মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১১

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১১
তানিশা সুলতানা

তন্নি এখনো হতদম্ভ হয়ে বসে আছে। স্বাভাবিক হতে পারছে না ঠিকঠাক ভাবে। কপালে যেনো লোকটার ছোঁয়া এখনো লেগে আছে। লোকটা আসলেই পাগল। মাথা থেকে ওড়না পড়ে গেছে কখন তা জানা নেই তন্নির। লজ্জায় অস্বস্তিতে কাহিল হওয়া তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে অর্ণব বলেছিলো “আমার একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো।

সে আমাকে বোকা বানিয়েছে। এক সাথে দুটো রিলেশন কন্টিনিউ করছিলো। জানতে পেরে পিছিয়ে এসেছি। খারাপ লেগেছিলো খুব। মেয়েটার সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক ছিলো। তোমাকে আমার ভালো লাগে। তোমার সাথে রিলেশন করার ইচ্ছে ছিলো না। তাই বিয়ে করেছি। তুমি যদি এটা ভেবে নাও একজনকে ভোলার জন্য তোমায় ব্যবহার করছি তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। মানুষকে কখনো ভোলা যায় না। আমি ভুলতে চাই ও না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই। খুব ভালোবাসতে চাই। যতটা ভালোবাসলে তুমি ছেড়ে দিলে আমি পাগল হয়ে যাবো”
লোকটার কথা গুলো এখনো মস্তিষ্কে ঘুরছে তন্নির। তবে একটা বিষয় তন্নি নোটিশ করলো লোকটার মধ্যে ম্যাচুউরিটির অভাব। তার মধ্যে লুকানো বেপারটা নেই। যেটা বলবে বা যেটা করবে সেটা সামনাসামনি। এই বেপারটা মন ছুঁয়ে গেছে তন্নির।

তন্নি বুক ভরে শ্বাস টেনে জামা পাল্টে নেয়। মাথায় ভালো করে ঘোমটা টেনে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
তারেকের মুখোমুখি বসে আছে আনোয়ার। তারেককে আনোয়ারের খুব একটা ভালো লাগছে না।
কথায় কথায় বেরিয়ো আসে তন্নি আব্দুল্লাহর নাতনী। আনোয়ার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“এতোদিনে আব্দুল্লাহ চাচার কষ্টটা বুঝলাম। আসলেই তার মেয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছিলো। হিরে হয়ে কাঁচকে বেছে নিয়েছিলো। কোনো বাবাই এটা মেনে নিতে পারবে না৷

আপনার মতো একটা লোককে কি করে মায়া বেছে নিলো? আপনাকে তো পুরুষ বলেই মনে হয় না। আব্দুল্লাহ চাচা তার নাতনিকে কেনো নিয়ে যাচ্ছেন না এখান থেকে।
রানীর মতো বড় হওয়ার কথা ছিলো তন্নির সেখানে দাসীর মতো খেঁটে যাচ্ছে? হাইরে কপাল
তারেক কাচুমাচু হয়ে বসে।

একটু আগে আনোয়ার বলেছে তন্নি এখানে থাকবে তিন বছর তাকে তুলে নিয়ে যাবে। তখনই ইতি বেগম বলে ওঠে ” এখনই নিয়ে যান”
এই কথাটাতে অর্ণব ক্ষেপে গিয়েছিলো তাকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে আনোয়ার।
আনোয়ার কল করে আব্দুল্লাহর কাছে। বৃদ্ধার বয়স পেরিয়েছে সত্তর। এখনো দাপট কমে নি৷ আগে চেয়ারম্যান ছিলো। এখন তার বড় ছেলে চেয়ারম্যান। কল রিসিভ করতে বেশি সময় নেয় না আব্দুল্লাহ। সমাচার বার্তা শেষ হতেই আনোয়ার বলে ওঠে

“নাতনীকে এখানে ফেলে রেখেছেন কেনো? মেয়েটাকে মেরেছে আপনার জামাই এখন নাতনিকে মারতে বসেছে ওনারা।
আব্দুল্লাহ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” কতোবার আনতে গেছি। আসে নি। কথাও বলতে দেয় হা*রা*ম*জা*দা তন্নির সাথে।
“আমরা এখন তন্নির বাড়িতে আছি। আপনি আসুন। আমি আমার ছেলের বউকে আপনার হাতে বুঝিয়ে দিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবো।

কল কেটে দেয়। তারেক একটু পরপর ইতির দিকে তাকাচ্ছে রাগী দৃষ্টিতে। তন্নি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে তার পানি টলমল করছে।
অথৈ আর অর্ণব নীরব দর্শক। তাদের এখানে কিছু বলার নেই। তবে মনে মনে খুশি। নিসন্দেহে তন্নি নানুবাড়িতে ভালো থাকবে।
তারেক কিছু বলতে যায়। তাকে থামিয়ে আনোয়ার বলে

” শশুড় বাড়ির ওয়ারিশ আপনি পাবেন না। সেই চিন্তা বাদ দিন। তন্নিকে এখানে আটকে রেখে ভেবেছিলেন একদিন না একদিন তাদের থেকে দাবি করবেন। এটা আর কখনো হবে না। আপনাকে মানুষ বলতেও আমার লজ্জা করছে। আপনার তো এই বাড়ি টুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। এই বাড়িটাতে তন্নির ভাগ আছে। আমার ছেলে নিজের ভাগ ছাড়বে না। খুব দ্রুত সেই ভাগ উসুল করতে আসবে অর্ণব। প্রস্তুত থাকবেন।

ইতি বেগমের মুখ শুকিয়ে গেছে। একটা কথার জন্য এতোকিছু হয়ে যাবে জানলে কখনোই কথাটা বলতো না।
আধঘন্টা ঘুরতে না ঘুরতেই আব্দুল্লাহ তার ছেলে জসিম আর জসিমের ছেলে সাগর চলে আসে। সবার চোখ মুখ শক্ত। যেনো তারেক একটা কথা বললেই তাকে দুঘা দেবে তারা।
আনোয়ার তন্নিকে বুঝিয়ে দেয় ওদের হাতে। তন্নি বেশ কয়েকবার বলেছে সে যাবে না তবুও তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ণব তন্নির হাত ধরে তাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।

সাগর অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা একটু পরপর রাগে ফুঁসে উঠছে। নাক ফুলাচ্ছে। দাঁত কটমট করছে। সামনের চুল গুলো পেছনে ঠেলার চেষ্টা করছে। বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে বেপারটা সাগরের। আনমনে হেসে ওঠে সে।
অর্ণব তন্নিকে বলে
“মায়াবতী এতেই তুমি ভালে থাকবে।
ব্যাস আর কোনো কথা বলে না তন্নি। চুপচাপ বসে থাকে। তার পাশে বসেছে আব্দুল্লাহ। একদম মায়ার চেহারা পেয়েছে তন্নি।
সাগর ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে এক বার দেখে নেয় অথৈকে। আনমনে হেসে শো করে চলে যায়।

নতুন বাড়ি নতুন পরিবেশে তন্নি মানিয়ে নিতে পারছে না। কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কাউকেই তেমন ভালো করে চেনে না। তবে সবাই তন্নির খুব যত্ন করছে। খাদিজা বেগম তন্নিকে এক মুহুর্তের জন্যও চোখের আড়াল করছে না। নিজে হাতে খাইয়ে দিচ্ছে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তন্নি শুধু তাকিয়েই আছে। তন্নির দুটো মামি তন্নির সাথে গল্প করছে। মাথায় তেল দিয়ে দিতে চাইছে কি খাবে জিজ্ঞেস করছে।

এতোখনে তন্নি একটু নিস্তার পায়। বেশ পরিপাটি সুন্দর একটা রুম দেওয়া হয়েছে তন্নিকে। তন্নি ঘুরে ঘুরে দেখছে শুধু। ভালো লাগছে না। এই বিলাশ বহুল বাড়ির থেকে তার ওই ছোট্ট কুটির বেশি পছন্দের।
বিছানায় বসতেই সাগরের আওয়াজ পাওয়া যায়।

” তন্নি আসবো?
তন্নি দাঁড়িয়ে যায়। জবাব দেয় না। সাগর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
এটা তোমার।
তন্নির দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয়। তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে। ফোনটা নিবে সে? কি করবে?
“আরেহহ নাও

এটা অর্ণব ভাইয়া দিয়েছে তোমার জন্য। এখুনি কল করবে সে।
তন্নি শুকনো ঢোক গিয়ে ফোনটা ধরে। সাগর হেসে চলে যেতে নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে যায়।
” তন্নি তোমার বন্ধুর বয়ফ্রেন্ড আছে?
তন্নি মুখ টিপে হাসে। সে জানে সাগর অথৈকে পছন্দ করে।
“কি জানি। থাকতেও পারে।
সাগর মুখটা কালো করে চলে যায়।
তন্নি হাসতে থাকে।

তখনই ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে অর্ণব নামটা জ্বল জ্বল করছে। সাথে তার হাসি মাখা একখানা ছবি। তন্নি রিসিভ করে কানে দেয়। কিন্তু কথা বলে না।
অর্ণবও চুপচাপ থাকে। দুজন দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে থাকে।
” মায়াবতী

অর্ণবের ডাকে বুক কেঁপে ওঠে তন্নির।
সে চোখ বন্ধ করে জবাব দেয়
“ফোনটার দরকার ছিলো না।
” রিলেশনশিপ এ আছি না আমরা? কথা বলতাম কি করে? রিলেশনশিপ এর মূল মন্ত হলো মোবাইল ফোন। বুঝলে অনির মাম্মা

তন্নি জবাব দেয় না।
অর্ণব আবারও বলে
“কাল আমার সাথে ঘুরতে যাবে?
” না না কাল ক্লাস আছে।
“ক্লাস শেষে?
” যাবো না।
“কোনো?
তন্নি জবাব দেয় না। অর্ণব আবার বলে ওঠে

” যেতেই হবে মায়াবতী। কাল আমাদের ফাস্ট ডেট হবে। আমি কতো এক্সাইটেড বুঝতে পারছো?
ডেট শব্দটা কানে যেতেই তন্নি চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে
“আমাকে কিন্তু ৩ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। আপনি উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দিন। নাহলে কথাই বলবো না আপনার সাথে। ব্রেকআপ করে নিবো।

অর্ণব ভ্রু কুচকে একটু চিন্তা করে। এমন রিয়াকশন কেনো দিলো?
” আরেহহহহ অনির মাম্মা তুমি এতো বোকা। তুমি তো এই টুকুনি। ডেট বলতে আমি জাস্ট ঘোরাঘুরি সময় কাটানো এসব বুঝিয়েছি।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১০

গভীর কিছু না। ওইসব পরে হবে। আগে তো বড় হও।
এই টুকুনি মায়াবতী তার সাথে ছিহ ছিহহ
তোমার মাইন্ড ভীষণ দুর্বল
তন্নি খট করে কল কেটে দেয়। লোকটা আস্ত একটা বজ্জাত।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১২