ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ২৯ শেষ অংশ 

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ২৯ শেষ অংশ 
সাইয়্যারা খান

আদ্রিয়ান পা ঠেলে যেন রুমের সামনে এলো। কিছু একটা খুব খারাপ যে হয়েছে তা বুঝতে বেগ পেতে হয় নি ওর। দরজা খুলে রুমে ডুকতেই দেখলো ঘুটঘুটে অন্ধকারে আচ্ছন্ন। হাতরে লাইট অন করতেই দেখলো বিছানায় মিশিকে বুকের মধ্যে নিয়ে রোদ শুয়ে আছে। মিশিকেও চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছে। লাইটের আলো চোখে পরতেই রোদ চোখ মেলে তাকালো। সামনে আদ্রিয়ানকে দেখে খুব স্বাভাবিক ভাবে উঠে এসে বললো,

— মিশিকে কোলে নিন। চলে যাব এখনই।
আদ্রিয়ানের হৃদপিন্ড খুব জোরে জোরে বিট করছে অজানা আশঙ্কায়। রোদের এমন নির্লিপ্ততা মানতে নারাজ এই মন। রোদের চোখে,মুখে রাগের লেশ মাত্র নেই যা কিছুক্ষণ আগেও ছিল। আদ্রিয়ান একবার মিশির দিকে তাকালো। তাকাতেই যেন সব ভুলে মেয়ের কাছে তড়িৎ গতিতে এসে গালে হাত বুলিয়ে শঙ্কিত কন্ঠে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— এই রোদ মিশির গালে এমন লাল দাগ কিসের? এই দাগ…
— আমি মে’রেছি।
আদ্রিয়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই খুব স্বাভাবিক ভাবে কথাটা বলে আলমারি থেকে বোরকা বের করতে গেলো রোদ। দুই সেকেন্ড সময় লাগলো আদ্রিয়ানের বুঝতে যে রোদ আসলে বললো টা কি? ওর এতটুকুন মিশি’কে মেরেছে। আদ্রিয়ান ফট করে বেড থেকে নেমে রোদের বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে এনে অসহায়ের মতো করে চেহারা আর ভীতু চোখজোরা নিয়ে থমকানো গলায় প্রশ্ন করলো,

— আমার কতটুকুন মেয়ে রোদ। ওকে কীভাবে মারলা? ওকে কেন মারতে হবে রোদ? তুমি কীভাবে হাত তুললা? এই রোদ তুমি কীভাবে পারলা? আমার মেয়েটার গাল কেমন লাল হয়ে আছে। আসো তুমি। দেখো। আসো না। দেখো লাল হয়ে গিয়েছে।
কথাগুলো বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো আদ্রিয়ানের। রোদ’কে ধরে টেনে নিতে চাইলেও রোদ ঠাই দাঁড়িয়ে। গলায় কান্না আটকে রোদ বললো,

— মিশানকে ডেকে আনুন। এখনই যাব।
আদ্রিয়ান এবার হিতাহিত জ্ঞান হারায়। রোদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই রোদের পিঠের মেরুদণ্ড গিয়ে সজোরে ঠেকলো আলমারির শক্ত হাতরে। মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো আদ্রিয়ান,
— এই তুই আমার মেয়ের গায়ে হাত কীভাবে তুললি? কেন তুলেছিস হাত বল? তোর সাহস কীভাবে হলো? কতটুকু আমার মেয়ে? তোর হাত কাঁপলো না?

রোদ এবার নিজেকে সামলাতে ব্যার্থ হলো। আলমারি ঘেঁষে বসে পরে আহাজারি করতে লাগলো। ভয় পেয়ে গেল আদ্রিয়ান যখন নজর গেল রোদের জখম হওয়া হাতে। এই হাতটা’তেই ঐ দিন তেলের ছিটা লেগেছিলো যা অনেকটা সেরেও গিয়েছিলো অথচ এখন বাজে ভাবে র*ক্তাত হয়ে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে অনেক সময় লাগিয়ে আগুনে পুরার পর হয়তো এই হাতে কিছু দিয়ে আঘাত করা হ’য়েছে।

চামড়ার স্তর পুরে সাদা চর্বির স্তর বের হয়ে কিছু জায়গায় জায়গায় কালো হয়ে চর্বি আর র*ক্ত জমে আছে। রোদ তখনও ঐ হাত ফ্লোরে ফেলে আহাজারি করছে, কেন মেয়েকে মারলো। আদ্রিয়ানের বুক এবার হাঁপরের মতো উঠা নামা করছে। পা যেন ফ্লোরে আটকে গিয়েছে। রোদের হাত দেখেই যেন গা গুলিতে আসছে ওর। বহু কষ্টে পা ফেলে আদ্রিয়ান রোদের পাশে বসে পরলো তখনই নাকে চামড়া পুড়ে যাওয়া গন্ধ এলো যা রোদের হাত থেকে আসছে। নিজেকে সামলাতে বারবার ব্যার্থ হচ্ছে আদ্রিয়ান। এই চামড়া পুড়া গন্ধে কেমন পেট গুলিতে আসছে।

আদ্রিয়ান রোদের সামনে বসে হাত দুটির স্থান দিলো রোদের গালে। কিছু বলার চেষ্টা চালালো কিন্তু তার আগেই রোদ ধাক্কা দিলো আদ্রিয়ানের বুকে। আদ্রিয়ান ছিটকে পরতেই রোদ চিৎকার করে বললো,
— আমি কাল কতবার বলেছি, চলুন চলে যাই। কিন্তু আপনি চলেন নি। কাল চলে গেলে তো এমন হতো না।
রোদের দম আটকে আসছে। একটু থেমে আবারও বললো,

— ওকে আমি কতবার বলেছি আমার সাথে সাথে থাকতে। শুনে নি আমার কথা। মেরেছি। বেশ করেছি। কতটুকু মিশি আমার। ওকে কীভাবে..
আদ্রিয়ান তখনও ফ্লোরে বসে আছে। রোদ কথাগুলো বলেই জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি উঠে রোদের কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। রোদ দম আটকে আটকে বললো,

— আমি নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারছি না। প্লিজ চলুন এখান থেকে।
— হু হু যাব তো সোনা। এখনই যাব।
রোদ আবারও কেঁদে উঠলো। কেন ছোট্ট পরিটার গায়ে হাত তুললো বলেই অঝোরে কাঁদতে লাগলো। আদ্রিয়ান ওকে আরো শক্ত করে বুকে চেপে ধরে বললো,

— বাবা-মা সন্তানকে মারতেই পারে। স্বাভাবিক হও রোদ। দয়াকরে আমাকে বলো কি হয়েছে।
রোদ নিজেকে ছাড়িয়ে বেডে গিয়ে মিশির পাশে বসে ঘুমন্ত ছোট্ট প্রাণটাকে আদরে আদরে ভরিয়ে তুলতে ব্যাস্ত হলো। আদ্রিয়ানও পাশে বসলো। রোদের হাত ধরে অনুনয় করে বললো,
— রোদ আমাকে এই চিন্তা থেমে মুক্তি দাও। কি হয়েছে বলো?

রোদ শান্ত চোখে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। ঘুমন্ত মিশির পরণের পাতলা গেঞ্জিটা পেট থেকে তুলে বুক পর্যন্ত উঠিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকাতেই হতবিহ্বল হয়ে গেল। শ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেল আদ্রিয়ান। ছোট্ট মিশির বুকের দিকে লাল হয়ে আছে। যা বুঝার বুঝে গেলো আদ্রিয়ান। ওর হাত পা যেন অবশ হয়ে গেল। এতক্ষণের আতঙ্ক, ভয়,আশঙ্কা, উৎকন্ঠা সব যেন এবার দলা পাকিয়ে চোখ দিয়ে বর্ষিত হচ্ছে। নিজের শক্ত হাতের ভয়াবহ কম্পন টের পেলো আদ্রিয়ান। প্রচুর বেগ পেতে হলো যেন হাতটা তুলতে। কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে মেয়ের বুকে রাখলো। শক্ত হাতটা নরম ভাবে বুলিয়ে দিতে লাগলো ছোট্ট মিশির বুকে। আবার কি মনে করে সরিয়ে নিলো।

রোদের দিকে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদ একেবারে থমকে গেলো। আদ্রিয়ানের এমন বুক ফাটানো কান্না যেন রোদ সহ্য করতে পারছে না। হাউ মাউ করে কেঁদে যাচ্ছে আদ্রিয়ান। এ যেন এক ব্যার্থ বাবা মেয়েকে আগলে রাখতে না পেরে বুক ফাটা আর্তনাদ করছে। আদ্রিয়ানের এমন কান্নায় ঘুমন্ত মিশিও নড়েচড়ে উঠছে। রোদ তারাতাড়ি আদ্রিয়ানের মুখ চেপে ধরলো। ইশারায় বুঝালো, মিশি উঠে যাবে।

আদ্রিয়ান রোদের বুকে মুখ গুজে কেঁদে উঠলো। পুরুষ মানুষের এমন কান্না সত্যিই ভয়াবহ। কতটা আঘাতে জর্জরিত হয়ে একজন শক্তিবান প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এভাবে কাঁদে? রোদের চোখ দিয়ে ও পানি ঝরছে। জা*নো*য়া*র টা ছোট্ট মেয়েটাকে ছাড়ে নি। ক্ষুধার্থ হাতের তৃষ্ণা নিবারক হিসেবে ছোট্ট প্রাণটাকে ছাড়ে নি।

রোদ অনুভব করলো বুকের সুতির কাপড়টা ভিজে উঠেছে তার প্রিয় পুরুষের অশ্রুতে। একহাতে আগলে নিলো আদ্রিয়ানকে৷ বাচ্চাদের মতো গুটিয়ে গেলো এতবড় সুঠাম দেহের অধিকারী আদ্রিয়ান রোদের ছোট বুকে। নিজেকে বাবা বলতেও আজ যেন লজ্জা লাগছে আদ্রিয়ানের। ঘরে বসে, সামনে থেকেও কি না ছোট্ট মা’টাকে আগলাতে পারে নি ও।

এই ঘটনা প্রায় বাড়ীর। ছোট ছোট প্রাণরা আদরের নামে মলেস্টের শিকার হচ্ছে। যা চোখে দেখেও কিছু পরিবার বুঝতে অক্ষম কেউ বা বুঝেও প্রতিবাদ করতে অক্ষম আত্মীয়তা রক্ষায়। কিছু পরিবার হয়তো এতদিনের চেনা পরিবার ভেঙে যাবে বলে কিছু বলতে পারে না। খুব কম সংখ্যক অভিভাবক প্রতিবাদ করে। নিজের ঘরের কিছু নোংরা মস্তিষ্কের পুরুষের কাছেই প্রতিনিয়ত মোলেস্ট হয়ে আসছে নিজের ঘরের মেয়েরা। কিছু ন*র*পি*চা*শের ক্ষুধার নিবৃত্তি হয় এই ছোট বাচ্চারা। বিকৃত মস্তিষ্কের এই পুরুষের বিচরণ আমাদের সমাজে অহরহ অথচ আমরা তা জেনেও নির্বাক।

কিছুক্ষণ আগে~
“পুরুষের আদরের হাত মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্তই। ঘাড় থেকে যেন পিঠে না হয়। যদি হয় তাহলেই বুঝবি ওটা আদরের হাত না। নোংরা হাত ওটা।”

কথাটা রাদ ছোট থেকেই রোদকে বলতো। ভাই হিসেবে রাদ ছিলো বোনের ভরসার স্থান। মায়ের সাথে যতটা না কথা রোদ শেয়ার করত তার থেকে বেশি করত ভাইয়ের সাথে। শেল্ফ ডিফেন্স সহ আরো নানা বিষয়ের ধারণা রোদ পেয়েছিলো রাদ থেকে। ভাইয়ের কথা পইপই পালন করতো রোদ তাই হয়তো নিজেকে আজ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে অপবিত্র সব স্পর্শ থেকে।

অপরিচিতদের মাঝে বাসে হোক বা পরিচিতদের মধ্যে বাসাতে রোদ এ ব্যাপারে ছিলো সর্বদা সচেতন। তথাকথিত ভাইদের মতো রাদ বলতো না,”আমি সব বিপদে তোর পাশে আছি। চিন্তা করবি না” বরং রাদ ওকে বলতো, ” ভাই তো সবসময় থাকবো না, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত তোর নিজেরই করতে হবে”। সেই হিসেবে রোদকে অনেক বিষয়ে ছোট থেকেই অবগত করেছিলো রাদ। বয়সে যেহেতু অনেকটা বড় তাই রাদ এই সব বিষয়ে যতটুকু বুঝতো বোনকে বুঝাতো।

আজ যখন রোদ মেহমানদের সামনে ছিলো তখন ফুপাই ওর মাথায় আদরের নাম করে সেই হাত পিঠে নামায় আর অভ্যাস বসত রোদ সরে যায় তৎক্ষনাত। ফুপার দিকে তাকাতেই তার চোখে খারাপ কিছু আঁচ করে রোদ। বুঝতে আর বেগ পেতে হয় নি কাল থেকে কার নোংরা হাতের স্পর্শ পাচ্ছিলো ও। আদ্রিয়ানকে বলবে বলবে করেও অনুষ্ঠান শুরু হওয়াতে আর কিছু বলতে পারে নি। মিশিকে খাওয়াতে হবে কারণ এশারের পর জাগতে দেয় না রোদ ওকে। ভীর ঠেলে মিশানের কাছ থেকে মিশিকে নিয়ে মিশানকে বলে,

— মিশান মা মিশিকে খাওয়াতে যাচ্ছি। আমি আসলে খেতে বসবা। একা খেলেই তোমার টাল্টি ফাল্টি শুরু হয়ে যায়।
মিশান ঘাড় দুলিয়ে রুদ্র আর রাদের কাছে গেলো। রোদ মিশিকে ফাঁকা জায়গায় চেয়ারে বসিয়ে বললো,
— মাম্মার কিশমিশ এখানেই বসো। মাম্মা খাবার নিয়ে আসছি।

মিশিও খুশি মনে বসে রইলো। “কিশমিশ” ডাকটা অনেক প্রিয়। কিশমিশ তো অনেক মিষ্টি এরমানে মিশিও মিষ্টি। এটা ভেবেই ওর এত খুশি। রোদ চলে যেতেই ফুপা এসে কোলে তুলে নেয় মিশিকে। আদর আদর কথা বলে চকলেট দিবে বলে পাশের খালি রুমে নিয়ে যায়। নিজের নোংরা হাতের ছোঁয়া দেয় ছোট্ট মিশিকে। মিশি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,

— দাদ্দাহ ব্যাথা।
থামে নি ফুপা। রোদ খাবার বেড়ে এসে মিশিকে না পেয়ে এদিক ওদিক খুঁজে। হঠাৎ পাশের রুম থেকে মিশির কান্নার শব্দে ওদিকে যেতেই দেখে মিশি কাঁদছে আর ফুপা থামানোর চেষ্টা করছে। রোদ হাতের প্লেট রেখে তারাতাড়ি যেয়ে মিশিকে কোলে তুলে নেয়। মিশি মা’য়ের গলা জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। ফুপা কিছুটা ভরকে গেলেও বলে,

— ব্যাথা পেয়ে কাঁদছিলো তাই থামাচ্ছিলাম আমি মামনি।
রোদ অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে কিছু না বলে প্লেট হাতে নিয়ে চলে যায়। নিজের রুমে ডুকে মিশিকে নামিয়েই বলে,
— কোথায় ব্যাথা পেলে? মাম্মা না বসিয়ে গেলাম।
গোল গোল চোখে পানি ভর্তি নিয়ে মিশি বললো,
— দাদ্দাহ ব্যাথা দিয়েছে।

অজানা ভয়ে কুঁকড়ে যায় রোদ। কোথায় জিজ্ঞেস করতেই অবুঝ মিশি নিজের বুকে দেখায়। রোদ ঝট করে মিশির পড়নের গাউন দেয় তখনই নজরে আসে ছোট্ট মিশির বুকের লাল দাগ। রোদের চোখে পানি চলে আসে। মিশিকে বুকে নিয়ে বললো,

— ওনার কাছে কেন গিয়েছিলে মা? আর কোথাও ব্যাথা দিয়েছে?
— দাদ্দাহ চকলেট দিবে মিশিকে।
রোদের রাগ তরতর করে বেড়ে গেলো। বুক থেকে সরিয়েই রাগের চোটে মিশিকে থাপ্পড় মে’রে বললো,
— এই তোকে চকলেট খাইয়াই না আমি? এত কিসের চকলেট লাগে তোর?কেন গেলি? যদি খারাপ কিছু হতো তখন কি করতাম আমি?

এই প্রথম মা’য়ের হাতে আদরের বদলে মাইর খেয়ে ছোট্ট মিশি কেঁদে উঠলো ভয়ে। রোদও বেডে বসে কেঁদে উঠে। মা’য়ের কান্না সহ্য হলো না মিশির। নিজেও কান্না করতে করতে উঠে এসে মা’য়ের কোলে বসে হিচকি তুলতে তুলতে বললো,
— মাম্মা মিশি আর চকলেট খাবে না। মিশি দাদ্দাহর কাছে যাবে না। মাম্মা তুমি সেড হলে মিশিও সেড। মিশি আর কোথায় ব্যাথা পায় নি।

রোদ বুকে জড়িয়ে ধরে মিশিকে। আদরে আদরে ভরিয়ে তুলে বারবার মাফ চায় মিশির কাছে। রাগের চোটে যে নিজের কলিজায় আঘাতটা করেছে রোদ। মিশিকে গোসল করিয়ে বুকে ক্রিম লাগিয়ে খায়িয়ে বুকে নিয়ে শুয়ে পরে। ছোট্ট মিশি মা’য়ের আদরে ভুলে যায় একটু আগে যে মা মে’রেছে। মিশি ঘুমাতেই রোদ ওর কপালে চুমু খেয়ে উঠে নিজেও সব পাল্টে নেয়। ফোনটা বের করে ঠান্ডা মাথায় কাউকে ফোন করে। তারপর যেন কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারে না। ওর সাথে যা করেছে তাতে হয় তো রোদ শাসিয়ে ছেড়ে দিতো কিন্তু মেয়ের বেলায় মা নরম হয় না। না ই ছেড়ে দেয়। তখনই রণচণ্ডী রুপে এসে রোদ নিচে সবার সামনে গিয়ে আক্রমণ করে।

হঠাৎ নিচ থেকে চেচামেচির আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো রোদের। ঠোঁটের কোণে ঝুলে উঠলো বাঁকানো হাসির সুক্ষ রেখা। আদ্রিয়ান ও উঠে বিধ্বস্ত হয়ে বুক থেকে। রোদ ওর হাত ধরে বললো,
— চলুন নিচে।
আদ্রিয়ান কিছুই বলে না। রোদের সাথে নিচে যায় তখনই দেখে ফুপা আর ফুপি সমানে চেঁচাচ্ছে। জুরাইন আর জারা সাইডে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে। আসল ঘটান কেউ ই জানে না। দুই জন কালো পোশাকধারী লোক ফুপাকে দুই দিক থেকে ধরে আছে। রোদকে দেখতেই ফুপি দৌড়ে এসে ওর হাত ধরে বললো,

— বউমা। ওনাদের বলো না ওনাকে ছেড়ে দিতে।
রোদ কঠিন চোখে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো। আদ্রিয়ান অবাক হলো রোদের চিন্তায়। রোদ জানতো পুলিশ দিয়ে আজকাল ন্যায় বিচার পাওয়া ভুষির ঢেরে মধ্যে সুচ পাওয়ার সমান তাই রোদ তখন সোজা RAB ( Rapid Action Battalion) এ খবর কারণ এদের হাত থেকে এত সোজা না। রোদ তখন ইশানকেই কল করে কারণ ইশানের শশুর RAB এ আছেন। ইশানই ফোন করে জানাতেই তারা হাজির হয়েছেন। রোদ আদ্রিয়ানের হাতটা শক্ত করে মুঠ করে নিয়ে তাদের সামনে এসে ফুপার দিকে ঘৃণার দৃষ্টি ফেলে বললো,

— এই লোক শিশু মলেস্ট করেছে আর আমাকে আপত্তি কর ভাবে ছুঁয়েছে। একবার না বারবার।
বাসার সবাই মাথায় যেন বাজ পড়লো। ফুপি রোদের ব্যাপারে আঁচ করতে পারলেও মিশির কথা মাথায়ও আসে নি। ফুপি একদম শান্ত হয়ে রুমে চলে গেলেন। আর কত জীবন এভাবে পার করবেন? আর কত সবার চোখে নিচু হবেন? অতীতে ভুল আঁকড়ে না থাকলে আজ হয় তো এই দিন দেখতে হতো না।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ২৯ 

[ আজকের পর্বে কিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ ছিলো। এক সেল্ফ ডিফেন্স জানা আর দ্বিতীয়ত বাচ্চাদের দিকে খেয়াল রাখা। হাজার চাচা,মামা হোক। কার দৃষ্টি কেমন তা তো কেউ জানে না।
আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায়।]
(দেখলেন কত তাড়াতাড়ি পর্ব দিচ্ছি। এতদিন তো লেট হওয়ার বকেছেন এবার প্রশংসা করুন)

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৩০