে লেগে আছে। মেয়েটি থাপ্পড় খেয়েও থেমে নেই পা চালিয়ে রাদের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললো,

— আমাকে আপনি কেন ভালোবাসেন না? কেন দূরে সরিয়ে দেন? কি সমস্যা আমার মধ্যে বলুন।
রাদের মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে মানুষ ওর কোনদিনই পছন্দ নয়। যেই না দুই হাত দিয়ে ঠেলে সরাবে ওমনি কেউ নক করায় রাদ আসতে বললো। রাদের বুকে একটা মেয়েকে দেখে চমকে তাকালো জাইফা। রাদও বুক থেকে মেয়েটাকে সরাতে সরাতে দরজার দিকে তাকিয়ে ভরকে গেল জাইফাকে দেখে। অশ্রু চোখে তাকিয়ে আছে জাইফা। রাদ বুক থেকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো মেয়েটিকে কিন্তু ততক্ষণে জাইফা দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। পেছন থেকে রাদ নিজেও দৌড়ে বেরিয়ে ডাকতে লাগলো কিন্তু জাইফা বুঝি থামে?

জাইফাকে না পেয়ে রাদ কেবিনে ফিরে এলো। নিশ্চিত জাইফা উল্টো পাল্টা ভেবে নিয়েছে। বিরক্ত হলো রাদ। নিজের কেবিনে এসে এবার দিশাকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো। দিশা এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো। রাদ ওর হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দাঁত খামটি মেরে বললো,
— তুই যদি আর কোন দিন আমার সামনে আসিস এই সব ফালতু আবদার নিয়ে আই সোয়ের জানে মেরে দিব।
— ভালোবাসি আমি রাদ ভাই।
— গেট লস্ট দিশা।
— আব্বুর জন্য আমার সাথে এমন করছেন? আমি কি করেছি?

— তোর আব্বু যেটা আমার বোনের সাথে করেছে তার মাফ কোনদিনও হবে না। আর রইলো তোর ভালোবাসা? রোদ, ইশা আর তোকে আলাদা নজরে কোনদিন ও আমি দেখিনি। চাচাতো বোন মানেই নিজের বোন৷ আমার রুচিতে কুলায় না কাজিন ম্যারিজ।
— আমার কথা..
— দেখ দিশা রোদ বাদে কাউকে এতটা এই প্রথম এতটা বুঝিয়ে কথা বলছি। এরপর ও যদি তুই কোন ত্যারামি করিস আমাদের বাসায় আর অফিসে তোর ডুকা নিষিদ্ধ করে দিব।

— রা..
— আউট।
— একবার..
— আই সেইড আউট!

ক্ষেপে গিয়ে বললো রাদ। কেঁপে উঠল দিশা। ছলছল চোখ করে তাকিয়ে রইলো শুধু। কি হতো একটু ভালোবাসলে। গরু রাদ। গাধা রাদ। মনে মনে বকেও মন ভরলো না দিশার। শেষ মেষ বের হওয়ার সময় জোরে “কুত্তা রাদ” বলেই দৌড়ে বেরিয়ে গেল। রাদ চোখ গরম করে ওর যাওয়া দেখলো। ফোন হাতে তুলে জাইফাকে কল করলো। না এই মেয়ে ফোন ধরলো না।

দ্বিতীয় কল আর রাদ করলো না। এতটা তুলুতুলু ভাব আবার রাদের মধ্যে নেই। তুলুতুলু সে শুধু তার বোনকে করে আর কাউকে না। হাতে একটা ফাইল তুলতেই ফোন বেজে উঠলো স্ক্রিনে ভেসে উঠলো হাস্যজ্বল রোদের মুখটা। রাদ হেসে রিসিভ করলো। জাইফা ই কল করেছে ভাবতেই বাঁকা হাসলো রাদ। মেয়েদের যতই লাই দিবা ততই এরা উপরে উঠবে একসময় ঘাড়ে বসে মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে। এই যে দ্বিতীয় কল না পেয়ে এখন নিজেই ব্যাক করেছে।

না গাড়ীতে না এখন বাড়ীতে আদ্রিয়ান কোন কথা বলছে না রোদের সাথে। রোদ বারকয়েক চেষ্টা করলেও না। বাসায় এসেছে প্রায় এক ঘন্টা অথচ আদ্রিয়ান একটা রা ও করে নি। রোদ বুঝে না এই লোক এমন কেন? এতটুকু জানে অতিরিক্ত রাগে কথা বলে না আদ্রিয়ান। কিন্তু আজ কেন রেগে আলুর দম হয়ে আছে? আদ্রিয়ান সাওয়ার নিয়ে একটা টাওয়াল পেচিয়ে রুমে ডুকলো। রোদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের বুকের দিকে। ভেজা বুকের লোমগুলো বেশ আকর্ষণ করেছে রোদকে। রোদের যেন হাত পা ঝিমিয়ে উঠলো।

ফাঁকা ঢোক গিললো বারকয়েক। অবশ হওয়া পা গুলো কোনোমতে টেনে টুনে এগিয়ে আদ্রিয়ানের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। এ যেন এক ঘোরের মাঝে চলে গেল রোদ। ভেজা শরীরের আদ্রিয়ান তারমধ্য চুল দিয়েও টুকটাক পানি পরছে। এই লোক শরীর মুছে না। ভেজা শরীরে টাওয়াল পেচিয়েই বেরিয়ে যায়। পেছন থেকে ফর্সা খালি পিঠাটাও যেন আজ অন্য এক আকর্ষণ রোদের কাছে। প্রথম বার ভালোবাসা বলে কথা। অল্প পরিচয়ে এত কাছে আসা।

ভেজা শরীরের আদ্রিয়ানকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরলো রোদ। দুই হাত আদ্রিয়ানের বুকের দুই পাশে শক্ত করে ধরা। মুখটাও গুজে দিলো আদ্রিয়ানের ভেজা পিঠে। সমস্ত ইন্দ্রিও যেন নড়েচড়ে উঠলো আদ্রিয়ানের। এই মেয়ে করছে কি? রোদ এতক্ষণে আবেগে এতদূর এগুলেও এখন ভয়ংকর লজ্জা পাচ্ছে। ওর অবস্থা এখন না পারছে ছাড়তে আর না পারছে ধরে থাকতে। আদ্রিয়ানের নিজের ও সেল্ফ কন্ট্রোল হারিয়ে যাবার পথে।

নিজেকে সামলানো দায় করে দিয়েছে এই মেয়ে। ভাটা পড়া যৌবনের জোয়ারে ভাসিয়ে দিবে যেন রোদকে। পরক্ষণেই কিছু মনে পরলো। শক্ত হলো আদ্রিয়ানের চোয়াল। বুকের দুই পাশে রোদের নরম হাত দুটো নিজের শক্ত হাত হাত দিয়ে ধরে সরিয়ে দিলো। চমকালো রোদ। আদ্রিয়ান রোদের হাত ধরে টেনে নিজের সামনে আনলো। হুট করে দুই বাহু চেপে ধরলো। আকষ্মিক কান্ডে হতবাক রোদ। কি হলো হঠাৎ? আদ্রিয়ানের শক্ত হাতের থাবায় রোদের চোখে পানি চলে এলো। আস্তে করে বললো,

— ব্যাথা পাচ্ছি তো।
— আজ ঐ রাতুলের সাথে ক্যাফেতে কি করছিলি?
আদ্রিয়ান কিভাবে জানলো ভেবে পেল না রোদ। রোদের উত্তর না পেয়ে হাতের চাপ দৃঢ় হলো। ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে রোদ। আদ্রিয়ান দাঁত কটমটি করে বললো,
— বল? কি ভেবেছিস আমি কিছু জানবো না। এই তোর ওর সাথে কি? কি কথা ওর সাথে? আমাকে রেখে চলে যাবি? এই এতো সোজা? পাগল মনে হয় আমাকে? বলেছি না এবার আদ্রিয়ান ছাড়বে না প্রয়োজন জোড় খাটাবে।
রোদ কিছু বলতে চেয়েও ভয়ে বলতে পারলো না। জোরে জোরে শ্বাস টেনে শুধু বললো,

— রাতুল ভাইয়া ঐ দিনের জন্য সরি বলতে এসেছিলো।
রোদের এমন জোরে জোরে শ্বাস নেয়ায় আদ্রিয়ান কিছুটা শান্ত হলো। নরম চোখ করে তাকালো রোদের দিকে। নিজের অস্থিরতা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে না পেরেই কষ্ট দিয়ে ফেললো রোদকে। বাহুতে চাপ হাল্কা হলো। ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো কপালে। রোদ শুধু দাঁড়িয়েই রইলো। কপালে কপাল ঠেকিয়ে শ্বাস টেনে নিলো আদ্রিয়ান। বললো,

— আমি ভয় পাই রোদ। ভীষণ ভাবে ভয় পাই। হরানো জিনিস নিয়ে আফসোস নেই। আছে কৃতজ্ঞতা। যা পেয়েছি তা হারাতে নারাজ আমি। তুমি আমার থাকবে। একান্ত আমার। রাতুলের সাথে কথা বলবে না। ওর চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি আমি রোদ। কেন অন্য পুরুষের চোখে আমার নারীর জন্য ভালোবাসা থাকবে?

রোদ নিশ্চুপ হয়ে রইলো। আসলে একটু আগের আচরণ এখনও ভুলতে পারছে না ও। হঠাৎ আদ্রিয়ান একটা আকষ্মিক কাজ করে বসলো। রোদের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসলো। কিন্তু আজ আর সরে গেল না। সময় নিয়ে আদর করলো রোদকে। হতবাক রোদ এবার পুরোই হতবিহ্বল হয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে নিতেই কয়েক ফোটা পানি পরলো আদ্রিয়ানের মুখের উপর।

আদ্রিয়ান আস্তে করে সরে গেল। জড়িয়ে ধরে রাখলো কিছুক্ষণ। রোদ ধরলো না। কাঁচা তার অনুভূতি। এই কাঁচা আধ পাকা মন অল্প কষ্ট ও যে সহ্য করতে নারাজ। বুঝিয়ে বললেই তো হতো। কি দরকার ছিলো ওভাবে তুই তুকারি করার?
আদ্রিয়ান বুঝলো রোদের অভিমান। আদুরে হাত বুলিয়ে দিলো রোদের মুখে। থুতনিতে একটা চুমু খেয়ে বললো,
— ভালোবাসা বড্ড খারাপ জিনিস বুঝলে রোদ। নিজ হাতে ভালোবাসার মানুষের কাফন পেঁচাবে আবার তার শোকও পালন করবে।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৩

[ জারবার নামটা আপনারা কেন ভুল উচ্চারণ করেন? It’s Zarba. তিনবার উচ্চারণ করেন আমার সাথে জা+র+বা = জারবা।]

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৫