ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ১৩

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ১৩
মেহা মেহনাজ

পেছন পেছন শারমিন কে এগিয়ে আসতে দেখে মোরশেদ নিজেই পেছন ফিরে থামলেন। কর্কশ কণ্ঠে বললেন,
“কি সমিস্যা? তোরে যাইতে কইলাম না?”
শারমিন জেদী গলায় বলল,
“একখান কতা কমু। তারপর যামু।”
মোরশেদ ভীষণ অনিচ্ছায় ওর কথা মেনে নিলেন।
“কি কতা?”
“আমি তালাক লমু।”
“ক্যান!”
“তোমার লগে সংসার করমু। তোমার বউ হমু!”

জায়গাটা রাস্তা না হয়ে ঘর বা নির্জন হলে, এক্ষুনি ওর গলা চেপে ধরতেন মোরশেদ। তিনি বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন,
“তুই কি পাগল হইয়া গেছোস? ভালা আছোস ভাল লাগতেছে না সেইডা?”
শারমিন দুই কদম এগিয়ে সমান তেজ নিয়ে বলল,
“না লাগতাছে না। তুমি কইছিলা আমি তোমার প্রেমিকা। তুমি আমারে ভালো পাও। আমি তোমার ধারে যাই নাই। তুমি আইছো। আমার পিছনে কুত্তার মতো ঘুরছো। তারপর যহন পাত্তা দিলাম, ওমনি এক ফুলের মধু খাইয়া আরেক মধু খাইতে গেছো। তারে বিয়া কইরা সোন্দর সংসার করতেছো। এগুলা চোখে দেইহা আমি শান্তিতে থাহুম? এতোডাও ভালা আমি না। আমারে আর কেউ না চিনুক, তুমি ভালোই চিনো। কি, চিনো না?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মোরশেদ চেনেন। গ্রামের সবচেয়ে ঠোঁটকাটা, ধারালো মেয়েটি শারমিন। বরাবরই তেজি এবং জেদী। ওর বিয়ে হওয়ার পর সবাই ভয় পেয়েছিল, স্বামীর সংসার করতে পারে কীনা! সেই স্বামীর সংসার কত বছর যাবত নির্বিঘ্নে করছে ও। সমাজের চোখে শারমিন ভালো বউ। গুণী বউ। আবার ভয়ংকর বউও! অথচ ভেতরের খবর ভিন্ন। স্বামীর অগোচরে অন্য পুরুষের সঙ্গে জড়িয়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে ও। সবসময় নাটক করা যায় না। ওর শরীর,মন দুটোই চায় মোরশেদ কে। কি করবে ও? কম তো বোঝায়নি নিজেকে! এতদিন সব শুনেও ঠান্ডা ছিল। আজ চোখের সামনে মোরশেদের বাড়ি আরেক মেয়ের রাজত্ব দেখে আর সহ্য হয়নি। মাথায় জেদ চেপে গেছে। সব ভেঙেচুরে একাকার করতে পারলে বোধহয় শান্তি লাগত। মোরশেদ কে না পেলে ও কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবে না।

মোরশেদ ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠেন। শারমিন যদি সত্যি সত্যি সবাইকে সব জানায়? পরমুহূর্তেই তার মাথাতে আসে, তাতে কিচ্ছুই যাবে আসবে না। শারমিনের কাছে কী প্রমাণ আছে? কোনো প্রমাণ নেই। বরং এসব জানাজানি হলে সমাজের চোখে চরিত্রহীন হবে সে নিজেই! এই সমাজে বিবাহিত হয়ে পর পুরুষের সঙ্গে শোয়ার মতো বড় অপরাধ আর কি হতে পারে!

মোরশেদ নিশ্চিন্ত হলেন খানিকটা।
তবুও কণ্ঠ শিথিল করে বললেন,
“তোর খারাপ চাই নাই কহনো। একটা কাম না হয় হইয়া গেছে তোর আমার মধ্যে। কিন্তু হেইডা ধইরা বইয়া থাইকা নিজ সংসারে আগুন দেওয়া বোকামি। তুই আজকে সবাইরে সব জানাইয়া আমার কাছে আইলেও বা কি? আমি তো তোরে উডামু না। আমি যদি না মাইনা নেই, তাইলে কার এমন শক্তি আছে তোর লগে আমারে সংসার করায় ক? হুদাই একূল ও যাইবো, ওকূল ও যাইবো।”

শারমিন হুট করেই মেজাজ পরিবর্তন করে। ওর দু’চোখ কেমন জলে ছেপে উঠল।
“আপনে আমার লগে এমুন কইরেন না। আমি আপনেরে অনেক ভালো পাই।”
“তাইলে যা কই হুন, মন দিয়া সংসার কর। আমি তোরে কুনুদিন আমার সংসারে মাইনা নিমু না। তাতে কেয়ামত হইলে হোক।”
মোরশেদ ঘুরে দাঁড়ালেন এবং পুনরায় গটগট পায়ে হেঁটে চলে যেতে লাগলেন। তাঁর যাওয়ার পানে আকুল হয়ে চেয়ে রইলো শারমিন। ওর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।

বকুল আর আহ্লাদিরও যাওয়া হলো না। আহ্লাদি একবার বেরোবার কথা বললেও বকুল মন ভোঁতা করে রইলো। মাথায় ঘুরপাক খায়, ওই সময় তুষার বেশ হাসিখুশি ভাবেই তার সঙ্গে বের হতে চেয়েছিল। এরপর কি এমন হলো! সে কেন গেল না? কোনো কারণে বকুলের উপর রাগ? বকুল উত্তর খুঁজে পায় না। রাগ করার মতো কিছু তো সে করেনি। তবে কি গতকাল তার সঙ্গে যে আচরণ করেছে গ্রামের লোকেরা, সেই নিয়েই ভেতরে ভেতরে রাগ পুষে রেখেছে। এবং সেটাই দেখাচ্ছে বকুলকে? এমনকিছুই হবে হয়তো! বকুলের অস্থির লাগে। ও অবাক হয়ে নিজের অনুভূতি কে উপলব্ধি করল। একটা অচেনা,অজানা পুরুষের জন্য মনের ভেতর এত উচাটন কেন? এ তো ভালো লক্ষণ নয়! পরমুহূর্তেই মন প্রশ্ন করে, সত্যিই কি সে এখনো অচেনা,অজানাই রয়েছে?

সন্ধ্যের দিকে আরজু পিঠা বানাতে বসলেন। চালের গুড়ো,খেজুরের গুড় আর নারকেলের মিশেলে ভাপা পিঠা! গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা থেকে অদ্ভুত সুন্দর ঘ্রাণ বেরোচ্ছে। চারিপাশ মৌ মৌ সেই গন্ধে। তুষার কে ডাকতে হলো না। ও টের পেয়ে নিজেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বিকেলে নিজ ঘরে ঢোকার পর এই বেরোলো ও। তাই খুব আগ্রহ করেই ওর দিকে তাকাল বকুল, আহ্লাদিও!
তুষার কারো দিকে গ্রাহ্য করে না। তবে আঁড়চোখে একবার বকুলকে দেখে নেয়। হাসিমুখে আরজুর পাশে গিয়ে বসে।
“কাকী, ভাপা পিঠা না?”
আরজুও হাস্যজ্বল মুখে জবাব দিলেন,
“হ।”

তারপর কারো নাম না ধরে আদেশ করলেন,
“ওরে একটা বাটি আইনা দে। বাবাজিরে পিঠা দেই।”
বকুলের আগে আহ্লাদি ছুটে গেল। ভেতর ঘর থেকে সুন্দর মেলামাইনের একটি বাটি হাতে আরজুর কাছাকাছি এলো যখন, তখন ওর শ্বাস ঘন হয়েছে। হাঁপাচ্ছে। এই শীতেও একটুখানি ঘাম দেখা দিলো কপালে। উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে যাওয়ার ফল। বকুল বিস্ময় নিয়ে ব্যাপার টা দেখল। এক গ্লাস পানি ঢেলে না খাওয়া মেয়েটা অন্যের জন্য বাটি এনে দিলো! তাও এত তাড়াহুড়ো করে!

তুষার চুপচাপ রইলো। যেন বিশেষ কিছুই হয়নি।
আরজু আহ্লাদির থেকে বাটি নেওয়ার সময় একবার ঠোঁট টিপে হাসলেন। তাতেই লজ্জায় আটখানা হয়ে উঠে আহ্লাদির মুখ। সে সরে গিয়ে পুনরায় বকুলের পাশে বসে।
সন্ধ্যাটা জমে ওঠে। খোলা আকাশের নিচে, মাটির চুলোয় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। পিঠার সুন্দর সুবাশে পরিবেশ মুখরিত। শীতটা গায়ে লাগছে না। উনুনের তাপ বেশ আরাম এনে দিচ্ছে শরীরে। তুষার গল্পে গল্পে অনেকটুকু পিঠা খেল।
“কাকী, আজ বোধহয় ভাত খেতে পারব না রাতে। পেট ভরে গেছে।”
আরজু হঠাৎ দরদী কণ্ঠে বলে উঠলেন,

“না বাবাজি, অল্প কয়ডা খাইয়া ঘুম দেও। না খাইয়া ঘুমাইলে একটা চড়ুই পাখির ওজনের সমান কইমা যায়। ও আহ্লাদি, বাবাজির লিগা কয়ডা ভাত বাইড়া আন দেহি। সিমের শালুন বেশি কইরা দিস।”
যেন নতুন জামাই নিয়ে বাপের বাড়ি এসেছে ও, সকলের সামনে নিজের স্বামীকে আপ্যায়ন করতে গেলে মেয়েরা যেমন লজ্জা পায় আবার খুশিও হয়, এমনই লজ্জা-খুশির মিশ্রণ নিয়ে আহ্লাদি উঠল। ভেতর ঘরে যেতে যেতে সিদ্ধান্ত নিলো, তুষার কে যে তার খুব পছন্দ হয়েছে, এই কথাটা বাবার কানে জানিয়ে দিতে হবে খুব দ্রুতই। যত দ্রুত হোক, তুষারের স্ত্রী হিসেবে নিজেকে দেখতে চায় সে। তুষারের মতো নায়ক জামাই পাওয়া, এ যে সাত কপালের ভাগ্য!

বকুলের বিস্ময়তা বেড়ে যায়। একবার আরজুর দিকে তাকায়, একবার চলে যাওয়া আহ্লাদির গমন পথে। তারপর তাকায় তুষারের দিকে। তুষারের ভাবান্তর নেই। কেমন গুমোট হয়ে বসে রয়েছে। তার নির্নিমেষ দৃষ্টি আগুনের দিকে। দেখে মনে হচ্ছে, গভীর চিন্তায় মগ্ন। বকুলের বুক মোচড় দিয়ে ওঠে। তবে কি সে খুব রাগ করে বসে আছে ওর উপর?

তুষার অল্প কয়টা ভাত খেলো। আহ্লাদি খাওয়ার পানিটা এগিয়ে দিলে সে হাসিমুখে গ্রহণ করে। আহ্লাদি সুযোগ পেয়ে ওর পাশে বসে পড়ল। পিঠা বানানো শেষ। সেগুলো ঘরে নিয়ে ঢেকে রাখার জন্য বকুলকে আদেশ করলেন উনি। বকুলের অভিমান হয়। গাঢ় অভিমান। সে অন্ধকার মুখে পিঠার কুলোটা হাতে করে ঘরের দিকে চললো। আরজু পুকুর পাড়ের দিকে গেলেন। উঠোনে ওরা দুইজন বসে রইলো।
তুষার উঠার পায়তারা করতেই আহ্লাদি বলে উঠে,

“আপনের বয়স কত?”
তুষার ভ্রু কুঁচকে তাকাল,
“কেন?”
“আমি আপনের কত ছোডো, সেইডা হিসাব করতাম।”
“এত হিসেব কষে কি হবে?”
আহ্লাদি লাজুক গলায় বলল,
“কিছু না।”
তুষার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। এতক্ষণ সবাই ছিল, তাই আহ্লাদির সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে। এখন কেউ নেই। এখানে আলাদা গল্পের কোনো মানেই হয় না! আহ্লাদি ও উঠে দাঁড়াল।

“আরেকটু বসতেন!”
তুষার কণ্ঠের বিরক্তি চাপিয়ে রাখতে পারে না আর। দায়সারাভাবে বলল,
“বসলে কি হবে?”
“গল্প করতাম।”
“আমার কাজ আছে।”
“কি কাম?”
“সবকিছু জানতে হবে?”

তুষার গটগট পায়ে চলে গেল। অন্য সময় আহ্লাদির রাগ হলেও এবার রাগ হলো না। বরং ওর ভালো লাগল। পুরুষ মানুষের তেজ থাকবে, জেদ থাকবে, সাফ সাফ কথা বলবে, মেয়েরা পুরুষের পিছনে ঘুরবে। তবেই না সে সত্যিকারের পুরুষ! তুষারের ব্যক্তিত্ব আহ্লাদির ভালো লাগে। আহ্লাদি পেছন ফিরে তাকায়। মাটিতে পানির গ্লাসটা পড়ে আছে। ওটায় তুষার পানি খেয়েছে।

কিছুটা পানি এখনো গ্লাসে রয়েছে। আহ্লাদি আশেপাশে তাকিয়ে আলগোছে গ্লাসটা তুলে নেয়। তারপর তুষার যেদিকে ঠোঁট ছুঁইয়ে পানি খেয়েছে, সেখানে নিজের ঠোঁট জোড়া ছোঁয়াতে গিয়ে ও কেঁপে উঠে। এরকম দৃশ্য সিনেমাতে দেখেছিল। পার্থক্য ছিল, সেখানে নায়িকার গ্লাসে নায়ক ঠোঁট স্পর্শ করিয়েছে। আর এখানে নায়কের গ্লাসে নায়িকা নিজের অধরের ছোঁয়া মিশিয়েছে!

ঘরের দুয়ার থেকে দৃশ্যটি বকুলের নজর এড়ালো না। তার মাথা ভনভন করে উঠে। অনেক কিছু বুঝে যায়। একটা খারাপ লাগা মনের কোথাও না কোথাও নাড়া দিয়ে জেঁকে বসল। অথচ তুষার ওর কিচ্ছুটি হয় না! তুষারকে আরেকজন পছন্দ করতেই পারে। তার কেন মন খারাপ লাগছে এতে? এই প্রশ্নের উত্তর কি?

আজ বকুলের সঙ্গে আহ্লাদিও এসে শুলো। অনেকক্ষণ পর্যন্ত কেউ কারো সাথে কথা বলল না। অবশ্য আহ্লাদি দু-চারটে বকবক করে বকুলের ঘুমন্ত ভাব দেখে চুপ করে নিজেও ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। ওদিকে আহ্লাদিকে সেই তখন থেকে বেশ বিরক্ত লাগতে শুরু করেছে বকুলের। তাই ইচ্ছে করেই ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইলো ও। অথচ চোখে ঘুম নেই এক ফোঁটা। অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। না জানা পর্যন্ত শান্তি নেই! স্বস্তি নেই!

বকুল পাশ ফিরে আহ্লাদিকে একবার পর্যবেক্ষণ করে। অন্ধকারে ওর গভীর ঘন শ্বাস শুনে বুঝতে পারল, ও ঘুমিয়ে পড়েছে। বকুল নিঃশব্দে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। কোথাও কোনো আলো নেই। তবুও চলতে অসুবিধে হয় না ওর। পা টিপে টিপে ঠিক ঠিক এসে হাজির হয় তুষারের ঘরের সামনে। ভেতর থেকে টিমটিমে আলো জ্বলছে। তবে কি সে জেগে আছে? কিন্তু কেন? রাত তো অনেক হলো! কিছু লিখছে? নাকি সেও জানে কেউ আসবে- তাই তার প্রতিক্ষায় বসে রয়েছে?
আরও কিছু প্রশ্নের ভীড় এসে জমে মস্তিষ্কের পাতায়। বকুল হাত দিয়ে দরজা ঠেলতেই খুলে গেল। খোলাই ছিল সম্ভবত। তুষার না তাকিয়েই বলল,

“আসো।”
বকুলের ইতস্তত লাগল। তবুও অন্যরকম কিছুর টানে চট জলদি ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো। তারপর চাইলো বিছানার উপর হেলান দিয়ে চোখ বোঁজা তুষারের দিকে। তুষার কিভাবে জানলো, সে এসেছে!
যথাসম্ভব নিচু কণ্ঠে বকুল বলল,
“একখান কতা জানতে আইলাম।”
তুষার নিজ অবস্থানে চোখ বন্ধ রেখেই জবাব প্রদান করে,

“বলো।”
“আপনে কি আমার উপর রাগ?”
“না।”
“তাইলে আমার লগে এমুন করলেন ক্যান?”
“কেমন করলাম?”
“ওই সময় ঘুরতে গেলেন না।”
“বলেছিলাম, একটা কাজ ছিল।”
বকুল ক্ষণকাল চুপ থেকে বলল,

“এরপর আর নিজ থেইকা কতা কন নাই!”
“ব্যস্ততায় সময় কাটছে।”
বকুল আবার একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“আমার দিকে তাকান নাই।”
তুষার মৃদু হাসে। এবার চোখ খোলে। নড়েচড়ে বসে বলল,
“তুমি দেখেছো?”
“হ। আমি আপনের দিকেই তাকাইয়া ছিলাম আইজ। আপনে একবারও আমার দিকে তাকান নাই। আমি দেখছি।”
“তুমি কি বিশেষ কেউ যে তাকাতেই হবে?”
বকুল গুমোট কণ্ঠে বলল,

“না।”
“তাহলে?”
যেন অভিযোগ দিচ্ছে, এমন ভঙ্গিতে বকুল বলে,
“কিন্তু ওর দিকে তাকাইছেন। অনেক বার!”
“কার দিকে?”
বকুল কথা বলে না। চুপ করে রইলো। তুষার নিজ থেকেই উত্তর খুঁজে বের করে।
“আহ্লাদি?”
বকুল মাথা দোলালো। মুখে জবাব নেই।
তুষার হেসে ফেলল এইবার।
“যদি বলি ও বিশেষ কেউ, তাই তাকিয়েছি। তোমার কোনো সমস্যা আছে?”

এহেন কথার জবাবে কি বলা যায়, বকুল ভেবেও পায় না। তাই চুপ থাকাটাই তার কাছে শ্রেয় মনে হলো। সে শুধু দুই ধারে হালকা করে মাথা নাড়লো। আসলেই তো, তার সমস্যা কোথায়? তবে এই ‘বিশেষ’ শব্দটির দ্বারা তুষার কি বোঝাতে চাইলো? বকুলের কোথাও যেন খুব খারাপ লাগল। খুব মানে খুব! মনে হলো, এক্ষুনি কেঁদে বন্যা বানিয়ে ফেলবে। নিজেকে উচ্ছিষ্ট মনে হলো। সে দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য পায়তারা করে।
“আমার উপরে রাগ না থাকলেই ভালো। আমি তাইলে যাই।”
বকুল ভেবেছিল তুষার বলবে, আরেকটু থাকো! অথবা আগে যেমন গল্প করত, এখনও তাই করবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে তুষার বলে উঠল,

“কুপিটা বন্ধ করে দিয়ে চলে যাও। আর শোনো, এরকম রাতে হুটহাট আমার ঘরে আসবে না আর কখনো। তুমি কি বুঝতে পেরেছো আমি কি বলেছি?”
এমন কঠিন করে এই প্রথম তুষার ওকে কিছু বলল। আর ধরে রাখতে পারল না নিজেকে। কখন যে দুই চোখে বর্ষণ শুরু হলো, বকুল টের পায় না। গাল ভিজলে বকুল দ্রুততার সঙ্গে নিজের চোখ মুছে নেয়। মাথা দুলিয়ে কুপিটা বন্ধ করে এক ছুটে বেরিয়ে যায়। তুষার মৃদু হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে কান্নারত বকুলের মুখটা মনে করার চেষ্টা করল। বিড়বিড়িয়ে স্বগতোক্তি করল,
“কাঁদলে তোমায় দারুণ লাগে চাঁদ রাণী! তোমার এই কান্না ছোঁয়ার জন্য আমার যে এবার মেঘবালক হতেই হবে!”

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ১২

অনেকে বলছেন, বকুল আর তুষারের প্রেম টা দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। আসলে প্রেম কিছু ভেবেচিন্তে, হিসেব নিকেশ করে হয় না। প্রেম হুট করে অজান্তেই হয়ে যায়। আর বকুলের তরফ থেকে এখনো প্রেমের বিষয়টা পরিষ্কার করিনি। তবে তুষার তার চাঁদ রাণী কে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে। এইটুকু পরিষ্কার করে দিয়েছি এবং লিখছিও!

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ১৪