ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৪

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৪
Raiha Zubair Ripte

হাসপাতালের করিডরে নিস্তেজ হয়ে বসে আছে সুহাসিনী। পড়নে তার সাদা রঙের কলেজ ড্রেস র’ক্তে লাল হয়ে আছে। সুহাসিনীর পাশে রফিক সাহেব বসে আছেন। চোখ দিয়ে তার পানি পড়ছে। প্রানপ্রিয় স্ত্রী আর মেয়ের এমন অবস্থা সে মানতে পারছে না। নীলীমা বেগম ভাই কে শক্ত করো ধরে রাখে। নীলা সে তো কেঁদেই চলছে। একমুহূর্তে কি থেকে কি হয়ে গেল। সকালেও স্ত্রী মেয়ের সাথে কথা বলে গেল রফিক সাহেব। আর এখন মেয়ে স্ত্রীর র’ক্তাক্ত দেহ নিয়ে আসতে হলো। অভ্র দৌড়ে পাগলের মতো ছুটে সুহাসিনী দের দিকে আসলো। নীলয় ডক্টরের সাথে কথা বলতে বলতে এদিকটায় এগিয়ে আসছে।
অভ্র রফিক সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে ধপাস করে নিচে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,

” বাবা সু সুভাষিণী আর মা কেমন আছে?
রফিক সাহেব মাথা তুলে তাকায়। অভ্রকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। অভ্রর মন সহসা কেঁপে উঠে।
” বাবা কাঁদছেন কেনো? কি হয়েছে ওরা সবাই ঠিক আছে তো? কিছু হয় নি তো।
রফিক সাহেব কিছু বলতে পারছে না। নীলীমা বেগম অভ্র কে বলে,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ডক্টর এখনো কিছু জানায় নি অভ্র।
নীলয় সামনে এসে দাঁড়াতেই নীলীমা বেগম বলে উঠে,,
” নীলয় ডক্টর কি কিছু জানালো?
নীলয় মাথা নিচু করে জানায়,,
” তার এখনো চেষ্টা করছে মা।
লুৎফর রহমান আর রোমিলা রহমান ছেলের বউ আর বেয়াইন এর এমন অবস্থা শুনে চলে আসে। রোমিলা বেগম সুহাসিনীর পাশে বসে সুহাসিনী কে জড়িয়ে ধরে। সুহাসিনী একটা আশ্রয় পেয়ে রোমিলা রহমান কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে।

” আন্টি আপু আর আম্মু।
রোমিলা বেগম সুহাসিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,
” কিচ্ছু হবে না মা আর আপুর। কেঁদো না সুহাসিনী।
লুৎফর রহমান বেয়াই কে কি বলে সান্ত্বনা দিবে তার জানা নেই।
নীলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” পুলিশ কে ইনফর্ম করেছো নীলয়?
” জ্বি আঙ্কেল তারা বিষয় টা তাদের মতন করে ইনভেস্টিগেশন করবে।
এর মধ্যে ডক্টর বেরিয়ে আসে।
” সুমনা বেগমের পরিবার কি আপনারা?
নীলয় মাথা নাড়িয়ে জানায় হ্যাঁ আমরা।
ডক্টর নীলয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে,,

” সরি আমরা তাকে বাঁচাতে পারি নি। সি ইজ নো মোর। গলা টা এমন ভাবে কা’টা হয়েছে যে শ্বাসনালী ও কে’টে গিয়েছে।
কথাটা কর্ণকুহর হতেই সুহাসিনী ঘাড় উঁচু করে তাকায়। বাবার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে,,
” ও বাবা ডক্টর কি বলে এগুলা। তুমি যে বললা মা আর আপু ঠিক হয়ে যাবে তাহলে ডক্টর এগুলা বলে ক্যান। ও বাবা বলো ডক্টর এগুলো বলে ক্যান। চুপ হয়ে আছো ক্যান।

রফিক সাহেব নির্বাক। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে। সুহাসিনী বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
” ও বাবা কাঁদতেছো কেনো। আমি মায়ের কাছে যাবো। মা ও মা তুমি আমারে একলা ফেলায় চলে গেলা ক্যান। আমারে নিয়া যাও। আমারে রেখে গেলা কেনো।

কথাটা বলে বাবা কে ছেড়ে সুহাসিনী পাগলের মতো ফ্লোরে হাত দিয়ে ঘুষি মা’রে।
রোমিলা বেগম আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। রফিক সাহেব ও ভয় পেয়ে যায় মেয়ের এমন পাগলামি দেখে। রফিক সাহেব মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে। সুহাসিনী বাবার বুকে থাকতে নারাজ। কিছুক্ষণ হাত পা ছুড়াছুড়ি করে ঢোলে পড়ে যায় বাবার বুকে।

হঠাৎ মেয়ের নিশ্চুপ দেখে মেয়ে কে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দেখে মেয়ে তার জ্ঞান হারিয়েছে। রফিক সাহেব নীলয় কে ডেকে বলে,,
” নীলয় সুহা কথা বলতেছে না। কি হলো
নীলয় সুহার নাকের কাছে হাত নিয়ে বলে,,
” মামা সুহা জ্ঞান হারিয়েছে। ধাক্কাটা সহ্য করতে পারে নি।

অভ্র সেই কখন থেকে রুদ্র কে ফোনে ট্রাই করছে কিন্তু ফোন লাগছে না।
এদিকে সুভাষিণীর ও কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
সুভাষিণীর ওটি থেকে ডক্টর বের হলে অভ্র জিজ্ঞেস করে,,
” ডক্টর আমার সুভা আর বেবি কেমন আছে।
” সরি মিস্টার আপনার ওয়াইফ কে বাঁচাতে পারলেও বাচ্চা কে পারি নি।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই দু পা পিছিয়ে যায় অভ্র। রোমিলা বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠে। লুৎফর রহমান বেয়াই এর পাশে বসে আছে।
” আমি কি সুভার সাথে দেখা করতে পারি ডক্টর।
কাঁপা কাঁপা গলায় কথাটা বলল অভ্র।

” না আপাতত তার সেন্স নেই। কয়েক ঘন্টা পর দেখা করুন।
অভ্র বাহিরের কাঁচের জানালা দিয়ে সুভা কে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।
নীলয় অভ্রর বাহুতে হাতে দিয়ে বলে,,
” ভেঙে পরবেন না। আপনি ভেঙে পড়লে সবাই কে সামলাবে কে?

” এই সুহা ভাত খাচ্ছিস না কেনো? দেখছিস শরীরের কি অবস্থা, হাড় গুলো সব উপর থেকে গুনা যাবে।
” উফ মা বিরক্ত করো না তো দেখছো তো টিভি দেখছি।
” খেয়ে তারপর দেখ।
” না মিস করে ফেলবো।

অগ্যতা সুমনা বেগম ভাত মেখে মেয়ের পাশে বসে মুখের সামনে ভাত তুলতেই সুহা খাবার টা মুখে তুলে নেয়।
” আমি জানতাম তুমি খাইয়ে দিবা।
সুমনা বেগম ভাত মাখতে মাখতে বলে,,
” কি আর করার বল। এখন না খাইয়ে দিলে তো পেটে এই খাবার টা ঢুকবে না। এভাবে নিজের শরীর নিয়ে অনীহা করলে কি চলে বল? যখন আমি থাকবো না তখন কি করবি এভাবেই না খেয়ে থাকবি তখন?
সহসা মা’কে জড়িয়ে ধরে সুহাসিনী।

” এসব কি কথা বলো মা। আর বলবে না এসব কথা।
সুমনা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলোয়।
হঠাৎ মা বলে চিৎকার করে উঠে সুহাসিনী। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে হাতে তার স্যালাইন।

সুহাসিনীর চিৎকার শুনে নীলয় হুমড়ি খেয়ে কেবিনে ঢুকে
সুহাসিনী বেড থেকে নেমে নীলয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
” নীলয় ভাই আমার মা কই নীলয় ভাই। আমি মায়ের কাছে যাবো। নিয়ে যান না আমারে। ওরা আমার মা রে মে’রে ফেলছে।

নীলয় কি বলবে ভেবে পায় না। মায়ের সমতুল্য মামি। নিজেদের ছেলে নেই নিজের ছেলের মতোই নীলয় কে ভালোবেসে গেছে। সুহাসিনীর হাত ধরে সুহাসিনী কে সুমনা বেগমের লা’শের কাছে নিয়ে যায়। সাদা কাপড়ে ঢাকা মায়ের মুখ। সুহাসিনী কাঁপা কাঁপা হাতে কাপড় টা সরিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।

তার মা আর নেই মানতে পারছে না সুহা। মায়ের মুখে অসংখ্য চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেয়। তার মুখে একটাই কথা,, মা আমি ও তোমার সাথে যাবো। তোমার সাথে আমাকেও নিয়ে যাও। তুমিহীনা থাকবো কি করে।
নীলয় বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে। রফিক সাহেবের সাহস হচ্ছে না স্ত্রীর মুখ দেখার।
লুৎফর রহমান অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৩

” রুদ্র কে কি ফোনে পেলে?
” না বাবা পাই নি।
” লিটন কে ফোন করে দেখো। আর সব বলো রুদ্র যেনো তাড়াতাড়ি আসে। এখানে তাকে প্রয়োজন।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৫