মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৯

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৯
তানিশা সুলতানা

তন্নি ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছে। আর্থি আর অথৈ তাকে চেপে ধরে। পিক তুলেই যাচ্ছে তুলেই যাচ্ছে। পাশে অর্ণব বসে এটা ওটা ভুল ধরেই যাচ্ছে। তন্নি কিছু বলতেও পারছে না আবার সয্যও হচ্ছে না।
অথৈ বোধহয় এতখনে তন্নির অস্বস্তি বুঝতে পারলো। সে বলে ওঠে

“আপি হইছে আর পিক তুলতে হবে না। এবার আমাদের যাওয়া উচিত।
আর্থি মেনে যায়।
অর্ণব তার শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে
” তোদের দুটোকে দেখে কলেজের সবাই ভয় পেয়ে পালাবে। তোরা বরং পিকই তুলতে থাক।
অথৈ দুম করে অর্ণবের পিঠে কিল বসিয়ে দেয়। ভাই তার একটা বজ্জাত। সারাক্ষণ ঝগড়া করার মুড বানিয়ে দেয়।
অর্ণব পিঠে হাত দিয়ে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“গন্ডারের শক্তি। খাবি কম কম। পাপার সব টাকা তুই একাই ধ্বংস করে দিচ্ছিস। আর গন্ডার হয়ে যাচ্ছিস। বলি এই হারে খেতে থাকলে আমার অনি খাবে কি? সে তো খাবারের অভাবে টিকটিকি হয়ে যাবে।
অথৈ আর আর্থি ভ্রু কুচকে তাকায়।

” এই অনিটা কে?
“কেনো আমার হবু মেয়ে। আই মিন ইন ফিউচার যে বেবি হবে সে অনি।
আর্থি মুখ চেপে হাসতে থাকে। অথৈ অর্ণবের চুল টেনে দিয়ে বলে
” বিয়ে করলি কি না করলি আগেই বাচ্চার নাম ঠিক করে ফেলেছিস?
অর্ণব তন্নির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে
“আরেহহ আমি একা না।

আমার বউউউউউউউউ ই তো বললো ” ওগো স্বামী চলো বাচ্চাকাচ্চার নাম ঠিক করে ফেলি। আর তাড়াতাড়ি আলাদা একটা বাসা নিয়ে নেই। এখানে চারপাশে খালি কাবাবের হাড্ডি ঘোরাফেরা করছে। এখানে থাকলে আমাদের বাসর
বাকিটা শেষ করার আগেই তন্নি “ইডিয়েট ” বলে হনহনিয়ে চলে যায়। লজ্জায় তার কান গরম হয়ে গেছে। তন্নি ভেবে পায় না একটা মানুষ এতোটা অসভ্য কি করে হতে পার? এত টুকু লজ্জাও কি নেই বেয়াদব লোকটার মধ্যে?
কলেজ থেকে ফিরে তন্নি চলে যাবে। মা’ই’র খেতে খেতে ম’রে যাবে তাও ভালো কিন্তু অসভ্য লোকটার আশেপাশেও থাকবে না।

অথৈ অর্ণবের পিঠে আরেকটা ঘুসি দিয়ে তন্নির পেছন পেছন চলে যায়। আর্থি হাসতে হাসতে শেষ।
অর্ণব ড্রাইভ করছে অথৈ আর তন্নি পেছনে বসে আছে। অথৈ কথা বলছেই তো বলছেই। তন্নি শুনছে। সব সময় এটাই হতে থাকে। অথৈ কথা বলে তন্নি শোনে।
কলেজে পৌঁছাতেই অথৈ আর তন্নি নেমে চলে যায়। অর্ণবের দিকে তাকায়ও না। অর্ণব ওদের যাওয়ার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে থাকে

“আরেহহ ভাই আমি স্মার্ট সুন্দর বিউটিফুল একটা ছেলে। পেত্নীর দল আমায় একা রেখে চলে গেলো? সুন্দরী রমণীদের ভিড়ে একা যাবো কি করে আমি? যদি হারিয়ে যাই?
নেকা কান্না করে নিজেকেই নিজে বলে অর্ণব।
অথৈ এখানে থাকলে বলতো ” তোর মতো বাঁদরের দিকে কেউ তাকাবে না”
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। নাচ গান হই হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে পুরো কলেজ৷ মেয়েদের মাথায় ফুলের গাজরা। হাতে ফুলের মালা। দেখতে ভালো লাগছে।

তন্নির ইচ্ছে করছে এরকম একটা গাজরা পড়তে। কিন্তু কাছে টাকা নেই। আফসোস থেকে গেলো।
অথৈ তন্নির হাত ধরে একদম পেছনের সাড়িতে বসে। এখান থেকেও ভালো ভাবে অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে।
অর্ণব হাতো দুটো গাজরা নিয়ে অথৈয়ের হাতে দিয়ে আবার বাইরে চলে আসে। অথৈ একটা তন্নির মাথায় দিয়ে দেয় আরেকটা নিজের মাথায় নেয়। তন্নি ভীষণ খুশি হয় কিন্তু প্রকাশ করে না।
অর্নবের বন্ধু বান্ধব সবাই অথৈকে চেনে। অথৈয়ের পাশে থাকা মেয়েটার দিকে নজর সবার। অর্ণব ফুল দিয়ে বন্ধুদের সামনে দাঁড়াতেই আশিক বলে ওঠে

” অর্ণব অথৈয়ের পাশের মেয়েটা কে রে? দারুণ দেখতে। মাশাআল্লাহ। আমি তো ক্রাশ খেয়ে ফেলছি। তোর কাজিন?
অর্ণব এক পলক তন্নির দিকে তাকায়। দাঁত বের করে হাসছে সে। ফুলটা মাথায় পড়াতে একদম অন্য রকম লাগছে। দারুণ মানিয়েছে গাজরাটা।
“ওই মেয়ের তো দুটো বাচ্চা আছে।
অর্ণবের কথায় আশিক সহ সকলে বড়বড় চোখ করে তাকায়। এই মেয়ের বাচ্চা?
দিদার বলে ওঠে

” কি বলছিস অর্ণব?
“হ্যাঁ রে ভাই
আমিও তো ক্রাশ খেয়েছিলাম। প্রপোজ করবো ভাবতেছিলাম। তখনই ইয়া বড়বড় দুটো ছেলে মাম্মা বলে দৌড়ে এসে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটার বর পেছন থেকে বলবো বাবারা আস্তে। মাম্মার পেটে বোন আছে তো।
আশিক শুকনো ঢোক গিলে বলে

” পেটে বোন মানে?
“মানে আবার প্রেগন্যান্ট।
” কিন্তু দেখে বোঝা যায় না। নাক ফুল নেই চুরি নেই গলায় চেইন নেই। ওকে দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়েই হয় নি।
অর্ণব বিরক্ত হয়। আরে বাবা তিনটা ধমক দিয়ে তিন কবুল বলিয়েছে। এখন বলছে বিয়েই হয় নি? এদের চোখে ছানি পড়েছে।

“আমি বলেছি মানে বলেছি। এই মেয়ের পিছু ছেড়ে দে।
দেখতে কি বাজে মেয়েটা দেখ। বড়বড় চোখ বড়বড় চুল। সব খালি বড়বড়। কেমন বাজে দেখতে বল? দেখলেই তো মনে হয় আস্ত ডাইনি।
মিউজিক বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তন্নি অর্ণবের কথা শুনতে পায়।
দাঁতে দাঁত চেপে অর্ণবের দিকে তাকায়।
আশিক বলে

” আদৌ মেয়েটা তোকে চেনে তো?
“আমাকে চিনবে না? আমার কথায় উঠে আর বসে।
ভাব নিয়ে বলে অর্ণব।
” তাই না কি?
“দেখবি ডাকবো?
অর্ণব দু পা এগিয়ে গিয়ে ডাকে
” অনির মাম্মা এখনে এসো।

তন্নি ফিরেও তাকায় না। সে অথৈয়ের ফোনে পিক দেখতে ব্যস্ত।
অর্ণবের বন্ধুরা হেসে ফেলে। অর্ণব তন্নির হাত ধরে বলে
“ডাকছি না আমি?
তন্নি এক গাল হেসে অর্ণবের দিকে তাকায়
” ভাইয়া কিছু বলবেন? অথৈ তোর ভাই তোকে ডাকে।
বলেই হাত ছাড়িয়ে নেয়। বেরিয়ে যায় এখান থেকে। অথৈও পেছন পেছন যায়। অর্ণবও আসে।
“কি রে কি হয়েছে?

অর্ণব জবাব দেয় না। তার আগেই নিধি চলে আসে। মূলত নিধিকে দেখেই জবাব দেয় নি৷ তন্নি রেগে আছে। তাকে সকলের সামনে ডাইনি বলা হয়েছে? শয়তান ছেলে।
তন্নির মুখোমুখি দাঁড়ায় নিধি। তন্নিকে সে চিনতে পেরেছে। নিধিকে দেখে তন্নি কপাল সোজা করে। এতখন রেগে কুঁচকে রেখেছিলো।
অর্ণব নিধির দিকে কটমট চোখে তাকায়।
নিধি তন্নির চুল গুলো ভালো করে দেখে বলে

” টাইম পাস করতে দিয়েছি। পুরোপুরি দিয়ে দেয় নি। অর্ণব চৌধুরীর বউ আমিই হবো। স্বপ্ন টপ্ন দেখে ফেলো না আবার।
তন্নি একটু হেসে জবাব দেয়
“অর্ণব চৌধুরীর সাথে টাইম পাস করতে রুচিতে বাঁধবে আমার। তন্নি গরীব হতে পারে এঁটো খাবার খায় না। আপনার চিন্তা ভাবনা যতটা জঘন্য নিশ্চয় আপনার অর্ণব চৌধুরীর চিন্তা ভাবনাও তেমনই জঘন্য হবে। তো আপনার অর্ণব চৌধুরীকে আমি চিনিও না। ভেবে চিন্তা বুঝে কথা বলতে আসবেন। আপনার এই হাঁটু বের করা
ড্রেস দেখে ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে যাওয়ার মেয়ে আমি নই।

বলেই হনহনিয়ে চলে যায়। রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে অর্ণব। অথৈও চলে যায়। অর্ণবের বন্ধুরা তাকিয়ে থাকে।
নিধি বাঁকা চোখে অর্ণবের দিকে তাকায়
” সামান্য কাজের মেয়েটাও তোমার সাথে টাইমপাস করতে চায় না অর্ণব৷ আমার মতো হাই ক্লাস স্মার্ট মর্ডান মেয়ে কি করে তোমাতে সন্তুষ্ট থাকবে বলো তো?
ভালোবাসি তোমায় তাই ছেড়ে যাচ্ছি না।
অর্ণবের কাঁধে হাত রাখতে যায় নিধি। অর্ণব সরে যায়

“আশিক কি বলেছিলি তুই? বিবাহিত মেয়েদের নাকে নাক ফুল থাকে? হাতে চুরি থাকে আর গলায় চেইন থাকে। রাইট?
আশিক মাথা নারায়।
“উমমমমম

নিধি তোমার আজকে আমার বাড়িতে দাওয়াত রইলো। অবশ্যই আসবা তুমি। আমার ফুলসজ্জার খাট তোমাকে দিয়েই সাজাবো আমি। এবং তা আজকেই। তুমি চাইলে আমাদের শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার জন্য তোমাকে রুমেও এলাও করবো।
আশিক বাজারে যত ফুল আছে নিয়ে নে। আমার পাপার নাম করে নিবি। দিতে না চাইলে বলবি আনোয়ার চৌধুরীর ছেলে ফুলসজ্জা করবে। আনোয়ার চৌধুরী দিতে বলেছে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৭

খুব বেশি ঝামেলা হলে পাপাকে কল করিস।
আমি আসছি
অর্ণব দৌড়ে চলে যায়। নিধি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। কি হলো বেপারটা?

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১০