মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৮

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৮
তানিশা সুলতানা

বিয়ে হয়ে গেলে কি জীবন পাল্টে যায়? নতুন মোর আসে জীবনে? কই তন্নির জীবনটা তে নতুন হলো না। তার মনের কোথাও অর্ণব নেই। সে অর্ণবকে পছন্দও করে না। তাহলে তার সাথে থাকবে কি করে?
লোকটা যে বেপরোয়া এখনই চলে আসবে তন্নির কাছে অধিকার ফলাতে। তন্নি কি করবে? ভালো না বেসে পছন্দ না করেও লোকটার সঙ্গ দেবে?

নাহহ এটা হতেই পারে না।
তন্নি কাচুমাচু হয়ে অথৈয়ের বিছানায় শুয়ে পড়ে। শরীরটা ভালো লাগছে না। জ্বর আসবে মনে হচ্ছে। ব্যাথা এখন বেড়ে যাচ্ছে। রাত হলে না কি অসুখ বিসুখ বাড়ে বেশি? সেটাই উপলব্ধি করছে তন্নি এখন।
মনে মনে ভেবে ফেলেছে সকাল হলেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। নিজের বাড়িতে গিয়ে থাকবে৷ যতই অট্টালিকা হোক। এখানে মন টিকছে না তন্নির নিজেদের ওই কুড়ো ঘরে শান্তি লাগে। আলাদা একটা ভালো লাগা মিশে আছে নিজের জন্ম স্থানে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর তাছাড়াও এভাবে সম্পর্ক হয় না। এটাকে বিয়ে বলা চলে না।
অথৈ তন্নির খাবার রুমে নিয়ে আসে। অর্ণবের সাথে এক চোট ঝগড়া করেছে সে। অর্ণব থাকতে চাইছিলো তন্নির সাথে। সেটা ফিরিয়েছে অথৈ এবং আর্থি মিলে। দুই বোন ভেবে পায় না তাদের ভাই এতো অসভ্য হলো কি করে? কারো কথাই শোনে না। বেপরোয়া একটা।

“এই তন্নি খেয়ে নে তো।
তন্নি অথৈয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে
” খেতে ইচ্ছে করছে না৷
অথৈ প্লেট নামিয়ে তন্নিকে টেনে বসিয়ে দেয়
“খেতেই হবে। ইচ্ছে করছে না বললে চলবে না। ঔষধ খেতে হবে না?
অথৈ ভাত মেখে তন্নির মুখের সামনে ধরে। তন্নি না করে না খেয়ে নেয়।

” তুই কি ভয় পাচ্ছিস?
তন্নি আমার ভাই কিন্তু মানুষ খারাপ না।
“ভালো মানুষও না। আমার তাকে ভালো লাগে না অথৈ। কি করে মানবো?
” সময় নে। ঠিক যাবে সবটা।
“সময় দেবে তোর ভাই?
অথৈ মুখ টিপে হাসে। সত্যিই তো তার ভাই সময় দেবে?
” আমি আছি তো। টেনশন করিস না।
তন্নি জবাব দেয় না।

“এই তন্নি কালকে না কলেজে বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান। আমি আর তুই কিন্তু শাড়ি পড়েই যাবো কলেজে।
” না না আমি শাড়ি পড়বো না।
“কেনো?
” আমার শাড়ি আছে না কি? তাছাড়াও কখনো শাড়ি পড়ি নি তো।
“আরেহহ সমস্যা হবে না। পড়লেই বুঝবি শাড়ি কি জিনিস। বাবাকে পাঠিয়েছি মার্কেটে শাড়ি আনতে।
” এই রাতের বেলা?
“তোহহহ

কাল পড়বো না? তোকে নিয়ে শপিং এ যাবো ভাবছিলাম কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।
তন্নি আর জবাব দেয় না। চুপচাপ খাবারটা শেষ করে।
অর্ণবকে আনোয়ার কড়া গলায় বলেছে বিয়ের কথা ভুলে যেতে এবং পড়াশোনায় মন দিতে। অর্ণব কখনোই পড়াশোনায় ভালো ছিলো না। বরাবরই টেনে টুনে পাশ করেছে। বাবার জন্য পড়াশোনা ছাড়তেও পারে নি।
অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছে সে।

অর্ণব বাবার কথা পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। তন্নির সাথে থাকার শখ তারও নেই। মেয়েটাকে ভালো লাগে। কিন্তু ভালোবাসে না। ভালোবাসা হবে চাহিদা বাড়বে বন্ধুত্ব হবে তখনই মেয়েটার সঙ্গ চাইবে।
ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে অর্ণব। নিধিকে পিক গুলো পাঠিয়েছে।
কোনো রিয়াকশন করেছে কি না দেখার জন্য ফোনটা হাতে নেয় অর্ণব।
নিধির রিয়াকশন দেখে অর্ণবের রাজটা তিরতির করে বাড়তে থাকে। চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। হাতের ফোনটা সজোরে দেয়ালে ছুঁড়ে মারে।

নিধি লিখেছে ” এনজয় করো। আমি এসবে মাইন্ড করবো না। এনজয় করারই তো বয়স। তবে আমাদের বিয়ের পরে এসব চলবে না”
নিধি সবাইকে নিজের মতো মনে করে? নিজে একটা খারাপ মেয়ে বলে সবাইকে খারাপ ভাবাই তার স্বভাব হয়ে গেছে।
নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না অর্ণব। ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। নিজেকে আঘাত করতে ইচ্ছে করছে। কতোটা স্টুপিট হলে নিধির মতো একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলো।

এতোটাই বাজে চয়েস?
তন্নির অভ্যাস ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে ওঠা। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। নামাজ আদায় করে অথৈয়ের বেলকনিতে চলে যায়। সকালের ফুরফুরে হাওয়া মন মেজাজ ভালো করতে বাধ্য।
বুক ভরে শ্বাস টানে তন্নি। ভালো লাগছে তার।
আস্তে আস্তে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়।।সূর্য মামা পুরোপুরি ভাবে উঠে যায়। এক ফালি রোদ এসে লাগে তন্নির চোখে।
তন্নি মাথার ওড়না ঠিক করে রুম থেকে বের হয়।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। কিচেনে আশা বেগম রান্না করছে। তন্নি এগিয়ে যায়।

” আন্টি শুভ সকাল
আশা মিষ্টি হাসে।
“এতো সকালে উঠেছো যে?
” সকালে ওঠার অভ্যাস। আপনাকে সাহায্য করি?
আশা বেগম মগে কফি ঢালতে ঢালতে বলে
“উমমম হুমম তা তো করবেই৷
আগে এটা আব্বার রুমে দিয়ে আসো। তার কফি ছাড়া চলে না।

তন্নি মাথা নারিয়ে চলে যায় অর্ণবের রুমে। দরজা খোলাই ছিলো তাই আর নক করে না। মাথার ওড়নাটা আরও একটু টেনে রুমে ঢুকে পড়ে। রুমের অবস্থা দেখে মুখটা হা হয়ে যায় তন্নির। ফোনটা ভেঙে গুড়িয়ে আছে। ল্যাপটপটা ভাঙা।
অর্ণব উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। কোমর ওবদি কম্বল টানা।
তন্নি সেদিকে আর না তাকিয়ে খাটের পাশে থাকা ছোট টেবিলে কফির মগ নামিয়ে বেরিয়ে যেতে নেয়।
তার জিনিস সে ভেঙেছে এটা তন্নি দেখবে কেনো?
তখনই অর্ণব বলে ওঠে

” শোনো মেয়ে আমার থেকে দূরে দূরে থাকবা। বুঝলে?
আমি মানুষটা ভালো না।
তন্নি মুখ বাঁকিয়ে বেরিয়ে যায়। তারও ইচ্ছে নেই এরকম একটা বাজে ছেলের কাছাকাছি থাকার।
অর্ণব উঠে বসে। রাতে ঘুমতে পারে নি সে।
নিধি তাকে আরও বাজে কিছু বলেছে। ছবি চেয়েছে বিশেষ মুহুর্তের। অর্ণব ভেবে পায় না একটা মেয়ে এতোটা নিলজ্জ হয় কি করে।

আর এতোদিনে কেনো চিনলো না নিধিকে?
আর্থি তন্নিকে সাজিয়ে দিচ্ছে। প্রথমবার শাড়ি পড়েছে তন্নি। লম্বা চুল গুলো এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখছে আর্থি। এতো লম্বাও চুল হয়? এটা কি সত্যি চুল? তার কেমন বিশ্বাসই হচ্ছে না।
অথৈও আজকে প্রথমবার তন্নির চুল দেখলো। মেয়েটা সারাক্ষণ ঘোমটা টেনে থাকে। ফলে তার চুল দেখার সৌভাগ্য হয় নি।
লম্বা চুল গুলো বিনুনি গেঁথে তাতে বেলি ফুলের মালা দিয়ে দেয়।

পারফেক্ট তন্নি।
এই রূপে তন্নি নিজেই নিজেকে প্রথমবার দেখছে।
আর্থি একটু পরপরই মাশাআল্লাহ বলছে।
“কি রে তোর হলো বোনু? আমি যাচ্ছি কিন্তু

বলতে বলতে রুমে ঢুকে পড়ে অর্ণব। সামনে তাকাতেই তার চোখ আটকে যায়। এ কাকে দেখছে?
তন্নি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। তিনজন মানুষ এভাবে দেখতে থাকলে সে ঠিক থাকবে কি করে?
আর্থি অথৈকে ইশারা করে বেরিয়ে যেতে। দএই বোন আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায়। ওদের একটু প্রাইভেসি দিলো।
ওদের বেরিয়ে যেতে দেখে তন্নিও অর্ণবকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়।
অর্ণব তন্নির হাত ধরে ফেলে
চমকে ওঠে তন্নি। তাকায় অর্ণবের দিকে।

” আমার হাত ছাড়ুন। এভাবে যখন তখন হাত ধরা আমার পছন্দ না।
অর্ণব ভ্রু কুচকে ফেলে। বা হাতে ঝাঁকড়া চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে এক টানে তন্নিকে কাছাকাছি নিয়ে নেয়।
“আমিও তো তোমার বলেছিলাম দূরে দূরে থাকতে। কিন্তু তুমি ঘুরেফিরে আমার আশেপাশেই চলে আসো।
” আমি আজকে চলে যাবো। আর কখনোই আসবো না আপনার সামনে।

অর্ণব কিছু একটা চিন্তা করে। তারপর বলে
“তোমাকে কি নামে ডাকবো? অথৈয়ের তন্নি না কি মায়াবতী?
তন্নি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে
” একটাও না।
“আচ্ছা
আমার নাম অর্ণব। আমার প্রিন্সেসের নাম তাহলে কি হতে পারে?
একটু ভেবে ফট করে বলে

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৭

” অনি হতে পারে। তাহলে তোমাকে আমি অনির মাম্মা বলে ডাকবো।
তন্নি বড়বড় চোখ করে তাকায় অর্ণবের দিকে
“বাচ্চা আসলো কোথা থেকে?
অর্নব তন্নির লম্বা বিনুনি হাতে পেঁচিয়ে বলে
” আপাতত মন থেকে৷ ইন ফিউচার আসবে তোমার পেট থেকে

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৯