ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪০ শেষ অংশ

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪০ শেষ অংশ
সাইয়্যারা খান

[ রোম্যান্টিক পর্ব পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
দিশা বসে আছে বেশ সাজানো গোছানো ফুলে সজ্জিত বিছানায়। চারদিকে শুধু যেন ফুলের সমারোহ। দিশা অবশ্য সব ভারি কাপড় পাল্টে পাতলা একটা শাড়ী পড়েছে। চমৎকার শাশুড়ী পেয়েছে ও। নিজে এসে দিশার সব গোছগাছ করে দিয়েছে। দিশার পাশেই ফুলে সজ্জিত খাটে রুদ্র বসে ফোন টিপছে।

কনের সাথে এসেছে মূলত। দুই বাড়ী পরেই তাই সমস্যা নেই। চলে যাবে কিন্তু সমস্যা বাঁধিয়েছে দিশা। রুদ্রকে বলেছে যাতে এখন না যায়। রুদ্র ও বড় বোনের কথা না ফেলে বোনেরই বাসর ঘরে বিছানা দখল করে চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে দিশার ফোন টিপছে। দিশাও রুদ্রর পাশেই হেলান দিয়ে বসে আছে। মাঝে মধ্যে টুকটাক কথা হচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতুল পাতলা একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে ডুকলো। ডুকেই চোখ চড়কগাছ! এমনও বাসর রাত হয়? শালা কি না ওর বাসর ঘরে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে তার পাশেই সদ্য বিয়ে করা বউ। অসহায় রাতুল রুমে ডুকতে হেজিটেশনে পড়ে গেলো। কোথায় বসবে? এত বড় দামড়া শালার সামনেই কি নতুন বউয়ের সামনে গিয়ে বসবে নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে? অনেক চিন্তাভাবনা করে রাতুল রুদ্র’র পাশেই গিয়েই বসলো৷ বসতেই ফোনের মধ্যে চোখ রেখে চওড়া গলায় রুদ্র কিছুটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

— আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই।
হঠাৎ রুদ্রর দুলাভাই ডাকে আর এভাবে চিৎকার করাতে রাতুল ভরকে গিয়ে তারাতাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। ততক্ষণে দিশাও তাকালো রাতুলের দিকে। কিছু না বুঝে দিশা জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে? এমন করলেন কেন?
রাতুল কিছুটা অসহায় গলায় বলে উঠলো,

— কই না তো? রুদ্র কি এখানেই থাকবে?
— এটা কেমন কথা রাতুল ভাই? আমাদের পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য ও। নিজের বোনের সাথে থাকতেই পারে।
রাতুল কি আর বলবে? দিশা পাশ ফিরে শুয়ে পরলো। রাতুল তখনও আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে। রুদ্র হঠাৎ ডেকে উঠলো,
— দুলাভাই?
— হু।
— সালামের জবাব দিলেন না?
— ওয়ালাইকুম আসসালাম।
— হুম।
বলে রুদ্র আবার ফোনে মনোযোগ দিলো। রাতুল দেয়ালে হেলান দিয়ে নিজের অদ্ভুত বাসর দেখতে লাগলো।

রাত প্রায় ১ টা বাজে। এমন সময় রাতুলের কল পেয়ে রাদ কিছুটা চমকালো। মাত্রই জাইফা ঘুমিয়েছে তাই কলটা রিসিভ করে ব্যালকনিতে এসে বললো,
— কিরে ব্যাটা বিয়ে করে বউ রেখে আমার কাছে কি?
— ভাই দয়া কর আমার উপর। বিয়ে নিয়ে যে এমন মরা কপাল হবে আমার আগে জানলে বিয়েই করতাম না।
— কি হলো আবার? দিশা কি খাটে উঠতে দেয় নাই?

— ভাই রুদ্র শালা খাটে দখল দিয়েছে। আমার ফাস্ট নাইট মনে হয় না কপালে আছে।
রাদের চোখ কপালে। ও তো ভুলেই গিয়েছিলো রুদ্র যে ঐ বাড়ী। ফোন কেটে তারাতাড়ি দৌড় দিলো।
পাঁচ মিনিটের রাস্তা হলেও রাদ হাঁপিয়ে উঠেছে। এসেই দেখে রুদ্র ঘুমে ঢুলুমুলু করে দিশার পাশেই শুয়ে আছে। এসেই দিলো রুদ্র’কে ধমক। ধমকে রুদ্র না জাগলেও জেগে এক লাফে উঠে বসলো দিশা।

রাদ’কে এমন সময় এমন জায়গায় দেখে দিশা জানপরাণ অবাক হলো। রুদ্রর কোন হেলদুল না দেখে রাদ টেনেটুনে রুদ্রকে কাঁধে তুলে নিলো। যেভাবে ঝরের বেগে এসেছিলো সেভাবেই ঝরের বেগে চলে গেল। দিশা চোখ রাঙিয়ে রাতুলের দিকে তাকালো। সে আপাতত ভালোকরে দরজা লক করছে। দিশা বুঝলো না লক ই তো যথেষ্ট সেখানে রাতুল উপরের আর নিচের ছিটকিনি ও লাগিয়ে দিলো। বেডে বসতে নিলেই দিশা বলে উঠলো,

— আপনি রাদ ভাই’কে ডেকেছেন?
রাতুল অধৈর্য হয়ে বলে উঠলো,
— অনেক হয়েছে আর পারব না। রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে দিশা।
— আজব। আমি কি করব তাতে? আপনি ঘু…

আর কিছু বলার বা শুনার সুযোগ রাতুল দিলো না। দিশার ওষ্ঠাধর নিজ দখলে নিলো। অমৃতের সুধা যেন পানে সে ব্যাস্ত হলো। দিশাও থেমে থাকলো না। সুখী হতে চায় ও। ভালোবাসার দুই কাঙাল আজ নিজেদের মধ্যে মেতে উঠলো। তৃষ্ণার্ত পথিক দুজন যেন সুখের ঠিকানা পেলো। মত্ত হলো দুইজন দুই জনাতে। সদ্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ এক জোরা দম্পতি নিজেদের মধ্যে না হওয়া ভালোবাসা বিনিময় করতে লাগলো। হয়তো দুজনই অতীত ভুলার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হিসেবে নিজেদের বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমটাই পেয়েছে।

এখন মাঝ রাত প্রায়। আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে অল্প স্বরে কেঁদে যাচ্ছে রোদ। আদ্রিয়ান শুধু একহতে বুকে চেপে ধরে অন্য হাত মাথায় দিয়ে রেখেছে। আদ্রিয়ান ঠান্ডা স্বরে বলে উঠলো,
— কান্নাটা কিসের?
…………
— কিছু জিজ্ঞেস করছি রোদ?
………….
রোদের নির্বাক কান্না দেখে এবার কিছুটা রুষ্ট কন্ঠে আদ্রিয়ান বললো,

— ব্যাথার কান্না ছাড়া যদি কারো কথার জন্য একফোঁটা পানিও পরে তোমার কপালে শনি ঘটাবো আমি।
কথাটা বলেই আদ্রিয়ান রোদকে বুক থেকে সরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু রোদ শক্ত করে ধরে আছে। ছাড়বে না কিছুতেই। আদ্রিয়ান কিছুটা শান্ত হতেই রোদ মিহি কন্ঠে প্রতিত্তোরে করলো,

— ব্যাথা করছে।
— অন্য কারণে যেন কাঁদতে না দেখি।
এবার যেন কান্নার শব্দ বেড়ে উঠলো,
— উনি এটা কেন বললো?
দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান। কাকে বললো ঐ সব ফালতু কারণে কাদঁতে না। আরেকটু বুকে জড়িয়ে নিয়ে শব্দ করে মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— শেষ করো কান্না। মেজাজ খারাপ হচ্ছে।
~তখন ঐ বৃদ্ধ মহিলা রোদকে ঐ কথা বলতেই রোদের মা ওনাকে সাইডে নিয়ে খুলে বলেন মেয়ের শরীর অসুস্থ কিন্তু এতে যেন হীতের বিপরীত ঘটে গেলো। মহিলা চিন্তিত মুখে রোদের সামনে এগিয়ে এসে বলে উঠেছিলেন,
— এতদিন তো থাকে না। বাচ্চা আইসা পইরা গেলো নাকি? ডাক্তার দেখাও নাই?

আদ্রিয়ান পরিবার সহ রোদের পরিবার ভিষণ অবাক হলেন। মহিলার কথার জেরে বাকিরাও আবার রাতুলের সাথে রোদের বিয়ে ভাঙার কারণ তুলে ফুসুরফাসুর শুরু করে দেয়। অসুস্থ রোদ সেখান থেকেই কান্না শুরু করেছে। রাদ এগিয়ে এসে বোনের হয়ে বৃদ্ধ মহিলা’কে কথা শুনায় তাতেও লাভ হয় না। তখনই আদ্রিয়ান তীব্র গলায় উঁচিয়ে কিছুটা রেগে বলে উঠে,
— স্ত্রী আমার। বাচ্চা থাকলে সেটাও আমার। এতে আপনাদের এত বাড়াবাড়ি কেন? আর অন্যের সংসারে মাথা না মে’রে নিজেদেরটা দেখার চেষ্টা করুন।

বলেই রোদকে ধরে ধরে সেন্টার ত্যাগ করে। রোদের বাবা-মা অনেকবার বলে যাতে থেকে যায় কিন্তু আদ্রিয়ান তখন ভয়ংকর ভাবে রেগে ছিলো তাই কেউ তেমন জোর করতে পারলো না।

সকালে ঘুম ভাঙে আদ্রিয়ানের বেশ দেড়ীতেই। গত রাতে রোদের ছটফটানীতে ও নিজেও ঘুমাতে পারে নি। মেয়েটা সারাটা রাত পেট ব্যাথায় অস্থির হয়ে ছিলো। আদ্রিয়ান উঠে ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো। মিশানের রুমে গিয়ে ওকে ডেকে তুললো। আজ আদ্রিয়ানকে দেখে মিশান দুই ডাকেই উঠে গেলো অথচ রোদ ডাকলে ওর যত বাহানা শুরু হয়ে যায়। কত আদর আহ্লাদ করে রোদ ওকে উঠায়। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মিশান ঘুমু কন্ঠে বললো,

— মা কোথায় বাবা?
— ঘুমাচ্ছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি।
— মা’য়ের কি পেট ব্যাথা কমে নি?
— ভোরের দিকে কমেছে একটু। সারারাত ঘুমায় নি।
মিশান মুখটা কালো করেই ওয়াসরুমে ডুকলো। বেডে ঘুমন্ত মিশি’কে মাথায় হাত বুলিয়ে আদ্রিয়ান মিশানের ব্যাগ গুছিয়ে দিলো। আগে মিশানই গুছাতো অথচ রোদ একদিন গুছানোর পর থেকে মিশান মা’য়ের উপরই ডিপেন্ডেবল হয়ে গিয়েছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ান নিচে নেমে কিচেনে ডুকে ওর মা’কে দেখে বললো,

— আম্মু। মিশানের টিফিনটা প্যাক করে দিও তো।
— রোদের কি শরীর ভালো হয় নি?
— তত একটা না।
— আজ নাহয় আবার ডক্টরের কাছে যা।
— হু।
বলে আদ্রিয়ান মিশানের কাছে গেলো আবার। মিশান রেডি হয়েই মা’য়ের কাছে গেল। ঘুমন্ত রোদের হাতে চুমু খেয়ে আস্তে করে বলে উঠলো,

— মা স্কুলে গেলাম। টাটা।
আদ্রিয়ান রুমে মিশানকে না পেয়ে নিজের রুমে আসতেই দৃশ্যটা চোখে আটকালো। মা হারা বাচ্চা দুটো ওর। এখন মা পেয়ে একটু মা ছাড়া থাকাও যেন দায়। আদ্রিয়ান মিশানকে নাস্তা করিয়ে স্কুলে পাঠালো। নিজের রুমে এসে ডক্টর কে কল দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললো।

আজকে নিয়ে দুই দিন রোদের মেডিক্যাল ক্লাস অফ গেলো এই পেট ব্যাথার জন্য। আদ্রিয়ানের বারবার মনে হচ্ছে ফজিক্যাল হওয়ার দরুন ই হয়ত এমনটা হয়েছে কিন্তু ডক্টর আবার ভিন্ন কথা বলেছে। রোদের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ফ্যাকাসে ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেলো। এমন ভাবে অসুস্থ রোদ যে আদ্রিয়ান দেখতে পারে না। কাকে বুঝাবে ও নিজের কষ্ট?
বেশ সময় পর রোদ ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো। মাথার পাশেই আদ্রিয়ানকে দেখে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,

— ঘুমান নি?
আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকালো। মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে। চেহারাটা ও যেন বেশ ফুলেছে। রোদের দিকে ঝুঁকে বললো,
— উঠলে যে? ব্যাথা করছে?
— উহুম। ঘুম ভেঙে গেল।
— উঠবে?
— হুম।

আদ্রিয়ান ধরে উঠালো রোদকে। রোদকে উঠাতেই নজরে এলো জামার পেছনের দাগে। বিছানাতে ও একি অবস্থা। এত ব্লিডিং এর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না আদ্রিয়ান। রোদকে ওয়াসরুমে রেখে নিজেই ওর প্রয়োজনীয় সব সহ নতুন কাপড় দিলো। রোদ নিজেও চমকেছে ড্রেসের এই অবস্থা দেখে। আদ্রিয়ান সব ওয়াসরুমে রাখতেই রোদ বলে উঠলো,
— বেডে কি লেগেছে?
— তুমি ফ্রেশ হও।
রোদ বের হতে নিতেই আদ্রিয়ান বাঁধা দিয়ে বললো,

— কোথায়?
— চাদরটা নিয়ে আসি। নিশ্চিত নষ্ট করে ফেলেছি।
— চুপচাপ ফ্রেশ হও। আমি দেখছি।
— চাদরটা..
আদ্রিয়ান চোখ গরম করে তাকাতেই রোদ কিছু না বলে ভেতরে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান চাদর উঠিয়ে নতুন চাদর বিছিয়ে দিলো। ওয়াসরুমের দরজায় নক করে বললো,

— রোদ?
— জ্বি।
— কাপড় গুলো জাস্ট পানিতে ভিজিয়ে রাখ। ধুবা না।
— আজব। কেন?
— যদি ওগুলো ধোও মাইর একটাও নিচে পরবে না।

রোদ আর কোন কথা না বলে দশ মিনিট পর বেরিয়ে এলো। আদ্রিয়ান ওকে বসিয়ে নিজেই ওয়াসরুমে ডুকে চাদর আর রোদের নষ্ট করা কাপড় গুলো ধুয়ে ফেললো। এগুলো তো আর বুয়া দিয়ে ধোয়ানো যাবে না। রোদ হাজার না করেও আদ্রিয়ানকে থামাতে পারলো না। ধমকে আদ্রিয়ান ওকে রুমে পাঠিয়েছে। লজ্জায় রোদের মুখটা যেন রক্তিম হয়ে উঠেছিলো সাথে সাথে নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবান ও মনে হয়েছে।

কয়জনের জামাই এমন করে? আদ্রিয়ানটা কেন এত ভালো? রোদ আর কিভাবে ভালোবাসবে এই আদ্রিয়ানকে? আদ্রিয়ানের এত এত ভালোবাসার কাছে রোদের ভালোসাটা নিশ্চিত কিঞ্চিৎ?
ওর ভাবনার মাঝেই আদ্রিয়ান বালতি ভর্তি কাপড় নিয়ে বের হলো। টাউজারটা হাটু পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছে। টিশার্ট ও ভিজেছে বেশ। আদ্রিয়ান বারান্দায় গেলো ওগুলো মেলে দিতে। রোদ উঠে আদ্রিয়ানের জন্য টিশার্ট আর টাউজার বের করে রাখলো। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে সব রাখা দেখে ওখানেই চেঞ্জ করে ভেজা গুলো ওয়াসরুমে রেখে নিচে চলে গেল। আদ্রিয়ান যেতেই মিশি গুটিগুটি পায়ে রুমে এলো। রোদ হেসে ডেকে উঠলো,

— মা? ঘুম শেষ?
মিশি মায়ের কাছে এসেই কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরলো। রোদ আদর করে ওকে ওয়াসরুমে নিয়ে মুখ ধোয়াতেই আদ্রিয়ান হাজির। রোদকে না দেখেই ডেকে উঠলো,
— রোদ?
— এই যে।
আদ্রিয়ান হাতে থাকা খাবার ট্রে টা রেখে ওয়াসরুমে ডুকে বললো,

— আমিই তো করতাম।
— হয়ে গিয়েছে।
আদ্রিয়ান মিশিকে কোলে তুলে বের হলো। কাউচে বসিয়ে রোদেকে সিদ্ধ ডিম দিতেই নাক সিটকালো রোদ। আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে বললো,
— ডিম দুটো খাবে রোদ। বাচ্চামি চলবে না। নিজের অবস্থা দেখেছো?
রোদ কোনমতে পানি দিয়ে গিলে গিলে খেলো। মিশিকে আজ আদ্রিয়ান ই খায়িয়েছে।

কারো উষ্ণ নিঃশ্বাস মুখে পরাতেই দিশার ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলতেই দিশার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। বাইরে প্রচুর চিৎকার চেচামেচি হচ্ছে। হঠাৎ নিজের অবস্থা এবং অবস্থান টের পেতেই দিশা চট করে উঠে বসলো। এতক্ষণ কি না রাতুলের বুকে ছিলো ও? ভাবতেই কেমন লাগলো যেন। ভয়ে ভয়ে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই রাতুলের চেহরাটা চোখে ভেসে উঠলো। বাচ্চাদের মতো গালে হাত দিয়ে ঘুমাচ্ছে। কে বলবে ডক্টর এই লোক?

কেমন বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব। দিশা খেয়াল করলো না চাইতেও রাতুলের প্রতি ওর কিছু একটা অনুভব হচ্ছে। হয়তো বিয়ে এমনই একটি পবিত্র বন্ধন যার দরুন আল্লাহ অচেনা দু’জনের হৃদয়ে এমন অনুভূতি জাগিয়ে তুলেন। কাল রাতে হাজার চেয়েও রাদের চেহারা কল্পনায় আনতে পারে নি দিশা।কেমন যেন রাতুলের স্পর্শে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো। নিজেকে ধিক্কার জানালো দিশা৷ বিয়ের পর এভাবে রাদ ভাইকে নিয়ে ভাবা নিশ্চিত ভালো না। দিশা তো সুখে থাকবে তাকে ছাড়া।
রাতুলের গত রাতের বলা দিশার কানে বাজছে যেন। রাতুল দিশার কাছে আবদার করে বলেছিলো,

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪০

— দিশা তুমি প্রস্তুত থাকলে আল্লাহ চাইলে আমরা বেবি নিব ঠিক আছে? আমি মা’য়ের সাথে রাগ করে তাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। তিনি তো মা হয়তো আমার ভালোটাই চেয়েছিলেন কিন্তু আমি করতাম বলো? আমি কি কষ্ট পাইনি বলো? তোমাকে বিয়ে করার আগে মা’কে শর্ত দিয়েছিলাম কোন দিন বাবা হবো না। রাগের মাথায় বললেও এখন খারাপ লাগে। কেন বলতে গেলাম? আমার খুশির দিকে তাকিয়ে আম্মু কিছুই বলে নি। তুমি কি আমাকে বাবা বানাবে দিশা? প্লিজ।
কি নিদারুন আবদার। দিশা শুধু শুনেছেই গিয়েছে। প্রতিত্তোরে কিছু আর বলা হয় নি।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪১