মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৫

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৫
নূন মাহবুব

-” আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে এসব কিছুর পেছনে তুমি রয়েছো বড় আব্বু।?আমি তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেস্ট বাবা মতে করতাম।আর তুমি কিনা ? ছিঃ এমনটা কেন করলে বড় আব্বু? তুমি তো আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসো তাই না? ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে বড় আব্বু?

তুমি শুধু মাত্র একবার বলতে আমাকে তুমি চাও না, বিশ্বাস করো আমি হাসতে হাসতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতাম। তাছাড়া তুমি তো খুব ভালো করে জানো আমি উষ্ণতা ন … বাকিটা আর বলতে পারলো না শিক্ষা। শিক্ষা দেখলো সাদ্দাম শিকদার চোখের ইশারায় বারবার শিক্ষা কে তার শার্টের দিকে তাকাতে বলছে। শিক্ষা তার শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখলো, শার্টের বোতামের সাথে ছোট ক্যামেরা জাতীয় কিছু লাগানো রয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছোট ক্যামেরা দেখে শিক্ষা মনে মনে বললো, ওহ্ তাহলে এই ব্যাপার। পর্দার আড়ালে কেউ একজন এই ক্যামেরার মাধ্যমে সব দেখছে। নিশ্চয় ‌সে ইচ্ছা করে বড় আব্বু কে এসব করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু বড় আব্বু তো জানে আমি এসিপির মেয়ে উষ্ণতা ন‌ই‌। আমি শিক্ষা। তবু ও বড়ো আব্বু এমন টা কেন করছে? কি এমন পিছুটান রয়েছে বড়ো আব্বুর যার জন্য সে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তির জায়গায় নিজে আত্মসমর্পণ করতে চায়ছে?

সাহিত্য হয়তো এতক্ষণে জেনে গিয়েছে আমি কোথায় আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো এইখানে চলে আসবে। সবাই তো ভাববে বড়ো আব্বু আসল অপরাধী। তো ও মাই গড! আমি এখন কিভাবে বাঁচাবো বড়ো আব্বু কে? শিক্ষার ভাবনার মাঝে সাদ্দাম শিকদার বললো,

-“আমাকে এইখানে দেখে খুব অবাক হয়েছিস তাই না? হ্যাঁ এটাই আমি।এটাই আমার আসল পরিচয়। আমি একজন অপরাধী, একজন খু’নী।এ পর্যন্ত যে কয়টা মেয়ে খু’ন হয়েছে সবগুলো খু’ন আমি করেছি।আর এখন তোকে ও মা’র’বো। এছাড়া আরো একটা পরিচিয় আছে আমার। বিজনেস এর নামে কালো টাকার ব্যবসা করি আমি।”

-” আমি বিশ্বাস করি না। তুমি আমার দেখা সবচেয়ে ভালো বাবা।আমাকে তুমি অনেক ভালোবাসো। যে মানুষ টা কখনো আমার গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দেয় নি। সেই মানুষটা আমাকে মা’র:তে চায়, এটা আমি কখনো বিশ্বাস করবো না। আমি জানি কেউ তোমাকে ফাঁসাতে চায়ছে।আসল অপরাধী সামনে আসতে চায়ছে না। তুমি কেন নিজের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছো? কি এমন দূর্বলতা আছে তোমার?”

-“অনেক সময় আমরা যা চোখের সামনে দেখি সেসব সত্যি হয় না। তেমনি ও তোর প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো লোক দেখানো। আসলে আমি কখনো তোকে ভালোবাসি নি।সবটা আমার নাটক ছিলো। আমি জানতাম তুই আমার চরম শত্রু এসিপির মেয়ে উষ্ণতা।তাই তো তোর সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি। ঠিক যেমন গরু ছাগল কে কোরবানি করার আগে আদর যত্ন করে খাওয়ানো হয়।তেমনি আমি ও তোকে মা’রা’র আগে আদর ভালোবাসা দিয়েছি।আর আজ নিজে হাতে তোকে শেষ করবো।”

-” শিক্ষা কিছু একটা ভেবে সাহিত্য শিকদার কে বললো, ঠিক আছে বড়ো আব্বু। তুমি আমাকে নতুন একটা জীবন দিয়েছিলে।এখন তুমি আবার আমাকে মা’র’তে চাও,মা’রো। আমি হাসিমুখে মৃ’ত্যু কে বরণ করে নিবো। কিন্তু তার আগে প্লিজ একবার আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দাও। আমি শেষ বারের ‌মতো তোমাকে একটা বার জড়িয়ে ধরতে চাই। তোমার বুকে মাথা রাখতে চাই। এরপর আমি ম’রেও শান্তি পাবো।”

-” অন্ধকার রুমের মধ্যে কেউ একজন সাদ্দাম শিকদারের সাথে থাকা ক্যামেরার মাধ্যমে সবটা দেখছিলো। শিক্ষার কথা শুনে তৎক্ষণাৎ সে সাদ্দাম শিকদার কে কল করে বলে, মেয়ে টার শেষ ইচ্ছা পূরণ করে দে।তবে হ্যাঁ একদম চালাকি করার চেষ্টা করবি না। তাহলে কিন্তু এইদিকে দুম করে বোম ব্লাস্ট হয়ে যাবে।হা হা হা।”

-” লোকটার কথা শুনে সাদ্দাম শিকদার শিক্ষার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। শিক্ষা দৌড়ে এসে সাদ্দাম শিকদারের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কৌশলে তার সাথে থাকা ক্যামেরা নিচে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে, তুমি এখান থেকে চলো বড় আব্বু। আমি কিছুতেই তোমাকে অন্যের দোষ নিজের ঘাড়ে নিতে দিবো না।”

-” তুই কেন বুঝতে চায়ছিস না আমি যদি সিআইডির হাতে আত্মসমর্পণ না করি , তাহলে তুই তোর আপনজন হারিয়ে ফেলবি।”
-” আমি কিছু শুনতে চাই না বলে শিক্ষা সাদ্দাম শিকদারের হাত ধরে বন্ধ কারখানা থেকে বের হওয়ার আগেই কয়েকজন গুন্ডা এসে তাদের উপর অ্যাটাক করে।

-” সাহিত্য আর নির্জন গাড়ি করে স্মৃতির নগর আসার উদ্দেশ্য র‌ওনা হয়েছে এমন সময় সাহিত্যের ফোনে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল আসে। সাহিত্য ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে বলে, আসল অপরাধী খুঁজে চলেছো তাই না অফিসার? কিন্তু আসল অপরাধী নিজের বাড়িতে থাকলে তাকে এতো সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না অফিসার।”

-” কে আপনি? আর ঠিক কি বলতে চায়ছেন?”
-” আমি এটাই বলতে চায়ছি যে এসব কিছুর পেছনে রয়েছে তোমার বাবা সাদ্দাম শিকদার। বর্তমানে সে শিক্ষা কে স্মৃতিনগরের একটা বন্ধ কারখানায় নিয়ে এসেছে তাকে মা’রা’র জন্য। ”
-” কি যা তা বকছেন আপনি? আপনার কাছে আদৌ কোনো প্রমাণ আছে যে আমার বাবা এসব কিছু করছে?”

-” আমি কথাতে ন‌ই কাজে বিশ্বাসী।তোমাকে কিছু ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি ,দেখে নিও।আরো একটা কথা। তোমার বাবা শুধু মাত্র একজন খু’নী নয়। তোমার বাবা কালো টাকার ব্যবসা করে।যার প্রমাণ তোমার বাবার লকারে পেয়ে যাবে। তারপর বুঝতে পারবে আমি আসলে সত্যি বলেছি নাকি মিথ্যা বলে ফোন কেটে দেয় অজানা লোকটা।আর তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের ফোনে কয়েক টা ছবি আসে।

যা দেখে ধমকে যায় সাহিত্য।তখনি সাহিত্যের মনে পড়ে যায় কামরুলের বলা কথাটা, ধরুন আপনার বাবা একজন অপরাধী। এখন আপনি তার ছেলে হয়ে পারবেন তার হাতে হাতকড়া পরাতে?সাথে সাথে সাহিত্যের চোখ ভিজে যায়।যা দেখে নির্জন বলে,কি হয়েছে? কার ফোন ছিলো? হঠাৎ করে তোর মুখের ডিসপ্লে বদলে কেন কেন?”

-” সাহিত্য নির্জনের কথার উত্তর না দিয়ে গাড়ি থামিয়ে বললো, তুই এক কাজ কর। তুই তাড়াতাড়ি করে স্মৃতিনগর চলে যা।আমি বাড়িতে যাচ্ছি।”
-” কেন?”
-” রহস্যের উন্মোচন করতে।”
-” তুই কি বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”

-” তোকে যেখানে যেতে বলছি যা।আশা করি ঐখানে গেলে তোর সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি বলে সাহিত্য গাড়ি থেকে নেমে নিজের বাড়িতে এসে কলিং বেল দিতেই অন্তরা দরজা খুলে দেয়।অন্তরা দরজা খুলে এই সময় সাহিত্য কে বাড়িতে দেখে জিজ্ঞেস করে, তুমি এখন এই সময়ে বাড়িতে? শরীর ঠিক আছে তো ?”

-” সাহিত্য অন্তরার কথার পিঠে কথা না বলে দৌড়ে সাদ্দাম শিকদারের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সাদ্দাম শিকদারের লকার ভেঙ্গে দেখে সেইখানে সত্যি সত্যি কালো টাকা দিয়ে ভর্তি রয়েছে। মূহুর্তের মধ্যে সাহিত্যের চোখ ছলছল করে ওঠে। সাহিত্য চিৎকার করে বলতে লাগলো, তার মানে লোকটা সত্যি বলেছে। না এটা হতে পারে না। আমার বাবা অপরাধী হতে পারে না।

কখনোই না বলে সাহিত্য লকারের সমস্ত জিনিস বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে আসতে যেয়েও হঠাৎ একটা ছবি মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সাহিত্য দাঁড়িয়ে যায়। সাহিত্য মেঝে থেকে ছবি টা তুলে নিয়ে ভালো করে দেখে বলে,ও মাই গড! তার মানে শিক্ষা আর কেউ নয় স্বয়ং …।আর বাবা এতো বড়ো একটা কথা আমাদের থেকে লুকিয়ে রেখেছে । কিন্তু কেন? কি এমন কারণ আছে এর পিছনে?

-” প্রায় ঘন্টা খানেক পরে নির্জন স্মৃতিনগর এসে পৌঁছায়। এইখানে এসে শিক্ষার ফাইটিং করা দেখে যতটা না অবাক হয় তার থেকে বেশি অবাক হয় সাদ্দাম শিকদার কে দেখে। নির্জনের বুঝতে বাকি থাকে না সাহিত্য তখন কোন রহস্য উন্মোচন করার কথা বলছিলো।

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৪

নির্জন ভাবে তার মানে সত্যিই সাদ্দাম আঙ্কেল এসব করেছে। নির্জন এগিয়ে এসে সবে তার বন্দুক বের করেছে এর‌ই মধ্যে একটা গুন্ডা পেছন থেকে রড দিয়ে শিক্ষার মাথায় আঘাত করে। মূহুর্তের মধ্যে শিক্ষার চোখে অন্ধকার নেমে আসে। ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে শিক্ষা।”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৬