মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৬

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৬
নূন মাহবুব

-” কে আপনি ? আর এসব কি ধরনের অ’স’ভ্য তা ?এটা হসপিটাল।আর চেনা না জানা না হুট করে আপনি হসপিটালে এসে সবার সামনে এইভাবে একজন রোগী কে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারেন না।”

-“শিক্ষার কথা শুনে সাহিত্য একটু নড়ে চড়ে বসলো। কিন্তু শিক্ষা কে ছাড়লো না। বরং আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো, আ’ম সরি শিক্ষা।আসলে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোকে হয়তো চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। তোর এই সামান্য অনুপস্থিতি আমাকে জানিয়ে দিয়েছে আমি ঠিক কতোটা তোকে ভালোবাসি? কতোটা নিজের করে পেতে চাই?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যদিও আজ থেকে পাঁচ মাস আগে শুধু মাত্র দাদুর কথা রাখতে তোকে বিয়ে করেছিলাম।আর বাসর রাতে তোকে এটাও বলে দিয়েছিলাম যে এই বিয়ের কোনো ভ্যালু নেই আমার কাছে। আমি কোনো সংসারের মায়ায় জড়াতে চাই না। তবু ও এই বেহায়া মন কিভাবে জানি তোর মায়ার জড়িয়ে গিয়েছে। তুই যে কখন আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে বসবাস করতে শুরু করেছিস আমি নিজেও বুঝতে পারি নি।আমাকে ক্ষমা করে দে শিক্ষা।”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ নিজেকে সাহিত্যের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, কে শিক্ষা? ডোন্ট কল মি শিক্ষা।আ’ম উষ্ণতা। উষ্ণতা মীর।ডটার অফ এসিপি রায়হান মীর।”
-” হ্যাঁ আমি জানি তুই এসিপি স্যারের মেয়ে উষ্ণতা। গতকাল আমি বাবার লকারে তোর ছোট বেলার ছবি পেয়েছিলাম।তখনি আমি জানতে পেরেছি তুই ই আসল উষ্ণতা।আর এই কথাটা তোকে জানানোর জন্য ছুটে ‌যাই স্মৃতিনগরে। কিন্তু সেই খানে গিয়ে দেখি তুই র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় পড়ে আছিস। তখন যে আমার কেমন লেগেছিলো তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।”

-” আমি বলছি তো আমি আপনাকে চিনি না। তবু ও কেন বিরক্ত করছেন আমাকে?প্লিজ গো অ্যাওয়ে।”
-” তুই এইসব ইচ্ছা করে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য করছিস তাই না? ইচ্ছা করে আমাকে না চেনার নাটক করছিস তুই?কেন করছিস তুই? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য? আর কতো কষ্ট দিবি আমাকে?বল আর কতো? ওকে ফাইন ।যতো পারিস কষ্ট দে। যখন আমি থাকবো না , তখন বুঝতে পারবি। সাহিত্যের চিৎকার শুনে ডক্টর এসে বললো,এসব কি হচ্ছে সাহিত্য? বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়ার করছো কেন?ও এখনো অসুস্থ।দেখছো তো মাথায় ব্যান্ডেজ রয়েছে, স্যালাইন চলছে। গতকাল কি অবস্থা হয়েছিলো নিশ্চয় ভুলে যাও নি।এখন প্লিজ এইখানে চিৎকার চেঁচামেচি করো না।”

-” ডক্টর ও ভুলে থাকার নাটক করছে।ও যদি আমাদের সাথে থাকা মূহুর্তগুলো ভুলে যায় ,তাহলে সবাই কে ভুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ও সবাইকে চিনতে পারছে। শুধু মাত্র আমাকে ছাড়া।”
-” দেখো সাহিত্য ! ও অসুস্থ । তুমি প্লিজ এইখান থেকে যাও।ডক্টরের কথা শুনে সাহিত্য গরম চোখে শিক্ষার দিকে তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সাহিত্যের যাওয়ার পানে তাকিয়ে শিক্ষা নিজে নিজে উঠে বসার চেষ্টা করলো।যা দেখে অন্তরা এগিয়ে এসে শিক্ষা কে ধমক দিয়ে বললো, উঠছিস কেন?”

-” পিঠ ব্যথা করছে বড় আম্মু।আর কতো শুয়ে থাকবো?দেখ আমি একদম ঠিক আছি।”
-” সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। আচ্ছা তুই এটা বল তুই কি সত্যি সত্যি সাহিত্য কে চিনতে পারছিস না?”
-” শিক্ষা ফিক করে হেসে দিয়ে অন্তরা কে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার শ্বাশুড়ি মায়ের বুঝি তার ছেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে? তোমার ছেলে আমাকে কম কষ্ট দেয় নি। এজন্যই এই অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করেছি আমি।তার ও বোঝা উচিত ভালোবাসা ঠিক কতোটা যন্ত্রণার?”

-” আমার ছেলেটা কিন্তু সত্যি সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসে।তোর এই অবস্থা দেখে ওর মাথা ঠিক ছিলো না। তোকে হসপিটালে নিয়ে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত একটা দানা ও মুখে তুলে নি। সারারাত তোর হাত ধরে তোর পাশে বসে ছিলো। আমারা সবাই হাজার বার বলে ও সাহিত্য কে এইখান থেকে এক চুল পরিমান সরাতে পারি নি।কি যাদু করছিস আমার ছেলেটাকে বল তো?”

-“শিক্ষা অন্তরার কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো, আচ্ছা বড় আম্মু সবাইকে দেখছি কিন্তু বড় আব্বু কোথায়? বড় আব্বু কে যে দেখতে পারছি না। আমার যতটুকু মনে আছে আমি বড় আব্বু কে বাঁচাতে পারি নি ।তার আগেই কেউ একজন আমার মাথায় আঘাত করে।”

-” কাকে বড় আব্বু বলছিস তুই? ঐ সাদ্দাম শিকদার কে? যে নিজে তোর মাথায় রড দিয়ে আঘাত করেছিলো? সেই সাদ্দাম শিকদার যে ভালো মানুষের আড়ালে একজন ক্রিমিনাল,খু’নী ,কালো টাকার ব্যবসায়ী।সে যে অপরাধ করেছে এতে তার ফাঁ’সি হবে ফাঁ’সি।আর যতোদিন ফাঁ’সি’র রায় কার্যকর না হয় ততোদিন জেলে পঁচে ম’র’বে। আমার তো ইচ্ছে করছে ঐ খু’নী’র মুখে গিয়ে থুথু ছুড়ে দিতে।

ঐ খু’নীর জন্য আমার ছেলেটাকে সবাই ছিঃ ছিঃ করছে। ছেলেটার দিকে আঙ্গুল তুলছে। তার কুকর্মের খবর সারা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।এই ভিডিও টা চালু করে দেখ, অন্তরা শিক্ষার হাতে একটা ফোন দিয়ে বললো। শিক্ষা ফোন নিয়ে ভিডিও টা অন করার সাথে সাথে শোনা ‌গেল, ব্রেকিং নিউজ। আজকে সকালের টাটকা খবর। আজকে আপনাদের এমন একজন সন্তানের কথা বললো,যে নিজে তার বাবার হাতে হাতকড়া পরিয়েছে।

হ্যাঁ তিনি শহরের নামকরা একজন ব্যবসায়ী সাদ্দাম শিকদার। আমাদের সকলের পরিচিত মুখ।তার আরো একটা পরিচয় আছে।তিনি সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বাবা।যে কিনা মুখোশের আড়ালে একজন ক্রি’মি’না’ল খু’নী কালো টাকার ব্যবসায়ী। এইটুকু দেখে ভিডিও টা অফ করে দেয় শিক্ষা।যা দেখে অন্তরা বলে, কি হলো দেখলি না পুরো টা?দেখ তোর বড় আব্বুর কুকর্ম।এই বয়সে এসে এসব কুকর্ম দেখতে হবে জানলে আমি আগেই এই সংসার ছেড়ে চলে যেতাম।”

-” তুমি বড় আব্বু কে ভুল বুঝছো বড় আম্মু।বড় আব্বু কিছু করে নি।বড় আব্বু নির্দোষ।তাকে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ফাঁসিয়েছে। আমার পাপা একজন সৎ , ন্যায়পরায়ণ অফিসার ছিলেন। পাপা সবসময় বলতো সত্যের মৃ’ত্যু নেই।আর একজন এসিপির র’ক্ত আমার শরীরে বয়ছে। আমি বেঁচে থাকতে বড় আব্বুর কিছু হতে দিবো না।সত্যের মৃ’ত্যু কখনো হয় নি।

আর না এখনো… শিক্ষা বাকিটা বলার আগে সাইফুজ্জামান এসে বললো,সত্যের মৃ’ত্যু না আগে কখনো হয়েছে,আর না এখন হবে। এজন্যই বলা হয় ,বাঘের বাচ্চা বাঘ ই হয়। তুমি একজন এসিপির মেয়ে হয়ে ঠিক এসিপির মতোই কথা বলছো উষ্ণতা। আচ্ছা উষ্ণতা তুমি এটা বলো যে আজ থেকে দশ বছর আগে তোমাদের উপর যেদিন অ্যাটাক হয়েছিলো, সেদিনের ঘটনা কি কিছু মনে আছে?”

-” হ্যাঁ স্যার,অল্প কিছু মনে আছে। কেন জানি না পাপা আমাকে নিয়ে সবসময় ভয়ে থাকতো।সবার থেকে আমাকে সবসময় আড়ালে রাখতো। আমাকে মার্শাল আর্ট শেখায় যাতে আমি সবসময় নিজের আত্মরক্ষা করতে পারি। যেদিন আমাদের উপর অ্যাটাক হয় , সেদিন আমরা কক্সবাজার আসছিলাম ফ্যামিলি ট্যুরে। পাপা ড্রাইভ করছিলো , হঠাৎ কোথা থেকে একটা লোক র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় আমাদের গাড়ির সামনে এসে পড়ে যায়।পাপা তাকে সাহায্য করার জন্য বের হয়।

কিন্তু যখনি পাপা লোকটার কাছে যায় ,তখনি কোথা থেকে অনেক গুলো গুন্ডা এসে পাপার উপর অ্যাটাক করে। আমি যেহেতু মার্শাল আর্টিস্ট ছিলাম আমি ছোট হয়ে ও তাদের সাথে লড়াই করি। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ একজন আমার আর পাপার উপর গু’লি চালিয়ে দেয়। তিনি র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে যান। আমি দৌড়ে তাদের কাছে যেতে চাই। কিন্তু তার আগেই একটা গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই আমার। যখন চোখ খুলি নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি।আর চোখের সামনে বড় আব্বু আর বড় আম্মু কে দেখতে পাই।”

-” সাইফুজ্জামান উষ্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ঠিক আছে মা। তুমি এখন বিশ্রাম করো বলে সাইফুজ্জামান কেবিন থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে শিক্ষা তার হাতে থাকা স্যালাইন খুলে সাদ্দাম শিকদারের সাথে দেখা করতে চলে আসে। সাদ্দাম শিকদার কে জেলের মধ্যে দেখে শিক্ষার কলিজা মোচড় দিয়ে ওঠে। শিক্ষা সাদ্দাম শিকদারের হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে কান্না করতে করতে বলে , কেন এমন করলে বড় আব্বু? কেন নিজে অন্যের দোষ স্বীকার করলে?কি এমন পিছুটান রয়েছে তোমার?”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৫

-” তোমার মম আর পাপা কে বাঁচানোর জন্য।”
-“কি বললে বড় আব্বু ? আমার মম পাপা এখনো বেঁচে আছে?”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৭