প্রেয়সী পর্ব ৫৩(২)

প্রেয়সী পর্ব ৫৩(২)
নন্দিনী নীলা

” আমি এখানে কীভাবে? আপনি কীভাবে! সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমাকে তো মিতুল আপু..”
মধুর চোখে মুখে চরম বিষ্ময়। ও কিছুই ভাবতে পারছে না। ও তো ভেবেছিল এবার চোখ মেললে নিজেকে মিতুলের বন্দি দেখতে হবে। আগের বার সমুদ্রের হাত থেকে রক্ষা পেলেও এবার ও আর রক্ষা পাবে না।

কিন্তু এমন সারপ্রাইজ পাবে ও কল্পনাও করতে পারেনি। যাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য এতো কিছু করেছে। সে এতো সহজেই ওর কাছে চলে এসেছে ও ভাবতেই পারছে না। মধু নিজেকে অনেক কষ্ট সামলে ফুয়াদকে জিজ্ঞেস করে বলল,,” আপনাকে কি মিতুল আপু বন্দি করে রেখেছিল? কোথায় বন্দি করে রেখেছিল বলেন? আপনি সেখানে থেকে বের হলেন কি করে? আমাকে যে মিতুল বন্দি করতে চাইছিল জানলেন ই বা কি করে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফুয়াদ বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল,,” তোমার কি মনে হয় আমাকে মিতুল বন্দি করে রাখতে পারবে? আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি ওর বন্দি ছিলাম?”
বলতে বলতে ফুয়াদ ট্রি শার্ট খুলে শার্ট পড়ে নিল‌। হাতা গুটাতে গুটাতে মধুর কাছে এগিয়ে এসে বলল,,” কি হলো বলো।”

মধু ফুয়াদ কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখছে। “আপনি এতো দিন কোথায় লাপাত্তা হয়ে গেছিলেন? যদি কিছু নাই হয়ে থাকে তাহলে সামনে আসেননি কেন?” বিস্মিত কন্ঠে বলল মধু। ও ফুয়াদ কে চিনতে পারছে না। যার চিন্তায় ও পাগল পাগল হয়ে ছিল। সে কি ইচ্ছে করে এমন উধাও হয়ে গেছিল।
ফুয়াদ মধুর হাত ধরে ওকে বিছানা থেকে নিচে নামালো।

মধু বোকা কন্ঠে আবার বলল,,” আপনি কি ইচ্ছে করে‌ নিজেকে সবার থেকে আড়ালে রেখেছিলেন?”
মধুর ঠোঁট কাঁপছে ফুয়াদ যদি এটা ইচ্ছে করে করে থাকে তাহলে ও ফুয়াদ কে ক্ষমা করতে পারবে না। ওর এই কয়েকটা দিন কতটা যন্ত্রণায় কেটেছে ওই জানে। ফুয়াদ এই যন্ত্রণা কি ইচ্ছাকৃতভাবে দিয়েছে ওকে?
মধু ফুয়াদের উত্তর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে।
ফুয়াদ মধুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,” এতো দিন তোমাকে না দেখে আমি আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারব। সেচ্ছায় তোমার কি মনে হয়?”

মধু ফুয়াদের কথা শুনে ইমোশনাল হয়ে পড়ল।ও ভাবছে তার মানে ওর ধারণাই ঠিক সমুদ্র ফুয়াদ কে আটকে রেখেছিল। ফুয়াদ কি এটা জানে? তারপর উনার ভাই ওকে বিয়ে করেছে। এসব ফুয়াদ জানলে ওর কি অবস্থা হবে? মধু মনে মনেই ঢোক গিলছে।

ফুয়াদের হাতের মুঠোয় মধুর হাতটা তখনো ধরা ছিল। মধুর শরীর কাঁপায় হাত ও কাঁপছে যা ফুয়াদ হাত ধরে রাখার জন্য খেয়াল করে। ফুয়াদ মধুর দিকে তাকিয়ে বলে,,” কি‌ হলো তোমার?”
মধু বলল,,” আপনাকে কে আটকে রেখেছিল জানেন?”

” হ্যা জানি।” বিরস কন্ঠে বলল ফুয়াদ।
মধু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,,” আপনি সব জানেন? আপনার কষ্ট লাগছে না?”
” সব জেনে কষ্ট না লাগলেও তোমার থেকে দূরে থাকার জন্য হৃদয় পুড়েছে।”
মধুর চোখ ছলছল করে উঠল ও বলল,,” আমার ও খুব কষ্ট হয়েছে।”
ফুয়াদ বলল,,” তুমি তো আমায় ভালোবাসো না। তোমার কষ্ট হবে কেন? ভালো তো আমি একাই বাসি কষ্ট যন্ত্রনা সব আমার একার ই হয়েছে।”

মধু কান্না করে দিল।
মধু মাথা নিয়ে ঠেকালো ফুয়াদের বাহুতে তারপর বলল,,” আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এতোটাই ভালোবাসি যে প্রতিদিন প্রতিটা মুহূর্ত আপনি হীনা আমার নরকের মতো কেটেছে।”
” Don’t cry sweetheart. আমি চলে এসেছি তো।”

ফুয়াদ মধুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। আর মধু শুধু বিয়ের কথাই ভাবছে। ফুয়াদ কি জানে নাকি জানে না। জানলে কি রকম রিয়েক্ট করবে? সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছে ওর মনটা। সাথে ভয় ও পাচ্ছে।
মধু আর ফুয়াদ রাতটা ওই বাসাতেই কাটালো।

মধু ফুয়াদকে বলেছিল বাসায় যাওয়ার কথা ফুয়াদ রাজি হয়নি। না হ‌ওয়ার কারণটাও জানায় নি। আবার এই বাসা কার সেটাও বলেনি।পরপর কয়টা বাসা আছে বেলকনিতে থেকে সেসব বাসা থেকে একটু পর পর চিৎকার চেঁচামেচি গালাগালি বেরিয়ে আসে। মধু প্রথম বার এমন ঝগড়ার আওয়াজ পেয়ে ফুয়াদ কে জিজ্ঞেস করেছিল কারা এতো ঝগড়া করে। ফুয়াদ তখন বলেছে দুই ভাই নাকি দুই ফ্লাট থেকে একটু পর পর এমন ঝগড়া চিৎকার করে করে।
মধু তখন বলেছিল,,” এরা কেমন ভাই আপন নাকি চাচাতো?”

” আপন এক মায়ের পেটের।”
” তারা এমন শত্রু পক্ষের মতো ঝগড়া করে কেন?”
” আমি এতো সব ইতিহাস জানি না।” অবজ্ঞা স্বরে বলল।

মধু আর কিছুই বলল না। চলে গেল। রাত একটার দিকে আবার এই ঝগড়া শুরু হয়েছে। মধু ছিটকে উঠেছে। বিছানা থেকে উঠে দেখে ফুয়াদ সোফায় মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। মধু বিরক্তিকর চোখে তার দিকে তাকিয়ে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। বাইরে লাইটের আলোয় দিন মনে হচ্ছে। দু’জন পুরুষ চিৎকার চেঁচামেচির সাথে মারামারি ও করছে। সাথে আরো কয়েকজন আছে। মধু মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।
পেছনে থেকে ঘুমঘুম কন্ঠে ফুয়াদ বলে উঠল,,” তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?”

মধু উত্তেজিত কন্ঠে বলল,,” এতো মারামারি হচ্ছে। আপনি ঘুমাচ্ছেন কি করে? এরা আপন ভাই আমি তো ভাবতেই পারছি না।”
ফুয়াদ মধুর কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলল,,” ওদের কাজ ওদের করতে দাও। তুমি না ঘুমিয়ে এসব দেখছ কেন রুমে চলো।”

“এতো চিৎকার চেঁচামেচি তে কি ঘুমানো যায়। আপনি দুইদিন ধরে এসব কিভাবে সহ্য করছেন?”
” বিপদে পরলে অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়।”
ফুয়াদের কথা শুনে মধু ব্যথিত মুখ করে ওর দিকে তাকাল। ফুয়াদ ওর তাকানো দেখে বলল,” কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

” আপনার খুব কষ্ট হয়েছে তাই না?”
” আমাকে তো তারা জামাই আদর করেছে। কষ্ট হবে কেন?”
” আপন ভাইয়েরা এমন কিভাবে হয় বলেন তো। দেখুন উনারা ও কেমন শত্রুর মতো ঝগড়া করছে আবার…”
মধু সমুদ্রের কথা ভেবে বলছিল। ফুয়াদের কথায় ওকে থামতে হলো,,” খুব ঘুম পাচ্ছে আর ক্লান্ত লাগছে। চলো ঘুমাই।”

মধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। ফুয়াদ সোফায় শুয়ে পড়ল। মধু আর ঘুমাতে পারল না শুয়ে ড্রিম লাইটের আলোয় ফুয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে র‌ইল। চিৎকার চেঁচামেচি কমে আসছে। মধু উঠে সোফার পাশে গিয়ে বসে ঘুমন্ত ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে র‌ইল। কত দিন পর মানুষটাকে কাছ থেকে দেখছে ও। ফুয়াদের চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। মধু ফুয়াদের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। ফুয়াদ জানতেও পারল না রাত জেগে একজন ওর শিয়রের কাছে বসে নির্ঘুম বাকি রাতটা কাটিয়ে দিল।

তিন্নি না কাউকে কিছু বলতে পারছে না নিজের টেনশন মিটাতে পারছে। মিতুলের পেছনে গিয়ে মধু উধাও হয়ে গেল কিন্তু মিতুল ঠিকিই এক ঘন্টা পর বাসায় ফিরে এসেছে ফুরফুর মন নিয়ে। তার পর থেকে তিন্নি মধুর নাম্বারে কল করছে কিন্তু ফোন সুইচ অফ। এখন ওকে কিভাবে খোঁজে পাবে। টেনশনে ওর মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। রাতে সমুদ্র এসে মধুর কথা জিজ্ঞেস করল তিন্নি কোন উত্তর দিতে পারল না।

শুধু বলল মধু বেরিয়ে ছিল তারপর আর ফিরে আসেনি। সমুদ্র এসব শুনে একটু রাগারাগী করল তিন্নির উপর। একা বেরুতে দিয়েছে কেন নিজে কেন যায়নি। তিন্নি বলার মতো কিছুই খোঁজে পায়নি। মাথা নিচু করে বকা হজম করেছে। সমুদ্র রাতেই ফিরে আবার বেরিয়েছে মধুর খোঁজে ফিরে এসেছে শূন্য হাতে। এদিকে এসবের মাঝে মিতুল মুখে হাসি দেখা গিয়েছে তিন্নি শিউর মিতুল কিছু করেছে মধুর। কিন্তু এই সত্যি ও কাউকে বলতে পারছে না। কিন্তু না বলেও থাকতে পারল না। সমুদ্রের রুমে গিয়ে সবটা জানিয়ে এল। সমুদ্র সব শুনে মিতুল কে সবার সামনে জেরা করা শুরু করেছে বিকেলে কোথায় গিয়েছিল!

মিতুল থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। পরিস্থিতি বিগড়ে যাচ্ছে দেখে ও কান্না কে বাঁচার রাস্তা ধরে নিয়েছে আর নাফিসা বেগম তো আছেই। তিনি বাঁচাবেন সেই আশায়।
সমুদ্র মিতুলের হাত মুচড়ে ধরে বলল,” বলো মধু কোথায়?”

মিতুল হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,,” আমি কিভাবে জানব। আমি তো শপিং এ গেছিলাম। মধু তো আমার সাথে যায়নি। আন্টি কিছু বলুন। আমার সাথে কেমন ব্যবহার করছে সমুদ্র দেখেন।”
নাফিসা বেগম কিছু বলতে যাবে সমুদ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলে,,” প্লিজ মা। এখানে তুমি অন্তত কথা বলো না।”

নাফিস বেগম থমকে চুপচাপ করে থাকে। কথা বলার সাহস পায় না। মিতুল অসহায় মুখ করে তাকায় নাফিসা বেগম এর দিকে। সমুদ্র নিজের রাস্তা ঠান্ডা করে বলে,,” আমাকে সত্যি টা বলো। আমি মিথ্যা শুনতে চাই না।”
মিতুল বলল,,” হাত ছাড়ো বলছি।”
সমুদ্র মিতুলের হাত ছেড়ে দেয়। মিতুল হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে লাল হয়ে উঠেছে। ও ফুপাতে ফুপাতে বলে,” আমি মধু কে….”

প্রেয়সী পর্ব ৫৩(১)

থেমে যায় মিতুল সমুদ্রের ফোনে একটা কল এসেছে। সমুদ্র ফোন কানে ধরে বাইরে চলে যায়। মিতুল হাফ ছেড়ে বাঁচল যেন। নাফিসা বেগম এক গ্লাস পানি এনে দেয় মিতুল কে। মিতুলের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ভয়ে ও ঢকঢক করে পানি খায়।

প্রেয়সী পর্ব ৫৪(১)