ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪০

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪০
সাইয়্যারা খান

রোদ দাঁড়িয়ে বারান্দায়। সপ্তাহ খানিক হয়ে এলো ওরা এসেছে এখানে। দুই তিনদিন লেগে গেল রোদের নতুন ভাবে এখানে সেট হতে। সপ্তাহটা যেন চোখের পলকেই উবে গেছে। এই তো দিশা আর রাতুলের বিয়ে দুই দিন পরেই। রোদ যদিও বোনের বিয়ে বলে অনেক এক্সাইটেড কিন্তু রাতুলের সাথে তাই একটু হেজিটেশনে আছে। বলেনা কিছু জিনিস মনে গভীর দাগ কেটে যায়। রোদের ও ঠিক তাই।

রাতুলকে দেখলেই এখন ওর হাত পা কাঁপে। আদ্রিয়ানকে রোদ হাজার ভালোবাসুক। মন প্রাণ উজার করে দিক। তবুও ভয় আটকে আছে ঐ এক জায়গায়। কিন্তু এখন রোদের টেনশন নেই। না জানা কোন এক কারণে দিশা বলেছে শুধু ঘরোয়া ভাবে পরিবারের সবাই যেন থাকে। কোন প্রকার অনুষ্ঠান চায় না দিশা। ওর বাবা ভাই অবশ্য আপত্তি করেছিলো। বড় মেয়ে বংশের। তার বিয়ে কি আর ছোট খাটো করে দেয়া মানায়? দিশা তখন ঠান্ডা গলায় একবাক্যে বলেছে,” যেই বিবাহে খরচ যত কম সেই বিবাহ তত সুখের”। মেয়ের কথার প্রেক্ষিতে কেউ আর কিছু বলে নি। রাতুলের বাসায় আবার বড় করেই অনুষ্ঠান হবে। একমাত্র ছেলে রাতুল বাবা মায়ের। আশা আকাঙ্খা সব তো এই ছেলেকে ঘিরেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রোদের টেনশন শুধু সেটাতেই। কোন ভাবেই রোদ যেতে চাইছে না আবার আগ বাড়িয়ে আদ্রিয়ানকে কিছু বলতেও পারছে না। এতসব ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো রোদ। ওর বারবার মনে হচ্ছে রাতুলের আশে পাশে গেলেই আদ্রিয়ান রেগে যাবে। ভয় জিনিসটাই এমন। একবার যদি মনে গেঁথে যায় সেটা উগরানো কঠিন।
কাঁধে কারো উষ্ণ নিঃশ্বাস পরতেই রোদ বুঝে গেলো কে এসেছে। আদ্রিয়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডাকলো,

— সোনাপাখি?
— জ্বি।
— শপিং এ যাবে না?
— দরকার নেই। শুধু তো পরিবারেরই লোকজন থাকবে।
— রিসিপশন তো হবে।
— যেতে হবে না।
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কেন?
— এমনিতেই। মন চাইছে না। পড়া আছে আমার। ছাড়ুন।

আদ্রিয়ান ছাড়লো না। রোদের মনের খবর ওর ভালোকরেই জানা। এতটুকুন একটা মন ওর বউয়ের সেটার খবরই যদি না রাখতে পারে তাহলে কিসের ভালোবাসা? আগে পরে ও আদ্রিয়ান ওকে অনেক বুঝিয়েছে এখন রোদ কতটুকু বুঝেছে আল্লাহ জানে। আদ্রিয়ান আস্তে করে একহাত রোদের পেটে বুলাতে বুলাতে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— ব্যাথা কমেছে?
— হুম।
— মিথ্যা না বললে হয় না?
— অল্প ব্যাথা করছে।
— চলো রুমে।
বলেই আস্তে করে রোদের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে রুমে ডুকলো। খাটের ওপর মিশি ঘুমাচ্ছে। রোদকে বেডে শুয়িয়ে আদ্রিয়ান বের হলো। একটু পরই হট ব্যাগ হাতে রুমে এসে তা রোদের পেটে রাখলো। চিন্তিত কন্ঠে আদ্রিয়ান বলে উঠলো,

— এটা কি রেগুলার ছিলো?
— না।
চোখটা বন্ধ অবস্থায় ই বলে উঠলো রোদ। চিন্তিত হলো আদ্রিয়ান। রোদ আদ্রিয়ানের হাতটা ধরে বললো,
— ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি ঠিক আছি।

রোদ হাত ধরে টান দিতেই আদ্রিয়ান ওর পাশে শুয়ে রোদের মাথাটা নিজের বুকে নিলো। বেশ সময় ধরে মাথায় আদর করার পর ঘুমালো রোদ। আদ্রিয়ানের চিন্তা এখনও কমে নি। রোদের পিরিয়ড এবার নরমাল টাইমে হয় নি। এক মাসে দুই বার হলো। ডক্টরের কাছেও গিয়েছিলো তারা। রোদের মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট শুরু হ’য়েছে কয়েক মাস আগে। ডক্টর পুরোপুরি টেস্ট করা ছাড়া কিছু বলতে পারছেন না। এদিকে হাজার বলেও রোদকে আজ টেস্ট গুলো করানো গেলো না। কোন মতে ব্যাথা কমার ইনজেকশন পুশ করিয়ে বাসায় এনেছে আদ্রিয়ান। ব্যাথায় যখন দাঁত চেপে রোদের চোখের পানি ঝরছিলো তখন যেন ব্যাথাটা আদ্রিয়ানই পেয়েছিলো।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বুকে ঘুমন্ত রোদের মাথায় চুমু খেলো আদ্রিয়ান।

রোদের পুরো বাড়ী রঙিন আলোয় ঝলমল করছে। রাত বলে হয়তো একটু বেশিই জমকালো লাগছে। বাপ-চাচা পারলে পুরো এলাকা সাজাতো কিন্তু ঝামেলা হলো সাজালেই লোকজন দাওয়াত চাইবে। তখন কি হবে? কিন্তু তাদের ইচ্ছা আকাঙ্খা যেন নিমিষেই পুরোণ হলো। রাতুলের পরিবার আশে পাশেট চার গলি পর্যন্ত সাজিয়েছে। এতে যে দিশার বাপ-চাচা হাতির পাঁচ পা পেয়ে বসলো। নিজেরাও বাকিটুকু সাজিয়ে ফেললো। হাজার হোক বংশের প্রথম মেয়ে দিশা।

বাপ- চাচার এত উৎসাহ দেখে দিশা আর কিছু বললো না। কি বলবে? নিজে নাহয় দুঃঝ বিলাসী তাই বলে কি সে শুধু দুঃখই ছড়াবে? রাদ ভাই তো বলেছে দিশা ফুল। দিশা সুবাস ছড়াবে বিষ না।
আপাতত জাইফা, তিশা, ইশানের বউ বসে আছে দিশার রুমে। দিশা হঠাৎ উঠে আবার হাত ভর্তি কাটা ফল নিয়ে এলো। তিশা হাত দিতে নিলেই দিশা চাপড় মে’রে বললো,
— এটা জাইফার। তোর মন চাইলে নিজে নিয়ে আয়।
তিশা মুখ কালো করে বললো,

— চলেই তো যাবি। এখন একটু আমাকে আদর করে যা।
জাইফা হেসে একটা আঙুর তিশার মুখে ডুকিয়ে দিলো। দিশা ঐ দিকে তাকিয়ে বললো,
— জাইফা পুরোটা শেষ করো। এই পেটুক তিশা সারাদিন ই খায়।
জাইফা হেসে উঠতেই আবার পেট ধরে অল্প আর্তনাদ করে উঠলো। কার কি হলো বুঝা গেলো না দিশা ছটফটিয়ে উঠলো। এক লাফে দাঁড়িয়ে জাইফার কাছে এসে ওর হাত ধরে উত্তেজিত হয়ে বললো,

— জাইফা? কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছো? এই তিশা রাদ ভাই’কে ডাক।
জাইফা জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বললো,
— আরে এই দুষ্টটা কিক মারলো।
দিশা যেন শান্ত হলো কিছুটা। পরক্ষণেই দ্বিগুণ উত্তেজিত হয়ে বললো,
— আমি ধরে দেখি।

জাইফা হেসে দিশার হাতটা নিজের ফুলে যাওয়া পেটে রাখলো। দিশা আদুরে গলায় বললো,
— আমার সোনা বাচ্চা একবার ছোঁয়া দাও।
বাচ্চাটা যেন নিজের ফুপির মনের ব্যাথা বুঝতে পারলো। পা দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিলো। দিশার চোখে খুশিতে পানি চলে এলো। নিজের ভালোবাসার অস্তিত্বের ছোঁয়া সত্যিই অন্য রকম অনুভূতির প্রকাশ ঘটায়। হোকনা গর্ভটা অন্য কারো।

দেখতে দেখতেই যেন দুই দিন চোখের আড়াল হলো। ছোট করে বলতে বলতেও পাঁচশত অধিক মানুষ দাওয়াত হয়ে গিয়েছে এই পর্যন্ত। অথচ এরা সবাই নিকট আত্মীয়। তাতেই এই অবস্থা। শেষ মেষ সব বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান বড় আকার ধারণ করলো। দিশা বউ সেজে বসে আছে। লেকজন জড়ো হচ্ছে আস্তে আস্তে। বাসায় করার কথা থাকলেও শেষে এসে কমিউনিটি সেন্টারেই করা হলো। হাজার ছাড়িয়ে দাওয়াত করা হয়েছে।

তবে অনেক জোর করেও হলুদের অনুষ্ঠান করানো সম্ভব হয় নি। দিশা বেঁকে যে ছিলো আর সোজা হয়নি। হাতে মেহেদী পর্যন্ত লাগাতে দেয় নি। শেষ রাতে জাইফা আর রাদ রুমে আসে হঠাৎ। ভরা পেট নিয়ে জাইফাকে ধরে ধরে রাদ নিয়ে এসেছিলো। কি সুন্দর সেই দৃশ্য। দিশা একদম মন ভরে দেখেছে তার রাদ ভাইকে কারণ সূর্য উঠে যে নতুন দিনের আগমন ঘটাবে সেই দিনে দিশা নিজেকে লিখে দিবে অন্য কারো নামে। তখন রাদ ভাই’কে এভাবে দেখা নিশ্চিত দিশার জন্য হারাম হবে? রাদ দিশার রুমে আসাতে পিছু পিছু বাকি ভাই-বোনরাও সাহস করে ডুকে পড়লো। রাদ বিছানায় জাইফাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসলো। ওর দেখাদেখি বাকিরাও দিশাকে ঘিরে বসে। রাদ পকেট থেকে মেহেদীর কোণ বের করে একটু হেসে বললো,

— মেহেদী কেন লাগাস নি?
দিশা হাসার চেষ্টা করলো। হলো না। ঠোঁট প্রসারিত করে বললো,
— মন চাইছে না।
— হাত দে।
দিশা অবাক হলো। এতসবার মধ্যে রাদ দিশার হাত চাইছে?জাইফা হেসে দিশার গুটানো হাতটা নিজের হাতে নিলো। রাদ অপরিপক্ক হাতে দিশার হাতের তালুতে গোটা গোটা বাংলা অক্ষরে কিছুটা পেচিয়ে লিখে দিলো,”রাতুল”। দিশার চোখের কোণে তখন পানির জোয়ার বইছে। এটাও কারো ভাগ্য থাকে? অতি সুখে দিশা পাগল না হয়ে যায়। দিশার ভালোবাসার মানুষটাই কিনা দিশার হাতে দিশার হবু বরের নাম লিখে দিলো?
সেই নামকে ঘিরে ইশানের বউ সুন্দর হাত ভর্তি ব্রাইডাল মেহেদীর ডিজাইন করেছে।

আদ্রিয়ান রোদকে ধরে উঠিয়ে বসালো৷ রোদ আদ্রিয়ানের বুকেই মাথা এলিয়ে রইলো। দূর্বল কন্ঠে ভেঙে ভেঙে জিজ্ঞেস করলো,
— সবা..ই কি চলে গ..গিয়েছে?
আদ্রিয়ান রোদের মাথায় হাত দিয়ে ছোট্ট করে উত্তর দিলো,

— হুম।
— বাচ্চারা?
— জোর করেও পাঠাতে পারিনি।
— চলুন তাহলে। আমি উঠি।
আদ্রিয়ানের বুকটা তখনও হালকা কাঁপছে। রোদ তা স্পষ্ট টের পেলো। অল্প হেসে বলে উঠলো,
— ঠিক আছি আমি। ধরুন। উঠব আমি।

আদ্রিয়ান ধরে ধরে রোদকে উঠালো। রোদ পুরো রেডি হওয়াই। আদ্রিয়ান ওকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে নিজেই হিজাব বেঁধে দিতে লাগলো। ফ্যাকাসে ঠোঁটে অল্প লিপস্টিক লাগানোর চেষ্টা করলো। চিন্তায় যে আদ্রিয়ান দংশিত তা রোদ আদ্রিয়ানের চেহারা দেখেই বুঝতে পারছে।

~ সকালের দিকেই আজ রোদের টেস্ট গুলো কারানো হয়েছে। ভয়ের ব্যাপার হলো সাত দিন ওভার হওয়ার পরও ব্লিডিং অফ নি। অতি দূর্বল হয়ে পরেছিলো রোদ। বাসায় এসে কোনমতে গোসল করে না খেয়েই শুয়ে ছিলো। বিকেল দিকে যখন আদ্রিয়ান ডেকে তুললো তখন রোদ ফ্রেশ হয়ে আসে। আদ্রিয়ান মুখে তুলে খাওয়ালেও বেশি খেতে পারে নি রোদ। সন্ধ্যা হতেই রেডি হওয়া শুরু করে। আজ দিশার বিয়ে। যেখানে রোদের আগে যাওয়ার কথা সেখানে ও যাচ্ছে অতিথির মতো। রেডি হয়ে সবাই আগেই চলে গিয়েছিলো বাকি ছিলো আদ্রিয়ান রোদ আর বাচ্চারা। আদ্রিয়ান রেডি হতে গিয়েই খেয়াল করেছিলো রোদের ঢুলুঢুলু অবস্থা। পেছন থেকে ধরে বলে,

— বেশি ব্লিডিং হচ্ছে? পরে যাবে আরো?
উত্তর দেয়ার শক্তি আর রোদের হয় নি। ঢলে পড়েছিলো আদ্রিয়ানের বুকে। অস্থির আদ্রিয়ান তখন একা বাসায় কতটা ভয় পেয়েছিলো তা কেবল ও আর ওর আল্লাহ ই জানে।

বাচ্চাদের নিয়ে ওরা বের হবে এমন সময় রাদ দৌড়ে ডুকলো কিছুটা। বোন এত অসুস্থ তা শুনেই সব রেখে ছুটে এসেছে রাদ৷ আদ্রিয়ান অবশ্য রাদকে কল করেছিলো যাতে করে বাচ্চাদের নেয়ার ব্যাস রাদ পাগল হয়ে ছুটে এসেছে। রোদ তখন মিশান’কে ধরে পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পাশেই মিশি। আদ্রিয়ান গিয়েছে গাড়ি বের করতে। আপাতত কোন ড্রাইভার নেই। দুইজন দুই গাড়িতে আছে। রোদকে এভাবে মিশানের হাত ধরে হেলান দেয়া দেখেই রাদ তারাতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে বোনের কাছে এলো। রোদ রাদকে দেখে ভালোই চমকেছে। মিশি খুশিতে লাফিয়ে কুদিয়ে “মামা” “মামা” ডাকছে। রাদ কোলে তুলে নিলো মিশিকে। রোদের দিকে চিন্তিত নজরে তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলো,

— সোনা আমার ঠিক আছিস?
রোদ হেলান দেয়া থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মুখে বললো,
— ভালো আছি ভাইয়া। তুমি এখানে? এখন?
রোদের “ভালো আছি” চাইলেও রাদ বিশ্বাস করতে পারলো না। বোনের কৃত্রিম প্রলেপের ভেতরে ফ্যাকাসে চেহারা নজর এলো তার। রাদ ওর হাত ধরে চিন্তিত কন্ঠে বললো,

— বেশি খারাপ লাগলে দরকার নেই যাওয়ার।
— আরেহ্ না। যাব আমি। উনার সামনে বলো না তাহলে সত্যিই যেতে দিবে না।
ততক্ষণে আদ্রিয়ান হাজির। একসাথেই রওনা দিলো ওরা। মিশান মায়ের হাত ধরেই বসে আছে। মা অসুস্থ এটা থেকেই ওর মরা।

বিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতেই সবাই যেন রোদদের ঘিরে ধরলো। এতেই অসস্তি শুরু হয়ে গেল রোদের। একেতো ড্রেসটাও মোটামোটি ভার। রাদ কোনমতে বোনকে নিয়ে ফাঁকা জায়গায় বসালো। রোদের মা-বাবা আর রুদ্র এসে রোদের কাছে কথা বলে আদর করছে। অসুস্থ রোদ মায়ের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। ওর মা যেন আজ নতুন মেয়েকে আবিষ্কার করলো। তার মেয়ে যে বিবাহিত এটা যেন আজ রোদের চেহারাতেই ফুটে উঠেছে। সুখী একটা নারী নারী ভাব রোদের চেহারায়। স্টেজ ফাঁকা দেখে রোদ রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,

— দিশাপু কই?
রুদ্র বোনের সাথে লেগে বসে আছে। বোনের কথা শুনেই বলে উঠলো,
— মাত্র তো স্টেজেই ছিলো।
— ওহ্। দেখা করতাম একটু।
তখনই দিশা দুই হাতে লেহেঙ্গা উঁচু করে রোদের কাছে এলো। বসে থাকা রোদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— কেমন আছিস এখন?
— আলহামদুলিল্লাহ। অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।
দিশা হাসলো। রোদ এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,

— জাইফা আপু কোথায়?
দিশা আঙুল দিয়ে সাইডে ইশারা করলো। রাদ জাইফাকে ধরে এদিকেই আসছে। দিশা মিশিকে কোলে তুলে স্টেজের দিকে হাটা দিলো। রুদ্র ও মিশানকে টেনে টুনে নিয়ে গেলো। মিশান অবশ্য মা ছেড়ে যেতে চায় নি। রোদকে ঘিরে বড়রা বসে আছে। আদ্রিয়ানের অল্প লজ্জা লাগছে অবশ্য। এত মানুষের মাঝে ও বউকে ধরে সবার সাথে কথা বলছে। রোদ অনেকবার যেতে বললেও নড়ে নি আদ্রিয়ান। অসুস্থ বউ রেখে ও যাবে না।

সময় ঘনিয়ে এলো। রাতুল চলন নিয়ে এলো। বেশ সুন্দর ভাবেই “কবুল” নামক শব্দটা তিনবার বলেই রাতুল আর দিশা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। এক হলো দু’জনের হাত। দিশা কবুলের পূর্ব একবার শুধু রাদকে দেখেছে। রাদ ওর মাথায় হাত দিয়ে আসস্ত করতেই দিশা কবুল বলে দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই রাতুল দিশাকে নিয়ে বিদায় নেয়। দিশা কাঁদে নি। দুই বাড়ী পরই শশুর বাড়ী ওর। এতটা কাছে অথচ কারো থেকে ফারাকটা যেন যুগ যুগের৷ দিশার নিজের একসময়ের ভালোবাসা আজ তাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে। দিশা যাওয়ার আগে মনে মনে শুধু বললো,

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৩৯

” ভালোবাসা তুমি আমার সাধ্যের বাইরেই রয়ে গেলে।”
দিশার বিদায় হতেই ওর মা- বাবা আর ইশান কিছুটা ভেঙে পরে। বড়রা তাদের সামাল দিচ্ছে। হঠাৎ একজন বয়স্ক মহিলা রোদের কাছে এসে ওর এমন অবস্থা দেখে বলে উঠলো,
— হ্যাঁ রে রাদের মা আমাদের রোদ পোয়াতি নাকি?
হঠাৎ এহেন কথায় চমকে তাকালো উপস্থিত সকলে।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪০ শেষ অংশ