মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ৩১

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ৩১
নূন মাহবুব

-” সে এইখানে আমাদের মধ্যেই উপস্থিত আছে।সে বাইরের কেউ নয় বরং সিআইডি অফিসারদের মধ্যেই একজন।এক কথায় যাকে বলে ঘরের শত্রু বিভীষণ।”
-” সিআইডি অফিসারের মধ্যে একজন বলতে কাকে বুঝাতে চায়ছো তুমি?”
-” শিক্ষা নম্রতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, মিস নম্রতা মির্জা সত্যি কথা টা কি আমি বলবো নাকি আপনি নিজের মুখে সবটা স্বীকার করবেন?”

-” নম্রতা কপালের ঘাম মুছে আমতা আমতা করে বললো, হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস হয় কি করে আমার দিকে আঙ্গুল তোলার? তুমি জানো কাকে কি বলছো তুমি?”
-” হ্যাঁ জানি তো। বর্তমানে আপনার পরিচয় আপনি একজন ক্রি’মি’না’ল। আমার মা খালার মতো আপনি ও একজন অপরাধী।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” তুমি কিসের ভিত্তিতে বলছো আমি একজন অপরাধী? কোনো প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”
-” আপনি আসলে একটা কাঁচা খেলোয়াড়। কিন্তু আমি আপনার মতো কাঁচা খেলোয়াড় ন‌ই।তো মিস নম্রতা মির্জা আপনি সবসময় হাতে একটা রিং পরে থাকতেন তাই না।”

-” হ্যাঁ রিং টা ডায়মন্ডের। আমার অনেক পছন্দের রিং। আমার আঠারো তম জন্মদিনে পাপা আমাকে গিফট করেছিলো।”
-” আমি যেদিন প্রথম আপনাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম সেদিন রিং টা আপনার হাতে দেখেছিলাম। আবার যখন অফিসে গিয়েছিলাম তখন ও আপনার হাতে দেখেছিলাম। কিন্তু রিং টা এই মুহূর্তে আপনার হাতে দেখতে পাচ্ছি না। কেন বলুন তো?”

-” ঐ দামি রিং তো! কেউ হয়তো চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। যদিও রিং টা হারিয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে, তবু ও ব্যাপার না।পাপা বলছে আমাকে সেম ডিজাইনের আর একটা রিং কিনে দিবে।”
-” আপনি আসলে একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি। ঠিক মতো সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথাটা ও বলতে পারেন না।”
-” তুমি এসব বলে কি প্রমাণ করতে চায়ছো? আমি এসবে জড়িত রয়েছি? আমার রিং হারিয়ে যাওয়ার সাথে এই কেসের কি সম্পর্ক?”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ তার জিন্সের পকেট থেকে একটা রিং বের করে নম্রতার সামনে ধরে বললো,কারণ রিং টা চুরি হয় নি ‌।এটা আমার কাছে? রিং টা আমি কোথায় পেয়েছি জানতে চায়বেন না?”
-” কোথায়?”

-” স্মৃতিনগরে যে কারখানায় আমাকে আটকে রাখা হয়েছিলো সেইখানে।আমি ঐ কারখানায় আপনার গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম।এটাও শুনতে পেয়েছিলাম কেউ একজন আপনার কাছে পঞ্চাশ লাখ টাকা দাবি করছিলো।আর যখন আপনি তাকে টাকা দিতে নারাজ হন তখন সে আপনার মুখোশ খুলে দেওয়ার হু’ম’কি দেয়।যা শুনে আপনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন না। আপনি তাকে থা’প্প’ড় মে’রে দেন। শুরু হয় আপনাদের মধ্যে হাতাহাতি।আর এক পর্যায়ে এই রিং টা আপনার হাত থেকে খুলে পড়ে যায়।কি আমি ঠিক বলছি তো?”

-” সবটা যখন জেনে গিয়েছো তখন আর বাকিটা লুকিয়ে রেখে কি লাভ? হ্যাঁ আমি গিয়েছিলাম স্মৃতিনগরে।আর তোমাকে মা’রা’র জন্য তোমার খালামনি কে সাহায্য করেছি। নম্রতার কথা শুনে এসিপি সাইফুজ্জামান এসে ঠাস করে নম্রতার গা’লে থাপ্পড় দিয়ে বললো, ছিঃ !আমি ভাবতেও তুমি এরকম একটা নিচ কাজ করতে পারো। আইনের লোক হয়েও অপরাধী কে অপরাধ করতে সাহায্য করেছো? কিন্তু কেন?আবার রাবিহার মতো এটা বলো না যে তুমি ও যা করছো ভালোবাসার জন্য করেছো।”

-“হ্যাঁ স্যার ভালোবাসার জন্যেই করেছি।আমি সাহিত্য স্যার কে ভালোবাসতাম। ইনফ্যাক্ট সাহিত্য স্যারের জন্য ই আমার সিআইডি তে আসা। নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসতাম সাহিত্য স্যার কে। আমার মনের উঠোন জুড়ে তার ছবি এঁকেছিলাম।তাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু কিছুদিন আগে বর্ণের থেকে জানতে পারি সাহিত্য স্যার বিবাহিত।আর এই শিক্ষা স্যারের বিবাহিত স্ত্রী। শিক্ষা কে আগে থেকেই আমার সহ্য হতো না।

তারপর যখন আবার জানতে পারলাম ও আমার আর সাহিত্য স্যারের মাঝে একটা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে,তখন আমার মনে হচ্ছিল ওকে শুট করে দেই। কিন্তু আইনের কাছে আমার হাত বাঁধা ছিলো।পরে ভাবলাম শিক্ষা কে যেহেতু কেউ মা’র’তে চায় , আমি যদি তাকে সাহায্য করি তাহলে আমার রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ব্যাস আমার পাপার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমি পৌঁছে গেলাম আসল খু’নী পর্যন্ত।আর তোর ব্যাপারে ও সবটা যেনে গিয়েছিলাম যে তুই আসল উষ্ণতা।তোর খালামনি কে আমি তোর ব্যাপারে সবটা জানিয়েছিলাম।যার কারণে সে আজ তোর অব্দি পৌঁছাতে পেরেছে।”

-” এর‌ই মধ্যে সাইফুজ্জামান বললো, তুমি ভেবেছিলে এই কাজে তুমি যদি তাকে সাহায্য করো , তাহলে তোমাকে কেউ সন্দেহ করবে না।কারণ তুমি একজন সিআইডি অফিসার।”
-“হ্যাঁ স্যার।আমি চেয়েছিলাম যাতে সাপ ও ম’রে আর লাঠি ও না ভাঙ্গে।”

-“বাহ্ দারুন প্ল্যান করছিলে তুমি নম্রতা। কিন্তু সফল হতে পারলে না। তুমি একজন সিআইডি অফিসার , একটা মন্ত্রীর মেয়ে ও জঘন্য একটা কাজ করছো।এই কথাটা যখন মিডিয়ার লোকেরা জানতে পারবে তখন কি হবে বলো তো? লোকে ছিঃ ছিঃ করবে। তুমি যে সিআইডি ডিপার্টমেন্টের একজন ভাবতেই আমার ঘৃণা লাগছে।তোমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো। তোমার ব্যাজ , তোমার বন্দুক দিয়ে দাও আমার কাছে।”

-” সরি স্যার আমার ভুল হয়েছে। এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
-” ঠিক ভুলের বিচার আগে করা উচিত ছিলো তোমার।এখন তোমার সাথে ও সেটা হবে যেটা অন্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে হয়।”

-“স্যার আমরা মিডিয়ার লোকেরা জানতে পেরেছি যে এসিপি রায়হান মীরের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে তার প্রাক্তনের হাত রয়েছে? আর যে চার টা মেয়ে খু’ন হয়েছে সেগুলোও নাকি স্যারের প্রাক্তন করছে। এগুলো কি সত্যি স্যার?”
-” হ্যাঁ সত্যি। তোমাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছো। এবার দয়া করে যাও অফিস থেকে। আমাদের কে আমাদের কাজ করতে দাও।”

-” স্যার স্যার আমরা এটাও জেনেছি যে মন্ত্রীর মেয়ে ,যে কিনা নিজে একজন সিআইডি অফিসার ,সেও নাকি এই কেসের সাথে যুক্ত আছে।আপনারা তার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিয়েছেন কি? নাকি সে সিআইডি অফিসার বলে তার করা অপরাধের কোনো শাস্তি হবে না?”

-” অবশ্যই হবে।আইন কোনো মন্ত্রীর মেয়ে, এসিপির প্রাক্তন চিনে না। আইনের চোখে সব অপরাধী সমান , পেছন থেকে বললেন মন্ত্রী মশায়। মন্ত্রী কে সিআইডির অফিসে পেয়ে যেন মিডিয়ার লোকেরা আকাশের চাঁদ হাতে পেল।তারা মন্ত্রী কে জিজ্ঞেস করলো, স্যার আপনি নিশ্চয় জানতে পেরেছেন আপনার মেয়ে একজন অপরাধী।তো এখন আপনার মেয়ের ব্যাপারে কি বলবেন?”

-” আমার কোনো মেয়ে নেই। আমার একটা ছেলে,বর্ণ মির্জা ।আশা করি তোমাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছো বলে মন্ত্রী অফিস থেকে প্রস্থান করলেন।”

-” শিকদার ভিলায় যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে। বাড়িটা কয়েক টা দিন যেন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিলো। সাদ্দাম শিকদার নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বাড়ি ফিরে আসাতে সকলের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে।অন্তরা শিকদার বারবার তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তাকে ভুল বোঝার জন্য। সাদ্দাম শিকদার ও তার সহধর্মিণী কে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

কারণ তিনি জানেন তার স্ত্রী তাকে কতোটা ভালোবাসে। সাদ্দাম আর অন্তরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। কাজের মেয়ে সাথী গিয়ে দরজা খুলে দেখে স্বয়ং মন্ত্রী মহোদয় এসেছেন তাদের বাড়িতে।আর তার সাথে রয়েছে নানা ধরনের ফলমূল, মিষ্টি। মন্ত্রী কে দেখে সাদ্দাম এগিয়ে এসে নিজেদের মধ্যে কুশলাদি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মন্ত্রী মহোদয় বলেন, তোমার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছি সাদ্দাম ‌।”

-” আপনি যে আমার বাড়িতে এসেছেন এটা আমার পরম সৌভাগ্য । এইভাবে বলবেন না প্লিজ।”
-” দেখো সাদ্দাম ! আমি আমার মেয়েটাকে অনেক আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছিলাম। কখনো কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখি নি। আমার এতো টাকা পয়সা ধন দৌলত থাকার পরেও শুধুমাত্র ওর কথায় ওকে সিআইডি তে পাঠিয়েছিলাম।

ভেবেছিলাম হয়তো ও দেশের জন্য কাজ করতে চায়। কিন্তু কখনো ভাবিনি ও আবেগের বশে এমন একটা নিকৃষ্ট কাজ করে বসবে। আমার মেয়েটাকে তো হারিয়ে ফেলেছি।বুকটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এখন আমার এই শূন্যতা পূরণ করার জন্য তোমার মেয়েটা কে আমার চাই সাদ্দাম।ও আমার বউমা নয়, আমার নম্রতা হয়ে থাকবে।”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ৩০

-” সাদ্দাম শিকদারের যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে মন্ত্রী তার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। তিনি কিছু টা ভেবে বললেন, আপনার মতো একজন বড়ো মনের মানুষের থেকে এমন প্রস্তাব আমি সত্যিই আশা করি নি। কিন্তু আমি ততোক্ষণে আপনাকে এই ব্যাপারে কথা দিতে পারছি না যতক্ষণ না আবৃত্তি চায়ছে। আবৃত্তি যদি চায় তাহলে অবশ্যই এই বিয়ে টা হবে।”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ৩২