মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১৩

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১৩
তানিশা সুলতানা

প্রেমে পড়ার অনুভূতি সুন্দর। শুধু সুন্দর নয় একটু বেশিই সুন্দর। এই যে তন্নি প্রেমে পড়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে৷ মানুষটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। তার ছোট ছোট পাগলামি, লাগামহীন কথাবার্তা, আর খুনশুটি। বেশ এনজয় করে তন্নি। কিন্তু সে মুখে বলতে নারাজ। মুখ ফুটে একদম কথাটা স্বীকার করবে না। সেইদিন অর্ণবকে বিয়ে করা নিয়ে তন্নির হতাশা ছিলো। মন খারাপ ছিলো। জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে এমন একটা মনোভাব তৈরি হয়েছিলো তার। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেইদিন বিয়েটা না করলে অনেক কিছু মিস করে যেতো। জীবনটা এতো সুন্দর বুঝতেই পারতো না।

অর্ণব তন্নিকে নিয়ে এসেছে পদ্মা নদীর পাড়ে। বিশাল বড় নদী। নদীর পাড়ে একটা ফুল গাছ আছে। ফুলের নাম জানা নেই তন্নির। তবে ভীষণ সুন্দর ফুলগুলো। ইচ্ছে করছিলো এক থোকা ফুল হাতে নিতে৷ কিন্তু কিভাবে নিবে?
গাড়িতে বসেই এসব ভাবছিলো তন্নি। তখন অর্ণব বলে ওঠে
“মায়াবতী নামতে হবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তন্নি মাথা নারিয়ে সিট বেল্ট খুলে নেমে পড়ে। অর্ণবও নামে। এক লাফে কিছু ফুল ছিঁড়ে আনে। তন্নি ভয় পেয়ে যায় অর্ণবকে লাফ দিতে দেখে দু পা পিছিয়ে যায়। কিন্তু অর্ণবের হাতে ফুল দেখে তখন ভয় টা কেটে যায়। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। অর্ণব একটা ফুল তন্নির কানের পেছনে গুঁজে দেয়। আর বাকি ফুল গুলো নিয়ে তন্নির সামনে হাঁটু মুরে বসে। তন্নি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের দিকে

” মায়াবতী আমার অনির মাম্মাম হবে? আই প্রমিজ তোমাকে খুব ভালো বাসবো৷ খুব ভালো রাখবো।
তন্নি অর্ণবের হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে নেয়। অর্ণবের কথার জবাব না দিয়ে হাঁটতে থাকে নদীর দিকে৷ অর্ণব দাঁড়িয়ে তন্নির পেছনে দৌড় দেয়। তন্নির পাশাপাশি গিয়ে তন্নির হাতের ভাজে নিজের পুরুষালী শক্ত হাতটা ঢুকিয়ে দেয়। আগুলের ভাজে আঙুল পুরিয়ে শক্ত করে ধরে তন্নির হাতটা।
তন্নি জবাব দেয় না।

অথৈ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকার কারণটা হচ্ছে রিকশা মামা। আজকে একটাও রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। এই কড়া রোদের মধ্যে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার ইচ্ছে তার নেইৃ তাছাড়াও অনেকটা রাস্তা হাঁটতে হবে। তার থেকে ভালো দাঁড়িয়ে থাকা৷ রিকশা আসুক তারপরই যাবে। এতে যাি সন্ধ্যায় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয় থাকবে।
সাগর অথৈয়ের জন্য যেতে পারছে না। সে কলেজের গেইটের পাশে বাইক থামিয়ে তাতে বসে বসে অথৈকে দেখছে। মেয়েটা যাচ্ছে না কেনো এটাই বুঝতে পারছে না সাগর। তাকে তো সদা কেউ না কেউ নিতে আসে বা রিকশা করে চলে যায়।

তাহলে আজকে কি হলো? কারো জন্য কি অপেক্ষা করছে? কেউ কি আসবে? সেই কেউটা কি কোনো ছেলে?
শুকনো ঢোক গিলে সাগর।
হেলমেট মাথায় পড়ে এক টানে অথৈয়ের সামনে গিয়ে বাইক থামায়।
অথৈ প্রথমে চমকে উঠলেও পড়ে সাগরকে দেখে আলতো হাসে।
সাগর হেলমেট খুলে চুল ঠিক করতে করতে বলে

“দাঁড়িয়ে আছো যে?
” রিকশা পাচ্ছি না তো।
আজকে একটাও রিকশা আসছে না।
অসহায় ফেস করে বলে অথৈ। এতোখনে সাগরের জানে পানি আসে। তার মানে কারো জন্য অপেক্ষা করছে না।

“এসো আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
” শিওর?
“একদম
অথৈয়ের সাগরের কাঁধে হাত রেখে বাইকে বসে পড়ে। সাগরের হার্ট বিট বাড়তে থাকে। প্রথমবার অথৈয়ের ছোঁয়া পেলো। উফফ মেয়েটার হাতে জাদু আছে।
অথৈ সাগরের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই সাগর বলে ওঠে

” ধরে বসো। রাস্তা ভাঙা পড়ে যাবে তো।
অথৈ আবারও সাগরের কাঁধে হাত রাখে। সাগর মুচকি হেসে বাইক চালানো শুরু করে। প্রিয় বাইক পেছনে প্রিয় নারী। আর কি চাই?
সময়টা এখানেই থামানো গেলে ভালো হতো।
“সাগর ভাইয়া আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?

হঠাৎ করেই অথৈ প্রশ্নটা করে বসে। সাগর বাইকের আয়নায় তাকায় অথৈয়ের দিকে।
” নাহ
একজনকে ভালো লাগে কিন্তু মনের কথা বলতে পারছি না।
“আচ্ছা
অথৈ আর কোনো কথা বলে না। তবে সাগর চাইছিলো অথৈ আরও কিছু প্রশ্ন করুক। আরও একটু কথা বলুক সাগরের সাথে।

এই মেয়েটা কবে বুঝবে সাগরের অনুভূতি? কবে সাগরের হাতটা ধরবে? কবে তারা প্রেম করবে? কবে মেয়েটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে?
এসব কবে হবে?
আর কতো অপেক্ষা করতে হবে?

সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। নদীর মাঝখানে সূর্যে রক্তিম অংশটার আঁচ পড়েছে। দেখতে দারুণ লাগছে। তারপর পাশের কিচির মিচির শব্দ বেড়ে যাচ্ছে। নদীর ঢেঠ বেশ শব্দ করে এসে অর্ণব তন্নির পা ছুঁয়ে দিচ্ছে। ফুরফুরে বাতাস মাঝেমধ্যে শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
মুহুর্তেটা কিন্তু দারুণ।

তন্নি ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে প্রকৃতি দেখছে। এতো সুন্দর দৃশ্য সে আগে কখনো দেখেনি৷ ফুল গুলে এখনো তার হাতের মুঠোয়। অনেকটা নেতিয়ে পড়েছে। অর্ণব বাদাম ছিলে নিজে খাচ্ছে আর তন্নির মুখে ঢুকিয়ে দিচ্ছি। বাদাম তন্নির পছন্দ না তবে আজকে ভালো লাগছে। স্বাদহীন বাদাম যেনো আজকে মধুর মতো মনে হচ্ছে।
নদীর পাশে একটা বেঞ্চ ছিলো তাতেই বসে আছে অর্ণব তন্নি।

অর্ণব কিছু দিন আগে এখানে এসেছিলো। ইচ্ছে ছিলো প্রিয় মানুষটার সাথে এখানে বসে একদিন গোধূলি দেখবে। কিন্তু নিধি আসে নি। তার এসব ভালো লাগে না।
আজকে যখন তন্নিকে তার প্রেমিকা বধু রূপে পেলো তখন তার ইচ্ছে জেগে বসলো জীবনের শেষ নারীর সাথে গোধূলি দেখবে।

তাই ইচ্ছেটা পূরণ করে ফেললো। যতটা ভেবেছিলো তার থেকেও বেশি আকর্ষণীয় ছিলো সময় টা।
হাতপর বাদাম শেষ। এবার অর্ণব তাকায় তন্নির দিকে। তন্নির ঠোঁটের পাশে বাদামের গাল লেগে আছে। হাত বাড়িয়ে সেটা ফেলে দিতে যায় অর্ণব। তন্নি চমকে তাকায় অর্ণবের দিকে। অর্ণব মুচকি হেসে ময়লাটা ফেলে দেয়। তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে।
এটা দেখে অর্ণব হাসে। এক হাতে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে

” উমমম তুমি যেটা ভেবেছিলে সেটাই।
দাঁত কেলিয়ে বলে অর্ণব। তন্নি অর্ণবের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাকায় নদীর পানির দিকে৷
অর্ণব আরও একটু চেপে বসে তন্নির সাথে।
“কাল সিঙ্গাপুর চলে যাবো। এক মাস পড়ে ফিরবো। তার মানে হলো এক মাস তোমার আর আমার দেখা হবে না।
তন্নি জবাব দেয় না। তবে তার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে ” কই আগে তো বললেন না?” অথৈ আর বাবা ও তো কিছু বললো না”

কিন্তু প্রশ্ন করতে পারে না। সত্যি কথা হলো অর্ণবের সামনে সে নার্ভাস হয়ে পড়ে। এটা যে ভয় পেয়ে নার্ভাস সেটা নয়। এটা অস্বস্তিতে নার্ভাস।
অর্ণব এবার একদম তন্নির গা ঘেসে বসে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
“একটা আবদার করি?
তন্নি জবাব দেয় না। নিজের ড্রেস খামচে ধরে শক্ত হয়ে বসে থাকে।

” সেইদিন নিধির সাথে যেটা করতে যাচ্ছিলাম। তোমার সাথে করি?
তন্নি এবার শুকনো ঢোক গিলে। একটু দূরে গিয়ে বসে চায়। অর্ণব কোমর জড়িয়ে আটকে দেয়। আরেক হাতে তন্নির ডান গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফেরায়। মেয়েটাকে একদম পুতুল পুতুল লাগে অর্ণবের কাছে। মেয়েটা এতো সুন্দর? না কি তার কাছেই শুধু সুন্দর লাগছে? মেয়েটাকে দেখলেই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয়।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১২

“প্লিজ হ্যাঁ
প্লিজ
তন্নি এবারও জবাব দেয় না। অর্ণব জবাব চায় ও না। সে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১৪