মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ৩৩

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ৩৩
নূন মাহবুব

-” বাসর ঘরে ফুলে ফুলে সজ্জিত বিছানায় এক হাত ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে শিক্ষা।তার ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে।যার সাথে আজ দ্বিতীয় বার আবারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে সমস্ত নিয়মনীতি শেষ করে জাকিয়া জেসমিন তাকে এই রুমে রেখে গিয়েছে।আর যাওয়ার সময় তাকে নানা রকমের কথা বলে লজ্জায় ফেলতে ভুলে যায় নি বুড়ি টা। তিনি আজ খুব খুশি হয়েছেন।

শিক্ষা কে ভালোবেসে নিজের বালা দুটো পরিয়ে দিয়েছে। শিক্ষা সাহিত্য দুজনেই জাকিয়া জেসমিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। জাকিয়া জেসমিন এর জন্যে ই হয়তো তারা দুজন দুজনকে আবার নতুন করে চিনতে পেরেছে,ভালোবাসতে পেরেছে। যদিও প্রথম বার জাকিয়া জেসমিন এর কথা রাখতে গিয়ে তাদের বিয়ে হয়েছিলো। তবু ও বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের জোরে হয়তো দুজন দুজনের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে।যে ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পাবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুটি হৃদয় এক হবে। শিক্ষা সেই কবে থেকে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছে। অথচ আজ যখন সেই কাঙ্খিত দিন উপস্থিত হয়েছে, তখন হাজারো ভয় ভীতি অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে শিক্ষা কে। শিক্ষা ঘোমটা হালকা উঁচু করে রুমের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। খুব সুন্দর করে রুমটা সাজানো হয়েছে। চারিদিকে ফুল আর ক্যান্ডেল লাইট দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে। মোটামুটি মোহনীয় একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষা নিজের মতো করে ভাবছে হঠাৎ খট করে দরজা টা খুলে গেল।সাথে সাথে যেন শিক্ষার কলিজা ছ্যাত করে উঠলো। অজানা এক অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি হলো তার।মনে হলো যেন এই প্রথমবারের মতো সাহিত্য কে দেখছে। অথচ সাহিত্য তার কতো বছরের চেনা জানা। সাহিত্য এসে নিঃশব্দে শিক্ষার পাশে বসলো। হালকা নড়েচড়ে বসলো শিক্ষা। সাহিত্য শিক্ষার মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেললো। ঘোমটা সরাতেই শিক্ষার মায়াবী মুখ টার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে সাহিত্য বললো, আমাকে নতুন করে মা’রা’র প্ল্যান করছিস নাকি? এতো সাজুগুজু করতে কে বলেছে তোকে?”

-” আপনাকে আমার দিকে তাকাতে কে বলেছে?আজ মিষ্টি কথায় কোনো চিঁড়ে ভিজবে না। আমি ভুলে যাই নি আমাদের বিয়ের প্রথম দিনের কথা। আপনি আমাকে অপমান করে বিছানা থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন।আমাকে চোর অপবাদ দিয়েছিলেন।”

-” আগের করা সব অপমান আজ ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবো। কথা দিচ্ছি আজ থেকে আর কখনো সুখের কান্না ছাড়া তোর চোখে দুঃখের কান্না আসতে দিবো না। আমার ভালোবাসার চাদরে তোকে মুড়িয়ে রাখবো। এখন যা তো তোর এই ডাইনী রুপ ধুয়ে নিজের রুপে ফিরে আয়। যেকোনো সময় আমার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।”

-” আমি ডাইনী?”
-” ডাইনী না হলে কেউ বরের বুকে লা’থি মা’র’তে পারে?”
-” শিক্ষা কটমটে চোখে সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে একটা সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেল। শিক্ষা প্রায় দশ মিনিট পরে ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢোকার সাথে সাথে গিটারের টুংটাং আওয়াজ শুনতে পায়। শিক্ষা শব্দ অনুসরণ করে বেলকনিতে চলে আসে। শিক্ষা কে দেখে সাহিত্য মিষ্টি হেসে গান গায়তে শুরু করে।

” প্রথম দেখাতে মনটা পড়েছে দোটানাই
সকাল বিকাল রাত কে’টে যাই তোর প্রেমের ভাবনাই।ও প্রথম দেখাতে মনটা পড়েছে দোটানাই, সকাল বিকাল রাত কে’টে যাই তোর প্রেমের ভাবনাই।

ও তুই কেনো রে ঘুরিস আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে ? ভুলতে চাইলেও তোরি কথা কেন মনে পড়ে?ও তবে কি তুই একটাই মানুষ আমার এই জীবনে?তোকে ভালোবাসি কতো আমার মন জানে। আমি যেদিকে তাকাই দেখি তুই সবখানে।তোকে ভালোবাসি কতো আমার মন জানে। আমি যেদিকে তাকাই দেখি তুই সবখানে।”

-” থামলেন কেনো? ভালো লাগছিলো শুনতে। আপনার এতো ভালো গানের গলা আগে জানতাম না।গান টা কি আমার উদ্দেশ্য গেয়েছেন?”
-” না! আমার মিষ্টি অঙ্গনার জন্য।”
-” অঙ্গনা আবার কে?”
-” তোর সতীন গা’ধা ।”

-” বাসর রাতে ও আপনি আমাকে বকাঝকা করছেন। আমি থাকবো না আপনার রুমে। আমি আমার রুমে চলে যাচ্ছি বলে শিক্ষা পা বাড়ানোর আগেই সাহিত্য বললো,আরে অঙ্গনা হচ্ছে ব‌উ শব্দের সমার্থক শব্দ।আজ থেকে তোকে আমি শিক্ষা না অঙ্গনা বলে ডাকবো বলে সাহিত্য শিক্ষার হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং পরিয়ে হাতে চুমু খেয়ে বললো, রিং টা দারুন মানিয়েছে তোর হাতে।এই রিং টা সবসময় তোর হাতে পরে থাকবি। যখন আমি থাকবো না তখন এই ….. বাকিটা বলতে পারে না সাহিত্য।তার আগেই শিক্ষা টলমলে চোখ নিয়ে সাহিত্য কে জড়িয়ে ধরে বলে, থাকবো না মানে কি হ্যাঁ? আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবেন আপনি?”

-” সাহিত্য শিক্ষার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,আবারো কান্না করছিস তুই?তোর সুখের দিন ফিরে এসেছে। এরপর যদি আর কখনো তোর চোখে পানি দেখেছি , তাহলে খুব খারাপ হবে কিন্তু।আর কোনো দুঃখ নয়,আমরা সবাই মিলে খুব সুখে শান্তিতে বসবাস করবো।এখন অফিসে ও তেমন ঝামেলা নেই।কেসটা সলভ হয়ে গিয়েছে। আমি এখন ছুটিতে আছি। ভাবছি কাল তোকে নিয়ে প্রিয়তমা সিনেমা দেখতে যাবো।যাবি তুই?”

-” না না । আমি ওসব স্যাড এন্ডিং সিনেমা দেখতে পারি না।”
-” আমাদের জীবন নাটক, সিনেমার থেকে ও নাটকীয়। প্রিয়তমা সিনেমা তে ইধিকা মা’রা যায়। কিন্তু তার ভালোবাসা ম’রে না। তার ভালোবাসার মানুষ তার আশায় পথ চেয়ে বসে থাকতে থাকতে জীবনের অন্তিম মুহূর্তে পৌঁছে যায়। আমার জীবনেও যদি এমন ঘটনা ঘটে? যদি ইধিকার মতো আমি ও মা’রা যাই , তুই কি আমার মিষ্টি অঙ্গনা হয়ে আমার পথ চেয়ে বসে থাকবি? নাকি অন্য কারো বুকে সুখ খুঁজে নিবি?”

-” এমনটা বলবেন না প্লিজ সাহিত্য। আমার কষ্ট হয় তো। আপনি ছাড়া আমি আমার অস্তিত্ব কল্পনা ও করতে পারি না।যবে থেকে আপনাকে ভালোবাসে আমার মনের উঠোন জুড়ে শুধু মাত্র আপনার নাম লিখিয়েছি ,তবে থেকে আপনি আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গিয়েছেন। শুধু মাত্র আপনাকে ভালোবাসি বলে আপনার করা অন্যায় , অপমান মুখ বুজে সহ্য করেছি আমি।আপনাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজে পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছি।

যে জীবনে আপনি থাকবেন না , সেই জীবন প্রয়োজন নেই আমার। যদি কখনো আপনার কিছু হয়ে যায়, সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার সাথে সাথে আমার মৃ’ত্যু ও নির্ধারণ করে দেন। আমরা দুইজন বাঁচার হলে একসাথে বাঁচবো,ম’র’ণ হলে দুজন একসাথে ম’র’বো। ইতিহাসের পাতায় নতুন এক প্রেমের গল্প রচনা করবো। যেমন টা করেছিলেন লাইলি মজনু, শিরি ফরহাদ, মমতাজ, শাহাজাহান, রোমিও জুলিয়েট। আপনি যদি আর কখনো এমন কথা বলেন আমি কিন্তু সোজা পাপা কে নিয়ে পাপার বাড়ি চলে যাবো।”

-” ঠিক আছে আর কখনো বলবো না ।তবে তুই কি আমাকে কথা দে যায় হয়ে যাক না কেন তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না।”
-“কথা দিলাম সারাজীবন আপনার পাশে আপনার ছায়া হয়ে থাকবো।কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।আই লাভ ইউ সাহিত্য।”

-” আই লাভ ইউ টু বলে সাহিত্য শিক্ষা কে পাঁজা কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিয়ে শিক্ষার একদম কাছে চলে যায়। সাহিত্যের প্রতিটি গরম নিঃশ্বাস শিক্ষার মুখে আঁচড়ে পড়ছে। শিক্ষা চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ৩২

বুকের ধুকপুকানি খুব জোরে জোরে বিট হচ্ছে তার। দুজনের মধ্যে দূরত্ব ঘুচে আসছে। সাহিত্য সবে শিক্ষার দিকে অগ্রসর হতে যাবে তার আগেই কর্কশ শব্দে সাহিত্যের ফোন বাজতে শুরু করে। সাহিত্য বিরক্তিতে মুখ থেকে চ জাতীয় শব্দ বের করে বলে, বিধাতা হয়তো চায়ছেন না তোর আমার মিলন হোক।

মনের উঠোন জুড়ে শেষ পর্ব