ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩৪

ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩৪
লেখিকা:ইশা আহমেদ

সকালে ঘুম ভাঙতেই অর্ষা দেখলো সে ইরহামের বুকে শুয়ে আছে।হাসলো অর্ষা।ইরহামের চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো।ইরহামের কপালে অধর ছুঁইয়ে দিলো।উঠতে নিলেই ইরহাম হাত টেনে ধরে।অর্ষা ইরহামের বুকে গিয়ে পরে।ইরহাম চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলে,,,

—“বউ ঘুমিয়ে থাকলে আদর করো কেনো এখন করো”
—“ছাড়ুন ফ্রেশ হবো”
ইরহাম হেসে উঠে পরে অর্ষাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।ফ্রেস হয়ে বাইরে আসে।অর্ষা মেরুন রঙের শাড়ি পরেছে।বাড়ি ভরা মেহমান।কাছের আত্নীয়রা ছাড়া সবাই কালই চলে গিয়েছে।অর্ষা নিজেকে পরিপাটি করে বের হয় রুম থেকে।ইরহাম অবশ্য মানা করেছিলো নিচে আসতে কিন্তু অর্ষা শুনেনি।কালকে কথাও বলতে পারিনি আয়রার সাথে।অর্ষা ঘোমটা টেনে নিচে রান্নাঘরে আসে।আয়রা রান্না করছিলেন।অর্ষা পাশে এসে মিষ্টি হেসে বললল,,,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—“মামনি আমি কি সাহায্য করতে পারি তোমাকে?”
—“আরে অর্ষা মা যে এতো সকালে উঠলে কেনো আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে।”
—“না না মামনি অনেক ঘুমিয়েছি এখন বলো কি কাজ করবো?”
আয়রা হেসে চা ধরিয়ে দিয়ে বলে,,,,”এগুলো একটা ইরহাম আর একটা শ্বশুর মশাইকে দিয়ে আসো আর কিছু করা লাগবে না।”

অর্ষা মিষ্টি করে হেসে পা বাড়ালো শ্বশুর মশাইয়ের রুমের উদ্দেশ্যে।কেউ এখনো উঠেনি।অর্ষা রুমের সামনে এসে মিষ্টি সুরেলা কন্ঠে বলল,,,
—“আব্বু আসতে পারি?”
ভেতর থেকে ইসফাক বলে উঠে,,,”হ্যাঁ মা আসো”
অর্ষা রুমে ঢুকলো।ইসফাক বসে ছিলেন।অর্ষা চা হাতে দিয়ে বললেন,,,,
—“এই নিন আব্বু”

ইসফাক হাসেন।চায়ে চুমুক দিয়ে বলেন,,,”এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো মা তোমার”
—“না না আব্বু আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না”
ইসফাক অর্ষার হাতে আরেকটা চায়ের কাপ দেখে বুঝলো ইরহামের জন্য সেইটা।চা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে তাই অর্ষাকে বলল,,,

—“মা যাও ইরহামকে দিয়ে আসো চা না হয় ঠান্ডা হয়ে যাবে”
অর্ষা ‘জি’ বলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।রুমে আসতেই দেখে ইরহাম ফোন ঘাটছে।অর্ষা আজকে দেখেই ছাড়বে এই লোক কি এতো দেখে ফোনে।অর্ষা নিশ্বব্দে ইরহামের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।ইরহাম ফোনে তার আঁকা ছবি দেখছিলো।যা সব কোনো মেয়ের।অর্ষা রেগে ফোনটা কেড়ে নেয় এরপর চিল্লিয়ে বলে,,,

—“আপনি অন্য মেয়েদের ছবি দেখছেন?”
ইরহাম হকচকিয়ে যায় অর্ষার ব্যবহারে।অর্ষা দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে।ইরহাম হাসে মেয়েটা ছবি গুলো ঠিকমতো না দেখেই চিল্লাপাল্লা করছে।ইরহামকে হাসতে দেখে অর্ষার রাগ আরো বাড়ে।ইরহামের কলার চেপে ধরে বলে,,,
—“আপনি এখন অন্য মেয়েদেরকে দেখছেন তার মানে আমাকে ভালোলাগে না আপনার এখন।ফাইন তাতেও সমস্যা নেই আপনার থাকতে হবে শুধু আমার সাথে”

ইরহাম হাসে অর্ষার পাগলামি দেখে।মেয়েটা তাকে অসম্ভব ভালোবাসে।ইরহাম অর্ষার কোমড় টেনে কাছে এনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
—“ছবিগুলো ভালো করে দেখা উচিত জান।কারন ওইগুলো তোমার ছবি।আর ইরহামের চরিত্র এতোটাও খারাপ না যে ঘরে সুন্দরী বউ রেখে বাইরের মেয়েকে দেখতে যাবে”

অর্ষা লজ্জা পায়।তার ছবিগুলো আসলেই ভালো করে দেখা উচিত ছিলো।অর্ষা তাকাতে পারছে না ইরহামের দিকে লজ্জায়।ইশশ কতো গুলো কথা বলে ফেললো সে।রাগ উঠলে মাথায় থাকে না কিছুই।যা মনে আসে বলে দেয়।ইরহামকে অন্যকারো সাথে দেখা সম্ভব না।ইরহাম তার শুধুই তার।ইরহাম অর্ষার কপালে নিজের অধর ছুঁইয়ে দেয়।অর্ষা শিউরে ওঠে।লোকটার স্পর্শেও কেমন মাতাল মাতাল লাগে অর্ষার।

—“জান এতোটা হিংসা করো আমায় নিয়ে।আমি শুধু তোমারই বউ”
—“হু অন্যকোনো মেয়ের দিকে তাকালে মেরে দিবো কিন্তু”
ইরহাম অর্ষার নাকে নাক ঘষে বলে,,,,”ওরে আমার গুন্ডি বউরে”
—“ছাড়ুন এখন।ইশ চা তো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।আরেক কাপ এনে দিবো”
—“চা তো খেতে ইচ্ছে করছে না বউ।আমার অন্য জিনিস খেতে ইচ্ছে করছে।আমার মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে”
—“আচ্ছা ছাড়ুন আমি মিষ্টি এনে দিচ্ছি”

ইরহাম অর্ষার ঠোঁটজোরা দখল করে নেয়।অর্ষা চোখ বড়বড় করে তাকায়।ইরহামের শার্ট খামচে ধরে।বেচারি শক খেয়েছে।ইরহাম যে এমন করবে ভাবতে পারিনি।অর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে ইরহাম ফিসফিস করে বলে,,,
—“বউ আমি এই মিষ্টির কথা বলেছি।তুমি তো দিতে চাও না তাই নিয়ে নিলাম”
—“অসভ্য লোক”
ইরহাম অর্ষাকে চোখ মেরে বলে,,,”তোমারই তো”

বিয়ের সাত দিন পার হলো।অর্ষার দিনকাল বেশ কাটছে।ইরহামের সাথে দুষ্টমি,খুনসুটিতে মেতে থাকে।আজকে ভার্সিটিতে যাবে।রেডি হচ্ছে অর্ষা।রেডি হওয়ার মাঝেই ইরহাম পেছন থেকে ঝাপটে ধরে অর্ষাকে।অর্ষা আলতো হাসে।ইরহাম ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,,,

—“বউ আই লাভ ইউ”
—“হুম ছাড়ুন রেডি হোন ভার্সিটিতে যেতে হবে”
ইরহাম হুম বলে চলে গেলো।অর্ষা নিচে নেমে দেখে ইসফাক ইলমা,আয়রা ইয়াদ বসে গল্প করছে।ও গিয়ে ধপ করে বসে পরে।সবাই হাসে অর্ষার কান্ড দেখে।মিষ্টি করে হেসে বলে,,,

—“শুভ সকাল আব্বু,মামনি, মিষ্টি পাখি,ভাইয়া”
—“শুভ সকাল অর্ষা মা”(ইসফাক)
ইলমাও হেসে বলে,,,”শুভ সকাল ভাবিমনি”
সবার সাথে গল্প করতে থাকে।ইসফাক আর আয়রার সাথে অর্ষার বন্ডিংটা খুব ভালো হয়েছে এই কয়েকদিনে।তারাও অর্ষাকে নিজের মেয়ের মতো করে রাখে।বুঝতে দিতে চায় না অর্ষা এই বাড়ির মেয়ে না বউ।ইয়াদও স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে অর্ষার সাথে।সে চায় না অর্ষা ব্যাপারটা জেনে তার সাথে কথা বলতে অস্বস্থি ফিল করুক।আগের মতো হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে।যতটা পারে ততটা থাকে।

ইরহাম নিচে আসলে সবাই মিলে একসাথে খাবার খেতে থাকে।অর্ষার চোখ জুড়ায়।এখানে এসে ইসরাকের মতো বাবা,আয়রার মতো মামনি,ছোট বোন,বড় ভাই সব পেয়েছে।ও বাড়ির থেকে এ বাড়ির সবাই তাকে কম ভালোবাসে না।ইয়াদকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখে।বড় ভাই না থাকায় অনেক আফসোস ছিলো অর্ষার এখন সেটাও পূরণ হয়েছে।আর কি চাই তার।সব কিছুই পেয়েছে।এতো ভালো পরিবার,পাগল বর।যে তাকে পাগলের মতোই ভালোবাসে।খাওয়া শেষে সকলকে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে পরে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

ইরহাম এটা ওটা বলে অর্ষাকে লজ্জা দিচ্ছে।অর্ষাও পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে।খুনসুটি করতে করতে ভার্সিটিতে পৌঁছে গেলো।অর্ষা নেমে ইরহামকে বিদায় জানিয়ে ভেতরে ঢুকলো।দৌড়ে বন্ধুদের কাছে গেলো।অনেক দিন হলো দেখা হয় না ওদের সাথে।রুশান মন মরা হয়ে বসে ছিলো।অর্ষা ধপ করে ওর পাশে বসে পরে।সবাই হাসে।অর্ষাকে ছাড়া ভার্সিটিতে আসতে কেমন কেমন লেগেছে রুশানের।বহু বছরের অভ্যাস।দুই ভাই বোন একসাথে যায় আসে সব সময়।হুট করে এমন হওয়ায় রুশানের মন খারাপ হয়েছে।

—“কিরে রুশাইন্না নতুন পাইয়া ভুইলা গেছোস পুরোনো বেস্টফ্রেন্ডরে”
রুশান মলিন হাসে।অর্ষার ভালো লাগে না।রুশান আনমনে বলে,,,
—“নতুন পাবো কোথায়?পুরোনোর জন্যই কষ্ট হয় আবার নতুন”
মুহিব পাশ থেকে বলে ওঠে,,,”মামাহ তোরে এমন ছ্যাকা খাওয়া মার্কা কথায় মানায় না।আর তোর বেস্টু মরে নাই ভাই শুধু বিয়া হইছে”
অর্ষা রুশানের গালে হাত দিয়ে বলে,,,

—“আমি জানি তোর খারাপ লাগছে একা একা ভার্সিটিতে আসতে,বাসায়ও মন টিকছে।কি করবো বল মেয়ে তো পরের বাড়ি যেতেই হবে।এই যে এখন কষ্ট হচ্ছে কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।আর যখন ইলমা তোর কাছে যাবে তখন দেখা যাবে এই অর্ষাকেই ভুলে বসে আছিস”
রুশান অর্ষাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

—“তোকে ভোলা অসম্ভব অর্ষা।তুই আমার বোন আমার বেস্টফ্রেন্ড তোর জায়গা সব সময় সবার থেকে আলাদা”
অর্ষা রুশানের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,,,”জানি আমি আর তুই ও কিন্তু আমার বয়সে ছোট বেস্টফ্রেন্ড হয়েই থাকবি”

সবাই মিলে গল্প করে।আজকে প্রথমে কোনো ক্লাস নেই।তাই গল্প করছে।ক্লাস শেষে ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছে সবাই।তার ভেতরে তিশাম আসে।তিশামকে দেখে রুশান কথা বললেও অর্ষা বলে না।ইরহাম পছন্দ করে না জেনেই কথা বলছে না।তিশাম অর্ষার কাছে এসে বলে,,,

—“অর্ষা কেমন আছো?কিছু কাজে ঢাকার বাইরে ছিলাম তাই দেখা করতে পারিনি কিছু বলতে চাই তোমাকে!”
অর্ষা জোরপূর্বক হেসে বলে,,,”জি বলুন আমার তাড়া আছে”
ইরহাম চলে এসেছে ততক্ষণে।অর্ষা ইরহামকে দেখে অর্ষা হাফ ছেড়ে বাঁচে।ইরহাম তিশামকে দেখে বিরক্ত হয়।তিশামকে দেখানোর জন্য একহাতে জড়িয়ে ধরে।সবাই মুখ টিপে হাসে।তিশাম কিছুটা রেগে যায়।ইরহামের প্রতি চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলে,,,

—“এটা কে অর্ষা তোমাকে জড়িয়ে ধরেছে আর তুমি কিছু বলছো না”
অর্ষা ইরহামের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,,,”হি ইজ মাই হ্যাসবেন্ড”
—“হুয়াট তুমি বিয়ে করেছো?”
ইরহাম গম্ভীর আওয়াজে বলল,,,

—“হ্যাঁ তো ওকে কি এখন বিয়ে আপনার কথায় করতে হবে”
ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে চলে আসলো সবাই বিদায় দিয়ে।ইরহাম আপনমনে গাড়ি চালাচ্ছে।গাড়ি এসে থামে একটা লেকে।লেকটা অসম্ভব সুন্দর।দুজন ঘাসের উপর বসে পরে।আকাশে মেঘের আনাগোনা।ইরহাম অর্ষাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩৩

—“তোমাতে মত্ত আমি প্রেয়সী,এ জীবনে ছাড়ছি না তোমায়”

ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩৫