ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪২ শেষ অংশ

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪২ শেষ অংশ
সাইয়্যারা খান

বাসায় ফিরে আদ্রিয়ান রোদকে ধরে একেবারে রুমে নিয়ে এলো। কারো সাথে কোন প্রকার বাক্য বিনিময় করতেও দিলো না। রোদ তখন ভীষণ খুশি। সবাই’কে খুশির খবর জানানোর জন্য মন আঁকুপাঁকু করছে ওর। কিন্তু আদ্রিয়ান সেটা করতে দিলে তো? এসেই রোদকে কোলে তুলে রুমের দিকে হাটা দিয়েছে। সময়টা দুপুর হওয়াতে এদিকে কেউ নেই। বাচ্চা গুলো ও নিশ্চিত আরিয়ানের রুমে। রোদ আদ্রিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

— ভাইয়ার রুমে নামিয়ে দিন আমাকে।
আদ্রিয়ান যেন রোদের কথা শুনলোই না। সোজা রুমের দিকে গিয়ে নামিয়ে রোদের ড্রেস বের করে ওয়াসরুমে ডুকে নিজেই ওকে সাহায্য করলো সব চেঞ্জ করতে। রোদের যেহেতু নিজেরও একটু দূর্বল দূর্বল লাগছে তাই আর কিছু বললো না কিন্তু খেয়াল করলো আদ্রিয়ান খুবই সুক্ষ ভাবে ওকে এরিয়ে যাচ্ছে। কোন কথা বলছে না। রোদ খুঁজে পেলো না কারণ আবার ভাবলো হয়তো অতি খুশি প্রকাশ করতে পারছে না তাই এমন।
রোদ ওয়াসরুম থেকে বের হতেই দেখলো মিশান রুমে আসছে। রোদ কিছুটা উত্তেজিত হয়ে ডেকে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— মিশান?
মিশান চমকলেও তারাতাড়ি এগিয়ে এসে বললো,
— হ্যাঁ মা। ডক্টর কি বললো?
রোদ মিশানের হাতটা নিজের পেটে দিয়ে বললো,
— তোমার আদরে ভাগ বসানোর মানুষ আসছে আব্বু।
মিশান চমকে গিয়ে হাত সরিয়ে নিলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দুই তিনবার ঢোক গিলে বললো,

— মা। সত্যি?
— হুম।
মিশান হুট করে জড়িয়ে ধরলো রোদকে। রোদও ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
— তুমি খুশি আব্বু?
— অনেক মা। আমার ছোট্ট ভাই চাই। বোন হলেও সমস্যা নেই। আমাদের পুতুল আসবে একটা। আমি অনেক আদর করব ওকে।
রোদের চোখে পানি চিকচিক করে উঠলো। মিশানকে ছেড়ে বলে উঠলো,

— মিশি কোথায়?
— খালামুনির রুমে।
— খেয়েছো তোমরা?
— না। তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। বাবা কোথায়?
— ওয়াসরুমে। যাও বোনকে নিয়ে আসো।
মিশান চলে যাওয়ার একটু পরই আদ্রিয়ান বের হলো। রোদ তখন ফোন করে করে দুনিয়া বাসিকে নিজের প্রেগন্যানসির কথা জানাতে ব্যাস্ত। ওর দুনিয়া বাসি বলতে ওর পরিবার আর চাচার পরিবার। মাত্রই তিশাকে কল করেছে। তিশা রিসিভ করতেই রোদ বলে উঠলো,

— আপি আপি জানো কি হয়েছে? আ’ম প্রেগন্যান্ট। আলহামদুল্লিলাহ।
তিশার চোখ দিয়ে পানি পরছে তখন। ছোট্ট বোনটা তো আর জানে না। আদৌও এই খুশি কি টিকবে? বহু কষ্টে বললো,
— সব মেয়েটা লজ্জা পায় আর তুই কি না ফোন করে করে সবাই’কে জাহির করছিস?
— আল্লাহ আপি কি বলো? লজ্জা কেন পাব? সন্তান তো আল্লাহর দান। তার দেয়া উপহার। রহমত। আমি কেন লজ্জা পাব?
তিশা এবার কেঁদেই দিলো। রোদ কিছু না বুঝে বলে উঠলো,

— হ্যালো আপি? তিশা আপি? তুমি কেন কাঁদছো?
নাক টেনে টেনে তিশা বললো,
— আমার পিচ্চি বোন। আল্লাহ আমার খুশিটুকু ও তোকে দিক। তুই ভালো থাক।
— এভাবে কেন বলো আপি? আল্লাহ নিশ্চিত ভালোই করবেন। আমার তৃতীয় সন্তান আসছে আপি। দোয়া করে দিও।
— আচ্ছা। আমরা আসব দেখা করতে।

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো রোদ। পাশেই আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সবটুকু কথা শুনেছে ও। মিশান আর মিশি রুমে ডুকতেই আদ্রিয়ান চলে গেল। একে একে বাসার সবাই রুমে জমা হলো। সবাই বেশ খুশি। আর রোদ? ও পারলে হয়তো লাফাতো। বাড়ীতে হইচই পরলো। আদ্রিয়ান এখন পর্যন্ত চুপচাপ। একটা রা ও করে নি। রোদ বেশ হাসিখুশি। আদ্রিয়ান শুধু সবাইকে বললো,

— রুম খালি করে দাও।
কেউ আদ্রিয়ানের এরূপ ব্যাবহারের কারণ বুঝলো না।আদ্রিয়ান খাবার টেবিলে বাচ্চাদের খায়িয়ে রোদের জন্য খাবার নিয়ে রুমে ডুকলো। রোদ তখনও আদ্রিয়ানের মায়ের সাথে গল্প করতে ব্যাস্ত।আদ্রিয়ান কিছু না বলে খাবার হাতে নিয়ে পাশে বসতেই রোদ বলে উঠলো,

— আপনি খেয়েছেন?
আদ্রিয়ান উত্তর দিলো না। ওর মা ছেলের দিকে সন্দিহান চোখে তাকালেন। আদ্রিয়ানকে কিছু জিজ্ঞেস করবে এর আগেই আদ্রিয়ান বলে উঠলো,

— আম্মু তোমার সাথে পরে কথা বলছি।
ওর মা বুঝলো কিছু একটা হয়েছে। সন্তপর্ণে দরজা ভিরিয়ে চলে গেলেন। আদ্রিয়ান রোদের মুখে ভাত তুলে দিলো। রোদ কত কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু আদ্রিয়ান মনোব্রত পালন করছে। রোদ সবটুকু আর শেষ করতে পারলো না। হঠাৎ বমি পাওয়াতে দৌড়ে ওয়াসরুমে ডুকে ভাসিয়ে দিলো। অস্থির হয়ে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদকে ধরে মুখ হাত ধুয়িয়ে দিলো।

রুমের মধ্যে ভাংচুর এর শব্দে রাতুলের মা দৌড়ে এলেন। পাগলের ন্যায় হয়ে উঠেছে রাতুল। হিংস্র ভাবে হাতের কাছেই যা পারছে ভেঙেই যাচ্ছে। ওর মা ঢোক গিললো। এগিয়ে গিয়ে রাতুল বলে ডাক দিতেই গর্জে উঠলো রাতুল,
— কেন? কেন? কেন? আমার সাথে এমন কেন করলা? কি বলে মনকে সান্ত্বনা দিব আমি? কেমন মা তুমি আম্মু? নিজের ছেলের সুখ বুঝলা না? আমাকে মৃত্যুর ঘাটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছো। আমার বুক জ্বলে যাচ্ছে আম্মু। আমার দম আটকে আসছে। ম’রে যাব আমি। আমার রোদ। আল্লাহ! কেন এমন করলা আমার সাথে? রোদ কেন দিলা না? আমি তোমাকে কখনো মাফ করবো না আম্মু। কখনোই না।

এতক্ষণ রেগে থাকলেও হঠাৎ করে কেঁদে উঠলো রাতুল। হাত পা ছড়িয়ে ফ্লোরে বসে পরলো। ভাঙা কিছুর টুকরো বিধলো পায়ে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। আজ যে নিজের জীবনকেই ভিত্তিহীন মনে হচ্ছে ওর। কেঁদে কেঁদে বললো,
— রোদ? আমার রোদ? আম্মু তুমি কি করলা? রোদ তো মা হচ্ছে মা। আমার কি দোষ ছিলো? তুমি কেন তোমার কসম দিলে? আমি তো সব মেনে নিয়েছিলাম। এখন তো সহ্য হচ্ছে না। আমার যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে। মা…..

রাতুলের মা ঢুকরে কেঁদে উঠলো। ছেলের এই অবস্থার জন্য দায়ী উনি নিজে। সবাই তো ভেবেছিলো রাতুল নতুন সংসার শুরু করেছে অথচ রাতুল সকল অনুভূতি দমিয়ে রেখেছিলো। আজ যেন সব উগড়ে বের হচ্ছে। ওর এমন চিৎকার করে কান্না করা ওর মা সহ্য করতে পারলো না। রুম থেকে চলে গেলেন নিজেও কাঁদতে কাঁদতে। এদিকে রাতুল আজ কেঁদেই চলছে। রোদ’কে ও নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছিলো।

দিশাকে বিয়ে করলেও রোদের প্রতি সুক্ষ্ম অনুভূতি গুলো ছিলো যেটা আজ প্রগাঢ় হয়েছে। পাগলের মতো হাত পা ছড়িয়ে কেঁদেই চলছে। যেই ভালোবাসাকে মা’য়ের দেয়া কসমের জন্য ছেড়ে দিলো। যেই কারণটাকে ঘিরে এতদিন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করলো রাতুল সেই সব কারণের এখন কোন ভিত্তি ই নেই। তাহলে কেন জ্বললো রাতুল? কি হতো রোদ ওর হলে? রোদকে ভুলার জন্য জীবনে দিশা’কে জড়ালো। এতটা আগালো। এতটা কাছে টানলো দিশাকে। স্বাভাবিক হলো। শেষে কি পেলো? এক বুক যন্ত্রণা?

এতসব ভাবতেই রাতুল আবারও বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো। যেন কোন ছোট বাচ্চা তার মায়ের কাছে কিছুর আবদার করে না পেয়ে জেঁদে পরে কাঁদছে।

বাসার সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ড্রয়িং রুমে। আদ্রিয়ানের চোখ দিয়ে শুধু পানিই পরছে৷ আরিয়ানই সব বললো মাত্র রোদের অবস্থা। কে কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। এ কেমন পরিস্থিতি? একটা জান এসে চলে গেল অথচ কেউ টেরই পেলো না। তারমধ্যে কি না আবারও প্রেগন্যাসিতে হাই রিক্স। এত কম্লিকেশন নিয়ে কিভাবে বাচ্চা হবে? চিন্তায় সবার ঘাম ঝরা অবস্থা।

তার থেকে বড় কথা রোদ এসবের কিছুই জানে না আর নাই আদ্রিয়ান ওকে জানতে দিবে। ভেঙে পরবে মেয়েটা। কি করবে আদ্রিয়ান? এ কেমন পরিস্থিতিতে ফেললো আল্লাহ তাকে? ডক্টর আপাতত যেগুলো বলেছে এগুলো সান্ত্বনা বাদে কিছুই না তা আদ্রিয়ান ও জানে। এখন কি করবে? কিভাবে সব সামাল দিবে? আর রোদ? ওকে কি বলবে? এই সন্তান কি আদৌও দুনিয়ায় আসবে নাকি আগের মতোই বাবা-মা’কে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে।

তখনই রোদের পরিবারের সবাই এসে হাজির হলো। তারা ঘটনা সবই জানে। মেয়ে দেখার জন্যই ছুটে এসেছে৷ আদ্রিয়ানের পরিবার তাদের আপ্যায়নের জন্য ব্যাস্ত হতে দেখেই রাদ নিষেধ করে বললো,
— ব্যাস্ত হবেন না প্লিজ। রোদ কোথায় আদ্রিয়ান?
আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে বসে আছে। ওর মা বলে উঠলো,

— রুমে ঘুমাচ্ছে বাচ্চাদের সাথে।
রাদ আরেকবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ানের চোখে মুখে অস্থিরতা যেটা দাবিয়ে রেখেছে ও। মুখ জুড়ে অপরাধ বোধ যেন সবকিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী করছে আদ্রিয়ান। কারো দিকে তাকাচ্ছে ও না। রাদ উঠে আদ্রিয়ানের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখতেই আদ্রিয়ান এক পলক তাকালো। রাদ মিহিয়ে যাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— রোদ সব জানে?
— না। দয়াকরে কিছু ওকে জানিয়ো না।
আর কিছু বললো না আদ্রিয়ান। রাদ কিছুটা বুঝলো ওর অবস্থা তাই আর ঘাটলো না। রোদের মা অনুনয়ের সুরে বললো,
— আমার মেয়েটার সাথে এতকিছু হয়ে গেলো আর আমাদের জানানোর প্রয়োজনও মনে করলেন না? আমার মেয়ে এনে দিন ওকে নিয়ে যাব আমি। আমার রোদ….
আর বলতে পারলেন না তিনি। ঝুমঝুমিয়ে কেঁদে উঠলেন। রাদ ওর মাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলো। রোদের বাবাও বললেন,

— আমরা রোদকে নিয়ে যাই। জানি এখানে ও অবহেলা পাবে না তবুও বাবা-মা’র মনতো বুঝেন ই৷ মেয়েটার এই অবস্থা…
ভদ্রলোক ও আর কিছু বলতে পারলেন না৷ মেয়েটা যে অনেক আদরের। জাইফা ও এসেছে সাথে। জারবা জাইফাকে নিয়ে রুমে গেলো। এখানে ওর অসস্তি হচ্ছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তাই দিশাই জারবা’কে বলেছে যাতে জাইফা’কে রুমে নিয়ে যায়। আদ্রিয়ান এতসবে নির্বাক। রোদের ঐসব আবদার মেনে না নিলে তো আজ এই পরিস্থিতিই আসত না। অথচ আদ্রিয়ান মনকে বুঝতে পারছে না এটাই তো স্বাভাবিক বৈবাহিক সম্পর্কে। সবটাই স্বাভাবিক শুধু বর্তমান পরিস্থিতিটা বাদে। ওনাদের আলোচনার মাঝেই হঠাৎ সিড়ির দিক থেকে রোদ জোরে ডেকে উঠলো,

— আম্মু আব্বু ভাইয়া!
সবাই চমকে তাকালো। রোদ দাঁড়িয়ে সিঁড়ির দিকে। পারে না দৌড়ে নেমে আসে। আদ্রিয়ানের বুক ধকধক করছে। রোদ যাতে দৌড়ে না নামে তার জন্য উঠে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরিয়ে পরে গেলো। রোদ ওখান থেকেই চিৎকার করে দৌড়ে নামলো। সবাই তারাতাড়ি আদ্রিয়ানকে ধরে নিচের ই একটা রুমে শুয়ে দিলো। রোদ ততক্ষণে কেঁদে দিয়েছে। অস্থির হয়ে আদ্রিয়ানের মুখে পানি ছিটিয়ে গালে আলত চাপড় মে’রে ডেকে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান উঠলো না। আরিয়ান পেশার চেক করতেই দেখলো হাই৷ তারাতাড়ি মেডিসিন দেয়া হলো। রোদ আদ্রিয়ানের হাত ধরে আনবরত কেঁদে যাচ্ছে। ওকে কেউ থামাতে পারলো না। আরিয়ান ওর হাত ধরে বললো,

— রোদ এই সময় এভাবে কাঁদে না। প্রেশার হাই। একটুপরই চোখ খুলবে৷
বলে ওর মাথায় হাত রেখে উঠে গেল। একটু পরই চোখ মেললো আদ্রিয়ান। রোদ শান্ত হলো। চিন্তিত কন্ঠে শুধালো,
— এই আপনি পরে গেলেন কেন? প্রেশার হাই কেন হ্যাঁ? আপনি আমাকে কাঁদালেন কেন? জানেন না আমাকে খুশি রাখতে হবে?
আর অভিযোগ করতে পারলো না। ঝাঁপিয়ে পড়লো ঐ একমাত্র বুকটায়। সারাটা দিন রাত এই বুকেই তো ও রাজত্ব চালায়। সকল সুখ দুঃখ বিলাস তো এই বুকেই করে। আজ নাহয় অভিযোগ গুলোও বুকে থাকুক।

রোদের মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। রোদ ওনার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
— আম্মু প্লিজ কেঁদো না। কি হয়েছে?
— রোদ মা আমার। চল তোকে নিয়ে যাব আমার সাথে।
— মানে?
— বাসায় যাবি আমার সাথে। এখনই।

— তোমার মাথা খারাপ হ’য়েছে আম্মু। উনার অবস্থা দেখেছো? তুমি কিভাবে বলো এখন আমাকে বাসায় যেতে। আর আমি কি একা? দুটো বাচ্চা আছে আমার তাদের রেখে কেন যাব আমি?
— একা কেন? আমার নাতি-নাতনীদের নিয়েই যাব।
— উহু পরে। এখন না। উনি অসুস্থ। আল্লাহ জানে প্রেশার হাই হলো কীভাবে?
রোদ যাবে না তো যাবেই না। কেউ আর রাজি করাতে পারলো না।

আদ্রিয়ানকে দেখতে রুমে যাচ্ছিলো সবাই। রোদকে দিশা ধরে ফল খাওয়াচ্ছে। দরজা পর্যন্ত যেতেই তারা থমকে দাঁড়িয়ে গেল। আদ্রিয়ান ওর মায়ের কোলে মাথা গুজে কেঁদে যাচ্ছে। এভাবে বুঝি কোন স্বামী নিজের স্ত্রীর জন্য কাঁদে?
— আম্মু? আম্মু? ওরা তো আমার রোদ নিয়ে যাবে। এই আম্মু আমি ম’রে যাব তো। না করো।

আমার রোদ তো কিছু জানে না। ওনারা বলে দিবে সব। আমার রোদ ভেঙে পরবে তো। আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছে আম্মু। আমার কি না সন্তান এসেছিলো। ও কিভাবে ওর বাবাকে দেখা না দিয়ে চলে গেল? এই আম্মু? বলো? কেউ আমার কষ্ট দেখলো না। আমার রোদকে নিয়ে যাবে। আমি কিভাবে থাকবো? বাচ্চারা কিভাবে থাকবে ওদের মা ছাড়া? আমার সন্তান আমার রোদ ওরা ঠিক থাকবে তো? আম্মু… বলো? কথা বলো?

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪২

আদ্রিয়ানের মা ছেলের মাথায় হাত দিয়ে নিজেও কেঁদে যাচ্ছেন। এ কেমন পরিক্ষায় ফেললো আল্লাহ? দরজার বাইরে সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আসলেই কেউ তো আদ্রিয়ানের দিকটা একটাবার ভাবে নি।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪৩