ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ২৬

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ২৬
Raiha Zubair Ripte

কি ব্যাপার বাসায় আসো নি কেনো? ভাবি তো চলে এসেছে?
ফোন রিসিভ করতেই রুদ্রর এমন কথা শুনবে সুহাসিনী আগেই জানতো। ফোনটা কান থেকে সামনে এনে বলে,,

” মন চায় নি তাই যাই নি৷ সমস্যা কি এখন ঘুমাবেন শান্তি মতো কেউ ডিস্টার্ব করবে না।
” নিচে আসো।
” আমি এই রাতে নিচে গিয়ে কি করবো?
” আমি আসতে বলছি তাই।
” আশ্চর্য আপনি বললেই নিচে য.. এই আপনি বাসার নিচে?
” হুমম। তাড়াতাড়ি আসবা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সুহাসিনী জানালার সামনে গিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্পষ্ট রুদ্র কে বোঝা যাচ্ছে। চোখাচোখি হয় দু’জনের। সুহাসিনী চোখ সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিচে এসে রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,

” এতো রাতে এখানে কেনো?
” বউ নিতে এসেছি।
” আপনার বউ যাবে না চলে যান।
” গাড়িতে উঠো।
” না।
” রাগাবা না কিন্তু উঠো গাড়িতে।
রাগ নিয়ে কথাটা বলে রুদ্র।
সুহাসিনী গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে,,

” আশ্চর্য রাগার কি হলো উঠছি তো।
রুদ্র নিজেও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে পড়ে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে,,
” দিনে এসে থাকবা বারন করবো না কিন্তু রাতে কোথাও গিয়ে থাকতে পারবা না আমি ছাড়া।
” নিজের বাড়িতে থাকতে পারবো না। এ কমন কথা!
” থাকতে না করি নি দিনে থাকবা রাতে আমার ঘুম হারাম করে ঘুমাতে পারবা না নিশ্চিন্তে অন্য কোথাও।
” যত্তসব ফাউল কথা। আপনার ঘুম আমি কিভাবে হারাম করলাম।
” ওভাবেই যেভাবে মন কেড়ে নিছিলা। আর কথা বলবা না চুপ থাকবা শরীর ভালো লাগছে না।
” কেনো কি হইছে?

” স্বামীর দিকে খেয়াল রাখলে তো জানতা। শুধু প্যারা আর না করতেই জানো। একটু তো ভালোবাসতে জানো না।
” কথায় কথায় ভালোবাসা ভালেবাসা এটা ছাড়া আর কথা নেই?
” না নেই। এই ধরো জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে গেলাম তখনও বলবো ভালোবাসার কথা বুঝছো।
” আপনার ভালোবাসা শুনতে শুনতে আমিই জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে যাবো।
” বুড়ো হচ্ছি সুহা।

” কোথায় বুড়ো হচ্ছেন। দাড়ি তো এখনো পাকে নি।
” বাবা ডাক শুনবো।
” তে শুনুন না,না করছে কে?
” তুমিই তো না করতেছো বারবার কাছে ঘেঁষতে দাও না। বাবা কি হতে দিবা না।
” ফাজিল লোক আবার ওসব কথা। এই গাড়ি থামান নেমে যাবো আমি।
” নামা লাগবে না আমিই ধাক্কা মে-রে ফেলে দেই আসো।
হঠাৎ বাড়ির উল্টো রাস্তায় যেতে সুহা বলে উঠে,,

” বাড়ির রাস্তা তো ওটা তাহলে এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
” হানি- মুন করতে যাচ্ছি আমি তুমি।
” ম. মানে?
” হানিমুন মানে মধুচন্দ্রিমা করতে যাচ্ছি। আমার দশ টা না পাঁচ টা না একটা মাত্র বউ বিয়ের পর থেকে সেভাবে সময়ই দিতে পারলাম না। তাই ভাবলাম একটু ঘুরে আসি আমরা।
” যাচ্ছি কোথায়?
” আমাদের বাগান বাড়ি। সুন্দর একটা সময় কাটাবো দুজনে নির্জন প্রহরে বুঝছো।
” ওহ্।

” রুম গুলো এতো সুন্দর করে সাজানো কেনো?
রুদ্রর সুহার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে,,
” আরেক টা বিয়ে করেছি সেই বউ নিয়ে এই রুমে রাত কাটাবো তাই।
” ফাজিল।
” আলমারি তে দেখো শাড়ি আছে যাও পছন্দ মতো একটা পড়ে আসো।

” এই রাতে আবার শাড়ি? পারবো না, আমার ঘুম ধরছে ঘুমাবো। শাড়ি পড়ার হলে কাল পড়বো। আপনিও ঘুমান।
কথাটা বলে সুহা বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে। রুদ্রর ইচ্ছে করছে সুহা কে তুলে আছাড় দিতে।
নিজের রাগ কে যথাসম্ভব কন্ট্রোল করে ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।
সুহা মাথা উঁচু করে রুদ্র কে যেতে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো। রুদ্রর পেছন পেছন বেলকনিতে গিয়ে বলে,,

“এতো রাগেন কেনো কথায় কথায়।
” সেম প্রশ্ন আমারও এতো না না করো কেনো আমার সব কথায়?
” আমি না করলে আপনি জোর করবেন কই জোর তো করেন না।
” রুদ্র ফোর্স করতে জানে না তাই করে না।

” ভালোবাসতে হলে জোর ও থাকতে হয়। নিজের টা নিজের আদায় করে নিতে হয়। আপনি ভালোবাসতে চাইলে তো আমি নাই করবো এটাই সিম্পল। মেয়েদের হ্যাঁ করতে নেই তাহলে কেমন যেনো দেখায় ব্যাপারটা।
” কোথায় লেখা আছে মেয়েদের হ্যাঁ করতে নেই অনুমতি চাইলে।
” কোথাও না তবে আমি নাই করবো আপনি না কে হ্যাঁ ধরে নিবেন।

” ভেবে বলছো তো?
” না ভেবে সুহা কি কিছু বলে?
কথাটা বলতেই রুদ্র সুহাকে পাঁজা কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়। সুহার লজ্জা লাগে। রুদ্র সুহার চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে বলে,,

” ভালোবাসি তোমায় সুহাসিনী।
” হুমম জানি।
” তুমি তো একবার ও বললে না ভালোবাসি রুদ্র তোমায়?
” সব মুখে কেনো বলতে হবে বুঝে নিন।
” ভালোবাসার মানুষটির মুখ থেকে শোনা এক জিনিস আর বুঝে নেওয়া আরেক জিনিস।
” এখন যদি বলি ভালোবাসি না তাহলে?

” তাহলে আর কি কিছুই না ভালো না বাসলেও আমার সাথেই থাকতে হবে। একটু গর্ব বোধ করো আমার মতো ড্যাশিং ছেলে পেয়েছো বলে। যে তোমায় এত্তো এত্তো ভালোবাসে।
” আপনি ও একটু গর্ব বোধ করুন আমার মতো সুন্দরী আপনার কপালে জুটেছে।
” আমার কপাল টাই পুড়া এতো সুন্দরস বউ কেনো জুটলো আমার কপালে হোয়াই? তুমি টেরা হলেও তো পারতে তাহলে আমি ব্যাতিত কেউ তাকাতো না।

” এহহহ তখন ঘুরেও তাকাতেন না আমার দিকে। জানা আছে। এখন চুপচাপ ঘুমান।
কথাটা বলে সুহাসিনী ঘুরে শুতে নিলে রুদ্র সুহাসিনী কে নিজের দিকে ঘুরায়। পেটের উপর থেকে কামিজ সরাতে গেলে সুহাসিনী হাত চেপে বলে,,

” মেডিসিন নেই রুদ্র।
” আই নিড বাচ্চা সুহা। জানি বিয়ের দু মাস এখনো হয় নি কিন্তু আমার বাচ্চা চাই।
” আমার পড়াশোনার কি হবে? বাচ্চা সমালাবো না কি পড়াশোনা করবো?
” বাচ্চা আমি সামলাবো, আর মা ভাবি ও তো আছে।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ২৫

” বাচ্চা নিলে অনেক পেইন সহ্য করতে হয় আমি এখনই নিবো না। আমার ভয় করে। বাচ্চার জন্য তৈরি নই আমি।
” আচ্ছা সমস্যা নাই। টেবিলের পাশে মেডিসিন রাখা আছে খেয়ে আসো।
সুহাসিনী বিছানা ছেড়ে উঠে মেডিসিন খেয়ে আসে। বিছানায় শুতেই রুদ্র নিজের বাহুডোরে সুহাকে আগলে নেয়। ভেসে যায় দুজনে অন্য জগতে।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ২৭