মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১০

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১০
তানিশা সুলতানা

তন্নি নিজের বাড়িতে চলে আসে। অসয্য লাগছে সব কিছু। নিধির কথা গুলো তাকে ভাবাচ্ছে। অপশন হিসেবে রেখেছে অর্ণব তাকে। নিধি ছেড়ে দিয়েছে তাকে দেখানোর তন্নিকে বিয়ে করেছে। এই কথাটাই মানতে কষ্ট হচ্ছে তন্নির। ভাগ্য কি এতোটাই খারাপ ছিলো যে এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হলো?

নিজের ভাগ্যের ওপর এক আকাশ সমান অভিমান জন্মায় তন্নির।
অথৈ তাকে আটকায় নি। বরং তন্নির যা ভালো মনে হয় সেটাই করতে বলেছে। ভাইয়ের কথা ভেবে বান্ধবীকে কষ্ট দিতে পারবে না সে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তারেক বাড়িতেই ছিলো। দুপুরের খাবার খেতে বসেছে সবাই মিলে। তারেক খাচ্ছে সাথে তামিমকে খাইয়ে দিচ্ছে। তার পাশেই তিন্নিকে খাইয়ে দিচ্ছে ইতি বেগম।
ওদের পাশে তন্নি বসলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো? খুব বেশি খেয়ে ফেলতো তন্নি?
চোখের কোণে জমে থাকা পানি টুকু হাতের উল্টো পিঠে মুছে ফেলে তন্নি।
তারেকের নজর পড়ে তন্নির দিকে

“তুই?
” বাবা আমি ওই বাড়িতে থাকবো না। প্লিজ আমাকে থাকতে দাও। আমি না হয় টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ চালাবো।
তারেকের বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। মেয়েটাকে কতোটা অবহেলা করেছে বুঝতে পারে।
ইতি ভুল ভাল বুঝিয়েছে তাকে। ইতির কথায় নেচেছে। আজকে ভীষণ মায়া হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে ডাকে তন্নিকে। তন্নি ইতি বেগমের দিকে এক পলক তাকিয়ে বাবার পাশে গিয়ে বসে।
তামিম খুশি হয়ে তন্নির কোলে উঠে বসে। তারেক এক লোকমা ভাত তন্নির গালে তুলে দিয়ে বলে

“ওনারা কিছু বলেছে?
” কেউ কিছু বলে নি। আমার সময় প্রয়োজন।
“তুই না আসলেও আমি বিকেলে তোকে আনতে যেতাম। সংসারের চাপ, টাকাপয়সার টানাটানি, ইতির ঘ্যানঘ্যানানি। সব মিলিয়ে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হচ্ছিলো তুই বাড়ি থেকে চলে গেলেই হয়ত শান্তি ফিরবে।

আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।
তারেকের চোখে পানি। তন্নিরও কষ্ট হচ্ছে। ওই মুহুর্তে যদি বাবা একটু কথা বলবো। তার চোখে একটু ভরসা দেখতে পেতো তাহলে তন্নিকে মেরে ফেললেও তন্নি বিয়ে করতো না।
কপালে বোধহয় এটাই লিখা ছিলো।

তারেক নিজে আর খায় না। বাকি ভাত তন্নিকে খাইয়ে দেয়। তন্নি চুপচাপ খেয়ে নেয়। ভীষণ খিধে পেয়েছিলো তার।
খাওয়া শেষে নিজের সেই ছোট্ট ঘরটাতে চলে যায় তন্নি। শাড়ি পাল্টে সুতি গোলাপি রংয়ের একটা থ্রি পিছ পড়ে নেয়।
অর্ণব বাড়িতে ফিরে জানতে পারে তন্নি চলে গেছে। তাই সে আশিককে কল করে বলে দেয় ফুল না আনতে। বউ চলে গেছে বাসর করবে কার সাথে?

কিন্তু অর্ণব তন্নির চলে যাওয়াটা মানতে পারছে না। বউ তার। তাহলে কেনো চলে যাবে? এটাই তো শশুড় বাড়ি। এই বাড়িতেই তো থাকবে তাই না?
আনোয়ার চা খাচ্ছিলো। তার এই একটা সমস্যা। ভর দুপুরে তাকে চা খেতে হবে। অথৈ আর আর্থি খেতে বসেছে। আশা বেগম ওদের খাবার বেরে দিচ্ছে।
অর্ণব আনোয়ারের পাশে এসে বসে

” পাপা আমার বউকে এনে দাও
আনোয়ার কেশে ওঠে। অথৈ বলে
“তোর বউ আসবে না। তোকে তার পছন্দ না।
অর্ণব বিরক্ত হয়ে বলে

” তুই চুপ থাক। পছন্দ না বললেই হলো? তুলে নিয়ে আসবো। অর্ণব চৌধুরীকে চেনে না তো।
“বাবা মায়াবতীকে এনে দিবা কি না বলো?
আনোয়ার চায়ের কাপ রেখে বলে
” বাবা তন্নির বাবা মেয়ে দেবে না। তন্নি আসবে না। আমি কিভাবে জোর করবো বলো?
“মানে কি?

আমার বউ
আমার মায়াবতী
আমার ফিউচার অনির মাম্মা তাকে আমি নিয়ে আসবো। তাতে শশুড়ের কি?
শশুড় কি শাশুড়ীকে বাবার বাড়ি রেখেছে।
আশা বেগম তার বেহায়া ছেলের কথাবার্তা শুনে সোজা রান্না ঘরে ঢুকে যায়। আনোয়ার শুকনো ঢোক গিলে।
” পাপা চলো নিয়ে আসবো

আনোয়ার অর্ণবের হাত ধরে বলে
“বাবা তোমার পড়ালেখা শেষ হয় নি। তন্নি এখনো বাচ্চা মেয়ে আঠারো হয় নি। আমি বলি কি তন্নি আসবে না। না আসলো। তিনটা বছর সময় দাও। ততোদিনে তোমার পড়ালেখা শেষ হবে তারপর তন্নিও বড় হবে। তখন নাহয় ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে বউ বাড়ি নিয়ে আসবো।
অর্ণব কিছু একটা ভাবে। তারপর বলে

” ঠিক আছে। তোমার কথা তো আমি ফেলতে পারি না। তবে চলো আজকেই শশুড় বাড়ি যাই। আর ওদের এই কথা জানিয়ে আসি।
আনোয়ার সায় জানায়। বলে বিকেলে যাবে। অর্ণব আর্থির পাশে গিয়ে বসে। আর্থির প্লেটে ভাত দিয়ে বলে তাকে খাইয়ে দিতে। আর অথৈয়ের প্লেটে দুই টুকরো ইলিশ মাছ দিয়ে বলে বেছে দিতে। দুই বোন খুশি মনে ভাইয়ের আবদার পূরণ করতে থাকে৷

বিকেলে অথৈ অর্ণব আর আনোয়ার চলে যায় তন্নিদের বাড়িতে। এতো এতো ফল বিস্কুট আর তন্নির জন্য অনেক গুলো জামা কাপড় কিনে তারা রওনা হয়৷
ইতি বেগম রান্না করছে তন্নি পাশে বসে তাকে সাহায্য করছিলো। তখনই অথৈ তন্নি নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তন্নি মাথার ঘোমটাটা টেনে বেরিয়ে আসে। অথৈকে দেখে বেশ অবাক হয়। আরও অবাক হয় পেছনে আনোয়ার এবং অর্ণবকে দেখে৷ তন্নিকে দেখেই অর্ণব চোখ টিপ দেয়। তন্নি হকচকিয়ে যায়। মাথা নামিয়ে আমতা আমতা করতে থাকে।
অথৈ তন্নির পাশে দাঁড়িয়ে বলে

“কি রে খুশি হস নি?
তন্নি একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
” খুব খুশি হয়েছি। আংকেল ভেতরে আসুন
তারপর ইতি বেগমকে ডাকে
“মা মা দেখে যাও কে এসেছে।

ইতি বেগম রান্না ঘর থেকে বের হয়। ওদের দেখে অবাক হলেও হেসে হেসে কথা বলে আনোয়ারের সাথে। তাদের বসার ঘরে নিয়ে যায়। তন্নিকে বলে শরবত গুলিয়ে আনতে।
তন্নি চলে যায়। প্রথমেই যায় নিজের রুমে। ছেঁড়া একটা জামা পড়েছে সে। জামাটা আগে পাল্টাতে হবে। হাতে আর পিঠে ছিড়ে গেছে। তেমন দেখা যায় না। তবে সাবধানের মার নেই।
তন্নি দরজা আটকাতে যাবে তার আগেই অর্ণব ঢুকে পড়ে। তন্নি বড়বড় চোখ করে তাকায়। অর্ণব গিয়ে তন্নির বিছানায় বসে পড়ে

” আআপনি এখানে আসলেন কেনো?
“দরজা আটকে পাশে এসে বসো। তারপর বলছি।
তন্নি দরজাটা আরও ভালো করে খুলে দেয়। কেউ দেখলে কি বলবে? ছি ছি ছি
একটু পরেই বাবা চলে আসবে। অর্ণবকে ওর রুমে দেখলে খারাপ ভাববে না?
অর্ণব নিজেই উঠে আসে। তন্নির হাত ধরে টান দিয়ে দরজা থেকে সরিয়ে দরজাটা আটকে দেয়।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে

” দেখুন
“হুমম দেখবো বলেই তো দরজা আটকালাম।
তন্নি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। অর্ণব তন্নির দিকেই তাকিয়ে আছে।
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে।

” মায়াবতী প্রেম করবে আমার সাথে? আই মিন রিলেশনশিপ এ যাবে? যতদিন তোমাকে আমাদের বাড়িতে না নিবে। ততদিন আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো। ডান?
তন্নি জবাব দিতে পারে না। এই লোকটার সাথে রিলেশনশিপ এ যাবে? জানটা জ্বালিয়ে মারবে।
অর্ণব তন্নির দুই গালে হাত দেয়। তন্নি কেঁপে ওঠে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। লোকটার মাথায় প্রবলেম আছে জানে তন্নি। এবার?
অর্ণব লো ভয়েসে বলে

“এই অনির মাম্মা Will you be my girlfriend?
আই প্রমিজ আমি বেস্ট বয়ফ্রেন্ড হবো।
তন্নি জবাব দিতে পারে না। লোকটার ফিসফিস করে বলা কথা মুখের ওপর উপচে পড়া অর্ণবের নিঃশ্বাস পারফিউমের ঘ্রাণ সবটা মিলিয়ে নিঃশ্বাস আটকে আসছে তন্নির। এ কেমন অনুভূতি?

শরীর কাঁপছে তার।
অর্ণব তন্নির কাঁপুনি অনুভব করে মুচকি হাসে। তন্নির মুখটা একটুখানি উঁচু করে কপালে চুমু খায়। তন্নি অর্ণবের হাত খামচে ধরে।
অর্ণব হেসে তন্নিকে ছেড়ে দেয়। মেয়েটা খাটে বসে পড়ে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৯

” ফাস্ট কিস
ওপসসস সরি চুমু।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১১