এই মন তোমারি পর্ব ২৫

এই মন তোমারি পর্ব ২৫
নুজাইফা নূন

-” সূরার কথা শুনে শাফায়াতের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়।সে ভাবতেও পারে নি সূরা এমন কিছু বলবে।রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।সে সূরার গাল চেপে ধরে মুখের মধ্যে এক লোকমা খাবার ঢুকিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ সূরা এক বিষ্ময়কর কাজ করে বসে।সে শাফায়াতের গালে ঠাস ঠাস করে থা’প্প’ড় মে’রে দেয়।

সূরার এহেন কার্যে শাফায়াত নির্বিকার হতবাক হয়ে যায়।সে সূরা কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে মাথায় চুমু দিয়ে বললো, আমার শান্ত পাখি টা হঠাৎ এতো অশান্ত হয়ে উঠেছে কেনো?কি হয়েছে তোমার?বাবা কিছু বলেছে কি ? বললে আমাকে বলো প্লিজ। চুপ করে থাকা সব সমস্যার সমাধান নয় পাখি। বলো না সোনা বউ ? তুমি কি হৃদয়ের উপাত্ত বুঝতে পারছো না? কেনো পোড়াচ্ছো আমাকে? বলো কি করেছি আমি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমার অপরাধ কোথায়? সূরা ভাবলো শফিকুল দেওয়ান এর কথাটা টা শাফায়াত কে বলবে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো শফিকুল দেওয়ান যদি সত্যি সত্যি তার কাকার কোনো ক্ষতি করে দেয় ? তাছাড়া শফিকুল দেওয়ান তার বাবা হয়।বাবার সম্পর্কে এমন খারাপ কথা সে ছেলে হয়ে বিশ্বাস করবে এমন টা নাও হতে পারে।এসব কথা বিবেচনা করে সূরা শফিকুল দেওয়ান এর ব্যাপার টা এড়িয়ে গিয়ে বললো,

-” আমি আপনাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়। আপনি ছাড়ুন আমাকে। আপনি যখন তখন আমাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরবেন না পুলিশ।বিরক্ত লাগে আমার। শাফায়াত সূরা কে ছাড়লো না বরং তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো , বাহ্ তুই তো গিরগিটির থেকেও অতি দ্রুত রং পাল্টে ফেললি। কিছু দিন আগে ও আমার একটু ছোঁয়া পাওয়ার জন্য তোর কতো আকুলতা ব্যাকুলতা ছিলো , ভালোবাসা ছিলো,কিন্তু হুট করে তোর সেই ভালোবাসা কোথায় গেলো? কোথায় গেল তোর সেই স্বামী ভক্তি? ওহ্ বুঝতে পারছি আরাব কে দেখার পর তোর সেই ভালোবাসা ফানুস হয়ে উড়ে গিয়েছে তাই না?কি আছে ঐ আরাবের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই?”

-“সূরা শাফায়াতের দেওয়া সমস্ত যন্ত্রণা মুখ বুজে সহ্য করছে।টু শব্দটি পর্যন্ত করছে না।যা দেখে শাফায়াতের রাগ আরো বেড়ে যায় ।সে সূরার লম্বা চুলগুলো নিজের হাতের মুঠোয় ধরে বললো,আসলে আমারি ভুল হয়েছে।আমি তোর মতো একটা গাইয়া অশিক্ষিত মেয়েকে আমার মনে জায়গা দিতে চেয়েছিলাম, এই সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোর মতো মেয়ে সেটা ডিজার্ভ করে না।

তুই আমার পায়ের তলায় থাকার যোগ্য। আর সেখানেই থাকবি বলে শাফায়াত নাজমা দেওয়ান এর রুম থেকে বেরিয়ে আসে। শাফায়াত বেরিয়ে আসার সাথে সাথেই সূরা ফ্লোরে বসে পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শাফায়াত তার হাতের যেখানে স্পর্শ করেছিলো সেখানে পাগলের মতো অজস্র চুমু তে ভরিয়ে দিতে লাগলো।আর তখনি নাজমা দেওয়ান রুমে প্রবেশ করলো।

তিনি সূরার এই অবস্থা দেখে সূরা কে ফ্লোর থেকে তুলে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বললো, সত্যি করে বল তো ঠিক কি হয়েছে তোর ? তুই কি লুকিয়ে যাচ্ছিস আমাদের থেকে? শাফি কে দেখলাম রাগারাগী করে বেরিয়ে গেল। তুই এইখানে এইভাবে বসে কান্না করছিস। আবার জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলছিস না কি হয়েছে?”

-” সূরা নাজমা দেওয়ান কে আঁকড়ে ধরে বললো, আমাকে ক্ষমা করবেন মা। আমার যে হাত পা বাঁধা। আমি কিছু বলতে পারবো না মা।”

-” জানি না কি এমন হয়েছে তোর যেটা তুই বলতে চায়ছিস না। ঠিক আছে আমি ও আর তোকে জোর করবো না। তুই নিজে যা ভালো মনে করিস কর।আমি আর নিতে পারছি না বলে নাজমা দেওয়ান চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

সূরা ও চুপিচুপি নাজমা দেওয়ান এর পাশে গিয়ে শুয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে এক পর্যায়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো। কিন্তু ঘুম নেই শাফায়াতের চোখে।সে বুঝতে পারছে না হুট করে সহজ সরল একটা এমন বিহেভ করছে কেন? কেনো তাকে ইগনোর করছে? রাগের বশে মেয়েটাকে কঠিন কথা শুনিয়ে কিছুতেই নিজের মন কে শান্ত করতে পারছে না শাফায়াত। শাফায়াত বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে বললো, শিট ম্যান! ইউ আর কিলিং মি।”

-” কেটে গেছে বেশ কিছু দিন। শাফায়াত সূরার সম্পর্ক দিন দিন অবনতি হয়েছে। সূরা সবসময় শাফায়াত কে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।তাকে দেখলে নিজেকে ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে নেয়। শাফায়াত নিজে কয়েক বার গিয়েছে সূরার কাছে সেদিনের করা বাজে ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চায়তে। কিন্তু সূরা বরাবরই শাফায়াত কে এড়িয়ে চলেছে।যাতে শাফায়াত ভীষণ ভাবে হার্ট হয়েছে।

শাফায়াত ভাবছে সূরার হয়তো কম বয়স তাই ও তার মতো আধ বুড়ো পুলিশের সাথে থাকতে চায়ছে না।সূরার মনে আরাব বিরাজ করছে। সেই ধারণার উপর ভিত্তি করে শাফায়াত ও সূরার সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে ঠিকই তবুও মেয়েটা এখনো তার মনের দখলদার। এখনো‌ তার কথা ভেবে নির্ঘুমে রাত কাটে তার। আর যায় হোক জোর করে কারো মনের মালিক হ‌ওয়া যায় না।তাই তো সূরা কে সূরার মতো চলতে দিয়েছে।সূরার মধ্যে ও যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। পড়াশোনা বেশ আয়ত্তে চলে এসেছে তার।

এখন আর তার মধ্যে আগের সেই বাচ্চামো স্বভাব নেই।কথা বার্তায় ও পরিবর্তন এসেছে। মোটকথা অশিক্ষিত সূরা অনেক টা স্মার্ট হয়ে উঠেছে।সূরা আরাবের কাছে পড়তে বসছে।আরাব প্রথম প্রথম সূরা শাফায়াতের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামালেও সূরা শাফায়াতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হ‌ওয়ার কারণে তাদের ব্যাপারে সেরকম কিছু জানতে পারে নি।সে বুঝে উঠতে পারে নি তারা স্বামী স্ত্রী।তাই তো সূরার প্রতি তার সফট কর্ণার তৈরি হয়েছে। সূরা কে সে ফিল করতে পারে।

সূরা ম্যাথ করছে আর আরাব এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তার ধ্যান ভেঙ্গে যায় কলিং বেলের শব্দে।সূরা বুঝতে পারে শাফায়াত এসেছে।বুক টা ধুক করে উঠে তার।সূরার ভালো লাগে না রোজ রোজ তার প্রিয় মানুষের মলিন হয়ে যাওয়া মুখ টা দেখতে।তার খুব ইচ্ছে হয় প্রিয় মানুষ টাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখতে। কিন্তু সবার তো আর সব চাওয়া পূর্ণ হয় না।

তেমনি সূরার ও হয় নি। এদিকে কলিং বেল বেজে চলেছে কিন্তু রেনুর দরজা খোলার কোনো নাম গন্ধ নেই দেখে সূরা মনে মনে বললো,এই রেনু টা এক নাম্বারের ফাঁকিবাজ মহিলা। সারাক্ষণ সিরিয়াল নিয়ে পড়ে থাকে। অথচ মাজেদা খালা কাজের প্রতি কতো যত্নশীল ছিলো।কতো ভালোবাসতো আমাকে। তিনি নাকি দশ বছর এ বাড়িতে কাজ করেছেন।

কিন্তু হুট করে মাজেদা খালা কেনো যে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেল, এই ব্যাপার টা আজো অজানায় রয়ে গেল। সূরা ভাবছে সে নিজে যাবে দরজা খুলতে আর তখনি দেখে শফিকুল দেওয়ান সোফায় এসে বসেছেন।যা দেখে সূরা আর পা বাড়ায় না। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে রেনু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

শাফায়াত রুমে প্রবেশ করতেই দেখে সূরা আরাবের সাথে হাসা হাসি করছে।যা দেখে বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে শাফায়াত।তার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। মনে হয় যেনো কেউ কোনো ‌ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। সে এক প্রকার জেদ করে শফিকুল দেওয়ান কে বললো,

এই মন তোমারি পর্ব ২৪

বাবা আপনি তরী কে আমাদের বাড়ি তে নিয়ে আসুন। আমি তরী কে বিয়ে করতে রাজি আছি।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করুন।”

এই মন তোমারি পর্ব ২৬