মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১৪

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১৪
তানিশা সুলতানা

সূর্য ডুবে গিয়েছে। ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে। নদীর পানির গর্জন বাড়ছে। মানুষের কোলাহল কমে এসেছে অনেক আগেই। দুজন কপোত-কপোতী একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দে মুখরিত হচ্ছে। দুজনের ভেতরেই জমেছে অনেক কথা অনেক আকুলতা। কিন্তু মুখ ফুটে কেউ কাউকে বলে উঠতে পারছে না।

অর্ণবের দৃষ্টি ছিলো মায়াবতীর গোলাপি ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে। মনে ইচ্ছেও ছিলো। এগিয়েও ছিলো অনেকটা। কিন্তু হঠাৎ করে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ঠোঁট ছোঁয়ায় মায়াবতীর ললাটে। অনুভূতির জোয়ারে ভাসতে থাকা তন্নি বেশ খানিকটা চমকে যায়। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে “কি হলো হঠাৎ ” কিন্তু মুখ ফুটে বলার সাহস বা শক্তি কোনোটাই নেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বেশ কিছুখন কেটে যায়। অর্ণব ললাট শব্দ করে চুমু খেয়ে তন্নির মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে। খুব দ্রুতই নিঃশ্বাস চলছে অর্ণবের।
মানুষ ভয় পেলে বুকের ভেতরটা যেমন করে অর্ণবের বুকের ভেতর থেকেও ঠিক তেমন শব্দ আসছে।
“মায়াবতী তুমি আমার জীবনের সব থেকে বড় গিফট। আমি তোমার থেকে কখনোই ধোঁকা খেতে চাই না। তোমাকে কখনো হারাতেও চাই না।

শুনেছি মানুষ বদলে যায়। নিজের চোখে দেখেছিও। কিন্তু প্লিজ বদলে যেয়ো না। যেমন আছো তেমনই থেকো। আমার হয়ে থেকো। শুধু আমাকেই ভালোবেসো। ঠিক আছে?
তন্নি জবাব দেয় না। সে চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে অর্ণবের কথা।
“আচ্ছা চলো যাই। রাত হয়ে গেছে।

অর্ণব তন্নিকে ছেড়ে দেয়। তন্নির হাতটা মুঠো করে ধরে হাঁটতে থাকে। তন্নির হাতের মুঠোয় এখনো রয়েছে ফুল গুলো। এই ফুল তন্নি ফেলবে না। বাসায় নিয়ে প্রিয় ডাইরির ভাজে রেখে দিবে। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এই ফুলগুলো রেখে দিবে তন্নি। এই ফুল গুলোই যে অর্ণবের থেকে পাওয়া প্রথম উপহার। ফেলবে কি করে?
এক মনে ড্রাইভ করতে থাকে অর্ণব। আনোয়ার অনবরত কল করে যাচ্ছে। কালকে অর্ণবকে দেশের বাইরে যেতে হবে আর আজকেই তার খবর নেই?

আশাও প্রচন্ড টেনশনে আছে। এই ছেলেটা জন্ম থেকেই তাকে টেনশন দিয়ে আসছে। জন্মের তিন দিন পর্যন্ত কাঁদে নি। ডাক্তার সহ পরিবারের সকলেই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। অবশেষে সকলে হাসিয়ে তিন দিন পরে কেঁদেছিলো।

অথৈ বাবা মাকে বোঝাচ্ছে তোমাদের ছেলে আছে। এবং সে তার বউয়ের সাথে আছে। আসবে খুব তাড়াতাড়ি। টেনশন নিও না। তবুও তারা বুঝছে না।
শেষে অথৈ নিজেই বিরক্ত হয়ে চলে যায় নিজের কাজে। করুক এরা টেনশন।
বাড়ির কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে গাড়ি থামায় অর্ণব৷ তন্নি প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো। গাড়ির ধাক্কায় জেগে যায়। সে ভেবেছিলে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু চোখ খুলে রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামানো দেখে অর্ণবের দিকে তাকায়।
অর্ণব সিট বেল্ট খুলতে খুলতে জবাব দেয়

” খাবো তারপর যাবো। খিধে পেয়েছে।
তন্নি জবাব দেয় না। সেও সিট বেল্ট খুলে নেমে পড়ে।
রেস্টুরেন্টেটা খুব বড় নয়। তবে মার্জিত। লোক সংখ্যাও খুব কম।
তন্নিকে নিয়ে একদম সাইডের একটা টেবিলে বসে অর্ণব।
খাবার অর্ডার দিয়ে তন্নির দিকে তাকায়।

তখনই খেয়াল করে তন্নির পেছনের নিধি বসে আছে। চোখ মুখের বেহাল দশা। অর্ণব জেনেছে নিধিকে ওই ছেলেটা ধোঁকা দিয়েছে। বাজে ভিডিও করে নিয়েছে নিধির অগোচরে এবং নিধিকে হুমকি দিচ্ছে।
এটা নিয়েই নিধির চিন্তার শেষ নেই।

অর্ণব হাসে। মনে মনে নিধিকে উপহাস করে।
খাবার চলে আসতেই অর্ণব চুপচাপ খেতে থাকে। তন্নি বেশ অবাক হয়। অর্ণব তো সাধারণত এতোটা চুপচাপ থাকে না। তাহলে কি হলো হঠাৎ? মন খারাপ করে নিজের খাবার খেতে থাকে তন্নি। আর তখনই নিধির গলা শুনতে পায়। ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে তাকিয়ে নিধিকে দেখতে পায়। কান্না করছে সে। তার পাশে আরও একটা মেয়ে বসে আছে।
তন্নির মন খারাপ বেরে যায়। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা করতে থাকে।

অর্ণব নিধিকে এখনে মিস করে যাচ্ছে। নিধিকে সে ভুলতে পারছে না। তাই তো নিধির কষ্টে সে কষ্ট পাচ্ছে। হয়ত মনে মনে নিধিকে এখনো ভালোবাসে।
অর্ণব কি ফিল করছে “তন্নিকে বিয়ে করে ভুল করে ফেলেছে?”

এসব ভাবনা মনের মধ্যে জেগে বসে। আর খেতে পারে না তন্নি। পানি খেয়ে হাত মুছে নেয় টিস্যু দিয়ে। তবুও অর্ণব জিজ্ঞেস করে না “খাচ্ছো না কেনো?”
অর্ণব নিজের মতো খাওয়া শেষ করে। তারপর পকেট থেকে ওয়ালেট বের করতে করতে তন্নিকে বলে
“এসো

তন্নি আরও এক পলক তাকায় নিধির দিকে। তারপর অর্ণবের পেছন পেছন যেতে থাকে।
গাড়িতেও তন্নি মন খারাপ করে বসে থাকে। অর্ণবও কেনো কথা বলে না।
তন্নির মামা বাড়ির সামনে গাড়ি থামায় অর্ণব। তন্নি সিট বেল্ট খুলে নামতে যেতেই অর্ণব হাত ধরে ফেলে। তন্নি তাকায় অর্ণবের দিকে।

” আমি তোমার বর মায়াবতী। তোমার সাথে সারাজীবনের জন্য আবদ্ধ হয়েছি। আমার প্রতি তোমার অধিকার আছে। আমি আমার এক্স কে দেখে মন খারাপ করছি এতে তোমার রিয়েক্ট করার কথা ছিলো। অধিকার দেখানোর কথা ছিলো। কিন্তু তুমি চুপচাপ মেনে নিচ্ছে?
ইটস নট ফেয়ার মায়াবতী।
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে৷ জবাব দেয় না

“একটু স্টং হও৷ অধিকার বুঝে নিতে শিখো। নিজেকে মূল্যহীন ভাববে না কখনো। মনে রাখতে তুমি অনেক দামি।
অর্ণব তন্নির হাতে চুমু খায়। তারপর হাতটা ছেড়ে দেয়।
” আমি সম্পর্কে কখনো মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে ডিরেক্টড আমাকে জিজ্ঞেস করবে। আমি জবাব দিবো। কখনো কোনো বিষয় আমার থেকে লুকাবে না আর অযথা মন খারাপ করবে না। বুঝেছো?

তন্নি মাথা নারায়।
অর্ণব মুচকি হাসে
“যাও আমি কল দিবো।
তন্নি মাথা নারিয়ে নেমে যায়। অর্ণব হাত নারিয়ে বাই বলে চলে যায়। যতখন অর্ণবের গাড়িটা দেখা যেতে থাকে ততখন তন্নি দাঁড়িয়ে থাকে। তাকিয়ে থাকে গাড়ির দিকে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১৩

এই তো পৈরসুদিন পর্যন্ত লোকটাকে বিরক্ত লাগতো। কিন্তু আজকে এতে ভালো কেনো লাগছে?
কেনো লোকটার সঙ্গ ছাড়তে ইচ্ছে করছিলো না? জাদু জানে না কি মানুষটা?
এই রকম চমৎকার একজন মানুষ তন্নির সারাজীবনের সঙ্গী। তন্নির বর। ভাবতেই তন্নির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। সে ব্যাগটাকে শক্ত করে জড়িয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১৫